১২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিপিএ-৫ ও পাসে এবারও এগিয়ে মেয়েরা

➤ বেড়েছে পাসের হার, কমেছে জিপিএ-৫
➤ ১১ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪
➤ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন
➤ ৯২.৩৩ শতাংশ পাস নিয়ে শীর্ষে যশোর বোর্ড
➤ সর্বনিম্ন পাস সিলেট বোর্ডে ৭৩.৩৫ শতাংশ
➤শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৬১৪টি
➤ শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩টি বেড়ে ৫১টি
➤ তিন বছর পর এবার পূর্ণ সিলেবাস ও নম্বরে পরীক্ষা হয়
➤ খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু আজ

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার বাড়লেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা অনেক কমেছে। ৯টি সাধারণ এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে এবার গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের বছরের মতো এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। আর ৯২.৩৩ শতাংশ পাসের হার নিয়ে এবার শীর্ষে রয়েছে যশোর বোর্ড। অন্যদিকে সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বোর্ডে ৭৩.৩৫ শতাংশ।

এ বছর ১১ বোর্ডে মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। পাসের হার ছিল ৮০.৩৯ শতাংশ।

গতকাল রোববার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এর আগে রোববার ১১টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলাফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সকাল ১০টার দিকে বোর্ড চেয়ারম্যানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পরে বেলা ১১টা থেকেই এসএসসি পরীক্ষার ফল স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে এবং অনলাইনে জানা যায়। এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২৪ সালের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১২ মার্চ শেষ হয়। প্রতিবছর এ পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হলেও কোভিড-১৯ জনিত বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে গত তিন বছর ধরে যথাসময়ে পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণনম্বরে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। স্বস্তির বিষয়, আমরা এই শিডিউল বিপর্যয় ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠেছি এবং এ-বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে সব বিষয়ে, পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণনম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে রোববার এ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরের মতো এবারও ফল প্রকাশের দিন তাঁর অসম্ভব কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দিয়েছেন। আমরা সমগ্র শিক্ষা পরিবার তার প্রতি জানাই অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা।

ফলাফলের সার্বিক চিত্র : চলতি বছর সারা দেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৫ জন ছেলের মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। সবমিলিয়ে এবার পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫। এবার এসএসসিতে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯০ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, পাস এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এদিকে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৩.৭৭ শতাংশ।

 

এ বছর সব শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৬৫ শতাংশ। সব শিক্ষা বোর্ডে উত্তীর্ণ মোট ছাত্রের চেয়ে ৫৯,০৪৭ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ছাত্রের চেয়ে ১৫,৪২৩ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

 

এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে উত্তীর্ণ মোট ছাত্রের চেয়ে ৯৭,৯৭২ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ছাত্রের চেয়ে ১৪,৪৯১ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ ছিল ১,৮৩,৫৭৮ জন, ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ১,৮২,১২৯ জন, জিপিএ ৫ কমেছে ১,৪৪৯ জন।

 

শূন্যপাস ও শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : এ বছর ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি; শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৮টি। গত বছর শূন্য পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪৮টি। আর ২ হাজার ৩৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। সে হিসেবে শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবার বেড়েছে ৬১৪টি, সবাই ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৩টি।

 

এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থী ১৬ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৪২ হাজার ৩১৪ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন।

বিদেশ কেন্দ্রের তথ্য : মোট আটটি কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিল ৩৪৭ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ২৯৮ জন। অনুত্তীর্ণ ৪৯ জন। পাসের শতকরা হার ৮৫.৮৮। শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুটি।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ ফলাফল অর্জনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ইতিবাচক আন্তঃসম্পর্ক, শিক্ষকদের প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান, অভিভাবকদের ক্রমবর্ধমান সচেতনতা ও সহযোগিতা এবং সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা পরিচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

 

