নতুন করে আবারও আল্টিমেটাম দিয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি। এবার এই আল্টিমেটাম পূরন করতে ব্যর্থ হলে নতুন করে আসতে পারে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত। ধারনা করা হচ্ছে, বন্ধ হতে পারে একাডেমিক কিংবা প্রশাসনিক কার্যক্রম।
জানা যায়, করোনাকালীন লকডাউনের সময় শিক্ষকদের বেতন বাকি ছিলো। তারপর নতুন মাত্রায় যুক্ত হয়েছে পদোন্নতির সমস্যা। দীর্ঘ ১বছরের অধিক সময় ধরে আটকে আছে শিক্ষকদের পদোন্নতি। এব্যাপারে শিক্ষকদের প্রাক্তন সমিতি এবং বর্তমান সমিতি উভয়ই উপাচার্যের সাথে একাধিক বৈঠক করেছে। উপাচার্য তালবাহানা করে তাদের পদোন্নতি দিচ্ছেনা বলে জানা যায়। অন্যদিকে ডিউ-ডেইট সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা। এব্যাপারেও উদাসীন উপাচার্য এবং উপ উপাচার্য। এমনই দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা।
শিক্ষক সমিতির একটি সূত্র জানায়, ডিউ ডেইটের কারনে অনেক শিক্ষকের দুই লাখ টাকার উপরে আঁটকে আছে। শিক্ষক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ তম রিজেন্ট বোর্ডে শিক্ষকদের দাবিগুলো পাশ করা হয়। সেখানে ডিউ ডেইট জটিলতা সহ অন্যান্য বিষয় গুলো ছিলো। কিন্তু ওই বোর্ডে পাশ হওয়ার পরেও ৩৮ তম রিজেন্ট বোর্ডে সেগুলো কেড়ে নেওয়া হয়। ফলে ৩৯ তম রিজেন্ট বোর্ডের আগে শিক্ষক সমিতির সদস্যরা উপাচার্য, উপ উপাচার্য সহ ট্রেজারারকে দাবিগুলো পুনরায় অবগত করে। কিন্তু এতেও কোন কাজ হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে গত ৩০মে(বৃহস্পতিবার) সাধারণ শিক্ষকদের সাথে আলোচনার পর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারার দপ্তর তালাবদ্ধ করে দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
এদিকে, একই দিনে(গত বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, রবিবার(আজ) থেকে রেজিস্ট্রারকে কোনো কাজে অংশ নিতে দেয়া হবে না। রেজিস্ট্রার যদি কোনো কাজে অংশগ্রহণ করে তাহলে কর্মকর্তারা সকল কার্যক্রম থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখার ঘোষণা দেয়। কর্মকর্তারা দাবি করেন, রেজিস্ট্রারের নিয়োগ অনিয়মতান্ত্রিক। সে কিভাবে নিয়োগ পেলো তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আগ অব্দি আন্দোলন চলবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ ২জুন(রবিবার) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে। ওই দপ্তরগুলোর কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা দপ্তরে প্রবেশ করতে পারছেনা। তবে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন এবং কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মধ্যে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান চলমান ছিলো। প্রশাসনিক কার্যক্রমেও কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। অনেক বিভাগে চলছে পাঠদান এবং পরীক্ষা।
শিক্ষকদের আন্দোলন কেন এত জোরদার করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ড. মো. বশির উদ্দীন বলেন, এতদিন যাবৎ শিক্ষকদের পদোন্নতি হচ্ছেনা কেন? কোথায় সমস্যা? ডিউ ডেইট কেন হয়েছে? এর আগে আপনারা উপাচার্যের সাথে বৈঠক করেছেন কিনা? এবিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি। বর্তমান শিক্ষক সমিতি থেকে শুরু করে পূর্ববর্তী শিক্ষক সমিতিও বৈঠক করেছে। কিন্তু এতে কোনো সমাধান হয়নি।
জানা যায়, এর আগে শিক্ষক সমিতি ২বার আল্টিমেটাম দিয়েছিলো। শ্রেণীকক্ষে পাঠদান এবং চলমান পরীক্ষা বন্ধ করে দীর্ঘদিন তাদের দাবি আদায়ে সোচ্চার ছিলো। এতে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ে যাচ্ছিলো ভেবে পুনরায় সমিতি ফিরে আসে।
উপাচার্যের কেন শিক্ষকদের সমস্যাগুলো সমাধান করে দিচ্ছেনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এতবার ওনার কাছে গিয়েছি কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। তাই আমরা নতুন করে আল্টিমেটাম দিয়েছি। চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাকে সময় দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে তিনি যদি শিক্ষকদের দাবিগুলো রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে পাশ করিয়ে আনতে না পারেন তাহলে শিক্ষক সমিতি কঠোর অবস্থানে যাবে।
শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচিতে একাডেমিক কিংবা প্রশাসনিক কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে বশির বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের কক্ষ তালাবদ্ধ থাকবে। বাকি সকল কার্যক্রম নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলবে। একাডেমিক বা প্রশাসনিক কাজে কোনো সমস্যা হবেনা বলে জানান তিনি।
দীর্ঘ সময় ধরে আটকে আছে পদোন্নতি। এতে তীব্র ভোগান্তিতে রয়েছে শিক্ষক সমিতি। সাথে যুক্ত আছেন কর্মকর্তা সমিতি। শিক্ষকদের পদোন্নতি কেন হচ্ছেনা? কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের বেতন কেন বাকি পড়ে আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুবের কাছে। উপাচার্য জানান, পদোন্নতির কিছু নিয়মকানুন আছে। পূর্বের নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে পদোন্নতি আটকে গেছে। তিনি বলেন, পদোন্নতি হবে, তবে সেটা ধীরে ধীরে।
















