১২:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেমালের বড় ক্ষতি কৃষিতে

  • মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ৭০১ কোটি ৪১ লাখ
  • ৪১ হাজার মাছের ঘের ও ২৬৩০০ পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত
  • খুলনায় প্রায় ৩৮ হাজার ৮০০ চিংড়ির খামার

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপকূল এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে রেমালের প্রভাবে তৈরি হওয়া জলোচ্ছ্বাস ও অতিবৃষ্টির কারণে সারা দেশে কৃষি খাতের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফসলের যতটা না ক্ষতি হয়েছে কৃষকের, এর চেয়ে বহুগুণ ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে। রেমালের প্রভাবে মৎস্যসম্পদ খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় ১৩টি জেলার প্রায় ৪১ হাজার মাছের ঘের, ২৬ হাজার ৩০০টি পুকুর এবং চার হাজার কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ৭০১ কোটি ৪১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর দুটি। তবে, ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রেমালের প্রভাবে
মৎস্যসম্পদ খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় ১৩টি জেলার প্রায় ৪১ হাজার মাছের ঘের, ২৬ হাজার ৩০০টি পুকুর এবং চার হাজার কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রেমালের প্রভাবে প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় ৮টি জেলার প্রায় ৫০টি গবাদিপশু ও ৩০টি হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মারা গেছে বেশকিছু ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগিও। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উভয় অধিদপ্তর।এর মধ্যে গবাদিপশুর পাশাপাশি হাঁস, মুরগির খামারও রয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কৃষকের বোনা ঘাস, খড় ও দানাদার খাদ্যও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, সারা দেশে গড়ে ৯০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ধান প্রায় কাটা শেষ হয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ওই সমস্ত তেমন কোন ফসল নেই। যার ফলে কৃষি খাতে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকা খুলনা, বাগেরহাট এলাকার ৭৪ হাজার মাছের ঘের এবং কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, খুলনা জেলায় প্রায় ৩৮ হাজার ৮০০ চিংড়ির খামার এবং বাগেরহাটের ৩৫ হাজার মাছের ঘের ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ
মাছের ঘেরই পানিতে ভেসে গেছে।
খুলনার কয়রা উপজেলারে দশহালিয়ায় ৭ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছিলেন আব্দুর সত্তার। রোববার রাতের ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত হওয়া এই ঘেরের মালিক বলেন, বছরের মাছ ধরার সিজন কেবল শুরু হয়েছিল। গত ৪ মাস ধরে কেবল বাগদা রেনু ছেড়েছি। এই পূর্ণিমাতে মাছ ধরা শুরু করেছি। ঠিক সেই সময়ে সর্বনাশ হয়ে গেল। গত ৫ মাসে ঘেরে মাছ ছাড়তে প্রায় ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। একইসঙ্গে ৭ বিঘা জমি লিজ নিতে তার খরচ হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। একই গ্রামে তার মতো কমপক্ষে শতাধিক ঘেরের মালিকের একইরকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, জেলায় ৩৮ হাজার ৮০০ এর বেশি চিংড়ি খামার রয়েছে। যেখান থেকে বছরে ১১,৯৩৭.৭৫ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হয়।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব কুমার পাল বলেন, জেলার মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ ইউনিয়নে লবণপানি থাকায় সেখানে চিংড়ি চাষও বেশি হয়। এখন অধিকাংশ ঘের জলোচ্ছ্বাসের পানির নিচে। এতে চাষীরা ব্যপক লোকসানের মুখে পড়বেন। ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব হলে পরিমাণ জানা যাবে।
একই অবস্থা বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ও শরনখোলার। প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢুকে প্রায় ৩৫ হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উৎকূলীয় অঞ্চলে মাছের ক্ষতিই বেশি হয়েছে বলে জানা গেছে। এরসঙ্গে কিছু সবজি, পানের বরজ, আম, লিচুর ক্ষতি হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

