০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল 

 সূর্যের আগুন ঝরা রোদে যেন সোনালি রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে সোনালু ফুল। কিশোরীর কানের দুলের মতো মৃদু বাতাসে দুলছে। হলুদের আভা মাতোয়ারা করে রাখেছে চারপাশ। সবুজ কচি পাতার ফাঁকে ঝলমলে ফুল প্রকৃতিকে যেন সাজিয়ে তুলেছে নিজের মত করে। সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। গ্রামের ভাষায়  এটিকে বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছও বলা হয়।
সোনালি রঙের ফুল হওয়ার কারণেই মূলত এ গাছটির নামকরণ হয়েছে ‘সোনালু’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। হিন্দিতেও গাছটিকে অমলতাস বলা হয়। ইংরেজিতে সোনালু গাছকে বলা হয় গোল্ডেন শোয়ার। তবে বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে এর নামের ভিন্নতা রয়েছে।গাজীপুরে  এই ফুল সোনালু ফুল নামে বেশ পরিচিত।সোনালি রঙের ফুলের বাহার থেকেই ‘সোনালু’ নামে নামকরণ। গাজীপুরের বিভিন্ন  সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রঙ্গন ও ঢাকা – ময়মনসিংহ মহাসড়কে  সড়ক বিভাজনের উপর  গাছে  গাছে শোভা পাচ্ছে  সোনালু। গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু অন্যতম। তীব্র খরতাপে পথের পথিকের দৃষ্টি কাড়ছে এই ফুল। অনেকেই দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করেছন। অনেকেই আবার বিমোহিত হয়ে গাছ থেকে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ফুল। সোনালুর রূপ দেখে মনে হয় কোনো রূপসী কন্যা এইমাত্র হলুদের পিঁড়িতে বসেছেন। পুরো গাছ থেকে হলুদ যেন বাতাসে মিশে উড়ে যাচ্ছে।শীতে সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে সোনালু গাছ থাকে পত্রশূন্য এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার আগে গাছে নতুন পাতা গজায়।
গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে সোনালী ফুল ফোটে, তখন মনে হয় চারপাশ আলোকিত হয়ে যায়।সোনালু গাছ আকারে ছোট হলেও ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো। দীর্ঘ মঞ্জুরিদণ্ডে ঝুলে থাকা ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকানো। এ গাছের ফল বেশ লম্বা, লাঠির মতো।গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে ফুল ফোটে, তখন মনে হয় সোনালি আলোকচ্ছটায় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। ভারতের এবং বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে এবং সড়ক-মহাসড়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বন-জঙ্গলে গ্রামীণ রাস্তার ধারে ছোট বড় সোনালু গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
ফুলের পাঁপড়ি পাঁচটি, মাঝে পরাগ দণ্ড। পাতা হাল্কা সবুজাভ, মধ্য শিরা স্পষ্ট। গাছের শাখা-প্রশাখা কম, কাণ্ড সোজাভাবে উপরের দিকে বাড়তে থাকে, বাকল সবুজাভ থেকে ধূসর রঙের, কাঠ মাঝারি শক্ত মানের হয়। ফুল থেকে গাছে ফল হয়, ফলের আকার দেখতে সজিনা সবজির আকৃতির, তবে সজিনার গায়ের চামড়াতে ঢেওতোলা সোনালু ফলে তা নেই চামড়া মসৃণ। ফল লম্বায় প্রায় এক ফুট, রঙ প্রথমে সবুজ ও ফল পরিপক্ব হলে কালচে খয়েরি রঙ ধারণ করে। ফলে বীজ হয়, বীজ থেকে বংশ বিস্তার ঘটে। কোনো কোনো অঞ্চলে সোনালু’র ফলকে বানর লাঠি হিসেবে চিনে বলে গাছটিকেও তাদের বানরলাঠি গাছ বলে ডাকতে শোনা যায়। বাংলাদেশের সিংহভাগ সোনালু গাছ জন্মায় প্রাকৃতিকভাবে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণাবলী সম্পন্ন এই গাছটি বেশির ভাগই বেড়ে উঠছে অযত্ন-অবহেলায়। রোপণের সংখ্যা একেবারেই কম।
