- ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ পুরান ঢাকা
- বছরজুড়েই মশার উৎপাত নগরীতে
- বিকেলের পর থেকে মশার উৎপাত বাড়ে
- কয়েল জ্বালিয়েও ফল মিলছে না
জ্বর হলে ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকা, ঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অপরিহার্য -জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী
জ্বর হলে নির্ভয়ে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে, তবে কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে-ডা. আবু জামিল ফয়সাল, সভাপতি, পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন
না শীত না গরম, বছরজুড়েই মশার উৎপাত রাজশাহী নগরীতে। দিনরাত সবসময়ই মশার দাপট সবখানে। নগরীতে মশা মারতে বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এর সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। মশার দাপট কমাতে পারেনি সিটি করপোরেশন। উল্টো মশার ঘনত্ব বেড়েছে বলে জানিয়েছে নগরবাসী। তবে রাসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, মশা মারতে তারা নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। একইসঙ্গে তারা বলছেন, মশার দাপট নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নগরবাসীর সচেতনতা সবার আগে জরুরি।
নগরবাসী জানিয়েছে, বিকেলের পর থেকে মশার উৎপাত বাড়ে। সন্ধ্যার পর মশারির বাইরে বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। কয়েল জ্বালিয়েও ফল মিলছে না। এ নিয়ে নগরবাসীর ক্ষোভের যেন শেষ নেই। মাঝেমধ্যে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে মশা নিধনের কথা বলা হলেও বাস্তবে এসবের কোনো ফল নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর ভয় সর্বজনীন নগর আতঙ্ক হয়ে সামনে এসেছে। প্রায় প্রতিটি মহল্লায় নগরবাসীর জন্য এখন মশাবাহিত রোগ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় ডেঙ্গু সংক্রমণকে আরও তীব্র করছে ঢাকার ‘জনঘনত্ব’ ও ‘অপরিচ্ছন্নতা’। শহরজুড়ে উন্মুক্ত নালা, নর্দমা ও জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন ত্বরান্বিত হচ্ছে, যা ডেঙ্গুর বিস্তারকে আরও তীব্র করছে। অবশ্য অভিজাত এলাকায় কিছুটা সচেতনতা বাড়লেও অন্যান্য এলাকা রয়ে গেছে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে। গত কয়েকদিনে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, উন্মুক্ত ড্রেন, নালা ও খালবিলে জমে থাকা কালো পানি যেন মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মিরপুর, জুরাইন, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, চকবাজার, সদরঘাটসহ প্রায় সব জায়গাতেই দেখা গেছে একই দৃশ্য। নালার পানি জমে আছে, ড্রেনের ঢাকনা ভাঙা বা নেই, আশেপাশে দুর্গন্ধে টেকা দায়। এসব নালায় প্লাস্টিক, পলিথিন, খাবারের উচ্ছিষ্ট আর ময়লা-আবর্জনা জমে পানি হয়ে থাকে স্থির, যা মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করছে। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, উন্মুক্ত ড্রেন, নালা ও খালবিলে জমে থাকা কালো পানি যেন মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মিরপুর, জুরাইন, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, চকবাজার, সদরঘাটসহ প্রায় সব জায়গাতেই দেখা গেছে একই দৃশ্য। নালার পানি জমে আছে, ড্রেনের ঢাকনা ভাঙা বা নেই, আশেপাশে দুর্গন্ধে টেকা দায়। এসব নালায় প্লাস্টিক, পলিথিন, খাবারের উচ্ছিষ্ট আর ময়লা-আবর্জনা জমে পানি হয়ে থাকে স্থির, যা মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করছে
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর পরিষ্কার না হওয়ায় এসব নালা মশার ‘আঁতুড়ঘর’-এ পরিণত হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ফগিং কার্যক্রম অনিয়মিত, আবার যেটুকু হয় তা শুধু চোখে ধোঁয়া দেওয়ার মতো। ড্রেন পরিষ্কারের কাজও হয় খণ্ডকালীন। ফলে যে মশা মরার কথা, সেই মশাই নতুন করে জন্ম নিচ্ছে। জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ড্রেনের পানি কালো হয়ে গেছে, তীব্র দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। প্রতি সন্ধ্যায় মশার ঝাঁক উঠে আসে। শিশুদের বারবার জ্বর হচ্ছে, ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল যেতে হচ্ছে প্রায়ই। আমরা প্রতিদিন বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখি, কিন্তু ড্রেনের পানি তো আমরা শুকাতে পারি না। সিটি কর্পোরেশন ফগিং করলে একদিন কাজ হয়, তারপর আবার একই অবস্থা। কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই বাইরে থাকা যায় না। কয়েল, স্প্রে শেষ হয়ে যায় তবুও মশা কমে না। নালা-ড্রেনে এত আবর্জনা জমেছে যে পানি নড়েও না। আমি নিজেই বাসার সামনের ড্রেন কয়েকবার পরিষ্কার করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সরেজমিনে চকবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, ইসলামবাগ ও লালবাগ ঘুরে দেখা যায়, সংকীর্ণ গলিতে জমে থাকা নোংরা পানি, উন্মুক্ত নালা, অরক্ষিত ড্রেন ও ভাঙা সেপটিক ট্যাংক মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে। বাড়ির ছাদে টিনের ওপর জমে থাকা বৃষ্টির পানি, খোলা পানির ট্যাংক ও ফুলের টবে থাকা স্থির পানি এডিস মশার ডিম ফোটানোর প্রধান স্থান হিসেবে কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশন কিংবা ওয়ার্ডগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। পুরান ঢাকা এখন ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে- এমন মন্তব্য করছেন চিকিৎসক, নগর পরিকল্পনাবিদ ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। সরেজমিনে চকবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, ইসলামবাগ ও লালবাগ ঘুরে দেখা যায়, সংকীর্ণ গলিতে জমে থাকা নোংরা পানি, উন্মুক্ত নালা, অরক্ষিত ড্রেন ও ভাঙা সেপটিক ট্যাংক মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে। বাড়ির ছাদে টিনের ওপর জমে থাকা বৃষ্টির পানি, খোলা পানির ট্যাংক ও ফুলের টবে থাকা স্থির পানি এডিস মশার ডিম ফোটানোর প্রধান স্থান হিসেবে কাজ করছে। জনঘনত্ব এত বেশি যে একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এলাকায় এলে মশার মাধ্যমে সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, সন্ধ্যা নামলেই মশার উপদ্রব ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা মানেই এখন মশার আতঙ্ক। গলির ভেতরে হাঁটলেই মনে হয় মশার ঝাঁকে ঢেকে গেছে চারপাশ। সন্ধ্যা নামলেই বাসিন্দাদের ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে থাকতে হয়। পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার বাসিন্দা রাশেদা বেগম বললেন, ‘সন্ধ্যার আগ থেকেই খোলা বারান্দায় বসা যায় না। মশার কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক র্যাকেট— সব ব্যবহার করেও রেহাই মিলছে না। সবার আগে করতে হবে হটস্পট আইডেন্টিফিকেশন ও ম্যানেজমেন্ট। যেসব এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে, সেখানেই মশার বংশবৃদ্ধি বেশি হচ্ছে। আজিমপুর এলাকার শিক্ষার্থী শাহ আলম বলেন, ‘কয়েল আর স্প্রে ব্যবহার করেও কোনো কাজ হয় না। আশপাশের অসংখ্য উন্মুক্ত নালা-ড্রেনে জমে থাকা স্থির পানি ও আবর্জনাই মশার প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র। সিটি কর্পোরেশনের ফগিং কার্যক্রম অনিয়মিত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার ও কার্যকর মশা নিধন ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব হবে না। অন্যদিকে, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি কমাতে দেখা দিয়েছে বাড়তি সচেতনতা। এসব এলাকায় বসবাসকারীরা এখন নিজেদের উদ্যোগে মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। বিশেষ করে ড্রেনে ঢাকনা লাগানো ও তারের জালি ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে ড্রেনের ভেতরে মশা বংশবিস্তার করতে পারছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে খোলা ড্রেন ও জলাবদ্ধ জায়গায় মশার উপদ্রব বেশি ছিল। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে সেগুলো ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বাড়ি ও আশপাশে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, যাতে লার্ভা জন্ম নিতে না পারে। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি ডা. আবু জামিল ফয়সাল। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ এবার শুধু বেশি নয়, বরং প্রচণ্ড বেশি। সরকার স্বীকার করুক বা না করুক। প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালে ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এটা শুধু সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রের তথ্য। বেসরকারি ছোট-বড় হাসপাতালগুলোতেও একই অবস্থা হওয়ার কথা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একাধিক স্তরের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সবার আগে করতে হবে হটস্পট আইডেন্টিফিকেশন ও ম্যানেজমেন্ট। যেসব এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে, সেখানেই মশার বংশবৃদ্ধি বেশি হচ্ছে। সেখানে লার্ভিসাইডাল ব্যবস্থা নিতে হবে, মশার ডিম ধ্বংস করতে হবে। নির্মাণাধীন ভবনের গর্ত, অরক্ষিত জলাধার, খোলা নালা— এসব জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। উড়ন্ত মশা মারার জন্য ফগিং কার্যকরভাবে না হলে তেমন ফল পাওয়া যায় না। ‘এ কাজ দ্রুততার সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেই করতে হবে। ওয়ার্ড কমিশনার নেই— এসব অজুহাত তুলে লাভ নেই, কারণ দৈনিকভিত্তিতে কাজ করা বিপুল সংখ্যক শ্রমিক আছে। তাদের কাজে লাগাতে হবে। বর্তমানে সমন্বিত উদ্যোগ ও কার্যকর কৌশল না