ঢাকা ০৭:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংসদীয় আসন ঝালকাঠি-২ আওয়ামীলীগে আমু , বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তফসীল ঘোষনার সময় খুব কাছে আসায় ঝালকাঠি-২ আসনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনী আমেজ
পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ এ আসনে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী বতর্মান এমপি আমীর হোসন আমু। যদি তিনি কোন কারণে প্রার্থী না হোন তাহলে একাধিক দলীয় নেতা প্রার্থী হবার কথা জানাযায়। তবে যেহেতু এখন পর্যন্ত আমু একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী তাই তার প্রার্থী হবার বিষয়টি শত ভাগ নিশ্চিত। অপর দিকে মামলা ও গ্রেফতারের কারণে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে বা এলাকায় না থাকায় এ আসনে নির্বাচন নিয়ে কোন আগ্রহ উৎসাহ কিছুই নেই তাদের মাঝে।
ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-২ আসন। এই আসন থেকে আবারও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ সাবেক শিল্প ও খাদ্যমন্ত্রী, দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। ২০০০ সালে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৯ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। পরবর্তী দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আমির হোসেন আমু। এ সময় তিনি তার এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে দেন। এ কারণে এক সময়ে ঝালকাঠি-২ আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও আমুর উন্নয়নের জোয়ারে সেই পরিবেশ পাল্টে গেছে।
১৯৭৩ সালের পর এ আসনটি চলে যায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদসস্য নির্বাচিত হন জুলফিকার আলী ভূট্টো। ১৯৯১ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পেয়েই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আমির হোসেন আমু ও জাতীয় পার্টির জুলফিকার আলী ভূট্টোকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন ঝালকাঠি পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী আজিজ ফেরদৌস। এরপর ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজী আজিজ ফেরদৌসকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির জুলফিকার আলী ভূট্রো। জুলফিকার আলী ভূট্টোর মৃত্যুর পর ২০০০ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমুর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান জুলফিকার আলী ভূট্টোর স্ত্রী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভূট্টো। এরপর বিএনপিতে যোগ দেন ইলেন ভূট্টো। ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেন ভূট্টোর সাথে হেরে যান আমির হোসেন আমু। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি আবার আওয়ামী লীগের ঘরে ফিরিয়ে আনেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদে তিনি এলাকায় বেশ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তাঁর বিচক্ষণ রাজনীতির কারণে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী স্থানীয় আওয়ামী লীগ। নেই কোনো কোন্দল।
এদিকে বিগত ১৫ বছর ধরে মামলা হামলায় জর্জরিত হয়ে এলাকায় কোনঠাসা বিএনপি নেতাকর্মীরা। গত তিন চার মাসে ঘুরে দাড়ালেও ২৮ অক্টোবরের ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পর বিভিন্ন মামলা ও হয়রানির কারণে বর্তমানে অধিকাংশ নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া। তবে ঝালকাঠি-২ আসনে এবার বিএনপি নির্বাচনে এলে দলীয় মনোনয়ন আবারো পাবার সম্ভাবনা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি জেবা আমিনা খানের। গত ২০১৪ সনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেবা খানকে মনোনয়ন দিলে তিনি মাঠে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে টিকে ছিলেন। তার উপর হামলা গাড়ি ভাংচুর হলেও তিনি মাঠ ছাড়েননি। তৃণমুল নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আমির হোসেন আমুর বিপরীতে তখন জেবা খান পরাজীত হলেও নেতাকর্মীদের মনোবল শক্ত রাখতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ঐ নির্বাচনে তিনি প্রমান করেছেন এখানে আমুর মতো একজন জনপ্রীয় নেতার সাথে প্রার্থী হয়ে পরাজয় হলেও মাঠে থাকার জন্য জেবা খানের বিকল্প নেই। তাই এবারো বিএনপি নির্বাচন করলে জেবা খানকেই মনোনয়ন দেয়া হবে বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ঐ সময় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান বর্তমান সময়ের চেয়ে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এবার সেই অবস্থান নেই জেলা বিএনপির। দলীয় কোন্দলের কারণে সাংগঠনিক ভাবে অনেক দুর্বল বর্তমান বিএনপি।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে আছেন সাবেক এমপি ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক ভিপি বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সহসভাপতি জেবা আমিনা খান ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। জেবা আমিনা খান এলাকায় আসতে না পারলেও সার্বক্ষনিক খোজ খবর ও সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় এবারো দলীয় মনোনয়নে যোগ্য প্রার্থী জেবা আমিনার কোন বিকল্প নেই বলে অধিকাংশ তৃণমুল নেতাকর্মীদের ধারনা।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন দলীয় কর্মকান্ডকে পরিচালিত করে বর্তমান সরকারের শুরু থেকে মাঠে আছেন। একাধিক মামলায় তিনি আসামী হয়ে আইনজীবী হলেও বর্তমানে গাঢাকা দিয়ে গ্রেফতার এরিয়ে চলছেন।