চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আজ দুপুরে অনিবন্ধিত অনলাইন চ্যানেল ‘Cvision’-এর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, মিথ্যা রিপোর্ট, ভয়ভীতি এবং ধারাবাহিক অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে পিজ্জা লাউঞ্জের উদ্যোগে দীর্ঘ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা, কর্মী, বিনিয়োগকারীসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা এতে অংশ নেন। দুপুর ৩টা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এ সমাবেশে প্রখর রোদেও বিপুল উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
সমাবেশ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রেস ক্লাব চত্বরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কর্মীরা নিজেদের টাকায় তৈরি পোস্টার হাতে দাঁড়ান, আর সাধারণ মানুষ কৌতূহল নিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। অনেকে মোবাইলে সরাসরি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
পিজ্জা লাউঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব অভিযোগ করেন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে Cvision কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভুয়া তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন প্রচার করে। তিনি বলেন, “সাংবাদিকতার নীতিমালা ভেঙে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।” প্রতিবাদ জানালে Cvision–এর দুই ব্যক্তি ৬ লাখ টাকা দাবি করেন, যা বিজ্ঞাপনের নামে চাঁদাবাজি বলেই দাবি করেন তিনি।
শোয়েব বলেন, “টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাতেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মন্তব্য, বিভ্রান্তিকর ভিডিও এবং নানা অপপ্রচার শুরু করে। গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।” কর্মীদের একজন আবেগ নিয়ে বলেন, “আমরা কঠোর পরিশ্রম করি। কেউ যদি কারণ ছাড়াই আমাদের সুনাম নষ্ট করে, তার প্রভাব আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও পড়ে।”
সমাবেশে জানানো হয়, চাঁদা দাবির একাধিক অডিও রেকর্ড প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে, যা প্রয়োজনে তদন্ত সংস্থাকে প্রদান করা হবে। বক্তারা বলেন, এটি Cvision-এর প্রথম বিতর্ক নয়। এর আগে ৫ আগস্ট তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র সমাজের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রচার করে, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। কিছু বক্তার দাবি, চ্যানেলের পরিচালকের বিরুদ্ধে অতীতে ব্যক্তিগত ও নারী সংক্রান্ত একাধিক মামলার কথাও শোনা যায়—যদিও এসব বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত হয়নি।
সমাবেশে উপস্থিত সাধারণ ব্যবসায়ীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক ব্যবসায়ী বলেন, “অনিবন্ধিত অনলাইন চ্যানেলের হয়রানির শিকার হয় অনেক ছোট ব্যবসা। কেউ ভয় পেয়ে টাকা দেয়, কেউসহ্য করে। আজ প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল—এটা দৃষ্টান্ত।” একজন তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, “গণমাধ্যম সত্যের পথে থাকলে সহযোগী হয়। কিন্তু ভয় দেখিয়ে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করা উল্টো সমাজেরই ক্ষতি।”
অন্যদিকে, কয়েকজন সাংবাদিক সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা বলেন, “অনলাইন সাংবাদিকতার স্বাধীনতা অবশ্যই থাকা উচিত, কিন্তু তার অপব্যবহার করা যাবে না। অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে সংবাদ প্রচারের আগে নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই—দুটোই এখন সময়ের দাবি।”
সমাবেশের শেষে পিজ্জা লাউঞ্জ কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ইতোমধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এবং Cvision-এর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হবে। তাদের ভাষায়, “সত্যকে বিকৃত করা সাংবাদিকতা নয়। কেউ যদি পেশার সুযোগ নিয়ে চাঁদাবাজি করে, তাকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।”
দীর্ঘ মানববন্ধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে সাংবাদিকতার নামে অপব্যবহার ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। আয়োজকরা আশা করেন, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটিত হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।






















