১২:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শতকোটির জবাইখানা এখন ঠুঁটো জগন্নাথ

  • সাইফ আশরাফ
  • আপডেট সময় : ১১:৫৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • 98

নগরবাসীর প্রতিদিনের মাংসের চাহিদা পূরণে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাইয়ের জন্য রাজধানীর হাজারীবাগে আধুনিক পশু জবাইখানা তৈরি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দুই দফায় তিনবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জবাইখানাটির জন্য দুই বছরেও ইজারাদারদের সাড়া না পাওয়ায় সেটি চালু করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ফলে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জবাইখানাটি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। সিটি এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে পশু জবাই বন্ধ করতে ২০১৭ সালে হাজারীবাগের গজমহল এলাকায় আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। ২০১৯ সালে ৫ তলাবিশিষ্ট জবাইখানা ভবন উদ্বোধন করেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আর যন্ত্রপাতি বসিয়ে ব্যবহার উপযোগী করা হয় ২০২১ সালে। সে সময় থেকেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ভবনটি।
সিটি কপোরেশন সূত্র বলছে, নবনির্মিত এ জবাইখানায় ঘণ্টায় ৩০টি গরু ও ৬০টি ছাগল জবাই করার ব্যবস্থা রয়েছে। জীবাণুমুক্ত পরিবেশে দিনে ১৬ ঘণ্টাই চালু রাখা যাবে পশু জবাই কার্যক্রম। জবাইয়ের পূর্বে পরীক্ষা করা হবে পশুর স্বাস্থ্য। ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ জবাইখানায় আরও ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ চলছে।
ডিএসসিসি সূত্র বলছে, লোকবল সংকটের অভিযোগ দেখিয়ে এটি ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরপরও তারা ইজারা গ্রহণে কোনো প্রতিষ্ঠানকে আগ্রহী করতে পারেনি। ইজারাদার পেতে পত্রিকায় দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। বিজ্ঞপ্তিতে তিন দফা সময় উল্লেখ করে দরপত্র জমা দিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান জবাইখানার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইজারাদাররা ধারণা করছেন তারা ইজারা নিয়ে টাকা তুলতে পারবেন না, এ কারণে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
প্রকল্পের নথি অনুসারে, সরকার ২০১৬ সালে ডিএসসিসি প্রকল্পের অধীনে কাপ্তানবাজার এবং হাজারীবাগে দুটি পশু জবাইখানা নির্মাণের জন্য ১৫০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। এছাড়াও জবাইখানার জন্য বিদেশে ৩০ জন এবং দেশে ১০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০২১ সালে ৮১ কোটি টাকা খরচ করে হাজারীবাগ জবাইখানা নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ হলেও কাপ্তানবাজার জবাইখানার কাজ এখনও শেষ হয়নি।
ডিএসসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন বছরের জন্য জবাইখানা পরিচালনা করতে সিটি করপোরেশনকে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ১১ হাজার ২১০ টাকা দিতে হবে। পরে ইজারামূল্য কমিয়ে ৬ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৩১৯ টাকা নির্ধারণ করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরপর দুই দফায় ৩ বার সময় বাড়িয়েও কোনো দরপত্র জমা পড়েনি।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ করে কিছু বিদেশি যন্ত্র বসাচ্ছি। এখন নতুন করে আবারও ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আশা করছি, এবার ইজারা দিয়ে এটি চালু করা সম্ভব হবে। পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, বিপুল ব্যয়ে আধুনিক এই পশু জবাইখানা নির্মাণ করা হলেও এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রয়োজন ছিল। বর্তমান বাস্তবতায় নাগরিকদের সুবিধার জন্যই এমন জবাইখানা চালু হওয়া দরকার। এটি চালু না হওয়ার জন্য মানুষের অসচেতনতা ও সিটি করপোরেশনের কার্যকরী উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ইজারা না দিতে পারার কারণ হতে পারে নির্মাণের পূর্বে তাদের পরিকল্পনার অভাব ছিল। তবে সিটি করপোরেশন চাইলে এখনও তা বাস্তবায়ন সম্ভব। সবচেয়ে বেশি মানুষের সচেতনতা। কারণ আমাদের দেশে যেখানে জায়গা পায় পশু জবাই করে। এটার জন্য সিটি করপোরেশনকে আশপাশের এলাকায় উন্মুক্ত পশু জবাই বন্ধ করতে হবে। এর সুফল সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