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সাম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর। দলে তার অবদান কম নয়। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে এক সময় জেলা বিএনপির নেতৃত্বে থাকা এই নেতা মাঝে নিস্ক্রিয় হলেও এখন আবার সক্রিয়।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে যদি তিন’শ আসনে প্রার্থী দেয় সেক্ষেত্রে এখান থেকে দলীয় চেয়ারম্যানের ক্রীড়া উপদেস্টা এমএ কুদ্দুস খানের নাম শোনা যাচ্ছে। যদিও তার কোন পরিচিতি ও তৎপরতা নেই এলাকায়। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনে এলে তাদের প্রার্থী হতে পারেন নওমুসলিম ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম সিরাজী।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো বলেন, এ এলাকার মানুষ তার প্রয়াত স্বামী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও তাকে বারবার নির্বাচিত করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে ২০০১ সালের মতো আবারও তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশে নির্বাচনের কোনো পরিস্থিতি নেই। আপাতত নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই।’ পরিস্থিতি অনুযায়ী দল নির্বাচনে এলে পরীক্ষিত একজন নেতা হিসেবে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন তিনি। দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয়, তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা রয়েছে তাদের। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে দলের জন্য অনেক ত্যাগ রয়েছে তার, সে কারণে তিনিও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এ ছাড়া দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা-ই মেনে নেবেন তিনি।
ঝালকাঠি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, আগামী নির্বাচনে নৌকায় যাতে জনগণ ভোট দেয় সেজন্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচার প্রচারনা চালানো হচ্ছে। প্রত্যেক সভা সমিতিতেই উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে সাধারণ মানুষ যদি তা বিবেচনায় নেয় তাহলে তারা আবারো নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
এ আসনে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৭ জন । ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৩০ জন। গত নির্বাচনের চেয়ে ভোটার বেড়েছে ৫৮ হাজার ৯৯৭ জন। বাড়তি ভোটারদের বেশীরভাগই তরুণ, যারা এবারই প্রথম ভোট দিবেন। সে হিসেবে তরুণ ভোটাররা এবারে নির্বচনে জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ট্যাগস :

সংসদীয় আসন ঝালকাঠি-২ আওয়ামীলীগে আমু , বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

আপডেট সময় : ১২:১৫:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তফসীল ঘোষনার সময় খুব কাছে আসায় ঝালকাঠি-২ আসনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনী আমেজ
পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ এ আসনে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী বতর্মান এমপি আমীর হোসন আমু। যদি তিনি কোন কারণে প্রার্থী না হোন তাহলে একাধিক দলীয় নেতা প্রার্থী হবার কথা জানাযায়। তবে যেহেতু এখন পর্যন্ত আমু একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী তাই তার প্রার্থী হবার বিষয়টি শত ভাগ নিশ্চিত। অপর দিকে মামলা ও গ্রেফতারের কারণে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে বা এলাকায় না থাকায় এ আসনে নির্বাচন নিয়ে কোন আগ্রহ উৎসাহ কিছুই নেই তাদের মাঝে।
ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-২ আসন। এই আসন থেকে আবারও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ সাবেক শিল্প ও খাদ্যমন্ত্রী, দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। ২০০০ সালে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৯ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। পরবর্তী দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আমির হোসেন আমু। এ সময় তিনি তার এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে দেন। এ কারণে এক সময়ে ঝালকাঠি-২ আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও আমুর উন্নয়নের জোয়ারে সেই পরিবেশ পাল্টে গেছে।
১৯৭৩ সালের পর এ আসনটি চলে যায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদসস্য নির্বাচিত হন জুলফিকার আলী ভূট্টো। ১৯৯১ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পেয়েই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আমির হোসেন আমু ও জাতীয় পার্টির জুলফিকার আলী ভূট্টোকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন ঝালকাঠি পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী আজিজ ফেরদৌস। এরপর ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজী আজিজ ফেরদৌসকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির জুলফিকার আলী ভূট্রো। জুলফিকার আলী ভূট্টোর মৃত্যুর পর ২০০০ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমুর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান জুলফিকার আলী ভূট্টোর স্ত্রী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভূট্টো। এরপর বিএনপিতে যোগ দেন ইলেন ভূট্টো। ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেন ভূট্টোর সাথে হেরে যান আমির হোসেন আমু। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি আবার আওয়ামী লীগের ঘরে ফিরিয়ে আনেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদে তিনি এলাকায় বেশ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তাঁর বিচক্ষণ রাজনীতির কারণে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী স্থানীয় আওয়ামী লীগ। নেই কোনো কোন্দল।
