➤ চার বছরে ৩ ওভারব্রিজ, বাকি ৩৩টি
➤ কাজ শেষ না করায় তহবিল ফেরত যাওয়ার শঙ্কা
➤ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন মানুষ
রাজধানীতে পথচারীদের চলাচল সহজ করতে ৩৬টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রকল্পটির প্রায় চার বছর পার হলেও মাত্র তিনটি ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এক বছর ধরে প্রগতি সরণি ও মহাখালী রোডে অন্তত সাতটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ ভিত্তি ও কলাম পর্যায়ে রয়ে গেছে। আর ১১টি ওভারব্রিজের কাজ ঠিকাদারদের কাছে স্থান হস্তান্তর করতে পারেনি ডিএনসিসি। ফলে প্রকল্পের তহবিল ফেরত যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারপার হচ্ছেন এসব এলাকার পথচারীরা।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ডিএনসিসির ৩১৯ কোটি টাকার ‘ট্রাফিক অবকাঠামো ও সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্পের আওতায় ডিএনসিসি ছয়টি প্যাকেজের আওতায় ৮৪.৭৪ কোটি টাকায় ৩৬টি পথচারী সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে, ডিএনসিসির ছয়টি জোনের অধীনে রাস্তার ওপর ৪৭টি ফুটব্রিজ রয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে তিনটি প্যাকেজে, এর আগে আরও দুটি জানুয়ারিতে এবং একই বছরের আগস্টে আরও একটির কাজের আদেশ জারি করা হয়। এক বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল এসব কাজ। কিন্তু দুই বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদাররা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাড্ডা, শাহজাদপুর, কোকাকোলা মোড়, মহাখালীর বিজি প্রেস, নাবিস্কো মোড় এবং ডিএনসিসি জোন-৩ এর কাছে রামপুরা সেতু ও বুদ্ধ মন্দিরের পাশের ফুটপাতে পথচারী সেতুর অর্ধেক কাজ পড়ে আছে। আর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, ইউটিলিটি লাইন অপসারণে জটিলতা এবং ফুট ওভার ব্রিজের জন্য নির্বাচিত জায়গায় অন্য প্রকল্প চলমান থাকায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
এসএম কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী হাসিবুর রহমান শাহীন বলেন, ডিএনসিসি সময়মতো জমি হস্তান্তর করতে পারেনি এবং ইউটিলিটি সার্ভিসের লাইন স্থানান্তর করতে পারেনি এবং সে কারণে প্রগতি সরণিতে চারটি পথচারী সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি। গুলশানের তিনটি সেতুর জায়গা কিছুতেই হস্তান্তর করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ডিএনসিসি তার চুক্তি অবৈধভাবে বাতিল করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
গুলশান-১ ও গুলশান-২ এলাকায় তিনটি সেতুর কাজের জায়গা হস্তান্তরের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ। তিনি বলেন, এসএম কনস্ট্রাকশনকে দুটি প্যাকেজের অধীনে ১৩টি ফুটব্রিজের জন্য কাজ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কাজ শেষ করা যায়নি। ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট ওয়েবসাইট অনুসারে, ১১টি পথচারী সেতু নির্মাণের জন্য দুটি পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে রাস্তার মাঝামাঝি গাছ কাটায় ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করায় এসএম রহমান ইন্টারন্যাশনালকে দেওয়া চারটি পদচারী সেতুর কার্যাদেশও বাতিল করা হয়েছে।
ফরহাদ জানান, ১১টি পদচারী সেতুর কাজের জায়গা ডিএনসিসি হস্তান্তর করতে পারেনি। গুলশানের শুটিং স্পোর্ট ক্লাব, গুলশান-১ ভোলা মসজিদ, গুলশান-২ আজাদ মসজিদ, মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড ও মোহাম্মদ সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের কাছে বড় বড় ট্র্যাস থাকার কারণে এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওয়ার্ক সাইট থাকায় বনানী, নৌবাহিনীর সদর দপ্তর ও আর্মি স্টেডিয়াম এলাকায় কোনো সেতু নির্মাণ করা যায়নি।
ফরহাদ বলেন, রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষ্মী, বসিলা রোড ও শ্যামলী এলাকায় তিনটি পদচারী সেতুর কাজ শেষ হয়েছে এবং মানুষ ব্যবহার করছে। প্রকল্পটি ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ করতে আমরা সরকারের কাছে আরও ছয় মাস সময় চাইব। ডিএনসিসি ১১টি সেতুর জন্য নতুন জায়গা খুঁজছে এবং তা না পাওয়া গেলে তহবিল সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হবে।
মহাখালী সড়কে তিনটি পদচারী সেতুর কাজ শেষ না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ডিপিডিসি বিজি প্রেসের কাছে আমাদের কাজের জায়গায় তাদের অফিস নির্মাণ করতে চায় এবং সে কারণে তারা ওভারহেড তারগুলো সরিয়ে ফেলছে না যা উন্নয়নের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। অন্য দুটি কাজের সাইটের জন্য বৈদ্যুতিক তারের স্থানান্তর প্রক্রিয়াধীন আছে।