রেমালের বড় ক্ষতি কৃষিতে

আপডেট সময় : ০৮:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪
  • মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ৭০১ কোটি ৪১ লাখ
  • ৪১ হাজার মাছের ঘের ও ২৬৩০০ পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত
  • খুলনায় প্রায় ৩৮ হাজার ৮০০ চিংড়ির খামার

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপকূল এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে রেমালের প্রভাবে তৈরি হওয়া জলোচ্ছ্বাস ও অতিবৃষ্টির কারণে সারা দেশে কৃষি খাতের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফসলের যতটা না ক্ষতি হয়েছে কৃষকের, এর চেয়ে বহুগুণ ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে। রেমালের প্রভাবে মৎস্যসম্পদ খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় ১৩টি জেলার প্রায় ৪১ হাজার মাছের ঘের, ২৬ হাজার ৩০০টি পুকুর এবং চার হাজার কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ৭০১ কোটি ৪১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর দুটি। তবে, ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রেমালের প্রভাবে
মৎস্যসম্পদ খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় ১৩টি জেলার প্রায় ৪১ হাজার মাছের ঘের, ২৬ হাজার ৩০০টি পুকুর এবং চার হাজার কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রেমালের প্রভাবে প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় ৮টি জেলার প্রায় ৫০টি গবাদিপশু ও ৩০টি হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মারা গেছে বেশকিছু ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগিও। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উভয় অধিদপ্তর।এর মধ্যে গবাদিপশুর পাশাপাশি হাঁস, মুরগির খামারও রয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কৃষকের বোনা ঘাস, খড় ও দানাদার খাদ্যও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, সারা দেশে গড়ে ৯০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ধান প্রায় কাটা শেষ হয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ওই সমস্ত তেমন কোন ফসল নেই। যার ফলে কৃষি খাতে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকা খুলনা, বাগেরহাট এলাকার ৭৪ হাজার মাছের ঘের এবং কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, খুলনা জেলায় প্রায় ৩৮ হাজার ৮০০ চিংড়ির খামার এবং বাগেরহাটের ৩৫ হাজার মাছের ঘের ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ
মাছের ঘেরই পানিতে ভেসে গেছে।
খুলনার কয়রা উপজেলারে দশহালিয়ায় ৭ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছিলেন আব্দুর সত্তার। রোববার রাতের ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত হওয়া এই ঘেরের মালিক বলেন, বছরের মাছ ধরার সিজন কেবল শুরু হয়েছিল। গত ৪ মাস ধরে কেবল বাগদা রেনু ছেড়েছি। এই পূর্ণিমাতে মাছ ধরা শুরু করেছি। ঠিক সেই সময়ে সর্বনাশ হয়ে গেল। গত ৫ মাসে ঘেরে মাছ ছাড়তে প্রায় ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। একইসঙ্গে ৭ বিঘা জমি লিজ নিতে তার খরচ হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। একই গ্রামে তার মতো কমপক্ষে শতাধিক ঘেরের মালিকের একইরকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, জেলায় ৩৮ হাজার ৮০০ এর বেশি চিংড়ি খামার রয়েছে। যেখান থেকে বছরে ১১,৯৩৭.৭৫ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হয়।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব কুমার পাল বলেন, জেলার মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ ইউনিয়নে লবণপানি থাকায় সেখানে চিংড়ি চাষও বেশি হয়। এখন অধিকাংশ ঘের জলোচ্ছ্বাসের পানির নিচে। এতে চাষীরা ব্যপক লোকসানের মুখে পড়বেন। ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব হলে পরিমাণ জানা যাবে।
একই অবস্থা বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ও শরনখোলার। প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢুকে প্রায় ৩৫ হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উৎকূলীয় অঞ্চলে মাছের ক্ষতিই বেশি হয়েছে বলে জানা গেছে। এরসঙ্গে কিছু সবজি, পানের বরজ, আম, লিচুর ক্ষতি হয়েছে।