এদিকে বিগত ১৫ বছর ধরে মামলা হামলায় জর্জরিত হয়ে এলাকায় কোনঠাসা বিএনপি নেতাকর্মীরা। গত তিন চার মাসে ঘুরে দাড়ালেও ২৮ অক্টোবরের ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পর বিভিন্ন মামলা ও হয়রানির কারণে বর্তমানে অধিকাংশ নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া। তবে ঝালকাঠি-২ আসনে এবার বিএনপি নির্বাচনে এলে দলীয় মনোনয়ন আবারো পাবার সম্ভাবনা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি জেবা আমিনা খানের। গত ২০১৪ সনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেবা খানকে মনোনয়ন দিলে তিনি মাঠে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে টিকে ছিলেন। তার উপর হামলা গাড়ি ভাংচুর হলেও তিনি মাঠ ছাড়েননি। তৃণমুল নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আমির হোসেন আমুর বিপরীতে তখন জেবা খান পরাজীত হলেও নেতাকর্মীদের মনোবল শক্ত রাখতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ঐ নির্বাচনে তিনি প্রমান করেছেন এখানে আমুর মতো একজন জনপ্রীয় নেতার সাথে প্রার্থী হয়ে পরাজয় হলেও মাঠে থাকার জন্য জেবা খানের বিকল্প নেই। তাই এবারো বিএনপি নির্বাচন করলে জেবা খানকেই মনোনয়ন দেয়া হবে বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ঐ সময় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান বর্তমান সময়ের চেয়ে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এবার সেই অবস্থান নেই জেলা বিএনপির। দলীয় কোন্দলের কারণে সাংগঠনিক ভাবে অনেক দুর্বল বর্তমান বিএনপি।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে আছেন সাবেক এমপি ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক ভিপি বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সহসভাপতি জেবা আমিনা খান ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। জেবা আমিনা খান এলাকায় আসতে না পারলেও সার্বক্ষনিক খোজ খবর ও সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় এবারো দলীয় মনোনয়নে যোগ্য প্রার্থী জেবা আমিনার কোন বিকল্প নেই বলে অধিকাংশ তৃণমুল নেতাকর্মীদের ধারনা।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন দলীয় কর্মকান্ডকে পরিচালিত করে বর্তমান সরকারের শুরু থেকে মাঠে আছেন। একাধিক মামলায় তিনি আসামী হয়ে আইনজীবী হলেও বর্তমানে গাঢাকা দিয়ে গ্রেফতার এরিয়ে চলছেন।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সাম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর। দলে তার অবদান কম নয়। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে এক সময় জেলা বিএনপির নেতৃত্বে থাকা এই নেতা মাঝে নিস্ক্রিয় হলেও এখন আবার সক্রিয়।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে যদি তিন’শ আসনে প্রার্থী দেয় সেক্ষেত্রে এখান থেকে দলীয় চেয়ারম্যানের ক্রীড়া উপদেস্টা এমএ কুদ্দুস খানের নাম শোনা যাচ্ছে। যদিও তার কোন পরিচিতি ও তৎপরতা নেই এলাকায়। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনে এলে তাদের প্রার্থী হতে পারেন নওমুসলিম ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম সিরাজী।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো বলেন, এ এলাকার মানুষ তার প্রয়াত স্বামী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও তাকে বারবার নির্বাচিত করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে ২০০১ সালের মতো আবারও তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশে নির্বাচনের কোনো পরিস্থিতি নেই। আপাতত নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই।’ পরিস্থিতি অনুযায়ী দল নির্বাচনে এলে পরীক্ষিত একজন নেতা হিসেবে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন তিনি। দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয়, তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা রয়েছে তাদের। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে দলের জন্য অনেক ত্যাগ রয়েছে তার, সে কারণে তিনিও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এ ছাড়া দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা-ই মেনে নেবেন তিনি।
ঝালকাঠি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, আগামী নির্বাচনে নৌকায় যাতে জনগণ ভোট দেয় সেজন্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচার প্রচারনা চালানো হচ্ছে। প্রত্যেক সভা সমিতিতেই উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে সাধারণ মানুষ যদি তা বিবেচনায় নেয় তাহলে তারা আবারো নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
এ আসনে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৭ জন । ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৩০ জন। গত নির্বাচনের চেয়ে ভোটার বেড়েছে ৫৮ হাজার ৯৯৭ জন। বাড়তি ভোটারদের বেশীরভাগই তরুণ, যারা এবারই প্রথম ভোট দিবেন। সে হিসেবে তরুণ ভোটাররা এবারে নির্বচনে জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।