ঢাকা ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সালাহ উদ্দিন মাহমুদের কবিতা

আমি ও আমার কবিতা

প্রথমত নিজেকে কবি বলতে দ্বিধা হয় আমার। অথচ আমার দুটি কবিতার বই ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও কবিতা আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। অনেকটা রমণীর অন্তরের মতো। কঠিন মনে হয় রাষ্ট্রের চোখ রাঙানির মতো। দুঃসাধ্য মনে হয় জীবনের সফলতার মতো। কিন্তু বরাবরই কবিতা পড়তে আমার অসম্ভব ভালো লাগে। কারো কণ্ঠে শুনতে আরও বেশি ভালো লাগে। কবিতা মূলত সাধনার বিষয়। কবিতা হচ্ছে-কতটা কঠিন করেও সহজ কথাটা বলা যায়। মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করা যায়। তাই তো সেই কঠিনেরই ভালোবাসতে চেষ্টা করি মাঝে মাঝে। ভালোবেসে যাবো আজীবন।

শেষ ইচ্ছা

কোনো এক অপূর্ণতা নিয়েই হয়তো বিদায় নিতে হবে;
করি করি করেও যে কাজটি কখনোই করা হবে না।
কাউকে বলাও হবে না যে, আমার শেষ ইচ্ছাটা কী ছিল?
কাছের মানুষগুলো নিজেদের ইচ্ছাকে আমার বলে চালিয়ে দেবে:
তখন ধমক দেওয়ার আমি থাকব না, চ্যালেঞ্জ করার কেউ থাকবে না।
পরকালেও হয়তো জানব না, পৃথিবীতে আমার শেষ ইচ্ছা কী ছিল?

হায় জীবনানন্দ!

চিরকাল সোনালি ডানার চিলের পেছনেই ছুটে চলা;
জীবনের আনন্দটাই ছুঁয়ে দেখা হলো না-
দেখা হয়নি ঘাসের বুকে কমলা রঙের রোদ।
পাখির নীড়ের মতো চোখেও এক চিলতে শান্তি নেই-
তার প্রেম যেন চিরকালই ঘাস হয়ে আসে।
যে জীবন দোয়েলের-শালিকের কিংবা পানকৌড়ির,
ট্রামের তলায় নিঃশেষ হয়ে যায় কামরাঙা দুপুরে।

চিরকুটের শেষ লাইন

‘শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না!’
কী গভীর কথা, কী গভীর দুঃখবোধ, আহারে জীবন!
এভাবেই নিভে যায় কতশত প্রদীপ, কত সুখের স্বপন;
কার কি ক্ষতি হয়, সে-ই শুধু জানে, যার যায়, পোড়ায়-
দহনের জ্বালা থামে না তো আর, ক্ষণে ক্ষণে কাঁদায়।
শেষ সম্বলটুকু রেখে যায়, প্রিয়জনের হাতে নিথর দেহ
জীবনের ক্ষত-দুঃখবোধ দেখলো না, জানলো না কেহ।

অসহ্য ভালোবাসা

আগে আমাকে সহ্য করতে শেখো,
তারপর না হয় ভালোবাসতে এসো।
আমার বাউণ্ডুলে স্বভাব-বদঅভ্যেস,
যখন-তখন বাইরে যাওয়ার আবদার;
তোমার ভালো না-ও লাগতে পারে।
আমাকে ভালোবাসতে এসে অবশেষে
বিষিয়ে উঠতে পারে তোমার হৃদয়।
আমার হয়তো মাঝরাতে পড়তে মন চাইবে,
মন চাইবে দরজা খুলে হুটহাট বেরিয়ে পড়ি;
ছুটির দিনে সিনেমা-নাটক চলবে বিরতিহীন।
তুমি যদি এসব সহ্য করতে না-ই পারো তবে;
প্লিজ, আমাকে অযথা ভালোবাসতে এসো না।

