কক্সবাজারের উখিয়ায় র্যাবের টহল দলের ওপর হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। গেল ৫ নভেম্বর রাতে উখিয়ায় র্যাবের টহল দলের ওপর এক হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয় তিনি।
এদিকে এ ঘটনার জেরে আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) কক্সবাজার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা পূর্ণদিবস হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতা কর্মী এবং জনগনকে আজ সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ণ দিবস শান্তিপূর্ণ ভাবে রাজপথে থেকে হরতাল পালনের আহবান জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডঃ শামীম আরা স্বপ্না। কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক এড হাসান সিদ্দিকী প্রেরিত বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ৫ নভেম্বর রাতে উখিয়ায় র্যাবের টহল দলের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির ৪২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে র্যাব। এছাড়া এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ বিএনপি জাগির হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। যিনি হামলার ঘটনায় র্যাবের করা মামলার ১৪ নং আসামী বলে পুলিশ ও স্থানীয়দের দাবি।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাগির হোসেনের মৃত্যু হয়।
জাগির হোসেন (৩৮) উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া গ্রামের মৃত মো. আলমের ছেলে। তিনি অত্র ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। এদিকে তার বিএনপি নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে কক্সবাজার জেলা বিএনপি।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামলার ঘটনায় ১ নম্বর আসামি করা হয় উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে। র্যাব বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে উখিয়া থানায় এ মামলা করে। মামলার এজাহারে সংখ্যা উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ‘অনেক আসামি’ করা হয়।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ৫ নভেম্বর উখিয়ার পাইন্যাশিয়ায় র্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় বিএনপির ৪২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এ মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে আহত জাগির হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, পাহাড়ঘেরা পাইন্যাশিয়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। ওই গ্রামে সোলতান মাহমুদের বাড়ি। পাইন্যাশিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঢাকা, কক্সবাজার ও উখিয়াতে হরতাল অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরসহ নাশকতা মামলার আসামি। রোববার রাতে নাশকতা মামলার আসামিদের ধরতে র্যাবের একটি টহল দল পাইন্যাশিয়া গ্রামে গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ কয়েকশো মানুষ র্যাবকে ঘিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এসময় গুলিও ছোড়া হয়। একপর্যায়ে র্যাবের একটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাব কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
উল্লেখ্য- সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী সকাল সন্ধ্যার হরতালে উখিয়াতে সড়ক অবরোধ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে অভিযোগে বিএনপি নেতা সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে উখিয়া থানায় ৩৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। গত ৩০ অক্টোবর উখিয়া থানায় মামলাটি করেন ওই থানার এসআই মো. আবদুল ওয়াহেদ।
গত রোববার (৫ নভেম্বর) মধ্যরাতে র্যারের টহল দল নাশকতা মামলার আসামি উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য আসামিদের ধরতে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া গ্রামে গেলে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির কয়েকশো নেতা-কর্মী-সমর্থক লাঠিসোটা নিয়ে র্যাবকে ঘিরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ইট-পাটকেলের আঘাতে র্যাবের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয় জাগির হোসেনসহ তিনজন।