০১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুয়েটে ফিরছে ছাত্ররাজনীতি

 

◉এবার প্রকাশ্যে বুয়েটে গেলেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা
◉ ছাত্র রাজনীতি চালু ও ইমতিয়াজের হল সিট ফেরাতে সমাবেশ
◉ আন্দোলন স্থগিত করলেও পরীক্ষা বর্জন শিক্ষার্থীদের
◉ ছাত্ররাজনীতি পুনরায় চালুর ইঙ্গিত উপাচার্যের
◉ বুয়েটের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে ডিবি
◉ প্রয়োজনে অ্যাকশনে যাওয়ার ইঙ্গিত কাদেরের

 

 

 

 

 

‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে’ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে ফুল দেওয়া হয়।

 

এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, ঢাকা মহনগর উত্তর শাখা, দক্ষিণ শাখা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বুয়েট ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। এ দিকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় গতকাল বুয়েট ক্যাম্পাস এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহু সদস্য মোতায়েন ছিল।

 

এর আগে বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালু এবং ইমতিয়াজ হোসেনের হল সিট ফিরিয়ে দিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ওই কর্মসূচিতে বলেন, আমরা আজ এখানে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি। বুয়েটের এই সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থী, সংবিধান পরিপন্থী, শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্ত।

গত ২৮ মার্চ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বুয়েটে ‘মহড়া’ দেওয়াকে কেন্দ্র করে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী।

তবে তাদের এ আন্দোলনের পেছনে হিজবুত তাহরির ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করে ছাত্রলীগ। ছাত্র রাজনীতির অনুপস্থিতিতে সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠগুলো কাজ করছে বলেও দবি করেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মী।
বুয়েটে আবার ছাত্র রাজনীতি চালু করতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার। গতকাল দুপুরে বুয়েটে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য এ কথা বলেন।

 

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালুর বিষয়ে ছাত্র সংগঠনের দাবির প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে উপাচার্য বলেন, তখন (২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যা) যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত (ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা) নেয়া হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাদের আবার উদ্যোগী হতে হবে।

 

২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে।
সাংবাদিকদের বুয়েট উপাচার্য বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছে, সেটা সঠিক না বেঠিক, সত্য কি না, তা যাচাই করতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যাচাই করবে, তথ্য সংগ্রহ করবে, ঘটনা সত্যি কি না। যদি কেউ অপরাধ করে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। সুতরাং সঠিক তথ্য জানার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাস না হওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, পরীক্ষা ওপেন আছে। পরীক্ষা শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী চলবে। যদি কেউ পরীক্ষা না দেয়, তাহলে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।

 

উপাচার্য বলেন, আমরা চাইব, তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) পরীক্ষা অব্যাহত রাখুক, যাতে ক্যারিয়ার নষ্ট না হয়।
আারেক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষা দিতে আসে, তখন বিবেচনা করা হবে। আজকের পরীক্ষায় দুজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল বলে জানান উপাচার্য।

 

এদিকে গতকাল পূর্ব ঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত রাখার শর্তে ক্লাস পরীক্ষায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানায় তারা।

এদিকে দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠন, ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতিও বুয়েটের। এ বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে আমাদের টিম রয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। তদন্ত করে পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ আন্দোলন সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

এদিকে বুয়েট নিয়ে সরকার অ্যাকশনে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বুয়েটের ঘটনায় তদন্ত চলছে। আমরা খতিয়ে দেখছি। সেখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে একটা অপরাজনীতি-জঙ্গিবাদের কারখানায় পরিণত করা হবে- এটা যাতে না হয় আমরা তদন্ত করে দেখছি। এরকম কিছু পাওয়া গেলে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হবে।
গতকাল তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

 

গত বুধবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকের প্রবেশের ঘটনার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা শনিবার দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দাবি তুলেছেন। ওই ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন কনরা হয়েছে। রোববারও কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। তবে আন্দোলকারীদের পাওয়া যায়নি। তবে গতকালকের পরীক্ষায় একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী ও একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী ব্যতীত অংশ নেননি কোনো শিক্ষার্থী।
এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, রাজনীতিমুক্ত থাকা, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা শিক্ষার্থীরা পেলে আমরা সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে আমাদের একাডেমিক কার্যক্রমের ফেরত যাব। এরই মধ্যে আমরা আমাদের পরীক্ষাগুলো রিশিডিউল করার আবেদন জানিয়েছি।

 

অবস্থান এবং পরীক্ষা বর্জন প্রসঙ্গে তারা বলেন, নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে কেউ কোনোরূপ সমাগম করেনি। ক্যাম্পাসের আশপাশের সব এলাকায় গতকাল রাত থেকে ক্রমাগত সাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি-ধামকি প্রদান, সোস্যাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয় এমন সকল অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বুয়েট ক্যাম্পাস এবং আশেপাশের এলাকা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।

 

তারা আরও বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নিরাপত্তাজনিত এ সকল কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আজ ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়া মানে এই নয় যে, বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর দাবি থেকে সরে এসেছে। এ দাবি বুয়েটের সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীদের বলে জানান তারা।

 

তারা বলেন, বুয়েট এর ২০ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল, উক্ত পরীক্ষায় দুই-তিনজন বাদে সকল শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল। ২০ ব্যাচের ১২১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২১১ জনই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

