আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই ২৬৭ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। গত ৩ নভেম্বর বিএনপি’র গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দিনভর দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ বৈঠকে এই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে এতে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, বংশাল এবং কামরাঙ্গীরচরের একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এর ফলে ঢাকা-৭ আসনে প্রার্থীতা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এই আসনে বিএনপি’র পক্ষে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা এবং তাদেরকর্মী সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের নতুন কাউকে চাপিয়ে দিলে তা মেনে নেবেন না। এমন পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি বিএনপি’র হাতছাড়া হলে বিদ্রোহী প্রার্থী বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানার পুনর্র্নিধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৩৭টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব কমপক্ষে ৪৬টি আসনের ওপর পড়েছে। বিশেষ করে ঢাকার নির্বাচনী এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে ছয়টি আসনে। ঢাকার মধ্যে ঢাকা-৭ আসনের সীমানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩ থেকে ৩৩ এবং ৩৫, ৩৬, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-৭ হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি ঢাকা জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ১৮০ নং আসন। সংশোধিত সীমানা নির্ধারণের পর ঢাকা-৭ আসনটি রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ, বংশালের একাংশ, কোতয়ালীর একাংশ, হাজারীবাগের একাংশ ও কামরাঙ্গীরচরের একাংশের ৫৬ ও ৫৭ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এর সীমানাঃ পূর্বে- নাজিরাবাজার, পশ্চিমে- হাজারীবাগ, উত্তরে- পলাশী ও দক্ষিণে- কামরাঙ্গীরচর।

এদিকে শনিবার (৮ নভেম্বর) পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ, বংশাল, কোতয়ালী, কামরাঙ্গীরচরের ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা ও লালবাগের আজিমপুর এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিক হামলা-মামলা আর জুলুম-নির্যাতনের শিকার বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি। থানা থেকে ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি কার্যালয়ে সুনশান নীরবতা। গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে চাঙা ভাব ছিল, গত ৩ নভেম্বরের পর তা আর আগের মতো নেই। সবার মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশা লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, ঢাকা-৭ আসন ঘিরে রাজধানী পুরান ঢাকার স্থায়ীআদি বাসিন্দাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি বড় মেলবন্ধন রয়েছে। স্থানীয়রা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোন প্রার্থীকে সহজে মেনে নিতে পারেন না এবং প্রার্থীও তাদের চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে সমন্বয় করেত পারেন না। এই আসনে ঐতিহ্যকে লালন ও বুকে ধারণ করার জন্য বিএনপি’র প্রতিষ্ঠালগ্ন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মীর শওকত আলী, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাতসহ অনেক বাঘা বাঘা নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বরাবর ঢাকা-৭ আসনের জাতীয় ও ডিএসসিসি’র সব
নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থীকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এবারও তার ব্যাতিক্রম হবেনা।
দলীয় নেতা-কর্মী এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুববিষয়ক সহ-সম্পাদক এবং ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ, বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও কামরাঙ্গীরচর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাজী মো. মনির হোসেন, এবং প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা।
