০১:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধুকছে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম

* দেশে প্রতিবছর শনাক্ত হচ্ছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার যক্ষা রোগী
* এ রোগে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ৪৪ হাজার মানুষ
* বহু আগেই বন্ধ হয়েছে ইউএসএআইডি ফান্ড
* আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা
* প্রকট হচ্ছে যক্ষার ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক কিটের সংকট
* তহবিল ঘাটতিতে চাকরি হারানোর শঙ্কায় ৩৬২ জন

‘আমরা ১৮ মাস ধরে ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। তাই পুরো কর্মসূচি যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন’
– ড. মো. শাফিন জব্বার, ডেপুটি ডিরেক্টর, জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি

নানামুখী সংকটে ধুকছে বাংলাদেশের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি)। দেশে প্রতিবছর শনাক্ত হচ্ছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার যক্ষা রোগী। ভয়াবহ এ রোগে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এ রোগ নির্মূলে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর বিশেষ একটি ফান্ড থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থার (ইউএসএআইডি) ফান্ড বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তাও শেষ হতে যাচ্ছে। এতে প্রকট হচ্ছে যক্ষা রোগ নির্মূলে তৈরিকৃত ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক কিটের সংকট। একই সঙ্গে তহবিল ঘাটতিতে চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছে ৩৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমন পরিস্থিতিতে দেশে যক্ষা প্রতিরোধ প্রচেষ্টা বড় ধরনের সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মো. শাফিন জব্বার বলছেন, আমরা ১৮ মাস ধরে ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। তাই পুরো কর্মসূচি যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বিন্যাস করা জরুরি প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন মহাখালীস্থ জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে এনটিপিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের আগে বাংলাদেশে যক্ষ্মা সেবা মূলত প্রতিকারমূলক ছিল এবং ৪৪টি টিবি ক্লিনিক, ৮টি পৃথকীকরণ হাসপাতাল ও ৪টি টিবি হাসপাতালে সীমাবদ্ধ ছিল। দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা পরিকল্পনার (১৯৮০-৮৬) সময়ে ‘টিবি/কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সেবা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের অধীনে ১২৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (ইউএইচসি) যক্ষ্মা সেবা সম্প্রসারিত হয়। তৃতীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা পরিকল্পনায় (১৯৮৬-৯১) ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল (এমবিডিসি)’ ডাইরেক্টরেটের অধীনে যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগের সেবা একীভূত করা হয়।
১৯৯০ সালে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, কেস শনাক্তকরণ ও নিরাময়ের হার যথাক্রমে মাত্র ১০% ও ৪০%। এরপর চতুর্থ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় (১৯৯২-৯৮) ‘টিবি ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সেবার আরও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৩ সালের নভেম্বর থেকে এনটিপি ডাইরেক্টলি অবজার্ভড ট্রিটমেন্ট, শর্ট কোর্স (ডটস) কৌশল গ্রহণ করে। এনটিপি ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ৪টি পাইলট থানা (পরবর্তীতে উপজেলা নামকরণ করা হয়) শুরু করে এবং ধাপে ধাপে ১৯৯৮ সালের জুনের মধ্যে সব ৪৬০টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯৮ সালের জুলাইয়ে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাতে সংস্কার আনা হয় এবং ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর প্রোগ্রাম (এইচপিএসপি)’ নামে একটি সেক্টর-ওয়াইড পদ্ধতিতে সেবা প্রদান শুরু হয় (উপরে ৩.৪ বিভাগে উল্লেখিত)। এনটিপি এইচপিএসপির প্রেক্ষাপটে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং এনটিপি ব্যবস্থাপনাকে ‘এসেনশিয়াল সার্ভিসেস প্যাকেজ’ এর সাথে একীভূত করে। এনটিপির কৌশলগত পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল ‘দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নারী, শিশু ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উন্নয়ন করা’। এরপর ২০০৩ সাল থেকে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল’ ডাইরেক্টরেটের অধীনে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) অধীন কাজ করে। এইচএনপিএসপির অগ্রাধিকারমূলক উদ্দেশ্যগুলো হলো মাতৃমৃত্যুর হার, মোট প্রজনন হার, অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার এবং যক্ষ্মা ও অন্যান্য রোগের বোঝা কমানো।
২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার তার কৌশলগত পদ্ধতি সংশোধন করে ‘স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি)’ (জুলাই ২০১১-জুন ২০১৬) নামকরণ করে, যেখানে সংক্রামক রোগের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এনটিপি এখনও ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল’ ডাইরেক্টরেটের অধীনে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডিজিএইচএস-এর অধীনে কাজ করে।
সংস্থাটির ওয়েবপোর্টালে প্রকাশিত এনটিপি-এর মিশন পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) কার্যকর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা শক্তিশালী করতে, প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করতে এবং এন্ড টিবি কৌশলের অধীনে মানসম্পন্ন ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে। এনটিপি বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, জাতিগত পরিচয়, সামাজিক অবস্থান বা বর্ণ নির্বিশেষে সমানভাবে সেবা প্রদান করতে সচেষ্ট।
এই প্রকল্পের ভিশন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, টিবি-মুক্ত বাংলাদেশ: যক্ষ্মা রোগে শূন্য মৃত্যু, শূন্য রোগ এবং শূন্য কষ্ট।
