১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংকট বাড়ছে স্বাস্থ্যখাতে

আগে থেকেই নানা সংকটে ধুঁকছে দেশের স্বাস্থ্যখাত। তবে এই খাতে নতুন করে দেখা দিয়েছে আরেক সংকট। স্বাস্থ্যখাতের ৩৮টি অপারেশনাল প¬্যান (ওপি) বন্ধ করেছে সরকার। এতে এসব কর্মসূচিতে কর্মরত প্রায় ২৫ হাজার পরিবারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। স্থবির হয়ে আছে অনেক জরুরি সেবা। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের তেল, চালকের বেতন, এমনকি সিভিল সার্জনের গাড়ির তেলসহ নানান সরবরাহ বন্ধ। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টি কর্মসূচির পাশাপাশি উন্নয়নের নানান খাত বন্ধ। সবাই তাকিয়ে আছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে। যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, জরুরি সেবার কিছুই বন্ধ থাকবে না। উন্নয়ন খাতেও বরাদ্দ বন্ধ থাকবে না। জরুরি সেবাগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জেলা উপজেলাকে অধিদপ্তরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। তারা সরাসরি বরাদ্দ পাবে। এতে ব্যয় কমবে, কমবে দুর্নীতি।
এদিকে অপারেশাল প¬্যান বন্ধে বিরক্ত স্বাস্থ্যখাতের কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টাফরা সব কাজ করলেও বেতন পাচ্ছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এটি তাদেরকে বিব্রত করে বলেও জানাচ্ছেন তারা। দুর্নীতি হচ্ছে বলে সরকার এগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, এখন সমাধানও করছে না বলেও অভিযোগ তাদের। তারা বলছেন, অপারেশনাল প¬্যান বন্ধে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী কমিউনিটি ক্লিনিক। কর্মীদের বেতন নেই, ওষুধ সরবরাহ নেই। অথচ সাধারণ মানুষের চাহিদার শেষ নেই। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের সেবায়ও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তাদের অনেক কিছু এই অপারেশনাল প¬্যানের আওতায়। কর্মীদের বেতন নেই, ওষুধ সরবরাহ নেই। অথচ সাধারণ মানুষের চাহিদার শেষ নেই। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের সেবায়ও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এদিকে উপজেলাগুলোতে যে গাড়ি দেওয়া আছে, ওপি বন্ধের কারণে গাড়ি চালকের বেতন বন্ধ এবং তেল খরচ নেই। এনসিডি কর্নার তথা নন কমিউনিকেবল ডিজিজগুলোর ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহরুবা পান্না বলেন, ‘আমাদের এনসিডি কর্নার, আই ভিশন সেন্টার, বিভিন্ন পুষ্টি কার্যক্রম যেমন ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো, হাসপাতালের জিপ গাড়ি, গাড়ি চালকের বেতন ও তেলের খরচ- এসব অনেক কিছুই বন্ধ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও উন্নয়ন খাতে আরও কিছু বরাদ্দ আসতো, গত এক বছর এসব বন্ধ। সামনে রাজস্ব খাতে এসব সংযুক্ত করে কতটুকু ম্যানেজ করতে পারবো, সেটা দেখার বিষয়। যেভাবে আগে ওপির মাধ্যমে যে পরিমাণ বরাদ্দ আসতো, ঠিক সেই পরিমাণ বরাদ্দ দিলে সমস্যা নেই। আমরা ম্যানেজ করতে পারবো।
মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন এ কে এম আবু সাঈদ বলেন, উপজেলাগুলোতে যে গাড়ি দেওয়া আছে, ওপি বন্ধের কারণে গাড়ির চালকের বেতন বন্ধ এবং তেল খরচ নেই। এনসিডি কর্নার তথা নন কমিউনিকেবল ডিজিজগুলোর ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। ওপির পরিবর্তে সরকার ভিন্ন চিন্তা করছে। রাজস্বখাতে নেবে হয়তো। এখন মাঝের এ সময়টা একটু কষ্ট হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ৩৮টি অপারেশনাল প¬্যান আছে। বিভিন্ন খাতের এসব অপারেশনাল প¬্যানের ২৫ হাজার কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। বেতন কবে হবে, সেটা বলাও মুশকিল। সরকার এ নিয়ে কাজ করছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্তি সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘অপারেশনাল প¬্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে জরুরি সেবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় এবং কর্মরতদের বেতন-ভাতা দিতে নতুন একটি ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে পাস হবে। এটির মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর আর এভাবে ডিপিপি হবে না। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে বিশেষ কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আলাদা ডিপিপি করবে। জরুরি সেবার আওতাভুক্ত যেসব অপারেশনাল প¬্যানে চলতো- ওষুধ, পথ্য, সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় জনবল এগুলো সামনের দিকে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হবে। সংশি¬ষ্ট জেলা উপজেলা তাদের বাজেটে প্রস্তাব করবে, সে আলোকে বরাদ্দ যাবে, তারা খরচ করবে। আগের মতো আর উন্নয়ন খাতে থাকবে না। অপারেশনাল প¬্যান বা ডিপিপি হবে না। এতে দীর্ঘসূত্রতা কেটে যাবে। ব্যয়ও কমবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

