১১:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“দলীয়করণ কমেনি, রূপ বদলেছে”—নির্বাচন ঘিরে সতর্ক করলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরেও প্রশাসন ও রাজনীতিতে দলীয়করণের ধারা বন্ধ হয়নি, বরং রূপ পাল্টে আরও গভীর হয়েছে।”

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত ‘নির্বাচন রিপোর্টিং প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) ও টিআইবি।

প্রশাসনে দলীয়করণ এখনো সক্রিয়

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গত ৫৪ বছর ধরে দলীয়করণ প্রশাসনে গভীরভাবে প্রোথিত। এখন তিনটি ধারা সক্রিয়—একটি দলীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী, একটি প্রতিস্থাপিত গোষ্ঠী, আর একটি নিরপেক্ষ থাকতে চাওয়া ছোট পেশাদার গোষ্ঠী।”

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন শক্তির মধ্যে টানাপোড়েন থেকেই নির্বাচনের বাস্তবতা তৈরি হয়।

তার ভাষায়, “শাসনব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিকরণ ও প্রতিষ্ঠান দুর্বলকরণের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রশাসনের পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা ব্যাহত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই একটি দলীয় প্রভাবকে আরেকটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।”

সাংবাদিকদের জন্য স্বাধীনতার দাবি

প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তার মতে, সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে ‘অবহিত করার’ শর্তটি হয়রানির হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

তিনি বলেন, “এটি সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকার ও দায়িত্ব। সাংবাদিকরা যদি নিরপেক্ষভাবে, সত্যনিষ্ঠভাবে নির্বাচন কাভার করেন, তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে অগ্রগতি সম্ভব।”

সংস্কার ও সুপারিশ

ড. ইফতেখার জানান, শাসন ও নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন সীমিত। অল্প কিছু অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, “পুরো প্রশাসন হঠাৎ করে পরিবর্তন সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদে ধাপে ধাপে পেশাদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।”

প্রশিক্ষণে কারা ছিলেন?

কর্মশালায় অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের নির্বাচনি বিটের প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, আরএফইডি সভাপতি কাজী জেবেল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং টিআইবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

“দলীয়করণ কমেনি, রূপ বদলেছে”—নির্বাচন ঘিরে সতর্ক করলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান

আপডেট সময় : ০৪:৪৫:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরেও প্রশাসন ও রাজনীতিতে দলীয়করণের ধারা বন্ধ হয়নি, বরং রূপ পাল্টে আরও গভীর হয়েছে।”

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত ‘নির্বাচন রিপোর্টিং প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) ও টিআইবি।

প্রশাসনে দলীয়করণ এখনো সক্রিয়

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গত ৫৪ বছর ধরে দলীয়করণ প্রশাসনে গভীরভাবে প্রোথিত। এখন তিনটি ধারা সক্রিয়—একটি দলীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী, একটি প্রতিস্থাপিত গোষ্ঠী, আর একটি নিরপেক্ষ থাকতে চাওয়া ছোট পেশাদার গোষ্ঠী।”

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন শক্তির মধ্যে টানাপোড়েন থেকেই নির্বাচনের বাস্তবতা তৈরি হয়।

তার ভাষায়, “শাসনব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিকরণ ও প্রতিষ্ঠান দুর্বলকরণের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রশাসনের পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা ব্যাহত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই একটি দলীয় প্রভাবকে আরেকটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।”

সাংবাদিকদের জন্য স্বাধীনতার দাবি

প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তার মতে, সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে ‘অবহিত করার’ শর্তটি হয়রানির হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

তিনি বলেন, “এটি সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকার ও দায়িত্ব। সাংবাদিকরা যদি নিরপেক্ষভাবে, সত্যনিষ্ঠভাবে নির্বাচন কাভার করেন, তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে অগ্রগতি সম্ভব।”

সংস্কার ও সুপারিশ

ড. ইফতেখার জানান, শাসন ও নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন সীমিত। অল্প কিছু অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, “পুরো প্রশাসন হঠাৎ করে পরিবর্তন সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদে ধাপে ধাপে পেশাদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।”

প্রশিক্ষণে কারা ছিলেন?

কর্মশালায় অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের নির্বাচনি বিটের প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, আরএফইডি সভাপতি কাজী জেবেল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং টিআইবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এমআর/সবা