মো. হাছিবুল বাসার

অস্ট্রেলিয়া যখন বিজয়-উল্লাস করছে, পুরো স্টেডিয়ামে তখন পিনপতন নীরবতা। প্রায় অজেয় হয়ে উঠা ভারত ফাইনালে এসেই প্রথম হার দেখল, সেটাই হলো শেষ। বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের কাঁদিয়ে ওয়ানডেতে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো অস্ট্রেলিয়া। গতকাল বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে উড়িয়ে দিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। একতরফা খেলে তারা ম্যাচটি জিতেছে ৬ উইকেট আর ৪২ বল হাতে রেখে। যদিও ২৪১ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মোহাম্মদ শামি-জাসপ্রিত বুমরাহদের বোলিং তোপে ৪৭ রান তুলতেই তারা হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। তবে সেখান থেকে ট্রাভিস হেড আর মার্নাস লাবুশেন ২১৫ বলে ১৯২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন। জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে মোহাম্মদ সিরাজের বলে আউট হন হেড। ১২০ বলে ১৩৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসে ১৫টি চার আর ৪টি ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি এই ব্যাটার।

এর আগে আহমেদাবাদে টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। নিজেদের প্রথম ১০ ওভারে সুবিধা করতে না পারায় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল ব্যাপক। এর পর দলীয় ৩০ রানে শুভমান গিল ফিরে গেলে রানের চাকা সচল রাখেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। এর পরই স্বরূপে ফিরে অজি বোলাররা। ব্রেকথ্রুর আশায় অষ্টম ওভারে প্রথমবারের স্পিন আক্রমণে আনেন কামিন্স। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওভারের দ্বিতীয় বলেই লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে চড়াও হন রোহিত। পরের বলে মারেন চার। তবে মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেননি বেশিক্ষণ। কাভারে উঠা বলকে পেছন দিক থেকে ছুটে দুর্দান্ত ক্যাচ বানিয়ে রোহিতকে ফেরান ট্রাভিস হেড। আউটের আগে ৩১ বলে ৪৭ রান করেন তিনি। রোহিতের পর উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক শুরুর চেষ্টা করেছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। তবে ৩ বলে ৪ রান করে ফেরেন তিনিও। কামিন্সের বল ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটকিপারের গ্লাভসে। পুরো ম্যাচে ভারত এদিন ভুগেছে বাউন্ডারির অভাবে। বল সীমানাছাড়া করতে যেন হাপিত্যেশ করেছেন কোহলিরা। রোহিত-আইয়ার ফিরে যাওয়ার পর ১৫ ওভারের বেশি বাউন্ডারি পায়নি ভারত। কোহলি আর রাহুল ইনিংস মেরামত করেছেন ঠিকই। তবে তাতে রানরেট কমেছে অনেকটাই। অবশ্য এরই মধ্যে টানা ৫ম ফিফটি তুলে নিয়েছেন কোহলি। আসরজুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই টপ অর্ডার ব্যাটার ফাইনালে এসেও ফিফটির দেখা পেলেন। ৫৬ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন। এটি তার টানা পঞ্চম পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। সব মিলিয়ে আসরে ১০ ম্যাচের ৮টিতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন তিনি। তবে ফিফটির পরেই ফিরতে হয়েছে কোহলিকে। কামিন্সের লাফিয়ে ওঠা বলে কাট করতে গিয়ে ইনসাইড এজে ফিরে যান তিনি। এর পর জাদেজা এসেছিলেন। কিন্তু তিনিও ভারতকে বড় কিছু এনে দিতে পারেননি। ৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে হ্যাজলউডের খাটো লেন্থের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ৯ রান। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ভারতের দ্বিতীয় দফার বাউন্ডারিখরা। ইনিংসের ৩০তম ওভারে বাউন্ডারির পর যেন বল আর সীমানা পার হতেই চাইছিল না। সিঙ্গেল আর ডাবলই হয়ে যায় রাহুল-সূর্যকুমার যাদবের ভরসা। ধীরগতিতে ব্যাট চালিয়ে রাহুল ফিফটি তুলেছেন ৮৫ রানে। এর পরের গল্পটা মোটামুটি হতাশার। ভারতের ইনিংসে বড় রান আর আসেনি। রাহুলের প্রস্থানের পর ভারতের আর কেউ বড় কিছু করতে পারেননি। ইনিংসের শেষ ওভারে এসে সিরাজের চার বাউন্ডারি খরা পার করতে সাহায্য করেছে। মাঝে অবশ্য শামি, সূর্যকুমাররা ব্যর্থতার গল্পটাই কেবল ভারি করেছেন। ভারত অলআউট হয়েছে ঠিক ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে। রানআউটে কুলদীপ ফেরার আগে তুলেছিল ২৪০ রানের মাঝারি সংগ্রহ।