ঢাকা-৭ আসনের অতি জনগুরুত্বপূর্ণ লালবাগের আজিমপুর, চকবাজার, বংশালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রং বেরংয়ের ব্যানার, পোস্টার এবং বিশাল বিশাল বিলবোর্ড প্রধান প্রধান সড়ক ছাপিয়ে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে ঝুলছে। আজিমপুর এলাকায় নিজবাস ভবন সংলগ্ন কার্যালয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের অনুসারী ৫ শতাধিক নেতাকর্মী নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাদের প্রত্যেকেই ঢাকা-৭ এর প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করার বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের আজিমপুর বটতলা ইউনিটের (ওয়ার্ড-২৬) সভাপতি আরমান হোসেন বাদল বলেন, মীর নেওয়াজ আলী একজন সৎ, বিনয়ী এবং ক্লিন ইমেজধারী রাজনীতিবিদ। তিনি ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি এবং যুবদলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুববিষয়ক সহ-সম্পাদক। বিগত ১৫ বছর তিনি সংগ্রাম করে টিকে আছেন। কখনো তার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজী এবং লুটপাটের অভিযোগ কেউ করতে পারেনি, পারবেও না। বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বই স্থানীয়দের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। ঢাকা-৭ আসনের বিস্তির্ণ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়াও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন মীর নেওয়াজ আলী। সম্প্রতি আজিমপুরের ক্রিসেন্ট ক্লাব সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা হতদরিদ্র শাহীন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বাসায় পড়েছিলেন। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। এমন খবর পেয়ে মীর নেওয়াজ আলী ব্যক্তি উদ্যোগে তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় বহন করেন। তিনি সবসময়ই পরোপকারী। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে মীর নেওয়াজ আলীর মতো একজন যোগ্য নেতাকে ঢাকা-৭ আসনে জরুরি প্রয়োজন। নেওয়াজ আলীর বিকল্প কাউকে আমরা ভাবছি না এবং দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও অন্য কাউকে মেনে নেবেন না। তার বড় ভাই মীর আশরাফ আলী আজম বিএনপি’র হয়ে কয়েকদফায় বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে জনসেবায় সম্পৃক্ত রয়েছেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় ক্যাডারদের হামলা-হুমকি ও পুলিশি হয়রানি উপক্ষো করেই বিএনপি’র পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। পুলিশের নির্মম নির্যাতনে তিনি এখনও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। তবে দলের সব কর্মসূচিতেই সোচ্চার রয়েছেন।
শ্রমিক দলের সাবেক নেতা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা-৭ আসনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোকনা কেন, স্থানীয় প্রার্থীর বাইরের অন্য কোন প্রার্থীকে পুরান ঢাকায় আমরা মানবো না। তবে ঢাকা-৭ এর যোগ্য প্রার্থী যদি বাছাই করতে চান, সেক্ষেত্রে মীর নেওয়াজ আলীর বিকল্প এই মুহুর্তে নেই। একই কথা জানালেন চকবাজার থানা বিএনপি’র নেতা মাসুম হোসেন ভুঁইয়া, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল নেতা মোশাররফ হোসেন আরিফ ও কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুর চাঁদ মসজিদ রোড ইউনিটের (৫৬ নম্বর ওয়ার্ড) সভাপতি মো. বাচ্চু।

প্রার্থীতা না পাওয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ বলেন, আমার ব্যর্থতা যদি থাকে তা হলো, আমি চাঁদাবাজী করতে পারিনা, আমি লুটপাট করতে পারিনা। তবে একটি কথা আমি বলতে চাই, দল যাকে মনোনয়ন দিবে, আমি তার পক্ষেই কাজ করবো। আমি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবো না। তবে একটি বিষয় বলতে চাই, যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে, আমার দেশের মা-বোনদের ধর্ষণের জন্য শত্রুপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে, তাদের রাজনীতি যেন নিষিদ্ধ করা হয়। তাদের বিষয়টি বিবেচনা করার সময় এসেছে এখনই।
এদিকে পুরান ঢাকার বংশালের চৌরাস্তার মোড়ে ঢাকা সমিতির বিপরীত পাশের মূলসড়কে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের পক্ষে অনেক পোষ্টার, ব্যানার এবং বিলবোর্ড দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, এখানেই ইসহাক সরকারের অফিস রয়েছে। অফিসের নিচে গিয়ে কয়েক’শ নেতা-কর্মীকে অপেক্ষমান দেখা গেছে। দ্বিতীয়তলায় অফিস কক্ষে গিয়েও নেতা-কর্মীতে ভিড় দেখা যায়। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা এবং মনোনয়ন প্রত্যাশী ইসহাক সরকারের নাম গত ৩ নভেম্বর প্রার্থীর তালিকায় না থাকায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বংশাল সংলগ্ন নাজিমউদ্দিন রোডের বাসিন্দা এবং সাবেক ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার চকবাজার থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মহানগর বিএনপির সাবেকসহ-সাধারণ সম্পাদক সাহিদা মোর্শেদ ঢাকা-৭ আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না করার বিষয় বলেন, ঢাকা-৭ আসনটি পুরান ঢাকা একটি ঐতিহ্যবাহী জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে স্থানীয় প্রার্থীর বাইরে কাউকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয় সেটি স্থানীয়রা ইতিবাচকভাবে নেবে না। এর ফলাফল তাই ইতিবাচক নাও হতে পারে। তিনি বলেন, এটি একটি রক্ষণশীল এলাকা। এটা বুঝতে হবে। সম্ভাব্য চার প্রার্থীর মধ্যে কাকে তিনি চান এমন প্রশ্নে বিএনপির এই সাবেক কাউন্সিলর বলেন, আগেরবার মোস্তফা মহসিন মন্টুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, তিনি আমার খালু হন। কিন্তু তিনি একদিনের জন্য প্রচার করতেও আসেননি। এজন্যই এলাকার দলীয় প্রার্থী দেওয়া হলে এলাকাবাসী উৎসব মুখর পরিবেশে কাজ করবে।
