রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ দেখতে সকাল থেকেই মানুষের ভিড় বাড়ছে। গতকাল বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়ে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুলসংখ্যক ঘর-বাড়ি পুড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় অসংখ্য পরিবারের নিঃস্ব হয়ে যাওয়াকে ‘সকলের জন্য বেদনাদায়ক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ‘কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডে যেসব পরিবার গৃহহীন হয়েছেন, তাদের দুঃখ-কষ্ট আমাদের সকলের জন্য বেদনার। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পোড়া কাঠ, টিন, ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি আর ছাইয়ের স্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে। আগুনের তীব্রতায় পোড়া গন্ধে চারদিকে যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকার চিত্র ফুটে উঠেছে। যে জায়গাগুলো গত মঙ্গলবার ঘনবসতিপূর্ণ ছিল, রাতের আগুনে পুড়ে যাওয়া সে ঘরগুলোতে সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে ধোঁয়াটে গন্ধ আর ছাই। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ এখনো ছাইয়ের মধ্যে হাতড়াচ্ছেন কোনো মূল্যবান জিনিসপত্র বাঁচানো যায় কি না। অনেকে আবার শুধু দাঁড়িয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নিজের হারানো বাসস্থানের দিকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আশ্রয়হীন বাসিন্দা রুবিনা বেগম বলেন, ‘আমার সবকিছুই পুড়ে শেষ। সারাজীবনের সঞ্চয় ছিল ঘরের ভেতরে, কিছুই আর পাইনি। সকাল থেকে দাঁড়িয়ে দেখি— বিশ্বাসই হয় না সব শেষ।’ কাছেই বসে কাঁদছিলেন দিনমজুর হাফিজুল। তিনি বলেন, ‘রাতে আগুন লাগার সময় কিছুই বুঝে ওঠা যায়নি। কোনোরকমে পরিবারকে নিয়ে বের হই। এখন এসে দেখি, আমাদের ১০ বছরের ঘরটুকু নেই। কোথায় থাকব এখন?’ উৎসুক জনতার মধ্যে ছিলেন পাশের মহাখালী থেকে আসা কলেজছাত্র সাজিদ। তিনি বলেন, ‘টিভি আর ফেসবুকে দেখেছি, তবে সামনে এসে দেখে আসল ভয়াবহতাটা বোঝা যায়। এত মানুষ এক রাতে গৃহহীন হয়ে যাবে—ভাবতেই কষ্ট লাগছে।’ পোড়া এলাকাজুড়ে উদ্ধারকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক আর স্থানীয়দের ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেল। কেউ ছাই সরাচ্ছেন, কেউ আবার বয়স্কদের নিরাপদ জায়গায় নিতে সহায়তা করছেন। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে ভিড়ের কারণে উদ্ধারকাজ এবং স্বাভাবিক চলাচলে কিছুটা ব্যাঘাত তৈরি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আগুনের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে তারা বলছেন, বস্তির সংকীর্ণ গলি, দাহ্যপদার্থে ভরা ঘরবাড়ি এবং গ্যাস-বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উৎসুক মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ছে। অনেকেই মোবাইলে ভিডিও ও ছবি তুলছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, আমাদের কান্নার জায়গার ছবি তুলে কেউ কেউ ভিডিও বানাচ্ছে। এতে কষ্ট আরও বাড়ে।
শিরোনাম
ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিতের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
কড়াইল বস্তিতে আগুন, ধ্বংসস্তূপে সব হারাদের আহাজারি
-
নিজস্ব প্রতিবেদক - আপডেট সময় : ০৭:১৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
- ।
- 53
জনপ্রিয় সংবাদ





