গ্রামাঞ্চলের মেঠো পথে, সোনালি অলংকারে সৌন্দর্য বিলিয়ে নিশ্চুপভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি রাঙানো সোনালু। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে গাছের প্রতিটি ডাল-পালায় থোকায় থোকায় অলংকারের ন্যায় শোভা পায় সোনালু ফুল। গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন স্থানে গ্রীষ্মের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝড়া সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলছে দুল। প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধণে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ঝুলে থাকা পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট সোনালু ফুলের থোকা অনেকটা অলংকারের মতো। গ্রামের শিশু-কিশোরীরা এখনো ওই ফুল কানে দুল লাগিয়ে খেলায় মত্ত হয়।ফুলের আভায় শোভিত জেলার  উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লাহ। গত দুই বছর মহামারি করোনার কারণে প্রকৃতির উপহার হিসেবে স্থানীয় গাছগুলোতে ফুটতে শুরু করেছে নানা রকম ফুল। তবে গ্রীষ্মের এই সময়ে সোনালু ফুলের সোনাঝড়া রূপে মাতোয়ারা প্রকৃতি প্রেমিরা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এই সোনালু ফুল ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য প্রাণ খুলে উপভোগ করতে দেখা গেছে অনেক প্রকৃতি প্রেমিকে।
আতিকুর  রহমান নামের এক পথচারী  বলেন, কোন একদিন রাস্তায় চলন্ত পথে দূর থেকে এই গাছটি দেখলেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। পরে নিজের কাজ শেষ করে করে বন্ধু নাজমুল কে সাথে নিয়ে সোনালু গাছটির কাছে গিয়ে এর রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। সত্যি প্রকৃতির এক অপার কারুকাজ। সোনালু গাছ নিয়ে কথা হয় শ্রীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা প্রকৃতি প্রেমি নাঈম মেহেদীর  সাথে। তিনি বলেন, আমরা ছোটকালে এই সোনালু বা বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছ বাড়ির আশেপাশেই দেখেছি। তবে এখন আর দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে এই সোনালু গাছের দেখা মেলে। তবে এটি আমাদের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো এই সোনালু ফুল প্রকৃতি আমাদের উপহারস্বরূপ দিয়েছে। তবে প্রকৃতিকে সাজাতে আমাদেরও সবার এগিয়ে আসা উচিত।

প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল 

আপডেট সময় : ০৪:৪১:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪
 সূর্যের আগুন ঝরা রোদে যেন সোনালি রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে সোনালু ফুল। কিশোরীর কানের দুলের মতো মৃদু বাতাসে দুলছে। হলুদের আভা মাতোয়ারা করে রাখেছে চারপাশ। সবুজ কচি পাতার ফাঁকে ঝলমলে ফুল প্রকৃতিকে যেন সাজিয়ে তুলেছে নিজের মত করে। সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। গ্রামের ভাষায়  এটিকে বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছও বলা হয়।
সোনালি রঙের ফুল হওয়ার কারণেই মূলত এ গাছটির নামকরণ হয়েছে ‘সোনালু’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। হিন্দিতেও গাছটিকে অমলতাস বলা হয়। ইংরেজিতে সোনালু গাছকে বলা হয় গোল্ডেন শোয়ার। তবে বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে এর নামের ভিন্নতা রয়েছে।গাজীপুরে  এই ফুল সোনালু ফুল নামে বেশ পরিচিত।সোনালি রঙের ফুলের বাহার থেকেই ‘সোনালু’ নামে নামকরণ। গাজীপুরের বিভিন্ন  সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রঙ্গন ও ঢাকা – ময়মনসিংহ মহাসড়কে  সড়ক বিভাজনের উপর  গাছে  গাছে শোভা পাচ্ছে  সোনালু। গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু অন্যতম। তীব্র খরতাপে পথের পথিকের দৃষ্টি কাড়ছে এই ফুল। অনেকেই দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করেছন। অনেকেই আবার বিমোহিত হয়ে গাছ থেকে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ফুল। সোনালুর রূপ দেখে মনে হয় কোনো রূপসী কন্যা এইমাত্র হলুদের পিঁড়িতে বসেছেন। পুরো গাছ থেকে হলুদ যেন বাতাসে মিশে উড়ে যাচ্ছে।শীতে সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে সোনালু গাছ থাকে পত্রশূন্য এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার আগে গাছে নতুন পাতা গজায়।
গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে সোনালী ফুল ফোটে, তখন মনে হয় চারপাশ আলোকিত হয়ে যায়।সোনালু গাছ আকারে ছোট হলেও ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো। দীর্ঘ মঞ্জুরিদণ্ডে ঝুলে থাকা ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকানো। এ গাছের ফল বেশ লম্বা, লাঠির মতো।গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে ফুল ফোটে, তখন মনে হয় সোনালি আলোকচ্ছটায় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। ভারতের এবং বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে এবং সড়ক-মহাসড়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বন-জঙ্গলে গ্রামীণ রাস্তার ধারে ছোট বড় সোনালু গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
ফুলের পাঁপড়ি পাঁচটি, মাঝে পরাগ দণ্ড। পাতা হাল্কা সবুজাভ, মধ্য শিরা স্পষ্ট। গাছের শাখা-প্রশাখা কম, কাণ্ড সোজাভাবে উপরের দিকে বাড়তে থাকে, বাকল সবুজাভ থেকে ধূসর রঙের, কাঠ মাঝারি শক্ত মানের হয়। ফুল থেকে গাছে ফল হয়, ফলের আকার দেখতে সজিনা সবজির আকৃতির, তবে সজিনার গায়ের চামড়াতে ঢেওতোলা সোনালু ফলে তা নেই চামড়া মসৃণ। ফল লম্বায় প্রায় এক ফুট, রঙ প্রথমে সবুজ ও ফল পরিপক্ব হলে কালচে খয়েরি রঙ ধারণ করে। ফলে বীজ হয়, বীজ থেকে বংশ বিস্তার ঘটে। কোনো কোনো অঞ্চলে সোনালু’র ফলকে বানর লাঠি হিসেবে চিনে বলে গাছটিকেও তাদের বানরলাঠি গাছ বলে ডাকতে শোনা যায়। বাংলাদেশের সিংহভাগ সোনালু গাছ জন্মায় প্রাকৃতিকভাবে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণাবলী সম্পন্ন এই গাছটি বেশির ভাগই বেড়ে উঠছে অযত্ন-অবহেলায়। রোপণের সংখ্যা একেবারেই কম।
গ্রামাঞ্চলের মেঠো পথে, সোনালি অলংকারে সৌন্দর্য বিলিয়ে নিশ্চুপভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি রাঙানো সোনালু। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে গাছের প্রতিটি ডাল-পালায় থোকায় থোকায় অলংকারের ন্যায় শোভা পায় সোনালু ফুল। গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন স্থানে গ্রীষ্মের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝড়া সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলছে দুল। প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধণে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ঝুলে থাকা পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট সোনালু ফুলের থোকা অনেকটা অলংকারের মতো। গ্রামের শিশু-কিশোরীরা এখনো ওই ফুল কানে দুল লাগিয়ে খেলায় মত্ত হয়।ফুলের আভায় শোভিত জেলার  উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লাহ। গত দুই বছর মহামারি করোনার কারণে প্রকৃতির উপহার হিসেবে স্থানীয় গাছগুলোতে ফুটতে শুরু করেছে নানা রকম ফুল। তবে গ্রীষ্মের এই সময়ে সোনালু ফুলের সোনাঝড়া রূপে মাতোয়ারা প্রকৃতি প্রেমিরা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এই সোনালু ফুল ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য প্রাণ খুলে উপভোগ করতে দেখা গেছে অনেক প্রকৃতি প্রেমিকে।
আতিকুর  রহমান নামের এক পথচারী  বলেন, কোন একদিন রাস্তায় চলন্ত পথে দূর থেকে এই গাছটি দেখলেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। পরে নিজের কাজ শেষ করে করে বন্ধু নাজমুল কে সাথে নিয়ে সোনালু গাছটির কাছে গিয়ে এর রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। সত্যি প্রকৃতির এক অপার কারুকাজ। সোনালু গাছ নিয়ে কথা হয় শ্রীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা প্রকৃতি প্রেমি নাঈম মেহেদীর  সাথে। তিনি বলেন, আমরা ছোটকালে এই সোনালু বা বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছ বাড়ির আশেপাশেই দেখেছি। তবে এখন আর দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে এই সোনালু গাছের দেখা মেলে। তবে এটি আমাদের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো এই সোনালু ফুল প্রকৃতি আমাদের উপহারস্বরূপ দিয়েছে। তবে প্রকৃতিকে সাজাতে আমাদেরও সবার এগিয়ে আসা উচিত।