০১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রশাসক নিয়োগেও গতি ফেরেনি দুই সিটিতে

  • সাইফ আশরাফ
  • আপডেট সময় : ০৮:১৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • 103

◉ থমকে আছে সড়ক-ড্রেনেজসহ উন্নয়ন কাজ
◉ সাধারণ সেবা পেতেও ভোগান্তিতে নগরবাসী

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রভাব পড়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেও। পালিয়ে যান দুই সিটির মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর ও অনেক কর্মকর্তাও। স্থবির হয়ে পড়ে দুই সিটির ময়লা ব্যবস্থাপনা, মশক নিধনসহ সব কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে দুই সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর পরও গতি ফেরেনি দুই সিটির কার্যক্রমে। থমকে আছে সড়ক, ড্রেনেজসহ সব উন্নয়ন কার্যক্রম। সাধারণ সেবা পেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর, গত ১৯ আগস্ট ঢাকার দুটিসহ দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করা হয়। সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখতে একই দিন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ড. মুহ. শের আলী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মো. মাহমুদুল হাসানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার সব ওয়ার্ড কাউন্সিলদেরও তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের আরেক প্রজ্ঞাপনে ডিএসসিসির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান নজরুল ইসলাম।

সিটি এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, আগে জন্মনিবন্ধন কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে পাওয়া গেলেও এখন নগর ভবনে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও মৃত্যু সনদ সেবা, ওয়ারিশান সনদ, মাতৃসনদ, পারিবারিক সনদসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া অনেকে এলাকায় মশা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেক এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও ঠিকঠাক হচ্ছে না। এছাড়াও রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতে সড়ক ও ড্রেনেজের কাজ থেমে আছে দীর্ঘসময়। বৃষ্টি কাঁদায় যা ভোগান্তি দ্বিগুণ করছে। দুই সিটি এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কের খানাখন্দ। যা যানজট যেমন বাড়াচ্ছে, চলাচলও কঠিন করে তুলেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন প্রশাসকের নেতৃত্বে ডিএনসিসিভুক্ত এলাকায় মশকনিধনে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে মশকনিধন কাজ তদারকির জন্য ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য একটি করে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কাউন্সিলরদের অপসারণ করার প্রায় দুই সপ্তাহ পর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্যান্য সব নৈমিত্তিক সেবাও চালুর চেষ্টা করা হয়। গত ৯ অক্টোবর থেকে ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়।

খাল উদ্ধারে কোনো তৎপরতা শুরু করতে পারেননি। আপাতত খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। গত ৫ আগস্টের পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিছুটা থমকে গেলেও তা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া চলমান অধিকাংশ উন্নয়ন কার্যক্রম থেমে আছে। দলীয় ভিত্তিতে কাজ পাওয়া বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্প সম্পন্ন না করেই আত্মগোপনে চলে গেছে। ফলে এসব প্রকল্প শেষ করতে পুনরায় নতুন ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশই কাজ ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ সম্পন্ন আছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মাঝে দুই মাস দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে থেমে ছিল। এখন কাজ শেষ করতে নতুন ঠিকাদারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, আমাদের কাজে কোনো বাধা হচ্ছে না। চলমান কাজগুলো যে যার দ্বায়িত্ব অনুযায়ী করছেন। উন্নয়ন কাজগুলো বৃষ্টির কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসক স্যার প্রতিনিয়তই কাজের তদারকি করছেন। বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। আশা করি নাগরিকরা ডিএনসিসি থেকে তাদের সঠিক সেবা পেতে কোনো ভোগান্তি পোহাবেন না।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসক নিয়োগের পরপরই বিভিন্ন এলাকায় নর্দমা ও খাল পরিষ্কার, মশক নিধন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হয়। তবে ছোটো-বড় বিভিন্ন রাস্তায় তৈরি হওয়া খানাখন্দ ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বলেন, মেয়র-কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে জনগণের কিছু ভোগান্তি হচ্ছিল। এগুলো কমাতে এরই মধ্যেই নাগরিক সনদ, ওয়ারিশান সনদ, পারিবারিক সনদসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা যেসব সনদ পেতেন তা এখন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমাতে যা কিছু করা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএসসিসি প্রশাসক। এছাড়াও যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে তা শিগগিরই শুরু হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রশাসক নিয়োগেও গতি ফেরেনি দুই সিটিতে