তোমার জন্য

তুমি হাত বাড়ালেই এগিয়ে যাই
জাপটে ধরি ভালোবাসার আকাশ,
তুমি দূরে গেলেই বর্ষা নামে
দুঃখ ঝরে হৃদয়জুড়ে বারোমাস।
তোমার এক ইশারায় সুখের পায়রা
নামছে দেখো সুখের আঙিনায়,
তোমার মনের গহীন বনে সুখপাখিটা
একলা একা নীড় হারায়।

তোমার চোখের জলে বইলে স্রোত
মন নাবিকও করে নোঙর,
তুমি কাছে ডাকলেই দৌড়ে পালায়
মেঘ-পৃথিবীর অন্ধকার।

মাকে নিবেদিত

মাকে কখনোই কিছু চাইতে দেখিনি-শুধু দিয়েই গেলেন আমাদের,
বিশাল সংসারের বোঝা যেদিন কাঁধে নিয়েছিলেন; সেদিন থেকে
হাসিমুখেই মেনে নিয়েছিলেন বাবার ব্যর্থতা, অভাবের চোখ রাঙানি;
আশায় আশায় থেকেছেন-একদিন সফলতার মুখ দেখবেন বলে।
মা আমাদের উজাড় করে দিয়েছেন, পাতিলের ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত
কড়াইয়ের বড় তরকারিটা; তৃপ্তির ঢেঁকুড় তোলার আগপর্যন্ত ক্ষান্ত হননি-
অথচ নিজে বেছে নিয়েছেন কাঁকড় মেশানো ভাত, মাংসের ভিড়ে
এক টুকরো আলু কিংবা ভাঙা মাছের অবশিষ্ট কাঁটাকুঁটো।
মাকে কখনোই কিছু চাইতে শুনিনি-প্রতিবার প্রার্থনায় শুধু চেয়েছেন,
‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’। তার চোখে অহেতুক উচ্চাকাক্সক্ষা দেখিনি
আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কাঁদতে দেখেছি, প্রার্থনায় নত হতে দেখেছি…

ট্যাগস :

সালাহ উদ্দিন মাহমুদের কবিতা

আপডেট সময় : ০৬:৪৩:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

আমি ও আমার কবিতা

প্রথমত নিজেকে কবি বলতে দ্বিধা হয় আমার। অথচ আমার দুটি কবিতার বই ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও কবিতা আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। অনেকটা রমণীর অন্তরের মতো। কঠিন মনে হয় রাষ্ট্রের চোখ রাঙানির মতো। দুঃসাধ্য মনে হয় জীবনের সফলতার মতো। কিন্তু বরাবরই কবিতা পড়তে আমার অসম্ভব ভালো লাগে। কারো কণ্ঠে শুনতে আরও বেশি ভালো লাগে। কবিতা মূলত সাধনার বিষয়। কবিতা হচ্ছে-কতটা কঠিন করেও সহজ কথাটা বলা যায়। মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করা যায়। তাই তো সেই কঠিনেরই ভালোবাসতে চেষ্টা করি মাঝে মাঝে। ভালোবেসে যাবো আজীবন।

শেষ ইচ্ছা

কোনো এক অপূর্ণতা নিয়েই হয়তো বিদায় নিতে হবে;
করি করি করেও যে কাজটি কখনোই করা হবে না।
কাউকে বলাও হবে না যে, আমার শেষ ইচ্ছাটা কী ছিল?
কাছের মানুষগুলো নিজেদের ইচ্ছাকে আমার বলে চালিয়ে দেবে:
তখন ধমক দেওয়ার আমি থাকব না, চ্যালেঞ্জ করার কেউ থাকবে না।
পরকালেও হয়তো জানব না, পৃথিবীতে আমার শেষ ইচ্ছা কী ছিল?

হায় জীবনানন্দ!

