ঢাকা ০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আওয়ামীলীগের প্রার্থীর ছড়াছড়ি বগুড়া ১ আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামীলীগ

সুষ্ঠ নির্বাচন হলে পুর্নদখলে নেবে বিএনপি

আলমগীর হোসেন, বগুড়া

যমুনা বাঙালী তীরের এলাকা সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন বগুড়া-১। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই আলোচনা সমালোচনা বাড়ছে। ইতোমধ্যে বগুড়া-১ আসনে শুরু হয়েছে আলোচনা। নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলের নেতারাই বিভিন্নভাবে ভোটারদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। ভোটাররাও এই সুযোগে প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছেন তাদের কাজ-বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। তবে এই আসনে আগ্রহী প্রার্থীদের অধিকাংশই ‘ভিআইপি’ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। ভিআইপি এসব প্রার্থীদের অনেকে ঢাকায় অবস্থান করে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তারা তাদের মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে ভোটারদের কাছে সালাম পৌঁছানোর পাশাপাশি চাওয়া-পাওয়া মেটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামীলীগ, অন্যদিকে সুষ্ঠ ও শানিÍপূর্ন ভোটগ্রহন হলে
পুনারায় দখলের নিয়ে চায় বিএনপি।

বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলা নিয়ে ৭টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসন। ভৌগলিকভাবে এই দুইটি উপজেলা দিয়ে যমুনা নদী প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চল রয়েছে বেশ কিছু এলাকা। এসব চরাঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। যার কারণে নির্বাচনের আগ মুহূর্ত ছাড়া প্রার্থীদের অনেকেই চরাঞ্চলের ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি দেখা-সাক্ষাত করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বগুড়া-১ আসন বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন মরহুম কৃষিবিদ জননেতা আব্দুল মান্নান। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সেই দুর্গ ভেঙে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো বগুড়া-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোহাম্মদ শোকরানা ধনের শীষ মার্কায় পেয়েছিলেন ১ লাখ ২১ হাজার ৯৬৫ ভোট।

২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে চার দলীয় জোট ভোট বর্জন করে। সেই সময় অন্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আব্দুল মান্নান আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগসহ চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিসঢ়;দ্বতা করেন। বিএনপি তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দিলে তিনি আব্দুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ২০২০ সালে ১৮ জানুয়ারি মারা যান। পরে ওই আসনে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান। তিনি ২০০৮ সালে রাজনীতিতে নামেন এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সোনাতলা-সারিয়াকান্দি উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে চষে বেড়াচ্ছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন বেশ কয়েকজন। মনোনয়ন চান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক নেতা ম.আব্দুর রাজ্জাক। এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের পথ ধরেই তিনি এগিয়ে যাবেন। ইতোমধ্যে এলাকায় ভালো সাড়া পাচ্ছেন। এলাকার লোকজন তাকে (ম. আব্দুর রাজ্জাক) হিসাবের মধ্যে রাখছেন। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সারিতে আরও আছেন বগুড়ায় ফসলের মাঠে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম উদ্যোক্তা শিল্পপতি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল। তার বাড়ি সোনাতলার পাকুল্লা গ্রামে। তিনি দুই উপজেলাতেই সমানতালে মাঠ তৈরি করছেন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র জনগণের মধ্যে তুলে ধরছেন। জানালেন মাঠ ঘুরে বুঝতে পারছেন এলাকার অর্থনৈতিক অগ্রগতি মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তনে তারা নতুন মুখ খুঁজছে। যা তিনি পূরণ করতে পারবেন এমনটি আশা করেন তারুণ্যের এই প্রার্থী। তিনি বললেন, এলাকার উন্নয়নে তার যা করার তাই করবেন।

সারিয়াকান্দির হাটশেরপুর ইউনিয়নের তাজুরপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী সমাজসেবক শাহাজাদী আলম লিপি। তিনি সমাজসেবায় বড় অবদান রেখে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত এই নারী শিল্প উদ্যোক্তা সারিয়াকান্দির প্রতিটি এলাকায় গিয়ে এলাকার উন্নয়নের কর্মসূচি উপস্থাপন করছেন। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এলাকার লোকজনের সাড়া পাচ্ছেন এমনটি দাবি করেন তিনি ও তার স্বামী (সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা)।

এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেক নাম আসছে। তাদের মধ্যে অন্যতম কজন হলেন-স্বাধীনতাপূর্ব এবং স্বাধীনতাত্তোর নির্বাচনে এই আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম সুরুজের ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব। তিনি তার বাবার উত্তরসূরি হিসেবে মাঠে আছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেরই কথা উন্নয়নের মাঠে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী। কে মনোনয়ন পাবেন এ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হবে। অন্যদিকে, বিএনপি অবশ্য বলছে তাদের আসন ঠিকই আছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে। দ্বাদশ সংসদে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বগুড়া-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, মাসুদার রহমান হিরু মন্ডল, সোনাতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকির, জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের
সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা বাবু মন্ডল ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাবেক সভাপতি মকছুদুল আলম এবং জামায়াতে ইসলামীর সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ।