 

 

স/ম

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

শতকোটির জবাইখানা এখন ঠুঁটো জগন্নাথ

আপডেট সময় : ১১:৫৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

নগরবাসীর প্রতিদিনের মাংসের চাহিদা পূরণে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাইয়ের জন্য রাজধানীর হাজারীবাগে আধুনিক পশু জবাইখানা তৈরি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দুই দফায় তিনবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জবাইখানাটির জন্য দুই বছরেও ইজারাদারদের সাড়া না পাওয়ায় সেটি চালু করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ফলে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জবাইখানাটি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। সিটি এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে পশু জবাই বন্ধ করতে ২০১৭ সালে হাজারীবাগের গজমহল এলাকায় আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। ২০১৯ সালে ৫ তলাবিশিষ্ট জবাইখানা ভবন উদ্বোধন করেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আর যন্ত্রপাতি বসিয়ে ব্যবহার উপযোগী করা হয় ২০২১ সালে। সে সময় থেকেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ভবনটি।
সিটি কপোরেশন সূত্র বলছে, নবনির্মিত এ জবাইখানায় ঘণ্টায় ৩০টি গরু ও ৬০টি ছাগল জবাই করার ব্যবস্থা রয়েছে। জীবাণুমুক্ত পরিবেশে দিনে ১৬ ঘণ্টাই চালু রাখা যাবে পশু জবাই কার্যক্রম। জবাইয়ের পূর্বে পরীক্ষা করা হবে পশুর স্বাস্থ্য। ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ জবাইখানায় আরও ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ চলছে।
ডিএসসিসি সূত্র বলছে, লোকবল সংকটের অভিযোগ দেখিয়ে এটি ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরপরও তারা ইজারা গ্রহণে কোনো প্রতিষ্ঠানকে আগ্রহী করতে পারেনি। ইজারাদার পেতে পত্রিকায় দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। বিজ্ঞপ্তিতে তিন দফা সময় উল্লেখ করে দরপত্র জমা দিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান জবাইখানার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইজারাদাররা ধারণা করছেন তারা ইজারা নিয়ে টাকা তুলতে পারবেন না, এ কারণে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
প্রকল্পের নথি অনুসারে, সরকার ২০১৬ সালে ডিএসসিসি প্রকল্পের অধীনে কাপ্তানবাজার এবং হাজারীবাগে দুটি পশু জবাইখানা নির্মাণের জন্য ১৫০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। এছাড়াও জবাইখানার জন্য বিদেশে ৩০ জন এবং দেশে ১০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০২১ সালে ৮১ কোটি টাকা খরচ করে হাজারীবাগ জবাইখানা নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ হলেও কাপ্তানবাজার জবাইখানার কাজ এখনও শেষ হয়নি।
ডিএসসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন বছরের জন্য জবাইখানা পরিচালনা করতে সিটি করপোরেশনকে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ১১ হাজার ২১০ টাকা দিতে হবে। পরে ইজারামূল্য কমিয়ে ৬ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৩১৯ টাকা নির্ধারণ করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরপর দুই দফায় ৩ বার সময় বাড়িয়েও কোনো দরপত্র জমা পড়েনি।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ করে কিছু বিদেশি যন্ত্র বসাচ্ছি। এখন নতুন করে আবারও ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আশা করছি, এবার ইজারা দিয়ে এটি চালু করা সম্ভব হবে। পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, বিপুল ব্যয়ে আধুনিক এই পশু জবাইখানা নির্মাণ করা হলেও এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রয়োজন ছিল। বর্তমান বাস্তবতায় নাগরিকদের সুবিধার জন্যই এমন জবাইখানা চালু হওয়া দরকার। এটি চালু না হওয়ার জন্য মানুষের অসচেতনতা ও সিটি করপোরেশনের কার্যকরী উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ইজারা না দিতে পারার কারণ হতে পারে নির্মাণের পূর্বে তাদের পরিকল্পনার অভাব ছিল। তবে সিটি করপোরেশন চাইলে এখনও তা বাস্তবায়ন সম্ভব। সবচেয়ে বেশি মানুষের সচেতনতা। কারণ আমাদের দেশে যেখানে জায়গা পায় পশু জবাই করে। এটার জন্য সিটি করপোরেশনকে আশপাশের এলাকায় উন্মুক্ত পশু জবাই বন্ধ করতে হবে। এর সুফল সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

 

 

স/ম