৯ বোর্ডের গ্রুপভিত্তিক তথ্য : বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৫ ছাত্র এবং ২ লাখ ৮০ হাজার ১৪৭ ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫ জন ছাত্র (৯৩.২৭ শতাংশ) এবং ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬৪ জন ছাত্রী (৯৪.০১ শতাংশ)। পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে। মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৮০ জন ছাত্র ও ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫৫ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৪ জন ছাত্র (৭৩.১৫ শতাংশ) ও ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৩ জন ছাত্রী (৭৯.১৬ শতাংশ)। এ বিভাগেও এগিয়ে মেয়েরা। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৩ ছাত্র ও ১ লাখ ২০ হাজার ৭৪ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৪ ছাত্র (৮১.২৮ শতাংশ) ও ১ লাখ ৩ হাজার ৬৮ ছাত্রী (৮৫.৮৪ শতাংশ)।

 

 

১১ বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা : সবচেয়ে বেশি যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ৮৫ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৬৬ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

 

জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ঢাকা বোর্ডে ৪৯ হাজার ১৯০ জন, রাজশাহী বোর্ডে ২৮ হাজার ৭৪, কুমিল্লা বোর্ডে ১২ হাজার ১০০, যশোর বোর্ডে ২০ হাজার ৭৬১, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১০ হাজার ৮২৩, বরিশাল বোর্ডে ৬ হাজার ১৪৫, সিলেটে ৫ হাজার ৪৭১, দিনাজপুরে ১৮ হাজার ১০৫, ময়মনসিংহে ১৩ হাজার ১৭৬, মাদরাসা বোর্ডে ১৪ হাজার ২০৬ এবং কারিগরি বোর্ডে ৪ হাজার ৭৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

 

 

খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু আজ : আজ সোমবার থেকে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১৯ মে পর্যন্ত। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয়ক সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ফলাফলে কেউ অসন্তুষ্ট হলে তিনি পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে ঘরে বসেই আবেদন করা যাবে। পরে বোর্ড খাতা যাচাই-বাছাই করে আবেদন নিষ্পত্তি করবে বলে তিনি জানান।

জনপ্রিয় সংবাদ

জিপিএ-৫ ও পাসে এবারও এগিয়ে মেয়েরা

আপডেট সময় : ০৮:০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

➤ বেড়েছে পাসের হার, কমেছে জিপিএ-৫
➤ ১১ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪
➤ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন
➤ ৯২.৩৩ শতাংশ পাস নিয়ে শীর্ষে যশোর বোর্ড
➤ সর্বনিম্ন পাস সিলেট বোর্ডে ৭৩.৩৫ শতাংশ
➤শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৬১৪টি
➤ শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩টি বেড়ে ৫১টি
➤ তিন বছর পর এবার পূর্ণ সিলেবাস ও নম্বরে পরীক্ষা হয়
➤ খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু আজ

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার বাড়লেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা অনেক কমেছে। ৯টি সাধারণ এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে এবার গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের বছরের মতো এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। আর ৯২.৩৩ শতাংশ পাসের হার নিয়ে এবার শীর্ষে রয়েছে যশোর বোর্ড। অন্যদিকে সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বোর্ডে ৭৩.৩৫ শতাংশ।

এ বছর ১১ বোর্ডে মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। পাসের হার ছিল ৮০.৩৯ শতাংশ।

গতকাল রোববার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এর আগে রোববার ১১টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলাফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সকাল ১০টার দিকে বোর্ড চেয়ারম্যানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পরে বেলা ১১টা থেকেই এসএসসি পরীক্ষার ফল স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে এবং অনলাইনে জানা যায়। এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২৪ সালের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১২ মার্চ শেষ হয়। প্রতিবছর এ পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হলেও কোভিড-১৯ জনিত বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে গত তিন বছর ধরে যথাসময়ে পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণনম্বরে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। স্বস্তির বিষয়, আমরা এই শিডিউল বিপর্যয় ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠেছি এবং এ-বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে সব বিষয়ে, পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণনম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে রোববার এ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরের মতো এবারও ফল প্রকাশের দিন তাঁর অসম্ভব কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দিয়েছেন। আমরা সমগ্র শিক্ষা পরিবার তার প্রতি জানাই অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা।