বুয়েটে ফিরছে ছাত্ররাজনীতি

আপডেট সময় : ০৩:৫২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

 

◉এবার প্রকাশ্যে বুয়েটে গেলেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা
◉ ছাত্র রাজনীতি চালু ও ইমতিয়াজের হল সিট ফেরাতে সমাবেশ
◉ আন্দোলন স্থগিত করলেও পরীক্ষা বর্জন শিক্ষার্থীদের
◉ ছাত্ররাজনীতি পুনরায় চালুর ইঙ্গিত উপাচার্যের
◉ বুয়েটের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে ডিবি
◉ প্রয়োজনে অ্যাকশনে যাওয়ার ইঙ্গিত কাদেরের

 

 

 

 

 

‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে’ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে ফুল দেওয়া হয়।

 

এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, ঢাকা মহনগর উত্তর শাখা, দক্ষিণ শাখা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বুয়েট ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। এ দিকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় গতকাল বুয়েট ক্যাম্পাস এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহু সদস্য মোতায়েন ছিল।

 

এর আগে বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালু এবং ইমতিয়াজ হোসেনের হল সিট ফিরিয়ে দিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ওই কর্মসূচিতে বলেন, আমরা আজ এখানে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি। বুয়েটের এই সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থী, সংবিধান পরিপন্থী, শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্ত।

গত ২৮ মার্চ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বুয়েটে ‘মহড়া’ দেওয়াকে কেন্দ্র করে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী।

তবে তাদের এ আন্দোলনের পেছনে হিজবুত তাহরির ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করে ছাত্রলীগ। ছাত্র রাজনীতির অনুপস্থিতিতে সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠগুলো কাজ করছে বলেও দবি করেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মী।
বুয়েটে আবার ছাত্র রাজনীতি চালু করতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার। গতকাল দুপুরে বুয়েটে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য এ কথা বলেন।

 

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালুর বিষয়ে ছাত্র সংগঠনের দাবির প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে উপাচার্য বলেন, তখন (২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যা) যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত (ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা) নেয়া হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাদের আবার উদ্যোগী হতে হবে।

 

২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে।
সাংবাদিকদের বুয়েট উপাচার্য বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছে, সেটা সঠিক না বেঠিক, সত্য কি না, তা যাচাই করতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যাচাই করবে, তথ্য সংগ্রহ করবে, ঘটনা সত্যি কি না। যদি কেউ অপরাধ করে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। সুতরাং সঠিক তথ্য জানার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাস না হওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, পরীক্ষা ওপেন আছে। পরীক্ষা শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী চলবে। যদি কেউ পরীক্ষা না দেয়, তাহলে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।

 

উপাচার্য বলেন, আমরা চাইব, তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) পরীক্ষা অব্যাহত রাখুক, যাতে ক্যারিয়ার নষ্ট না হয়।
আারেক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষা দিতে আসে, তখন বিবেচনা করা হবে। আজকের পরীক্ষায় দুজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল বলে জানান উপাচার্য।

 

এদিকে গতকাল পূর্ব ঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত রাখার শর্তে ক্লাস পরীক্ষায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানায় তারা।

এদিকে দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠন, ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতিও বুয়েটের। এ বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে আমাদের টিম রয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। তদন্ত করে পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ আন্দোলন সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

এদিকে বুয়েট নিয়ে সরকার অ্যাকশনে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বুয়েটের ঘটনায় তদন্ত চলছে। আমরা খতিয়ে দেখছি। সেখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে একটা অপরাজনীতি-জঙ্গিবাদের কারখানায় পরিণত করা হবে- এটা যাতে না হয় আমরা তদন্ত করে দেখছি। এরকম কিছু পাওয়া গেলে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হবে।
গতকাল তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

 

গত বুধবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকের প্রবেশের ঘটনার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা শনিবার দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দাবি তুলেছেন। ওই ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন কনরা হয়েছে। রোববারও কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। তবে আন্দোলকারীদের পাওয়া যায়নি। তবে গতকালকের পরীক্ষায় একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী ও একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী ব্যতীত অংশ নেননি কোনো শিক্ষার্থী।
এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, রাজনীতিমুক্ত থাকা, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা শিক্ষার্থীরা পেলে আমরা সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে আমাদের একাডেমিক কার্যক্রমের ফেরত যাব। এরই মধ্যে আমরা আমাদের পরীক্ষাগুলো রিশিডিউল করার আবেদন জানিয়েছি।

 

অবস্থান এবং পরীক্ষা বর্জন প্রসঙ্গে তারা বলেন, নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে কেউ কোনোরূপ সমাগম করেনি। ক্যাম্পাসের আশপাশের সব এলাকায় গতকাল রাত থেকে ক্রমাগত সাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি-ধামকি প্রদান, সোস্যাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয় এমন সকল অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বুয়েট ক্যাম্পাস এবং আশেপাশের এলাকা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।

 

তারা আরও বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নিরাপত্তাজনিত এ সকল কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আজ ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়া মানে এই নয় যে, বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর দাবি থেকে সরে এসেছে। এ দাবি বুয়েটের সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীদের বলে জানান তারা।

 

তারা বলেন, বুয়েট এর ২০ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল, উক্ত পরীক্ষায় দুই-তিনজন বাদে সকল শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল। ২০ ব্যাচের ১২১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২১১ জনই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।