আওয়ামীলীগ থেকে মনোন্নয়ন প্রত্যাশী ও বর্তমান সাংসদ সাহাদারা মান্নান বলেন, তিনি চেষ্টা করেছেন উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে। প্রতিটি এলাকায় যাচ্ছেন। ফসল রক্ষায় বড় সমস্যা নদী ভাঙন। এই ভাঙন তাদের কাহিল করে ফেলে। সাধারণ মানুষের কথা- একজনের অনুপস্থিতি কি অন্যজন সহজে পূরণ করতে পারেন? এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন সাহাদারা মান্নান।
সাহাদারা মান্নান আরও বলেন, দলে কোনো বিরোধ নাই। প্রতিযোগিতা থাকবেই। নির্বাচনের আগে এধরনের প্রতিযোগিতা দেখা যায়। আমি এই জনপদের মাটিও মানুষের সঙ্গে আছি। আগামীতে নির্বাচনে আমি মনোনয়ন পাব বলে আশা করি। তারপরেও নৌকা মার্কা যে পাবে, আমি তার সঙ্গেই থাকব।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়ে আমার মেয়াদকালে ১ হাজার ২শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। রাস্তা, ব্রিজ, কালভাট, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, নদী তীর সংরক্ষণ থেকে শুরু করে দৃশ্যমান যত উন্নয়ন বিএনপির আমলে হয়েছে। বিএনপির সময় সারিয়াকান্দি উপজেলার পারতিতপরল নামকস্থানে যমুনা ও বাঙ্গলী নদী একিভূতরোধ কল্পে বাঁধ নির্মাণের ফলে মানুষের যে উপকার হয়েছে, তা এখন কেউ ভুলে যায়নি। তিনি বলেন, এখন যা হচ্ছে সেগুলো রুটিনওয়ার্ক। বর্তমান সময়ে উন্নয়নের চাইতে সংসদ সদস্য তার পরিবারের লোকজন লুটপাট করছেন বেশি।

বিএনপির আরেক প্রার্থী একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির বলেন, ২০২০ সালে উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। ভোটগ্রহণের আগ মুর্হূতে করোনা এবং বন্যা পরিস্থিতির কারণে দল নির্বাচন থেকে সরে আসে। সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি আবারও আসন ফিরে পাবে উল্লখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি এবং ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ভোটারদেরকে বগুড়া-১ আসনের সঙ্গে সস্পৃক্ত করায় প্রায় ৫ হাজার ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হন। এবার ওই দুই ইউনিয়ন বগুড়া-১ আসনের সঙ্গে নেই। তিনি আরও বলেন, আমাকে দল থেকে সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমি বিএনপি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা কমিটি গঠনের দায়িত্বে ছিলাম। এ কারণে দুই উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আওয়ামীলীগ থেকে মনোন্নয়ন প্রত্যাশী কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল জানান, যমুনা নদী এলাকায় জন্মগ্রহন করেছি। মাটি ও মানুষের বিষয় নিয়ে কৃষি বিশ্বিবদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেছি। সোনাতষ সারিয়াকান্দি উপজেলার মানুষের সাথে অতীত থেকে আছি। অতীত থেকেই এসব এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করেছি ব্যক্তিগত উদ্যোগে। আগামীতেও এলাকার সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই। তাই বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক জনগনের মাঝে প্রচার করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোন্নয়ন প্রদান করলে এ আসন থেকে নৌকা মার্কায় ভোট করব। মনোন্নয়ন না দিলেও যাকে নৌকা প্রতিক দেওয়ার
হবে তার পক্ষে এলাকায় কাজ করব।
আরেক মনোন্নয়ন প্রত্যাশী শাহাজাদী আলম লিপি জানান, আমার পিতা ও স্বামীর পরিবার এ আসনে। আমার এই দুই পরিবারের ঐতিহ্য আছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার মনোন্নয়ন প্রত্যাশী। সেই জন্য এলাকায় মানুষের মধ্যে সরকারের সুফলগুলো তুলে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এ আসনের জনগণ আমার সাথে আছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন দেখে আবারও এ এলাকা ভোটাররা নৌকা মাকায় ভোট দেবে।

বগুড়া-১ আসনে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৭শ’ ১৪ জন। নারী ভোটার বেশি। সোনাতলা উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪শ’ ৯৪ জন।

ট্যাগস :

