ঢাকা ০৭:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পদোন্নতিবঞ্চিত ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা

  • সহকারী কমিশনার পদে পদোন্নতি পেতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা
  • ক্স তৎপর মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি

দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতিবঞ্চিত দেশের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোর ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এসব কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (নন ক্যাডার) পদে পদোন্নতি পেতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করে আবেদন করেছেন। দ্রুত দাবি আদায়ে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে এটি দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম গতকাল দৈনিক সবুজ বাংলাকে জানান, সারা দেশে এ ধরনের ৮৩১টি পদ আছে। এ সব পদের কর্মকর্তারা সচিবালয়ের অন্য কর্মকর্তাদের মতো পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত। যোগ্যদেরকে অবিলম্বে পদোন্নতির জন্য আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদনসহ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, এ দাবি আদায়ের জন্য গত ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন করে রাজধানীতে মিটিংসহ নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছি। আমরা দ্রুত এটি বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, দেশ প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোর ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহকারী কমিশনার (নন ক্যাডার) পদে পদোন্নতির জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর আবেদন করে বাংলাদেশ মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে বলা হয়-বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সমূহ সরকারের মাঠপ্রশাসনের সামগ্রিক কার্যক্রম বাস্তবানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। উক্ত অফিসগুলোর ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তৃণমূলে সরকারের অনুসৃত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচন, জেলা প্রশাসনের বার্ষিক চুক্তি সম্পাদন, সিটিজেন চার্টার প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন, ত্রি-বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পেনশন সহজীকরণ অনুযায়ী কল্যাণ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ অন্যান্য আপদকালীন কর্মসম্পাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নসহ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে, কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ-ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৬ এর তফসিল-১ অনুযায়ী বাংলাদেশ সচিবালয়ের ২০ গ্রেডভুক্ত একজন অফিস সহায়ক পর্যায়ক্রমে সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত), সিনিয়র সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) ও উপসচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়ে থাকে; ফলে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রকাশ করে মেধা ও মনন বিকাশের সুযোগ পায়।
তা ছাড়া পদোন্নতির প্রেক্ষিতে তাদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। যে কারণে তারা সততা ও দক্ষতার পরিচায় দিয়ে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কাজে সচেষ্ট হওয়ার প্রয়াস পায়; কিন্তু বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণের পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় সব ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ অবস্থায় অবনত-ধাবিত হয়, যা একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্র ও অফিস ব্যবস্থাপনার অন্তরায়। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সমূহে প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণের ৮৩১ টি পদ আছে।
আবেদনে আরো বলা হয়, প্রশাসনিক পুনর্গঠনের ফলে বাংলাদেশ সচিবালয় এবং বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোভূক্ত নিম্নশ্রেণির পদকে উচ্চতর শ্রেণিতে উন্নীতকরণ, নতুন পদ সৃষ্টি, পদনাম পরিবর্তন, গ্রেড তথা পদমর্যাদা উন্নীত করা হয়েছে। যেমন: বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাঁট-লিপিকারকে ২য় শ্রেণির পদমর্যাদায় ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে পরিবর্তন করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে- ২য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণিতে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের প্রধান সহকারী, শাখা সহকারী, উচ্চমান সহকারী, বাজেট পরীক্ষককে ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সাব রেজিষ্টার সেটেলমেন্ট অফিসার, পুলিশের পরিদর্শক এবং জেলা পর্যায়ের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, জেল সুপার, অতিরিক্ত ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার প্রায় ২৮টি ক্যাটাগরির ২য় ও ৩য় শ্রেণীর পদকে ১ম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরে মাঠপ্রশাসনে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সংশ্লিষ্ট আবেদনে বলা হয়, জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৮-এ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদী ১নং সিদ্ধান্ত ‘মাঠপ্রশাসনে কর্মরত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদেরকে সচিবালয়ের ন্যায় পদোন্নতি প্রদান’ এবং জেলা প্রশাসক সম্মেলন, ২০১৯-এ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘমেয়াদি ৯নং সিদ্ধান্ত ‘পরীক্ষা নিরীক্ষাক্রমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের সহকারী কমিশনার (নন-ক্যাডার) পর্যন্ত পদোন্নতির বিধান করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০২২ সালের ২৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়; তদপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনাসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ২৬ জুলাই ২০২২ তারিখের সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে-‘বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সমূহে সহকারী কমিশনার (নন- ক্যাডার) পদ সৃজনের অবেদনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক সম্মেলনের সিদ্ধান্তের সাথে সম্পৃক্ত, যা প্রশাসনিকভাবে নিষ্পত্তিযোগ্য, বিধায় আবেদনের বিষয়ে এই কমিটিতে ভিন্ন কোন সুপারিশ-সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই।’
তাই সরকারের মাঠপ্রশাসনে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সমূহ ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহকারী কমিশনার (নন-ক্যাডার) পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ জানানো হয় আবেদনে।

ট্যাগস :

