প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ খুন, বিএনপি-জামায়াতের একমাত্র গুণ। এ ছাড়া তাদের আর কোন গুণ নেই। এ কারণে তারা ক্ষমতায় আসতে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে। তাদের প্রতিহত করতে ইতিমধ্যেই অগ্নিসংযোগকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এদের কোন ক্ষমা করা হবে না বলেও উল্লেখ করেন। তিনি সোমবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, বিএনপি ইসরাইলের ইয়াহুদীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারাও ইয়াহুদীদের মত হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিচ্ছে। তাদের চরিত্র কখনো বদলাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এমনকি তিনি বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও ওয়াদা ভঙ্গকারী বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বেশি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র হবে খুলনা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার খুলনার অনেক উন্নয়ন করেছে। ইতিমধ্যেই আরো ২৯ টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে উন্নয়ন আরো তরান্বিত হবে।
বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশে দারিদ্রতা কমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, সাক্ষরতার হার বেড়েছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষের পুষ্টির ঘাটতি নেই। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি, উপবৃত্তি ও গবেষণার জন্য টাকা দেয়া হচ্ছে। আইসিটি সহ বিভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করে শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। ভূমিহীন এবং গৃহহীন মানুষদের জমি ও ঘর দেয়া হচ্ছে। একটি মানুষও ভূমিহীন এবং গৃহহীন থাকবে না। আশ্রয়ন প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম এবং বীর নিবাস এর মাধ্যমে ঘর প্রদান করা হচ্ছে। একটি মানুষও যেন ঠিকানা বিহীন না থাকে সেজন্য সরকার এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক করা হয়েছে। এছাড়াও বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে। জাতীয় বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রেলওয়ে ও বিমানের উন্নয়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের উন্নয়ন হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন এই ২৮ অক্টোবর কীভাবে পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বেহুঁশ হয়ে গেছে তাও ছাড়েনি। তারপর কুপিয়েছে। ৪৫ জন পুলিশ আহত হয়েছে। সাংবাদিকদেরও ছাড়েনি। সাংবাদিকদের তারা পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ স্টেশনে ঢুকে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স ভেঙেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য এ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। ২০০৮ সাল ২০১৪, ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছি। ধারাবাহিক গণতান্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও চালু করে।
তিনি আরও বলেন, আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াতের কাজই আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। আগুন দিতে আসলে আপনারাই ওই হাত আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।
তিনি আরও বলেন, বার বার সরকার গঠন করেছি, আমারতো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি মানুষের ভাগ্য বদল করতে চাই। বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। আপনারাই বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।
নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দিবেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।
পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী, জেলা নেতা কামরুজ্জামান জামাল ও খুলনা সদর থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।
বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধূরী, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হোসেন, আবু সাঈদ আল-মাহমুদ স্বপন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সংসদ সদস্য যথাক্রমে হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, আব্দুস সালাম মূর্শেদী, সারহান নাসের তন্ময়, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আক্তারুজ্জামান বাবু, মাশরাফি বিন মর্তুজা প্রমূখ।
উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হারুনার রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শেখ সোহেলসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।