- অস্ত্র তৈরী হয় বিহারের মুঙ্গেরে
- ভারতের সীমান্ত গ্রামগুলোতে অস্ত্র মজুদ করা হয়
- রাজশাহী ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হয়
- কঠোর নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাকারবারিরা। রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশ ঢুকছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক। এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, মূলত রাজশাহীকে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রানজিট হিসেবে। আর এসবের বেশিরভাগ চালানেই আসছে ভারতের বিহার থেকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের প্রধান রুট হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিস্ফোরক আসছে। চিহ্নিত এসব চক্রের সদস্যদের ওপর কঠোর নজরদারি করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করা অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের চালান জব্দ করাও হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে গেছে অবৈধ এসব অস্ত্রের চালান। চলতি বছর প্রায় প্রতিমাসে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে ৫-৭টি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারলেও আড়ালে থেকে যাচ্ছে আরো অবৈধ অস্ত্রের হিসাব।
গত বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ সীমান্ত এলাকায় পৃথক দুইটি অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার করেছে
বিজিবি’র সদস্যরা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিজিবি’র রংপুর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার শফিকুজ্জামান। তিনি জানান
উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৭টি বিদেশী পিস্তল, ১৩টি ম্যাগজিন, ২৪২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি এবং ৫১ রাউন্ড মেশিনগানের গুলি। আটক করা হয়েছে এক নারীকে। ওই নারী ওই এলাকার হুমায়ন কবিরের মেয়ে রুমি বেগম (৩০)।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার শফিকুজ্জামান জানান, সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে অস্ত্র প্রবেশের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোনামসজিদ
সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় গাড়ী তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করলে সিএনজির যাত্রী রুবি বেগমের কাছে থাকা সুটকির পলিথিন ব্যাগের ভেতর থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন রাতে শিবগঞ্জ এলাকার একটি আমবাগানে অভিযান পরিচালনা করলে ভারত হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশকারী চোরাকারবারীরা বস্তা ফেলে রাতের অন্ধকারে
ভারতের দিকে পালিয়ে যায়। পরে ফেলে যাওয়া বস্তা থেকে ৬টি বিদেশী পিস্তল, ১২টি ম্যাগজিন, ২৩৬ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৫১ রাউন্ড মেশিনগানের গুলি উদ্ধার করে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার শফিকুজ্জামান বলেন, অস্ত্র চোরাকারবারীরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে অস্ত্রের এই বড় চালানটি দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। যা এ যাবৎকালে বিজিবির সবচেয়ে বড় অস্ত্র উদ্ধার
অভিযান বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, ব্যাটালিয়ন-৫৯ বিজিবি গত কায়েকমাসে মাসে সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান করে ২০টি দেশী-বিদেশী পিস্তল, ৩৭৩ রাউন্ড গুলি এবং ৩২ টি ম্যাগজিন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট ও বাঘা ও নওগাঁর পোরশা, ধামরইহাট ও সাপাহার সীমান্তে দিয়ে অস্ত্র আসে। সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানের অন্যতম রুট চাঁপাইয়ের শিবগঞ্জ। ভারত থেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দেশে ঢুকছে এসব আগ্নেয়াস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বিভিন্ন সবজি, ফল ও পণ্যবাহী ট্রাকেও অস্ত্র নিয়ে আসা হচ্ছে।
মাঝে মাঝে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির হাতে ধরা পড়ে বহনকারীরা। তাদের বেশির ভাগই কিশোর, যুবক ও নারী। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন
রাঘববোয়ালরা।
সূত্র আরও জানায়, ভারতীয় অস্ত্র চোরাচালানকারীরা পশ্চিমবঙ্গের মালদার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে। বিহারের মুঙ্গের থেকে চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্র সংগ্রহ করে তারা। মুঙ্গেরে ঘরে ঘরে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা আছে বলে একটি সুত্র জানায়। এসব অস্ত্র প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে মজুত হয়। সেখান থেকে সীমান্তপথে বাংলাদেশে আসে সিন্ডিকেটের হাতে। অবৈধ অস্ত্র বহন ও পাচারের জন্য রয়েছে আরেকটি সিন্ডিকেট। এরা বাংলাদেশে অস্ত্রের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর শর্তে দরদাম ঠিক করে।
অস্ত্র চালানে জড়িত গ্রেফতাররা স্বীকার করেছেন, জাপান বা ইউএসএ লেখা থাকলে সেসব অস্ত্র দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। তবে অস্ত্রের গায়ে জাপান ও ইউএসএ লেখা থাকলেও এগুলো বিহারের মুঙ্গেরে তৈরি। চাহিদা অনুযায়ী বিহারের মুঙ্গেরে বিশ্বের যেকোনো দেশের বহনযোগ্য আগ্নেয়াস্ত্রের কপি
তৈরি করা হয়। এমনকি একে-৪৭ রাইফেলও মুঙ্গেরের কারিগররা তৈরি করে দিতে পারেন। ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ হোসেন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার চরাঞ্চল সীমান্তগুলো বেশ দুর্গম। এ কারণে অনেক সময় দ্রুত অভিযান চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারপরও বিজিবি এপয়েন্টগুলোতে নজরদারি ও টহল অব্যাহত রেখেছে। বিজিবির রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ বলেন, ‘অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ যেকোনো অবৈধ জিনিস যাতে সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে বিজিবি সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে সব সময় সতর্ক আছে। শুধু নির্বাচনের সময় বলে
নয়, সীমান্তে বিজিবি অবস্থান সবসময়ই কঠোর।’

