সংকট বাড়ছে স্বাস্থ্যখাতে

আপডেট সময় : ০৪:৩৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

আগে থেকেই নানা সংকটে ধুঁকছে দেশের স্বাস্থ্যখাত। তবে এই খাতে নতুন করে দেখা দিয়েছে আরেক সংকট। স্বাস্থ্যখাতের ৩৮টি অপারেশনাল প¬্যান (ওপি) বন্ধ করেছে সরকার। এতে এসব কর্মসূচিতে কর্মরত প্রায় ২৫ হাজার পরিবারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। স্থবির হয়ে আছে অনেক জরুরি সেবা। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের তেল, চালকের বেতন, এমনকি সিভিল সার্জনের গাড়ির তেলসহ নানান সরবরাহ বন্ধ। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টি কর্মসূচির পাশাপাশি উন্নয়নের নানান খাত বন্ধ। সবাই তাকিয়ে আছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে। যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, জরুরি সেবার কিছুই বন্ধ থাকবে না। উন্নয়ন খাতেও বরাদ্দ বন্ধ থাকবে না। জরুরি সেবাগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জেলা উপজেলাকে অধিদপ্তরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। তারা সরাসরি বরাদ্দ পাবে। এতে ব্যয় কমবে, কমবে দুর্নীতি।
এদিকে অপারেশাল প¬্যান বন্ধে বিরক্ত স্বাস্থ্যখাতের কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টাফরা সব কাজ করলেও বেতন পাচ্ছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এটি তাদেরকে বিব্রত করে বলেও জানাচ্ছেন তারা। দুর্নীতি হচ্ছে বলে সরকার এগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, এখন সমাধানও করছে না বলেও অভিযোগ তাদের। তারা বলছেন, অপারেশনাল প¬্যান বন্ধে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী কমিউনিটি ক্লিনিক। কর্মীদের বেতন নেই, ওষুধ সরবরাহ নেই। অথচ সাধারণ মানুষের চাহিদার শেষ নেই। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের সেবায়ও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তাদের অনেক কিছু এই অপারেশনাল প¬্যানের আওতায়। কর্মীদের বেতন নেই, ওষুধ সরবরাহ নেই। অথচ সাধারণ মানুষের চাহিদার শেষ নেই। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের সেবায়ও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এদিকে উপজেলাগুলোতে যে গাড়ি দেওয়া আছে, ওপি বন্ধের কারণে গাড়ি চালকের বেতন বন্ধ এবং তেল খরচ নেই। এনসিডি কর্নার তথা নন কমিউনিকেবল ডিজিজগুলোর ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহরুবা পান্না বলেন, ‘আমাদের এনসিডি কর্নার, আই ভিশন সেন্টার, বিভিন্ন পুষ্টি কার্যক্রম যেমন ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো, হাসপাতালের জিপ গাড়ি, গাড়ি চালকের বেতন ও তেলের খরচ- এসব অনেক কিছুই বন্ধ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও উন্নয়ন খাতে আরও কিছু বরাদ্দ আসতো, গত এক বছর এসব বন্ধ। সামনে রাজস্ব খাতে এসব সংযুক্ত করে কতটুকু ম্যানেজ করতে পারবো, সেটা দেখার বিষয়। যেভাবে আগে ওপির মাধ্যমে যে পরিমাণ বরাদ্দ আসতো, ঠিক সেই পরিমাণ বরাদ্দ দিলে সমস্যা নেই। আমরা ম্যানেজ করতে পারবো।
মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন এ কে এম আবু সাঈদ বলেন, উপজেলাগুলোতে যে গাড়ি দেওয়া আছে, ওপি বন্ধের কারণে গাড়ির চালকের বেতন বন্ধ এবং তেল খরচ নেই। এনসিডি কর্নার তথা নন কমিউনিকেবল ডিজিজগুলোর ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। ওপির পরিবর্তে সরকার ভিন্ন চিন্তা করছে। রাজস্বখাতে নেবে হয়তো। এখন মাঝের এ সময়টা একটু কষ্ট হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ৩৮টি অপারেশনাল প¬্যান আছে। বিভিন্ন খাতের এসব অপারেশনাল প¬্যানের ২৫ হাজার কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। বেতন কবে হবে, সেটা বলাও মুশকিল। সরকার এ নিয়ে কাজ করছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্তি সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘অপারেশনাল প¬্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে জরুরি সেবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় এবং কর্মরতদের বেতন-ভাতা দিতে নতুন একটি ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে পাস হবে। এটির মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর আর এভাবে ডিপিপি হবে না। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে বিশেষ কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আলাদা ডিপিপি করবে। জরুরি সেবার আওতাভুক্ত যেসব অপারেশনাল প¬্যানে চলতো- ওষুধ, পথ্য, সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় জনবল এগুলো সামনের দিকে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হবে। সংশি¬ষ্ট জেলা উপজেলা তাদের বাজেটে প্রস্তাব করবে, সে আলোকে বরাদ্দ যাবে, তারা খরচ করবে। আগের মতো আর উন্নয়ন খাতে থাকবে না। অপারেশনাল প¬্যান বা ডিপিপি হবে না। এতে দীর্ঘসূত্রতা কেটে যাবে। ব্যয়ও কমবে।