ফলাফলের সার্বিক চিত্র : চলতি বছর সারা দেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৫ জন ছেলের মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। সবমিলিয়ে এবার পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫। এবার এসএসসিতে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯০ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, পাস এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এদিকে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৩.৭৭ শতাংশ।

 

এ বছর সব শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৬৫ শতাংশ। সব শিক্ষা বোর্ডে উত্তীর্ণ মোট ছাত্রের চেয়ে ৫৯,০৪৭ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ছাত্রের চেয়ে ১৫,৪২৩ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

 

এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে উত্তীর্ণ মোট ছাত্রের চেয়ে ৯৭,৯৭২ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ছাত্রের চেয়ে ১৪,৪৯১ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ ছিল ১,৮৩,৫৭৮ জন, ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ১,৮২,১২৯ জন, জিপিএ ৫ কমেছে ১,৪৪৯ জন।

 

শূন্যপাস ও শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : এ বছর ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি; শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৮টি। গত বছর শূন্য পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪৮টি। আর ২ হাজার ৩৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। সে হিসেবে শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবার বেড়েছে ৬১৪টি, সবাই ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৩টি।

 

এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থী ১৬ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৪২ হাজার ৩১৪ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন।

বিদেশ কেন্দ্রের তথ্য : মোট আটটি কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিল ৩৪৭ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ২৯৮ জন। অনুত্তীর্ণ ৪৯ জন। পাসের শতকরা হার ৮৫.৮৮। শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুটি।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ ফলাফল অর্জনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ইতিবাচক আন্তঃসম্পর্ক, শিক্ষকদের প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান, অভিভাবকদের ক্রমবর্ধমান সচেতনতা ও সহযোগিতা এবং সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা পরিচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

 

৯ বোর্ডের গ্রুপভিত্তিক তথ্য : বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৫ ছাত্র এবং ২ লাখ ৮০ হাজার ১৪৭ ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫ জন ছাত্র (৯৩.২৭ শতাংশ) এবং ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬৪ জন ছাত্রী (৯৪.০১ শতাংশ)। পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে। মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৮০ জন ছাত্র ও ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫৫ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৪ জন ছাত্র (৭৩.১৫ শতাংশ) ও ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৩ জন ছাত্রী (৭৯.১৬ শতাংশ)। এ বিভাগেও এগিয়ে মেয়েরা। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৩ ছাত্র ও ১ লাখ ২০ হাজার ৭৪ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৪ ছাত্র (৮১.২৮ শতাংশ) ও ১ লাখ ৩ হাজার ৬৮ ছাত্রী (৮৫.৮৪ শতাংশ)।

 

 

১১ বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা : সবচেয়ে বেশি যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ৮৫ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৬৬ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

 

জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ঢাকা বোর্ডে ৪৯ হাজার ১৯০ জন, রাজশাহী বোর্ডে ২৮ হাজার ৭৪, কুমিল্লা বোর্ডে ১২ হাজার ১০০, যশোর বোর্ডে ২০ হাজার ৭৬১, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১০ হাজার ৮২৩, বরিশাল বোর্ডে ৬ হাজার ১৪৫, সিলেটে ৫ হাজার ৪৭১, দিনাজপুরে ১৮ হাজার ১০৫, ময়মনসিংহে ১৩ হাজার ১৭৬, মাদরাসা বোর্ডে ১৪ হাজার ২০৬ এবং কারিগরি বোর্ডে ৪ হাজার ৭৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

 

 

খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু আজ : আজ সোমবার থেকে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১৯ মে পর্যন্ত। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয়ক সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ফলাফলে কেউ অসন্তুষ্ট হলে তিনি পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে ঘরে বসেই আবেদন করা যাবে। পরে বোর্ড খাতা যাচাই-বাছাই করে আবেদন নিষ্পত্তি করবে বলে তিনি জানান।