উড়োজাহাজ বা প্লেনে করে যেমন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে দ্রুত চলে যাওয়া যাচ্ছে; তেমনি এই দ্রুততার সেবা কিনতে পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অনেকখানি টাকা। অথচ প্লেনের টিকিট মানেই যে দামি তা কিন্তু নয়। সস্তায় প্লেনের ফ্লাইট বুক করা কিছু টিপস…..

যত আগে বুকিং তত কম দামে টিকিট

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বুকিং এর ক্ষেত্রে যত আগে টিকিট বুক করবেন তত বেশি সস্তায় পাবেন। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও এই নিয়মটি প্রযোজ্য। তাই বেড়াতে যাবার প্ল্যান থাকলে কমপক্ষে ৬০ দিন আগে টিকিট বুক করুন। আপনি আপনার নির্ধারিত যাত্রার ৭ দিন আগে বা ২ দিন আগে টিকিট বুক করলে যে দামে পেতেন, একই টিকিট প্রায় ৪০ থেকে ৬০% কম দামে পাবেন।

ট্রাভেল এজেন্ট-এর সাহায্য পরিহার করুন

ট্রাভেল এজেন্টকে দিয়ে ফ্লাইট বুক না করে নিজে খোঁজ নিয়ে ফ্লাইট বুক করুন। ট্রাভেল এজেন্টদের সাথে বিভিন্ন এরোপ্লেন কোম্পানির চুক্তি থাকে। তারা আপনাকে সস্তায় টিকিট না দিয়ে বরং ব্যবসায় লাভের জন্য ও নিজেদের কমিশনের জন্য সেসমস্ত কোম্পানির ফ্লাইট বুক করাতে বাধ্য করে এবং টাকাও বেশি রাখে।

অনলাইন অ্যাপ বা বুকিং সাইট ব্যবহার করা

অনলাইন বুকিং সাইট থেকে খোঁজ নিয়ে আগে আগে টিকিট বুক করান। এই সমস্ত সাইট তুলনামূলক কমদামে টিকিট বিক্রি করে এবং প্রায় সময়ই ফ্লাইট বুকিং এর ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় অফার দেয়। বুকিং ডট কম, এক্সপিডিয়া ডট কম, মেকমাইট্রিপ ডট কম ইত্যাদি সাইটগুলোতে এই সেবা সহজেই পাওয়া যায়। তবে এই মুহূর্তে স্কাইস্যানার নামের অ্যাপটি সহজ ব্যবহার এবং অন্য সাইটগুলোর তুলনায় সস্তায় ফ্লাইট বুক করার জন্য খুবই জনপ্রিয়। এই অ্যাপটি কয়েকটা বুকিং সাইট এ সার্চ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য সবচেয়ে কমদামী ফ্লাইটটি খুঁজে দেয়।

প্রাইভেট ব্রাউজিং মোড অন করে ফ্লাইট সার্চ করা

ফ্লাইট সার্চ করার আগে খেয়াল রাখতে হবে যেন ডিভাইসের ব্রাউজারের ইনকগ্নিটো মোড অন থাকে বা ব্রাউজিং প্রাইভেট থাকে। এটি না থাকলে আপনার ব্রাউজিং হিস্ট্রি কুকিজ-এর মাধ্যমে এয়ারপ্লেন কোম্পানির সাইটের কাছে রেকর্ড হয়ে থাকে। ফলে যখন তারা দেখে যে আপনি তাদের ফ্লাইট একটি বিশেষ দিনের বিশেষ সময়ের জন্য চান এবং বারবার অনলাইনে তার খোঁজ করছেন; তখন তারা সেই ফ্লাইটটির দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই কুকি অফ করে প্রাইভেট ব্রাউজিং মোড অন করে ব্রাউজ করলে পরে যখন অনলাইনে বুক করা হয় তখন টিকিট কম দামে পাওয়া যায়।

প্রক্সি বা ভিপিএন ব্যবহার করা
প্রাইভেট ব্রাউজিং এর পাশাপাশি ভিপিএন বা প্রক্সি ব্যবহার করে নিজের ডিভাইসের অবস্থান ও আইপি এড্রেস লুকিয়ে টিকিট ব্রাউজ করা উচিত। কারণ অনেক কোম্পানি কুকি রাখার পাশাপাশি ডিভাইসের আইপি এডড্রেস লগ করে রাখেভ। ফলে আপনার সার্চ সম্পর্কে তাদের কাছে রেকর্ড থেকে যায় এবং তারা এটার সুবিধা নেয়।

ছুটির দিনের ফ্লাইট বুকিং এড়িয়ে চলা

ছুটির দিনের আগে পরে টিকিটের দাম বেড়ে যায়। তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন বৃহস্পতি, শুক্র, শনিবারে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিটের দাম বেশি হয়; তেমনি বাইরের দেশে শনিবারের টিকিটের দাম বেশি হয়। এই কয়দিন টিকিট না কেটে আগে আগে কাটা ভালো।

সপ্তাহের মাঝামাঝি দিনের সুযোগ নেওয়া

সাধারণত সপ্তাহের মাঝের দিনগুলোতে (সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতিবার) ফ্লাইটের দাম অন্যদিনের তুলনায় একটু কম থাকে। জরিপ বলে যে, সাধারণত পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মঙ্গলবারের ফ্লাইট অন্যান্য দিনের থেকে কম দামে টিকিট ছাড়ে। মঙ্গলবারের টিকিট বুক করলে অন্য দিনের থেকে প্রায় ১০ শতাংশ কম টাকা খরচ হয়। তাই এই সুবিধা নেবার চেষ্টা করা যেতে পারে।

বুকিংয়ের ক্ষেত্রে সময়ের খেয়াল

এশিয়া মহাদেশে সকালের ফ্লাইট অন্য সময়ের থেকে সস্তা। আবার অন্য মহাদেশের সন্ধ্যার ফ্লাইট এর দরদাম সাধারণত একটু বেশি উঠানামা করে। তাই সন্ধ্যার ফ্লাইটে খরচ একটু কম হয়।

সরাসরি বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ

সরাসরি কর্তৃপক্ষের অর্থাৎ বিভিন্ন বিমান কোম্পানির সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক সময় কম দামে ফ্লাইট সার্ভিস বুক করা যায়। এই যোগাযোগ তাদের অফিসের ঠিকানায় ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে বা কোম্পানির ই-মেইল অ্যাড্রেসে বা কাস্টোমার সার্ভিস এ ফোনের মাধ্যমে সহজেই করা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির সাথে আলাদা আলাদাভাবে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষা করাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব এবং শেষ মুহূর্তের চেষ্টা

বিভিন্ন বুকিং সাইট এবং আয়ারপ্লেন কোম্পানির প্রমোশনাল অফার নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ অনেকসময় তারা শেষ মুহূর্তে এসে বড় পরিমাণের ডিস্কাউন্ট দিয়ে তাদের সেসমস্ত সিট বিক্রির চেষ্টা করে; যেগুলো নানা কারণে যাত্রার নির্ধারিত সময়ের দুয়েকদিন আগেও তারা বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়া উচিত।