প্রকল্পের লক্ষ্য (এন্ড টিবি কৌশল সম্পর্কিত): যক্ষ্মা মহামারী নির্মূল করে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতি ১,০০,০০০ জনে ১০টি নতুন কেসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। (২০১৫ সালের প্রাক্কলিত ভিত্তি ছিল প্রতি ১,০০,০০০ জনে ২২৫টি কেস)
এ প্রকল্পের বর্তমান উদ্দেশ্য হলো- এন্ড টিবি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সকল যক্ষ্মা রোগীর জন্য মানসম্পন্ন যক্ষ্মা সেবার সার্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। ২০২২ সালের মধ্যে সকল ধরনের যক্ষ্মার বার্ষিক কেস শনাক্তকরণ ৯০%-এর বেশি বৃদ্ধি করা (২০১৫ সালের ভিত্তি ছিল ৫৭%), এবং শিশু যক্ষ্মার কেস শনাক্তকরণ ৮% এ নিয়ে আসা (২০১৫ সালের ভিত্তি ছিল ৪%)। শনাক্তকৃত নন-এমডিআর যক্ষ্মা কেসগুলিতে চিকিৎসার সাফল্যের হার কমপক্ষে ৯০% বজায় রাখা এবং সকল বাস্তবায়ন কেন্দ্রে মান-নিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। ২০২২ সালের মধ্যে এমডিআর যক্ষ্মার বার্ষিক কেস শনাক্তকরণ ৪ হাজার ১০০ টিতে উন্নীত করা (২০১৫ সালের ভিত্তি ছিল ৮০০), এবং শিশু এমডিআর কেস শনাক্তকরণ ১১২ টিতে উন্নীত করা (২০১৫ সালে ভিত্তি ছিল ০), পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত এমডিআর যক্ষ্মা চিকিৎসা পদ্ধতি সারাদেশে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমডিআর যক্ষ্মা কেস ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। ২০২২ সালের মধ্যে নিশ্চিত করা যে কোনো যক্ষ্মা আক্রান্ত পরিবার যক্ষ্মা রোগের কারণে বিপর্যয়কর খরচের সম্মুখীন হবে না। ২০২২ সালের মধ্যে ১০০% যক্ষ্মা সেবা সুবিধাগুলো নিয়মিত তদারকি ও মনিটরিং নিশ্চিত করা, যাতে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়। সকল প্রোগ্রাম স্তরে কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় ১০০% তহবিলের দীর্ঘমেয়াদী প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, কার্যকর পরিকল্পনা ও অংশীদারদের সমন্বয়ের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ সরকারের (এড়ই) এনটিপি বাজেটে অবদান ক্রমাগত বৃদ্ধি করা। কার্যকরী গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন নিশ্চিত করে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা।
এনটিপিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তহবিল ঘাটতির ফলে ৩৬২ জনের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি যক্ষার ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক কিটের অভাব দেখা দিয়েছে, যা জাতীয় যক্ষা প্রতিরোধ অভিযানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রম স্থবির হয়ে যেতে পারে। ফলে বাংলাদেশের ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৭৯ হাজার যক্ষা রোগী শনাক্ত হয়। আর বছরে যক্ষায় ৪৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন সংক্রমণ ৭০ হাজার এবং মৃত্যুহার ৬ হাজারে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে তথ্য বলছে, দেশে যক্ষায় আক্রান্ত রোগীদের ১৭ শতাংশ এখনও শনাক্ত হয় না, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৭ জন যক্ষা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ২৫৮ জন ড্রাগ-রেসিস্ট্যান্ট রোগী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যক্ষা কর্মসূচির মাঠকর্মীরা গত ২৫ নভেম্বর জানতে পারেন, গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা বন্ধ হচ্ছে এবং একই সঙ্গে তাদের চুক্তিও শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন তহবিল না পেলে জানুয়ারি থেকে ৬৫০টি শনাক্তকরণ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউএসএআইডি’র তহবিল বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যেই ২ হাজার ২০০ জন চাকরি হারিয়েছেন। একাধিক স্থানে স্ক্রিনিং কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। ওষুধ ও কিটের মজুতও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে গ্লোবাল ফান্ড ও এনটিপির কর্মকর্তারা আসন্ন সংকট মোকাবিলায় কাজ করছেন। সীমিত পরিসরে সংকট সামাল দিতে কর্মসূচিতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাককে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে বলছেন, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হলে ড্রাগ-রেসিস্ট্যান্ট যক্ষা রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। এ ধরনের যক্ষার চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও জটিল। প্রায় ৩০ বছর ধরে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির (সেক্টর প্রোগ্রাম) আওতায় ছিল জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। ২০২৪ সালের জুনে এই তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে ১৮ মাস ধরে যক্ষা প্রতিরোধ কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় তহবিল ছাড়াই চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ডিপিপি অনুমোদন না হলে পুরো কর্মসূচি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে অর্জিত অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে।
গত ১২ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যক্ষা প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য রোগ। তবে গত বছর বিশ্বজুড়ে এই রোগে ১২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। সাধারণত ফুসফুসকে আক্রান্ত করা যক্ষার ব্যাকটেরিয়া কাশি, হাঁচি বা থুতুর মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, বাংলাদেশসহ উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ দেশে চিকিৎসা কার্যক্রমে এমন ব্যাঘাত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়েও প্রভাব ফেলতে পারে। এমন বিপর্যয় এড়াতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন ও তহবিল নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
এনটিপি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ডিপিপি অনুমোদন না হলে দেশে চলমান যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাফল্য গুরুতরভাবে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মো. শাফিন জব্বার দৈনিক সবুজ বাংলাকে জানান, অনেক সমস্যার সমাধান ডিপিপি অনুমোদনের সঙ্গে যুক্ত। তাই তারা ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ১৮ মাস ধরে ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। তাই পুরো কর্মসূচি যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বিন্যাস করা জরুরি প্রয়োজন।

