দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজধানীর গুলশানের বাড়িতে উঠেছেন। ফলে বাড়িটিতে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে লাল-সবুজের বাস থেকে নেমে তিনি গুলশান-২ নম্বরের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানও।
বাড়িটির চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা ও অস্থায়ী ছাউনিসহ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর আগে লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন তারেক রহমান। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করে।
বিমানবন্দর থেকে লাল-সবুজ রঙের একটি বাসে করে পূর্বাচলের ‘৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় গিয়ে বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
এরপর তিনি একই বাসে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। সেখান থেকে ওই বাসেই গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে আসেন তারেক রহমান।
এসময় বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় এসে গাড়ি থেকে নেমে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক, নেতা-কর্মীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘সকাল থেকে আপনারা সারাদিন এখন পর্যন্ত অনেক কষ্ট করেছেন, আমি আপনাদের জন্য দোয়া করি, আমার জন্যও আপনার দোয়া করবেন।’
‘আগামী কয়েকদিনের কর্মসূচির মধ্যে কী কী রয়েছে?’ জানতে চাইলে শায়রুল কবির জানান, কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ আপনাদের আগে বলেছিলেন, আগামীকাল কর্মসূচি আছে বাদ জুমা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন তিনি। তারপর জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাবেন। এই দুইটা কর্মসূচি আছে তার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত থেকেই গুলশানের বাড়িটির সামনের সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
এলাকায় জোরদার করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। বসানো হয়েছে একাধিক চেকপোস্ট। নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি আছে বিজিবি, সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স)-সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। পুরো এলাকা কর্ডন করে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কর্ডন এলাকায়।
জানা গেছে, সরকারি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও আলাদা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে এই বাড়ি ঘিরে। শুধু বাসভবন নয়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এছাড়া গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর বাড়িতে নতুন চারতলা রাজনৈতিক কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি। এখান থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
নতুন কার্যালয়ের দোতলায় রয়েছে আধুনিক ব্রিফিং কক্ষ। অন্যান্য তলায় গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণা সেল ও বিভাগভিত্তিক দপ্তর; যেখানে নির্বাচন, নীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে আশপাশের গলিতে টাঙানো হয়েছে তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন।
জানা গেছে, গুলশানের এই বাড়িটি জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তৎকালীন সরকার বাড়িটি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়। বছরের পর বছর ধরে এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক ও সিদ্ধান্ত।
কয়েক মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটির মালিকানা দলিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে হস্তান্তর করা হয়। পাশেই রয়েছে ‘ফিরোজা’, খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন।
এদিকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। দলীয় নেতাদের মতে, এটি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অধ্যায়।
এমআর/সবা
























