কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেছে সরকার। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগীতায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। বন্ধ রয়েছে দেশের স্বাভাবিক গতিশীল কার্যক্রম।
তবে, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নেও থেমে নেই তাদের কর্মজজ্ঞ। দিনরাত হাতুড়ির টুংটাং শব্দে আর কাঠফাটা রোদে পুড়ে চলছে তাদের নিত্যদিনের পেশাগত কাজ। বলছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনে নিয়োজিত শ্রমিকদের কথা। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কিংবা দেশের রাজনৈতিক বা সর্বজনীন কোন ইস্যু নিয়ে তৈরি সংঘাত-সংঘর্ষ; কিছুই থামাতে পারেনা তাদের কাজের গতি। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে নির্মাণ কাজ করে চলেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত শ্রমিকেরা।
সরজমিনে দেখা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রজেক্টের আওতায় চলমান ১০তলা বিশিষ্ট ৩টি আবাসিক হল এবং দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। দেশব্যাপী সংঘাতের জেরে ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও কাজ ছাড়েননি এইসব শ্রমিকেরা। কোথাও বা চলছে শাটারিংয়ের কাজ, কোথাও বা ছাদ ঢালাইর প্রস্তুতি। কেওবা বালুর বস্তা মাথায় নিয়ে জায়গামতো ফেলে আসছে আবার কেওবা মেশিন দিয়ে রড ঝালাই করছে। বয়স্ক কয়েকজনকে দেখা যায় কাজ শেষে ক্লান্তিতে ছায়ায় বসে পান চিবুচ্ছে।
শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দুবছর যাবত এসব নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণের কাজ করছে তারা। মেগা প্রজেক্টের সব সাইট মিলে প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে। দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কারো মজুরি মধ্যে সহযোগিদের ৪০০-৭০০ এবং মিস্তিরির মজুরি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। এই যৎসামান্য আয় দিয়েই জীবনযাপন করতে হয় তাদের। প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট যে দূর্যোগই হোক না কেন, পেটের দায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হয় তাদের। সারাদিনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টার্জিত টাকায় চেষ্টা করেন প্রিয়জনের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে।
কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে কাজে আসতে ভয়ই করে। কে কখন এসে গাড়ি ভেঙ্গে দেয় আবার কোনদিক থেকে পুলিশের গুলি এসে গায়ে লাগে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। তবুও জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজে আসতে হয়। আমরা যদি ভয়ে কাজে আসা বাদ দেই তাহলে সপ্তাহ শেষে কিস্তির টাকা জুটবে কীভাবে? আমাদের কাছে এখন জীবনের চেয়ে টাকার দাম বেশি।
নির্মাণকাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রবি বলেন, ঝুট-ঝামেলা যেটাই হোক আমরা আমাদের সাইটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ঠিকাদার, চীফ ইঞ্জিনিয়ার বা লেবাররা কেওই কাজ ফেলে রাখার পক্ষপাতী না। গাড়ি বন্ধ থাকায় আমাদের যাওয়া আসায় একটু সমস্যা হচ্ছে ঠিক কিন্তু এসব অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখলে এদের পরিবারের মুখে ভাত দেবে কে? প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাগাদা দেওয়া হচ্ছে, আমরা দ্রুত কাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর।


























