আমি ও আমার কবিতা
এত দিন পর বোধ হলো কবিতার বায়োগ্রাফি ঠিক ফরাসি আর্টিস্টের মতো, কী ভাবছি, এ কল্পনাশক্তির সুররিয়্যালিস্ট চিত্রকল্প ভাষার ভেতরে সাইরেন না বাজালে পৃথিবীর কাছে নড়বড়ে চিরকুট লিখে অযথা মেকি আনন্দে বন্দি হতে হবে। তার চেয়ে বরং র্যাঁবোর পুরনো কবিতায় সদ্য রমণী গোসল সেরে নিজেকে গোছাতে যেমন ব্যস্ত, তার টেরিয়ে দেখার ফাঁকে অনিন্দ্য সুগন্ধি সাবানের সৌরভে যে প্রত্যেকটি অণুচ্ছেদ ছড়ায় তার মহার্ঘ্য ধ্যানে সাধারণত অসাধারণ কোনো কবিতা লেখার ব্যাপার-স্যাপার আসছে কি না সেই পথ মাড়াও, অপেক্ষা করো-ঝরঝরা কথার চোখে চোখ থেকে যেভাবে বইয়ের পৃষ্ঠা হতে দেনা-পাওনা শেখো। কবিতা-ব্যাগ গোছানো বইয়ের ভেতরে নয়, সে একজন প্রকৃত কল্পনা।
মাগরিবের চাঁদ
পাতাঝরা পথের সিঁথেন ধরে কতদূর হেঁটে গেছ
রেখে যাওনি কেন-ছায়া, সিঁদুরের রং নিয়ে
ফুটেছে হঠাৎ চেরিফুল; পেশিতে দোলে তুমুল ঘাম
ভেবে নেব কী অন্য শাসন-বিব্রত কিছু
পথভরা কলোনি অনেকটা অচেনার মতো;
প্রেতভরা জটাগাছ বেকার নড়ে-রাজধানী দুপুর
জানো তো-তোমার করে খড়পুতুলের কাকাতুয়া
নাকুরনুকুর-হাসে, মদ মদিরা রেস্টুরেন্ট
প্রদর্শনী গোছানো জীবজগত; তাতে ঘুরপাক খাচ্ছে
গোধূলির বুনোবেড়াল চোখে চোখ রেখে
বনপরিদের কোমর বাঁধানো ধবধবে শাদা পেট
মাগরিবের চাঁদ মুছে না যাক রাত্রির মলাট থেকে
অর্থহীন কোনো ঘাস, শাদা বাড়ির পেছন দিকে
বালকরা ফাঁপা বেলুন ওড়াচ্ছে, একদম বিরামহীন!
মৃত্যুর অর্গান
সৌন্দর্যের ভেতরে ওয়াশিংটন ক্ল্যাপস ওড়ে
আমেরিকা ঈগল মুখ বাড়ায়-শিশুর মতো;
ঢুকে পড়ে-কালো বেড়ালের ছায়া
চালতা ফুলের রঙ-অনুমতিহীন তাকিয়ে
নিগ্রো রমণীদের সেরানি ঘাম, জলপাই প্রচ্ছদ
বরাভয় শিরার গহিনে পদচ্ছাপ ছড়িয়ে যায়
পরস্পর হাওয়া ঘর থেকে-
নিকটস্থ গোলাপ, বেনামে পরাগ ওড়ায়-
আসমানি শাদা বক, জড়াজড়ির পৃথিবী
শোকবিদ্ধ আলপিনে গেঁথে ওঠে
প্রজাপতির পরিত্যক্ত মমির-সুষম শরীর,
তাতার জঙ্গল হতে দেখা যায় মৃত্যুর
অর্গান হতে তুমি বেঁচে আছ!
