বুধবার- ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

বুধবার- ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

প্রচ্ছদ /

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি

রাজস্ব আয় ব্যহত, জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে

Add Your Heading Text Here

জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের খরচ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে নতুন নিয়মের কারণে। ফলে রাজস্ব আয়ের টার্গেট পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় নিবন্ধন ফি অর্ধেকে নামিয়ে আনলেও জাতীয় রাজস্ব র্বোড কর আরোপ করেছে দ্বিগুণ। ফলে জমির প্রকৃত মূল্য এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় সমান। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশের কয়েকটি এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাটের সাফকবলা রেজিস্ট্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও রাজস্ব খাতে। নিবন্ধন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে জাতীয় রাজস্ববোর্ড গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ খাত থেকে অতিরিক্ত যে নয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ তিন হাজার কোটি টাকা আদায়ের কথা ভূমি বা আবাসন খাতের রেজিস্ট্রেশন থেকে। ভূমি নিবন্ধন খরচ দ্বিগুণ হওয়ায় কমে গেছে নিবন্ধন। যা রাজস্ব আদায়ে অশনিসংকেত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এনবিআরের সূত্রমতে, এনবিআর ২০২২-২০২৩ চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আয় করে। চলতি অর্থবছরে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে আরো ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বেশি আয় করা সম্ভব হবে। তা সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে অতিরিক্ত আরো ৯ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে এনবিআরকে।

আইএমএফ’র দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের শর্ত স্বরূপ আইএমএফ প্রতিনিধির কাছে রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরে এনবিআর। সেখানে ভ্যাট, আয়কর ও শুল্কনীতির সদস্যগণ রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। লক্ষ্য ঘাটতির ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আয়ে ছয়টি খাত নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। এসব খাতের মধ্যে ভূমি নিবন্ধন খাতকে রাখা হয়েছে প্রথমে। ভ্রমণ, তামাকজাত পণ্য, পরিবেশ সারচার্জ ও সর্বনিম্ন কর, কর আওতা বৃদ্ধি এবং বকেয়া আহরণ রয়েছে পরবর্তী খাতগুলোর মধ্যে। অর্থাৎ ভূমি নিবন্ধনই যে ঘাটতি পূরণের প্রধান খাত এ কথাই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। এ খাত থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর। জুলাই মাসে নতুন আয়কর আইন চালুর দুই মাসের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তীব্র আপত্তির মুখে নিবন্ধন কর কমাতে বাধ্য হয় সংস্থাটি। গত ৪ অক্টোবর এনবিআর কর নীতির সদস্য ড. সামসউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপন মতে, জমি রেজিস্ট্রেশন কর থেকে সরে এসে মৌজাভিত্তিক জমি কর নির্ধারণ করা হয়েছে। মৌজা অনুযায়ী বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় জমি নিবন্ধন কর পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে উৎসে কর বিধিমালায় জমি নিবন্ধনের সর্বোচ্চ কর হার ছিল ২০ লাখ টাকা বা দলিলমূল্যের আট শতাংশের মধ্যে। যা সর্বোচ্চ, এখন সংশোধিত এসআরওতে করা হয়েছে ১৫ লাক্ষ টাকা বা দলিলমূল্যের ওপর আট শংতাশের যেটি সর্বোচ্চ। কিন্তু তা সত্ত্বেও শ্রেণিভেদে জমি নিবন্ধন খরচ বেড়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। কারণ নতুন উৎসে কর আদেশ অনুযায়ী নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দেশের জমিকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ক’ শ্রেণির জমি সরকারি সংস্থা নির্মিত বাণিজ্যিক এলাকা, ‘খ’ শ্রেণি সরকারি সংস্থার আবাসিক এলাকা, ‘গ’ ও ‘ঘ’ শ্রেণি হচ্ছে যথাক্রমে বেসরকারি কোম্পানি-প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা। এর চার শ্রেণির জমির বাইরে থাকবে ‘ঙ’ শ্রেণিতে। শ্রেণিভেদে নিবন্ধন কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে আয়কর আইন ২০২৩-এর আওতায় উৎসে কর বিধিমালা অনুসারে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ দেশের সব এলাকার সম্পত্তি নিবন্ধন কর দ্বিগুণ করা হয়। বাংলাদেশের যেকোনো এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি বা জমি ও ফ্ল্যাট হস্তান্তর হোক না কেন, মালিকানা অর্জন করতে কর দ্বিগুণ গুনতে হবে। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনে যে এলাকায় ১, ৩, ৪ শতাংশ কর ছিল তা বৃদ্ধি করে ২, ৬ ও ৮ শতাংশ করা হয়। নিবন্ধন কর হিসেবে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থসাউদ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালী এলাকায় সম্পত্তি কিনলে ক্রেতাকে জমি, ফ্ল্যাট বা যেকোনো স্থাপনা নিবন্ধনের জন্য কাঠাপ্রতি ৮ শতাংশ বা ২০ লাখের মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ সেটি গুনতে হবে। চলতি বছর ১৮ জুন জাতীয় সংসদে আয়কর বিল-২০২৩ পাস হয়। গত ৩ জুলাই আয়কর আইন ২০২৩ এর আওতায় উৎসে কর নতুন বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করে এনবিআর। এর পর থেকে বেড়ে যায় নিবন্ধন খরচ। এর মধ্যে পাঁচ ভাগে বিভক্ত জমির কোনো কোনো শ্রেণির জমি নিবন্ধনের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় জমির স্থানীয় মূল্যেরও বেশি। যেমন জমির স্থানীয় মূল্য যদি হয় ২২ লাখ টাকা, উৎসে করসহ জমির নিবন্ধন খরচ দাঁড়ায় ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ মুহূর্তে ক্রেতা যদি ২২ লাখ টাকার জমি কিনতে চান, তাকে পরিশোধ করতে হবে ৪৬ লাখ টাকা। এ কারণে এই শ্রেণির জমির খরিতদাররা আপাতত জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করছে না।
এদিকে জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশ কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশের আবাসন শিল্পে। জমি বা ফ্ল্যাটের ক্রেতারা কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে মাথায় হাত পড়েছে এ শিল্পসংশ্লিষ্টদের। আবাসন খাতের জাতীয় সংগঠন ‘বিএল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’Ñরিহাব বরাবরই নিবন্ধন খরচ কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা জানান, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। এই খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্তত দুই কোটি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। জমি বা ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আবাসন শিল্প সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারও বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।

ট্যাগঃ

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়