জনপ্রিয় সংবাদ

ধুকছে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম

আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

* দেশে প্রতিবছর শনাক্ত হচ্ছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার যক্ষা রোগী
* এ রোগে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ৪৪ হাজার মানুষ
* বহু আগেই বন্ধ হয়েছে ইউএসএআইডি ফান্ড
* আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা
* প্রকট হচ্ছে যক্ষার ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক কিটের সংকট
* তহবিল ঘাটতিতে চাকরি হারানোর শঙ্কায় ৩৬২ জন

‘আমরা ১৮ মাস ধরে ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। তাই পুরো কর্মসূচি যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন’
– ড. মো. শাফিন জব্বার, ডেপুটি ডিরেক্টর, জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি

নানামুখী সংকটে ধুকছে বাংলাদেশের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি)। দেশে প্রতিবছর শনাক্ত হচ্ছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার যক্ষা রোগী। ভয়াবহ এ রোগে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এ রোগ নির্মূলে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর বিশেষ একটি ফান্ড থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থার (ইউএসএআইডি) ফান্ড বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তাও শেষ হতে যাচ্ছে। এতে প্রকট হচ্ছে যক্ষা রোগ নির্মূলে তৈরিকৃত ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক কিটের সংকট। একই সঙ্গে তহবিল ঘাটতিতে চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছে ৩৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমন পরিস্থিতিতে দেশে যক্ষা প্রতিরোধ প্রচেষ্টা বড় ধরনের সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মো. শাফিন জব্বার বলছেন, আমরা ১৮ মাস ধরে ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। তাই পুরো কর্মসূচি যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বিন্যাস করা জরুরি প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন মহাখালীস্থ জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে এনটিপিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের আগে বাংলাদেশে যক্ষ্মা সেবা মূলত প্রতিকারমূলক ছিল এবং ৪৪টি টিবি ক্লিনিক, ৮টি পৃথকীকরণ হাসপাতাল ও ৪টি টিবি হাসপাতালে সীমাবদ্ধ ছিল। দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা পরিকল্পনার (১৯৮০-৮৬) সময়ে ‘টিবি/কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সেবা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের অধীনে ১২৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (ইউএইচসি) যক্ষ্মা সেবা সম্প্রসারিত হয়। তৃতীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা পরিকল্পনায় (১৯৮৬-৯১) ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল (এমবিডিসি)’ ডাইরেক্টরেটের অধীনে যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগের সেবা একীভূত করা হয়।
১৯৯০ সালে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, কেস শনাক্তকরণ ও নিরাময়ের হার যথাক্রমে মাত্র ১০% ও ৪০%। এরপর চতুর্থ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় (১৯৯২-৯৮) ‘টিবি ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সেবার আরও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৩ সালের নভেম্বর থেকে এনটিপি ডাইরেক্টলি অবজার্ভড ট্রিটমেন্ট, শর্ট কোর্স (ডটস) কৌশল গ্রহণ করে। এনটিপি ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ৪টি পাইলট থানা (পরবর্তীতে উপজেলা নামকরণ করা হয়) শুরু করে এবং ধাপে ধাপে ১৯৯৮ সালের জুনের মধ্যে সব ৪৬০টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯৮ সালের জুলাইয়ে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাতে সংস্কার আনা হয় এবং ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর প্রোগ্রাম (এইচপিএসপি)’ নামে একটি সেক্টর-ওয়াইড পদ্ধতিতে সেবা প্রদান শুরু হয় (উপরে ৩.