আওয়ামীলীগের প্রার্থীর ছড়াছড়ি বগুড়া ১ আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামীলীগ

আপডেট সময় : ১২:৫৮:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

সুষ্ঠ নির্বাচন হলে পুর্নদখলে নেবে বিএনপি

আলমগীর হোসেন, বগুড়া

যমুনা বাঙালী তীরের এলাকা সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন বগুড়া-১। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই আলোচনা সমালোচনা বাড়ছে। ইতোমধ্যে বগুড়া-১ আসনে শুরু হয়েছে আলোচনা। নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলের নেতারাই বিভিন্নভাবে ভোটারদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। ভোটাররাও এই সুযোগে প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছেন তাদের কাজ-বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। তবে এই আসনে আগ্রহী প্রার্থীদের অধিকাংশই ‘ভিআইপি’ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। ভিআইপি এসব প্রার্থীদের অনেকে ঢাকায় অবস্থান করে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তারা তাদের মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে ভোটারদের কাছে সালাম পৌঁছানোর পাশাপাশি চাওয়া-পাওয়া মেটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামীলীগ, অন্যদিকে সুষ্ঠ ও শানিÍপূর্ন ভোটগ্রহন হলে
পুনারায় দখলের নিয়ে চায় বিএনপি।

বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলা নিয়ে ৭টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসন। ভৌগলিকভাবে এই দুইটি উপজেলা দিয়ে যমুনা নদী প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চল রয়েছে বেশ কিছু এলাকা। এসব চরাঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। যার কারণে নির্বাচনের আগ মুহূর্ত ছাড়া প্রার্থীদের অনেকেই চরাঞ্চলের ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি দেখা-সাক্ষাত করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বগুড়া-১ আসন বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন মরহুম কৃষিবিদ জননেতা আব্দুল মান্নান। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সেই দুর্গ ভেঙে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো বগুড়া-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোহাম্মদ শোকরানা ধনের শীষ মার্কায় পেয়েছিলেন ১ লাখ ২১ হাজার ৯৬৫ ভোট।

২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে চার দলীয় জোট ভোট বর্জন করে। সেই সময় অন্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আব্দুল মান্নান আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগসহ চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিসঢ়;দ্বতা করেন। বিএনপি তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দিলে তিনি আব্দুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ২০২০ সালে ১৮ জানুয়ারি মারা যান। পরে ওই আসনে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান। তিনি ২০০৮ সালে রাজনীতিতে নামেন এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সোনাতলা-সারিয়াকান্দি উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে চষে বেড়াচ্ছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন বেশ কয়েকজন। মনোনয়ন চান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক নেতা ম.আব্দুর রাজ্জাক। এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের পথ ধরেই তিনি এগিয়ে যাবেন। ইতোমধ্যে এলাকায় ভালো সাড়া পাচ্ছেন। এলাকার লোকজন তাকে (ম. আব্দুর রাজ্জাক) হিসাবের মধ্যে রাখছেন। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সারিতে আরও আছেন বগুড়ায় ফসলের মাঠে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম উদ্যোক্তা শিল্পপতি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল। তার বাড়ি সোনাতলার পাকুল্লা গ্রামে। তিনি দুই উপজেলাতেই সমানতালে মাঠ তৈরি করছেন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র জনগণের মধ্যে তুলে ধরছেন। জানালেন মাঠ ঘুরে বুঝতে পারছেন এলাকার অর্থনৈতিক অগ্রগতি মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তনে তারা নতুন মুখ খুঁজছে। যা তিনি পূরণ করতে পারবেন এমনটি আশা করেন তারুণ্যের এই প্রার্থী। তিনি বললেন, এলাকার উন্নয়নে তার যা করার তাই করবেন।

সারিয়াকান্দির হাটশেরপুর ইউনিয়নের তাজুরপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী সমাজসেবক শাহাজাদী আলম লিপি। তিনি সমাজসেবায় বড় অবদান রেখে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত এই নারী শিল্প উদ্যোক্তা সারিয়াকান্দির প্রতিটি এলাকায় গিয়ে এলাকার উন্নয়নের কর্মসূচি উপস্থাপন করছেন। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এলাকার লোকজনের সাড়া পাচ্ছেন এমনটি দাবি করেন তিনি ও তার স্বামী (সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা)।

এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেক নাম আসছে। তাদের মধ্যে অন্যতম কজন হলেন-স্বাধীনতাপূর্ব এবং স্বাধীনতাত্তোর নির্বাচনে এই আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম সুরুজের ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব। তিনি তার বাবার উত্তরসূরি হিসেবে মাঠে আছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেরই কথা উন্নয়নের মাঠে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী। কে মনোনয়ন পাবেন এ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হবে। অন্যদিকে, বিএনপি অবশ্য বলছে তাদের আসন ঠিকই আছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে। দ্বাদশ সংসদে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বগুড়া-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, মাসুদার রহমান হিরু মন্ডল, সোনাতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকির, জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের
সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা বাবু মন্ডল ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাবেক সভাপতি মকছুদুল আলম এবং জামায়াতে ইসলামীর সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ।