ইরিক্ষেতের ডানা
অবিরাম ইরিক্ষেতের ডানায় উড়ে আসছে
পাখিদের সেলাই করা সন্ধ্যায়-খসে পড়া
অর্ধেকের চাঁদ, মেরিল রোড-
ডেটল সাবানের বীর্যপাত গন্ধ,
জন্মান্ধ পোশাকের পায়চারিতে-লেগে থাকা
রোদ-রেলস্টেশন, টার্মিনাল-নিঃসঙ্গ শুভ্র বালক
কুড়োচ্ছিল পৃথিবীর চোখ, বৃষ্টির-হামাগুড়ি…
কেবল ঘড়ির শ্লোক সম্রাটে তুমি সরে যাচ্ছ
হরিণীর সারা গায়ে-ডাঁসা জলছাপ ঢেউ
নূপুরের মতো স্নায়ুপাখির সবুজ খসড়া জঙ্গল,
মানুষের শরীর হতে হলুদ রোদ, ফসলি-পাখি
দীর্ঘ দেশ-আয়নার মতো; ঘুমিয়ে না পড়লাম
জেব্রাশিশির
হেমন্ত ছড়ানো দিনে মদোতীর্ণ পোনাঘাস-
বিকেল মেলে ধরে তাতে লেগে আছে
নীল গুঞ্জন, রৌদ্রকণা, মাটির ত্রস্ত-মুখ
মনে হচ্ছে, ঘাস খাওয়া ঘোড়া তাতার বনে
ঘুরতে গেছে। আজ সদল রাজহাঁসের দিন-
এখানে ফিরেছে মেয়েদের নাভি থেকে ঝরা
জীবনের কথা। একে অপরের কানে তোলে
অনুচ্চারিত ফসিল। দুলে ওঠে জলপাই মেঘ-
দূর থেকে চশমার কাচে লাগে নীল কল্পনা
বোধ হয় কোনো শীতে আটকে পড়া
রূপালি ফুলে ঢুকে পড়েছে জেব্রাশিশির
ইন্দ্রজাল থেকে
ছেঁড়া স্যান্ডেলে পুরনো পথ পার হলে
শুক্রাণু ভরতি শরতের ঘাস
যতদূর জানি-ি
চালতাফুলের মিতালি ঘ্রাণে যুবতি তুমি
সব কিছু ইন্দ্রজালের মতো রূপ জড়ানো
আর উত্তম খাতিরে আমলকী গাছ
মুমূর্ষের শুশ্রুষ ছড়ায়, তাতে প্রগাঢ় গল্প-
ড্রফফোটার মতো প্রতীক্ষায় জাগর কাটে
ঘাসের কালো চোখ
আর একদল পিঁপড়ে টেনে নিচ্ছে
দূর শাদা আকাশ, নক্ষত্র-অই নিরুদ্দেশ;
তোমাকে দেখতে দেখতে খুন হয়
আমার আয়ুর্বেদ হাসি!
নস্টালজিয়া সন্ধ্যা
নস্টালজিয়া সন্ধ্যায়-তোমার সাক্ষাত পেতে
ধূসর পথ উড়ছে আর আবেগের তীর ধরে
নিবিড় নিঃসঙ্গতা নিয়ন্ত্রণে রেখে এমন শীতল
স্পর্শ অনুভব করব যে-যৌথ আর্তনাদ
ভুলে গিয়ে ঝিমোনো-মরা ঘাসের পথ কোনো
কারণ ছাড়া পুনরায় সবুজ হয়ে হাসবে।
আর-হাতেপাতে হাওয়া জড়ানো সমস্ত ফুলের ঘ্রাণ,
তাতে নিজেদের সুখ-
যত তাড়াহুড়ো উপচে পড়া নদী-আড়াই কল্পনার
উৎসবে গিয়ে-যে গাছ, যে পথ-
যে ছাদের ব্যালকনি জেগে রয়েছে বরং সেখানে;
কাঁটাখালের ওধারে-নারকেল গাছসই
অন্ধ বাদুড় উড়ে যাওয়া শব্দ রেখে যায়,
সন্ধ্যা বাচ্চাদের ইশারা, অদূরে মেঘের লহমায়
তাকিয়ে থাকি-তোমার রেশ ধরে শরতের কাশফুল দুলছে
শিশুর ভেতরে
পাখির ডানাভাঙা গুলতি দেখছি
জয়তুন পাতার খসখসে ত্বকের নিচে
-ছুটছে, পাক খাচ্ছে
ঘোড়াখুর শব্দে মগ্ন হওয়া
নিদ্রাহীন প্যালেস্টাইন কবি-
সকল সৎকার শিশুর ভেতরে,
সবুজ বাড়ির রং থেকে
রসাধিক্য কুয়াশার মতো
ধুলো ওড়ে
ধুলো নয়-ভ্রম! কুয়াশার বদলে
বোমারু বিমান-
সকাল-দুপুর, সন্ধ্যা কেড়ে নিলে
লাল উলের নিচে কবি মরে যায়
তারপর কবিতা হয়ে ওঠে হিব্রুবর্বর
পশ্চিমা চোরকাঁটা!