আপডেট সময় : ০৮:১৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

◉ থমকে আছে সড়ক-ড্রেনেজসহ উন্নয়ন কাজ
◉ সাধারণ সেবা পেতেও ভোগান্তিতে নগরবাসী

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রভাব পড়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেও। পালিয়ে যান দুই সিটির মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর ও অনেক কর্মকর্তাও। স্থবির হয়ে পড়ে দুই সিটির ময়লা ব্যবস্থাপনা, মশক নিধনসহ সব কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে দুই সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর পরও গতি ফেরেনি দুই সিটির কার্যক্রমে। থমকে আছে সড়ক, ড্রেনেজসহ সব উন্নয়ন কার্যক্রম। সাধারণ সেবা পেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর, গত ১৯ আগস্ট ঢাকার দুটিসহ দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করা হয়। সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখতে একই দিন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ড. মুহ. শের আলী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মো. মাহমুদুল হাসানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার সব ওয়ার্ড কাউন্সিলদেরও তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের আরেক প্রজ্ঞাপনে ডিএসসিসির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান নজরুল ইসলাম।

সিটি এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, আগে জন্মনিবন্ধন কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে পাওয়া গেলেও এখন নগর ভবনে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও মৃত্যু সনদ সেবা, ওয়ারিশান সনদ, মাতৃসনদ, পারিবারিক সনদসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া অনেকে এলাকায় মশা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেক এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও ঠিকঠাক হচ্ছে না। এছাড়াও রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতে সড়ক ও ড্রেনেজের কাজ থেমে আছে দীর্ঘসময়। বৃষ্টি কাঁদায় যা ভোগান্তি দ্বিগুণ করছে। দুই সিটি এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কের খানাখন্দ। যা যানজট যেমন বাড়াচ্ছে, চলাচলও কঠিন করে তুলেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন প্রশাসকের নেতৃত্বে ডিএনসিসিভুক্ত এলাকায় মশকনিধনে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে মশকনিধন কাজ তদারকির জন্য ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য একটি করে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কাউন্সিলরদের অপসারণ করার প্রায় দুই সপ্তাহ পর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্যান্য সব নৈমিত্তিক সেবাও চালুর চেষ্টা করা হয়। গত ৯ অক্টোবর থেকে ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়।

খাল উদ্ধারে কোনো তৎপরতা শুরু করতে পারেননি। আপাতত খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। গত ৫ আগস্টের পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিছুটা থমকে গেলেও তা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া চলমান অধিকাংশ উন্নয়ন কার্যক্রম থেমে আছে। দলীয় ভিত্তিতে কাজ পাওয়া বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্প সম্পন্ন না করেই আত্মগোপনে চলে গেছে। ফলে এসব প্রকল্প শেষ করতে পুনরায় নতুন ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশই কাজ ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ সম্পন্ন আছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মাঝে দুই মাস দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে থেমে ছিল। এখন কাজ শেষ করতে নতুন ঠিকাদারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, আমাদের কাজে কোনো বাধা হচ্ছে না। চলমান কাজগুলো যে যার দ্বায়িত্ব অনুযায়ী করছেন। উন্নয়ন কাজগুলো বৃষ্টির কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসক স্যার প্রতিনিয়তই কাজের তদারকি করছেন। বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। আশা করি নাগরিকরা ডিএনসিসি থেকে তাদের সঠিক সেবা পেতে কোনো ভোগান্তি পোহাবেন না।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসক নিয়োগের পরপরই বিভিন্ন এলাকায় নর্দমা ও খাল পরিষ্কার, মশক নিধন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হয়। তবে ছোটো-বড় বিভিন্ন রাস্তায় তৈরি হওয়া খানাখন্দ ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বলেন, মেয়র-কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে জনগণের কিছু ভোগান্তি হচ্ছিল। এগুলো কমাতে এরই মধ্যেই নাগরিক সনদ, ওয়ারিশান সনদ, পারিবারিক সনদসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা যেসব সনদ পেতেন তা এখন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমাতে যা কিছু করা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএসসিসি প্রশাসক। এছাড়াও যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে তা শিগগিরই শুরু হবে।