পদোন্নতিবঞ্চিত ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা

আপডেট সময় : ০৮:২৩:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • সহকারী কমিশনার পদে পদোন্নতি পেতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা
  • ক্স তৎপর মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি

দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতিবঞ্চিত দেশের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোর ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এসব কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (নন ক্যাডার) পদে পদোন্নতি পেতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করে আবেদন করেছেন। দ্রুত দাবি আদায়ে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে এটি দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম গতকাল দৈনিক সবুজ বাংলাকে জানান, সারা দেশে এ ধরনের ৮৩১টি পদ আছে। এ সব পদের কর্মকর্তারা সচিবালয়ের অন্য কর্মকর্তাদের মতো পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত। যোগ্যদেরকে অবিলম্বে পদোন্নতির জন্য আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদনসহ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, এ দাবি আদায়ের জন্য গত ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন করে রাজধানীতে মিটিংসহ নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছি। আমরা দ্রুত এটি বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, দেশ প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোর ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহকারী কমিশনার (নন ক্যাডার) পদে পদোন্নতির জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর আবেদন করে বাংলাদেশ মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে বলা হয়-বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সমূহ সরকারের মাঠপ্রশাসনের সামগ্রিক কার্যক্রম বাস্তবানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। উক্ত অফিসগুলোর ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তৃণমূলে সরকারের অনুসৃত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচন, জেলা প্রশাসনের বার্ষিক চুক্তি সম্পাদন, সিটিজেন চার্টার প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন, ত্রি-বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পেনশন সহজীকরণ অনুযায়ী কল্যাণ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ অন্যান্য আপদকালীন কর্মসম্পাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নসহ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে, কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ-ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৬ এর তফসিল-১ অনুযায়ী বাংলাদেশ সচিবালয়ের ২০ গ্রেডভুক্ত একজন অফিস সহায়ক পর্যায়ক্রমে সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত), সিনিয়র সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) ও উপসচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়ে থাকে; ফলে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রকাশ করে মেধা ও মনন বিকাশের সুযোগ পায়।
তা ছাড়া পদোন্নতির প্রেক্ষিতে তাদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। যে কারণে তারা সততা ও দক্ষতার পরিচায় দিয়ে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কাজে সচেষ্ট হওয়ার প্রয়াস পায়; কিন্তু বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণের পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় সব ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ অবস্থায় অবনত-ধাবিত হয়, যা একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্র ও অফিস ব্যবস্থাপনার অন্তরায়। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সমূহে প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণের ৮৩১ টি পদ আছে।
আবেদনে আরো বলা হয়, প্রশাসনিক পুনর্গঠনের ফলে বাংলাদেশ সচিবালয় এবং বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোভূক্ত নিম্নশ্রেণির পদকে উচ্চতর শ্রেণিতে উন্নীতকরণ, নতুন পদ সৃষ্টি, পদনাম পরিবর্তন, গ্রেড তথা পদমর্যাদা উন্নীত করা হয়েছে। যেমন: বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাঁট-লিপিকারকে ২য় শ্রেণির পদমর্যাদায় ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে পরিবর্তন করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে- ২য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণিতে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের প্রধান সহকারী, শাখা সহকারী, উচ্চমান সহকারী, বাজেট পরীক্ষককে ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সাব রেজিষ্টার সেটেলমেন্ট অফিসার, পুলিশের পরিদর্শক এবং জেলা পর্যায়ের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, জেল সুপার, অতিরিক্ত ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার প্রায় ২৮টি ক্যাটাগরির ২য় ও ৩য় শ্রেণীর পদকে ১ম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরে মাঠপ্রশাসনে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সংশ্লিষ্ট আবেদনে বলা হয়, জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৮-এ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদী ১নং সিদ্ধান্ত ‘মাঠপ্রশাসনে কর্মরত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদেরকে সচিবালয়ের ন্যায় পদোন্নতি প্রদান’ এবং জেলা প্রশাসক সম্মেলন, ২০১৯-এ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘমেয়াদি ৯নং সিদ্ধান্ত ‘পরীক্ষা নিরীক্ষাক্রমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের সহকারী কমিশনার (নন-ক্যাডার) পর্যন্ত পদোন্নতির বিধান করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। মাঠপ্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০২২ সালের ২৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়; তদপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনাসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ২৬ জুলাই ২০২২ তারিখের সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে-‘বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সমূহে সহকারী কমিশনার (নন- ক্যাডার) পদ সৃজনের অবেদনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক সম্মেলনের সিদ্ধান্তের সাথে সম্পৃক্ত, যা প্রশাসনিকভাবে নিষ্পত্তিযোগ্য, বিধায় আবেদনের বিষয়ে এই কমিটিতে ভিন্ন কোন সুপারিশ-সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই।’
তাই সরকারের মাঠপ্রশাসনে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সমূহ ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহকারী কমিশনার (নন-ক্যাডার) পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ জানানো হয় আবেদনে।