থাকায় দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে— মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ওষুধ ব্যবহার, হটস্পট এলাকায় ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগ, আক্রান্ত রোগীদের আলাদা রাখা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সমন্বিত জাতীয় নীতি গ্রহণ করা না হলে ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে, কিন্তু রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মশার প্রজননস্থল ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের ডেঙ্গু মহামারির পর ভাইরাস সারাদেশে বিস্তৃত হয়েছে। এ বছরের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছিল যে কিছু এলাকায় ডেঙ্গু মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আগেই ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একাধিক স্তরের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। প্রথমত, মশার প্রজননস্থল ও বাসস্থান ধ্বংস করতে হবে। সারাদেশে একযোগে এই কাজ করা এবং জনসাধারণ ও স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। এরপর প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উড়ন্ত মশা ও লার্ভা মারার জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের দেশে কিছু ওষুধ কার্যকর নয়। তাই মশা মারতে সক্ষম ওষুধ আমদানি করা প্রয়োজন।’ ডা. লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘ডেঙ্গুর টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত হটস্পট এলাকায় শিশু ও কিশোরদের মধ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষা সারাদেশে সহজলভ্য ও বিনামূল্যে করা উচিত। রোগী শনাক্ত হলে তাদের মশারির মধ্যে রাখা জরুরি, যাতে আক্রান্ত মশা সুস্থ মানুষকে কামড়িয়ে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। আক্রান্ত এলাকায় চিরুনি অভিযানের মতো পরীক্ষা ও নজরদারি চালানো এবং রোগীকে চিকিৎসার আওতায় রাখা অপরিহার্য।’ এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সঙ্গে কিউলেক্স মশার বিস্তারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জলাবদ্ধ স্থানগুলোতেই এ মশার জন্ম হয়। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জরুরি। ‘পারস্পরিক ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হলে কিউলেক্স মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তাই একে-অপরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করলেই কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে জ্বরের তাপমাত্রা ১০৩–১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, সাধারণ ফ্লু, করোনা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং পানিবাহিত সংক্রমণ। তবে, জ্বর হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জ্বর হলে ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকা, ঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অপরিহার্য। প্রাথমিকভাবে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ এবং শুধুমাত্র প্যারাসিটামল সেবন প্রয়োজন। তবে, এক-দুই দিনের মধ্যে নিকটস্থ সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অবহেলা করলে জটিলতা বাড়তে পারে। বর্তমানে রোগের ধরন ও তীব্রতা নিয়ে পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘এবার জ্বরের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। অনেকের জ্বর চার-পাঁচ দিনেও কমছে না। এতে মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে। আবার শুধু ডেঙ্গুই নয়, চিকুনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনকি টাইফয়েডও আছে। তাই জ্বর হলে দুই দিনের মধ্যে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে, প্রয়োজনে টেস্ট করাতে হবে।’ চিকিৎসা নিয়ে তার পরামর্শ হলো, ‘জ্বর হলে নির্ভয়ে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে, তবে কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার খরচও সরকারিভাবে কমিয়ে দেওয়া দরকার। পর্যাপ্ত টেস্ট কিট আমদানি করে বাজারে ছাড়া উচিত। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নতুন ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দেন ডা. ফয়সাল। তার মতে, ‘ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা করতে হবে। রোগীদের তরলজাতীয় খাবার ও পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে। প্লেটলেট নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি কমে আবার বাড়ে, প্রায়ই স্বাভাবিকভাবে ঠিক হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় বিপদ হলো ডিহাইড্রেশন। পানি কমে গেলে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়, তখন জটিলতা বাড়ে। তাই রোগীকে প্রচুর তরল খাওয়ানোই প্রধান করণীয়।’





















