- বন্দীদের মানবেতর জীবন যাপন
- রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বন্দী বাড়ছে
- ধারণ ক্ষমতার তুলনায় চাপ বেশি রাজশাহীতে
রাজশাহী অঞ্চলের কারাগারগুলোতে বন্দীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার তিনগুণ। শুধু রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন বন্দীর জায়গার বিপরীতে থাকতে হচ্ছে সোয়া তিনজনকে। রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর কারাগারে বন্দী আরও বাড়ছে। সাধারণ আসামির পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় রাজনৈতিক দলের
নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠাচ্ছেন।
এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্দী। এ অঞ্চলের কারাগারগুলো আগে থেকেই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে সবসময় বন্দি বেশি থাকে। কারা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কারাগার সংশোধনের জায়গা হলেও সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, বন্দীরা মানবেতর জীবন যাপন
করছেন।
একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে, দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগার মিলিয়ে মোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। আট বিভাগের মধ্যে বন্দী বেশি
ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ধারণক্ষমতার তুলনায় চাপ সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে। রাজশাহীতে একজন বন্দীর জায়গার বিপরীতে থাকতে হচ্ছে সোয়া
তিনজনকে। এখানে মোট বন্দী ১৩ হাজার ৫৯৮ জন। কারাবিধি অনুযায়ী, একজন বন্দীর থাকার জন্য ন্যূনতম ছয় ফুট করে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের জায়গা থাকতে হয়। কারাগারে সেটা মানা সম্ভব হয় না।
কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী রাখতে হয় বলে তাঁরা কারাবিধি মানতে পারেন না। কারাগারে বন্দি অনুপাতে
কারারক্ষী না থাকায় শৃঙ্খলা রক্ষা করাও কঠিন।
বিভাগীয় কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগে ৮টি জেলার কারাগারগুলোয় বন্দির ধারণ ক্ষমতা ৪ হাজার ১৪৪ জন। বর্তমানে এসব
কারাগারে বন্দি রয়েছে সাড়ে ১৩ হাজারেরও বেশি। গত কয়েক সপ্তাহে প্রতিটি কারাগারেই প্রতিদিনি আশঙ্কাজনকভাবে বন্দি বৃদ্ধি পাচ্ছে
এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যা আরো বাড়তে পরে বলে মনে করছেন কারাগার এবং আইন সংস্থা সংশ্লিষ্টরা।
বিভাগের ৮টি জেলার মধ্যে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। কারাকর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, ১ হাজার ৪৬০ জন ধারণ
ক্ষমতার বিপরীতে বন্দি রয়েছে ৩ হাজার ৫৭২ জন। সাম্প্রতিক সময়ে ধরপাকড়ের কারণে বন্দিও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দুই মাস আগেও ছিল ৩
হাজার ২০০ জন। এছাড়াও আছে জনবল সংকট, রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যাও। ১৮৪০ সালে নির্মিত ভবনগুলোর অবস্থা বেশ ভঙ্গুর।
নাটোর জেলার কারাগারে ২০০ জন ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে কয়েদি রয়েছে ১ হাজার ৮০ জন। নওগাঁ কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৫৫০ জন। কিন্তু এখানে কয়েদি রয়েছে ১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি। জয়পুরহাট জেলার কারাগারে ১২৭ ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে কয়েদি সংখ্যা ৭১৯ জন। বগুড়া জেলা কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৭৮৫ জন হলেও কয়েদি রয়েছে ২ হাজার ২৬৭ জনের অধিক। পাবনা কারাগারে ৫৭১ জন ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে কয়েদি সংখ্যা ১ হাজার ৪০৯ জনেরও বেশি। সিরাজগঞ্জ কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৬০০ জন হলেও কয়েদি আছেন ১ হাজার ৫০০ জনেরও অধিক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে ৫৮৬ জন ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে কয়েদি সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আশঙ্কা, আগামী দিনগুলোতে তাদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হবে। এতে
কারাগারে বন্দীর সংখ্যা আরও বাড়বে। ফলে মানবেতর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গণগ্রেফতার বন্ধ করে,
আসামিদের সহজে জামিন দিয়ে এবং দ্রুত বিচার শেষ করার পর খালাসপ্রাপ্তদের মুক্তি দিয়ে কারাগারে মানবেতর পরিস্থিতি ঠেকানো যায়।
এছাড়া তারা বলেন, কারাগার সংশোধনের জায়গা হলেও সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, বন্দীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখন তো
অবস্থা আরও খারাপ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, কয়েদিদের বিরুদ্ধে কোনরকম নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা বা তাদেরকে কষ্টে রাখা যাবে না। এটা মানবিক বিষয়। বন্দিদের জন্য মানবিক পরিবেশ
নিশ্চিত করতে হবে। কয়েকটি কারাগারের কারাকর্তৃপক্ষ নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, কয়েদিদের রাখতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। যা কয়েদি ও কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।
রাজশাহী বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো: কামাল হোসেন বলেন, আপাতত কোন সমস্যা হচ্ছে না। বন্দির সংখ্যা এর চাইতে বেশি হলেও
সমস্যা হবে না।