২২ জুন, ১৯৮৬—একটি দিন, যেদিন ফুটবল কিংবদন্তির নতুন অধ্যায় লেখা হয়। দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার অসাধারণ প্রতিভার সাক্ষ্য হিসেবে। যাকে অনেকেই ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে মানেন, সেই ম্যারাডোনা ওই দিন দুটি গোল করেন—যেগুলো আজও বিস্ময়ের সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। এই ম্যাচ ছিল শুধুই খেলার লড়াই নয়—এর পেছনে ছিল গভীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। কিছু বছর আগেই আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেনের মধ্যে ফকল্যান্ড যুদ্ধ শেষ হয়েছিল, যা দুই দেশের সম্পর্ককে করে তুলেছিল উত্তপ্ত। সেই যুদ্ধের স্মৃতি তখনও তরতাজা—যা প্রতিটি পাস, প্রতিটি ট্যাকলে ছিল স্পষ্টভাবে অনুভবযোগ্য।
শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনাই নয়, খেলোয়াড়দের লড়তে হয়েছিল প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গেও। স্টেডিয়ামটি ছিল ২,২৫০ মিটার উচ্চতায়, যেখানে বাতাস ছিল পাতলা, তাপমাত্রা ছিল প্রচণ্ড, আর মাঠ ছিল অনিরাপদ ও কঠিন।

এই সব উত্তেজনার মাঝে ম্যাচের ৫১তম মিনিটে ঘটল এক অমর মুহূর্ত। ডিফেন্ডার স্টিভ হজের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বলটি আকাশে উঠে গেলে, ম্যারাডোনা তার বাঁ হাত বাড়িয়ে বলটি গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জালে পাঠান—এটাই হয়ে ওঠে ‘হ্যান্ড অব গড’, ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত কিন্তু স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি।
কিন্তু চার মিনিট পর যেটি ঘটল, তা সম্ভবত আরও বিস্ময়কর। বল পায়ে নিয়ে মাঠের মাঝখান থেকে দৌড়াতে শুরু করেন ম্যারাডোনা। ইংল্যান্ডের পাঁচজন খেলোয়াড়কে পরাস্ত করে এক নিখুঁত স্পর্শে বল পাঠান গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে জালে। এই গোলটিকে বলা হয়—’গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। এটি ছিল এক নিখাদ ফুটবল জাদু।
এই মহাকাব্যিক ম্যাচের পর আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারায় এবং ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে। দলের কোচ কার্লোস বিলার্দোর কৌশল এবং ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনা ফুটবলের স্বর্ণযুগের স্মারক হয়ে উঠে। ২০২০ সালে ম্যারাডোনা পৃথিবীর ওপারে পাড়ি জমালেও তার গোলটির আবেদন এখনও রয়ে গেছে ৩৯ বছর আগের মতই।
আরকে/সবা


