আওয়ামীলীগ থেকে মনোন্নয়ন প্রত্যাশী ও বর্তমান সাংসদ সাহাদারা মান্নান বলেন, তিনি চেষ্টা করেছেন উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে। প্রতিটি এলাকায় যাচ্ছেন। ফসল রক্ষায় বড় সমস্যা নদী ভাঙন। এই ভাঙন তাদের কাহিল করে ফেলে। সাধারণ মানুষের কথা- একজনের অনুপস্থিতি কি অন্যজন সহজে পূরণ করতে পারেন? এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন সাহাদারা মান্নান।
সাহাদারা মান্নান আরও বলেন, দলে কোনো বিরোধ নাই। প্রতিযোগিতা থাকবেই। নির্বাচনের আগে এধরনের প্রতিযোগিতা দেখা যায়। আমি এই জনপদের মাটিও মানুষের সঙ্গে আছি। আগামীতে নির্বাচনে আমি মনোনয়ন পাব বলে আশা করি। তারপরেও নৌকা মার্কা যে পাবে, আমি তার সঙ্গেই থাকব।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়ে আমার মেয়াদকালে ১ হাজার ২শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। রাস্তা, ব্রিজ, কালভাট, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, নদী তীর সংরক্ষণ থেকে শুরু করে দৃশ্যমান যত উন্নয়ন বিএনপির আমলে হয়েছে। বিএনপির সময় সারিয়াকান্দি উপজেলার পারতিতপরল নামকস্থানে যমুনা ও বাঙ্গলী নদী একিভূতরোধ কল্পে বাঁধ নির্মাণের ফলে মানুষের যে উপকার হয়েছে, তা এখন কেউ ভুলে যায়নি। তিনি বলেন, এখন যা হচ্ছে সেগুলো রুটিনওয়ার্ক। বর্তমান সময়ে উন্নয়নের চাইতে সংসদ সদস্য তার পরিবারের লোকজন লুটপাট করছেন বেশি।

বিএনপির আরেক প্রার্থী একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির বলেন, ২০২০ সালে উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। ভোটগ্রহণের আগ মুর্হূতে করোনা এবং বন্যা পরিস্থিতির কারণে দল নির্বাচন থেকে সরে আসে। সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি আবারও আসন ফিরে পাবে উল্লখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি এবং ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ভোটারদেরকে বগুড়া-১ আসনের সঙ্গে সস্পৃক্ত করায় প্রায় ৫ হাজার ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হন। এবার ওই দুই ইউনিয়ন বগুড়া-১ আসনের সঙ্গে নেই। তিনি আরও বলেন, আমাকে দল থেকে সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমি বিএনপি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা কমিটি গঠনের দায়িত্বে ছিলাম। এ কারণে দুই উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আওয়ামীলীগ থেকে মনোন্নয়ন প্রত্যাশী কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল জানান, যমুনা নদী এলাকায় জন্মগ্রহন করেছি। মাটি ও মানুষের বিষয় নিয়ে কৃষি বিশ্বিবদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেছি। সোনাতষ সারিয়াকান্দি উপজেলার মানুষের সাথে অতীত থেকে আছি। অতীত থেকেই এসব এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করেছি ব্যক্তিগত উদ্যোগে। আগামীতেও এলাকার সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই। তাই বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক জনগনের মাঝে প্রচার করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোন্নয়ন প্রদান করলে এ আসন থেকে নৌকা মার্কায় ভোট করব। মনোন্নয়ন না দিলেও যাকে নৌকা প্রতিক দেওয়ার
হবে তার পক্ষে এলাকায় কাজ করব।
আরেক মনোন্নয়ন প্রত্যাশী শাহাজাদী আলম লিপি জানান, আমার পিতা ও স্বামীর পরিবার এ আসনে। আমার এই দুই পরিবারের ঐতিহ্য আছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার মনোন্নয়ন প্রত্যাশী। সেই জন্য এলাকায় মানুষের মধ্যে সরকারের সুফলগুলো তুলে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এ আসনের জনগণ আমার সাথে আছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন দেখে আবারও এ এলাকা ভোটাররা নৌকা মাকায় ভোট দেবে।

বগুড়া-১ আসনে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৭শ’ ১৪ জন। নারী ভোটার বেশি। সোনাতলা উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪শ’ ৯৪ জন।