চিরকাল সোনালি ডানার চিলের পেছনেই ছুটে চলা;
জীবনের আনন্দটাই ছুঁয়ে দেখা হলো না-
দেখা হয়নি ঘাসের বুকে কমলা রঙের রোদ।
পাখির নীড়ের মতো চোখেও এক চিলতে শান্তি নেই-
তার প্রেম যেন চিরকালই ঘাস হয়ে আসে।
যে জীবন দোয়েলের-শালিকের কিংবা পানকৌড়ির,
ট্রামের তলায় নিঃশেষ হয়ে যায় কামরাঙা দুপুরে।

চিরকুটের শেষ লাইন

‘শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না!’
কী গভীর কথা, কী গভীর দুঃখবোধ, আহারে জীবন!
এভাবেই নিভে যায় কতশত প্রদীপ, কত সুখের স্বপন;
কার কি ক্ষতি হয়, সে-ই শুধু জানে, যার যায়, পোড়ায়-
দহনের জ্বালা থামে না তো আর, ক্ষণে ক্ষণে কাঁদায়।
শেষ সম্বলটুকু রেখে যায়, প্রিয়জনের হাতে নিথর দেহ
জীবনের ক্ষত-দুঃখবোধ দেখলো না, জানলো না কেহ।

অসহ্য ভালোবাসা

আগে আমাকে সহ্য করতে শেখো,
তারপর না হয় ভালোবাসতে এসো।
আমার বাউণ্ডুলে স্বভাব-বদঅভ্যেস,
যখন-তখন বাইরে যাওয়ার আবদার;
তোমার ভালো না-ও লাগতে পারে।
আমাকে ভালোবাসতে এসে অবশেষে
বিষিয়ে উঠতে পারে তোমার হৃদয়।
আমার হয়তো মাঝরাতে পড়তে মন চাইবে,
মন চাইবে দরজা খুলে হুটহাট বেরিয়ে পড়ি;
ছুটির দিনে সিনেমা-নাটক চলবে বিরতিহীন।
তুমি যদি এসব সহ্য করতে না-ই পারো তবে;
প্লিজ, আমাকে অযথা ভালোবাসতে এসো না।

তোমার জন্য

তুমি হাত বাড়ালেই এগিয়ে যাই
জাপটে ধরি ভালোবাসার আকাশ,
তুমি দূরে গেলেই বর্ষা নামে
দুঃখ ঝরে হৃদয়জুড়ে বারোমাস।
তোমার এক ইশারায় সুখের পায়রা
নামছে দেখো সুখের আঙিনায়,
তোমার মনের গহীন বনে সুখপাখিটা
একলা একা নীড় হারায়।

তোমার চোখের জলে বইলে স্রোত
মন নাবিকও করে নোঙর,
তুমি কাছে ডাকলেই দৌড়ে পালায়
মেঘ-পৃথিবীর অন্ধকার।

মাকে নিবেদিত

মাকে কখনোই কিছু চাইতে দেখিনি-শুধু দিয়েই গেলেন আমাদের,
বিশাল সংসারের বোঝা যেদিন কাঁধে নিয়েছিলেন; সেদিন থেকে
হাসিমুখেই মেনে নিয়েছিলেন বাবার ব্যর্থতা, অভাবের চোখ রাঙানি;
আশায় আশায় থেকেছেন-একদিন সফলতার মুখ দেখবেন বলে।
মা আমাদের উজাড় করে দিয়েছেন, পাতিলের ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত
কড়াইয়ের বড় তরকারিটা; তৃপ্তির ঢেঁকুড় তোলার আগপর্যন্ত ক্ষান্ত হননি-
অথচ নিজে বেছে নিয়েছেন কাঁকড় মেশানো ভাত, মাংসের ভিড়ে
এক টুকরো আলু কিংবা ভাঙা মাছের অবশিষ্ট কাঁটাকুঁটো।
মাকে কখনোই কিছু চাইতে শুনিনি-প্রতিবার প্রার্থনায় শুধু চেয়েছেন,
‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’। তার চোখে অহেতুক উচ্চাকাক্সক্ষা দেখিনি
আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কাঁদতে দেখেছি, প্রার্থনায় নত হতে দেখেছি…