৪ বিভাগে উল্লেখিত)। এনটিপি এইচপিএসপির প্রেক্ষাপটে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং এনটিপি ব্যবস্থাপনাকে ‘এসেনশিয়াল সার্ভিসেস প্যাকেজ’ এর সাথে একীভূত করে। এনটিপির কৌশলগত পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল ‘দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নারী, শিশু ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উন্নয়ন করা’। এরপর ২০০৩ সাল থেকে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল’ ডাইরেক্টরেটের অধীনে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) অধীন কাজ করে। এইচএনপিএসপির অগ্রাধিকারমূলক উদ্দেশ্যগুলো হলো মাতৃমৃত্যুর হার, মোট প্রজনন হার, অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার এবং যক্ষ্মা ও অন্যান্য রোগের বোঝা কমানো।
২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার তার কৌশলগত পদ্ধতি সংশোধন করে ‘স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি)’ (জুলাই ২০১১-জুন ২০১৬) নামকরণ করে, যেখানে সংক্রামক রোগের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এনটিপি এখনও ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল’ ডাইরেক্টরেটের অধীনে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডিজিএইচএস-এর অধীনে কাজ করে।
সংস্থাটির ওয়েবপোর্টালে প্রকাশিত এনটিপি-এর মিশন পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) কার্যকর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা শক্তিশালী করতে, প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করতে এবং এন্ড টিবি কৌশলের অধীনে মানসম্পন্ন ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে। এনটিপি বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, জাতিগত পরিচয়, সামাজিক অবস্থান বা বর্ণ নির্বিশেষে সমানভাবে সেবা প্রদান করতে সচেষ্ট।
এই প্রকল্পের ভিশন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, টিবি-মুক্ত বাংলাদেশ: যক্ষ্মা রোগে শূন্য মৃত্যু, শূন্য রোগ এবং শূন্য কষ্ট।
প্রকল্পের লক্ষ্য (এন্ড টিবি কৌশল সম্পর্কিত): যক্ষ্মা মহামারী নির্মূল করে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতি ১,০০,০০০ জনে ১০টি নতুন কেসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। (২০১৫ সালের প্রাক্কলিত ভিত্তি ছিল প্রতি ১,০০,০০০ জনে ২২৫টি কেস)
এ প্রকল্পের বর্তমান উদ্দেশ্য হলো- এন্ড টিবি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সকল যক্ষ্মা রোগীর জন্য মানসম্পন্ন যক্ষ্মা সেবার সার্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। ২০২২ সালের মধ্যে সকল ধরনের যক্ষ্মার বার্ষিক কেস শনাক্তকরণ ৯০%-এর বেশি বৃদ্ধি করা (২০১৫ সালের ভিত্তি ছিল ৫৭%), এবং শিশু যক্ষ্মার কেস শনাক্তকরণ ৮% এ নিয়ে আসা (২০১৫ সালের ভিত্তি ছিল ৪%)। শনাক্তকৃত নন-এমডিআর যক্ষ্মা কেসগুলিতে চিকিৎসার সাফল্যের হার কমপক্ষে ৯০% বজায় রাখা এবং সকল বাস্তবায়ন কেন্দ্রে মান-নিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। ২০২২ সালের মধ্যে এমডিআর যক্ষ্মার বার্ষিক কেস শনাক্তকরণ ৪ হাজার ১০০ টিতে উন্নীত করা (২০১৫ সালের ভিত্তি ছিল ৮০০), এবং শিশু এমডিআর কেস শনাক্তকরণ ১১২ টিতে উন্নীত করা (২০১৫ সালে ভিত্তি ছিল ০), পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত এমডিআর যক্ষ্মা চিকিৎসা পদ্ধতি সারাদেশে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমডিআর যক্ষ্মা কেস ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। ২০২২ সালের মধ্যে নিশ্চিত করা যে কোনো যক্ষ্মা আক্রান্ত পরিবার যক্ষ্মা রোগের কারণে বিপর্যয়কর খরচের সম্মুখীন হবে না। ২০২২ সালের মধ্যে ১০০% যক্ষ্মা সেবা সুবিধাগুলো নিয়মিত তদারকি ও মনিটরিং নিশ্চিত করা, যাতে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়। সকল প্রোগ্রাম স্তরে কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় ১০০% তহবিলের দীর্ঘমেয়াদী প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, কার্যকর পরিকল্পনা ও অংশীদারদের সমন্বয়ের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ সরকারের (এড়ই) এনটিপি বাজেটে অবদান ক্রমাগত বৃদ্ধি করা। কার্যকরী গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন নিশ্চিত করে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা।
এনটিপিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তহবিল ঘাটতির ফলে ৩৬২ জনের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি যক্ষার ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক কিটের অভাব দেখা দিয়েছে, যা জাতীয় যক্ষা প্রতিরোধ অভিযানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রম স্থবির হয়ে যেতে পারে। ফলে বাংলাদেশের ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৭৯ হাজার যক্ষা রোগী শনাক্ত হয়। আর বছরে যক্ষায় ৪৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন সংক্রমণ ৭০ হাজার এবং মৃত্যুহার ৬ হাজারে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে তথ্য বলছে, দেশে যক্ষায় আক্রান্ত রোগীদের ১৭ শতাংশ এখনও শনাক্ত হয় না, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৭ জন যক্ষা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ২৫৮ জন ড্রাগ-রেসিস্ট্যান্ট রোগী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যক্ষা কর্মসূচির মাঠকর্মীরা গত ২৫ নভেম্বর জানতে পারেন, গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা বন্ধ হচ্ছে এবং একই সঙ্গে তাদের চুক্তিও শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন তহবিল না পেলে জানুয়ারি থেকে ৬৫০টি শনাক্তকরণ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউএসএআইডি’র তহবিল বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যেই ২ হাজার ২০০ জন চাকরি হারিয়েছেন। একাধিক স্থানে স্ক্রিনিং কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। ওষুধ ও কিটের মজুতও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে গ্লোবাল ফান্ড ও এনটিপির কর্মকর্তারা আসন্ন সংকট মোকাবিলায় কাজ করছেন। সীমিত পরিসরে সংকট সামাল দিতে কর্মসূচিতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাককে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে বলছেন, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হলে ড্রাগ-রেসিস্ট্যান্ট যক্ষা রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। এ ধরনের যক্ষার চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও জটিল। প্রায় ৩০ বছর ধরে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির (সেক্টর প্রোগ্রাম) আওতায় ছিল জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। ২০২৪ সালের জুনে এই তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে ১৮ মাস ধরে যক্ষা প্রতিরোধ কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় তহবিল ছাড়াই চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ডিপিপি অনুমোদন না হলে পুরো কর্মসূচি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে অর্জিত অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে।
গত ১২ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যক্ষা প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য রোগ। তবে গত বছর বিশ্বজুড়ে এই রোগে ১২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। সাধারণত ফুসফুসকে আক্রান্ত করা যক্ষার ব্যাকটেরিয়া কাশি, হাঁচি বা থুতুর মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, বাংলাদেশসহ উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ দেশে চিকিৎসা কার্যক্রমে এমন ব্যাঘাত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়েও প্রভাব ফেলতে পারে। এমন বিপর্যয় এড়াতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন ও তহবিল নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
এনটিপি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ডিপিপি অনুমোদন না হলে দেশে চলমান যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাফল্য গুরুতরভাবে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মো. শাফিন জব্বার দৈনিক সবুজ বাংলাকে জানান, অনেক সমস্যার সমাধান ডিপিপি অনুমোদনের সঙ্গে যুক্ত। তাই তারা ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ১৮ মাস ধরে ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। তাই পুরো কর্মসূচি যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বিন্যাস করা জরুরি প্রয়োজন।