বংশালে নিজ কার্যালয়ে যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের অনুসারী নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকার স্থানীয়দের জন্য একটিমাত্র আসন রয়েছে ঢাকা-৭। পুরান ঢাকার বাসিন্দারা অন্য কোথাও যাবে না। এর বাইরে যদি দল কোন প্রার্থীকে চাপিয়ে দেয় তাহলে সময় এ বিষয় পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করবে। এমনকি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বাড়ারও শঙ্কা রয়েছে।
ইসহাক সরকারের প্রার্থীতা নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেকসহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউদ্দিন রাজীব বলেন, ইসহাক সরকার দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই সংগ্রাম করে টিকে আছেন। কয়েকশত মামলা নিয়ে তিনি দলের রাজনীতি এবং নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। এখন তিনি স্থানীয়দের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে আছেন। তাকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, তিনি নির্বাচিত হবেন। আর তাকে মনোনয়নবঞ্চিত করা হলে নেতা-কর্মীরাতা মেনে নিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সময় ঠিক করে দেবে কী করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল নেতা ইসহাক সরকার বলেন, ঢাকা-৭ আসনটি পুরান ঢাকাবাসীর একটা ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। পুরান ঢাকার সঙ্গে নতুন শহরের পার্থক্য সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, সেটা স্থানীয়দের মধ্য থেকেই সবাই চায়। জনগনের প্রত্যাশার বাইরে যদি দেওয়া হয়, সেটি পুরান ঢাকার জনগন সহজভাবে গ্রহণ করবেনা। ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য এই একটিমাত্র আসন রয়েছে ঢাকা-৭। এটি বুঝতে হবে।
এই নির্বাচনী এলাকার মধ্যে আজিমপুর এবং পলাশীতে এসেও চোখে পড়ে বিশাল বিশাল ব্যানার, পোস্টার এবং বিলবোর্ড। ঢাকা-৭ আসনের অপর দুই আলোচিতপ্রার্থী হলেন- প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিউদ্দিনপিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ। এদের মধ্যে নাসিমা আক্তার কল্পনাকে সবার মধ্যে যোগ্য প্রাথী হিসেবে অবিহিত করেছেন বিএনপির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা বদিউল আলম সুইট।
এ বিষয়ে নাসিমা আক্তার কল্পনা বলেন, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তবে আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে দল যাকে মনোনিত করবে,আমি তার পক্ষে কাজ করবো। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে আমাদের ঢাকা বিভাগীয় একটি মিটিং হয়েছে। সেই বৈঠকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি এই নির্দেশনা মেনে চলবো।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী হাজী মো. মনির হোসেন বলেন, আমরা বিএনপি দলীয় পাঁচ জন প্রার্থী ঢাকা-৭ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরমধ্যে হামিদুর রহমান হামিদ ঢাকা -৬ এর ভোটার, সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টু স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা ঢাকা-৯ এর ভোটার। তারা কেউ এই এলাকার বাসিন্দা নন। বাকী আমি এবং নেওয়াজ আলী ও ইসহাক সরকার ঢাকা-৭ আসনেরই ভোটার। আমি মনে করি আমরা সবাই যোগ্য প্রার্থী। তিনি বলেন, আমি ছয় বছর জেল খেটেছি। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সবসময় ছিলাম। আশা করছি, দল সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। আমাকে যদি মনোনয়ন দেয়। আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।
তবে ঢাকা-৭ এর যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদের কথা উল্লেখ করেছেন সাবেক কাউন্সিলর সাহিদা মোর্শেদ। তিনি বলেন, হামিদুর রহমান যোগ্য প্রার্থী, তবে দল কাকে দিবে জানিনা, যাকেই দিক তাকে এলাকার স্থানীয় হতে হবে। স্থানীয়দের বাইরের প্রার্থীকে পুরান ঢাকাবাসী কখনোই মেনে নেবেনা। বরং বিদ্রোহী প্রার্থী বাড়লে এ আসনটি বিএনপি’র হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, ঢাকা-৭ আসনের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনাধীন রয়েছে। সঠিক সময় সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। সব কিছু চিন্তা করে কাজ করতে হয়। আমরা জোটবদ্ধ এবং সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে চাই। অনেক সময় বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়। এ নিয়ে দলের নীতি-নির্ধারকরা এখনও কাজ করছেন।
এমআর/সবা

























