চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকার গুলশানে গ্রেপ্তার হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ চারজনকে রিমান্ডের পেয়েছে পুলিশ।
রোববার তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান। এই রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন এই চারজনকে ‘কুলাঙ্গার’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এদের রাজনীতি করার ‘অধিকার নেই’। তিনি বলেন, “ওদের এত কম বয়স, কেন ওদের কোটি কোটি টাকা দরকার?”
শুনানির পর আদালত এই চার আসামিকে সাতদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। তারা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ এবং সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। এর মধ্যে শেষের তিনজনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যার পর গুলশান ২ নম্বরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসার সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরের করা গুলশান থানার মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তারদের বাইরে এক আসামি হলেন কাজী গৌরব অপু, যিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। অপর আসামি শিশু।
রোববার রিয়াদসহ চারজনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান। শিশু হওয়ায় তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ মামলার রহস্য উদঘাটন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনার সঙ্গে কোনো ‘গডফাদার’ জড়িত আছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য রিমান্ড প্রয়োজন।
এদিন ৪টা ৫ মিনিটের দিকে পাঁচ আসামিকে একটি প্রাইভেট কারে করে সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। তাদের সরাসরি সিএমএম আদালতের চারতলায় জিয়াদুর রহমানের আদালতে তোলা হয়। এসময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আইনজীবীরা। তারা তাদের সাজা দাবি করেন।
কাঠগড়ায় রাখার সময় আসামিরা আইনজীবীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় ইব্রাহিম তার আইনজীবীকে বলেন, “আমরা চাঁদা চাইনি। সেখানে আওয়ামী লীগের দোসর আছে, একথা জানিয়ে পুলিশকে ফোন দিই। তারা বলে ফোর্স পাঠাচ্ছে, কিন্তু পাঠায়নি।”
সিয়াম বলেন, “আমরা ওই বাসায় যাইনি। নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম।” ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। তখন আদালতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয় ও হৈ চৈ শোনা যায়।
পরে শুনানি করতে উঠে রাষ্টপক্ষের আইনজীবী শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে এই চক্রসহ বহু লোক ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকায় কে, কোন এলাকায় অবস্থান নিচ্ছে তার খবর নিত। পরে ওই বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করতো। তারা নিজেরা চাঁদাবাজি করে তারেক রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য করতেন।
“ওই বাসা সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের। তিনি বাসায় নেই। তার স্বামী ওই বাসায় থাকেন। তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। বিষয়টা এমন না যে বাকি দিনগুলো তারা চাঁদাবাজি করেননি। কত কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে।”
তিনি বলেন, “তারেক রহমানকে চাঁদাবাজ সাব্যস্ত করে তারা হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চায়। সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি। এরা কুলাঙ্গার। এদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ওদের এত কম বয়স, কেন ওদের কোটি কোটি টাকা দরকার।”
এসময় বাদীপক্ষে কয়েকজন আইনজীবী বলেন, আগে এদের খাওয়ার টাকা ছিল না। এখন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে ঘোরে। তারা আশা করেন, চাঁদাবাজদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াবেন না। আসামিদের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল কাদের ভূঁইয়া রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে তাদের জামিন আবেদন করেন।
তিনি বলেন, “চাঁদাবাজ, অন্যায়ের পক্ষে কেউ থাকতে পারে না। আমার একটাই বক্তব্য, ওই বাসায় যাওয়ার আগে ওনারা (আসামিরা) থানায় ফোন দিয়েছিলেন। যদি পুলিশকে ফোন দিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টা ভিন্ন।
“আমরা চাঁদাবাজ মুক্ত একটি সুন্দর পরিবেশ, আমাদের সন্তানের জন্য চাই।” শুনানি শেষে আদালত চারজনের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে ওই শিশুকে গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শওকত আলী। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আসামি বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদ ও অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন।
টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ আখ্যায়িত করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন এবং টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ভাইয়ের কাছে থেকে নিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা দেন। এরপর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় সজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে জানানো হলে আসামিরা চলে যায়।
২৬ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় আবার রিয়াদের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় অন্য আসামি অপু পালিয়ে যান।
এমআর/সবা


























