১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিমান ওঠানামায় ঝুঁকি

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  • ঝুঁকিতে বিমান চলাচল ফ্লাইট রেস্ট্রিকশন জোনে ৫২৫ উঁচু ভবন
  • চিঠি দিলেও ভাঙেনি রাজউক

ভবন ভাঙার কোনো অনুমতি সিভিল এভিয়েশনের যেহেতু নেই, তাই আমরা এ বিষয়ে বার বার রাজউককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এখন ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের- এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, চেয়ারম্যান, বেবিচক

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি ছয়টি ‘অধিক উচ্চতার’ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে; অনুমোদনের চেয়েও প্রায় দিগুণ উচ্চতার ভবন নির্মাণ করায় এগুলো ফ্লাইট ওঠানামায় ঝুঁকি তৈরি করছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্মাণাধীন পাঁচটি এবং এরই মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়া একটি ভবনের অবৈধ অংশ অপসারণ বা ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এসব ভবন উত্তরায় প্রিয়াংকা রানওয়ে সিটি নামের আবাসন প্রকল্পের ১ নম্বর রোডে অবস্থিত। বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনুমোদনের চেয়েও প্রায় দিগুণ উচ্চতার এসব ভবন রানওয়ের পাশে হওয়ায় ফ্লাইট ওঠানামায় ঝুঁকি তৈরি করছে।
এদিকে, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের আশপাশে ফ্লাইট রেস্ট্রিকশন জোনে অবৈধভাবে অন্তত ৫২৫টি উঁচু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১০ বছরে গড়ে উঠেছে এসব ভবন। এসব ভবন ভাঙতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) বার বার চিঠি দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক।
তিনি বলেন, ভবন ভাঙার কোনো অনুমতি সিভিল এভিয়েশনের যেহেতু নেই, তাই আমরা এ বিষয়ে বার বার রাজউককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এখন ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের। সংবাদ সম্মেলনে গত ২১ জুলাই উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের প্রসঙ্গ আসে। বিমানবন্দরের আশপাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় কি না, তা বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, মাইলস্টোন স্কুলের আশপাশে কোনো অবৈধ উঁচু ভবন নেই। সেখানে ১৫০ ফুট পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন আছে এবং বাস্তবে সর্বোচ্চ ১৩৫ ফুট উঁচু ভবন রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, উদ্বোধনের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে কাজ পুরোদমে এগোচ্ছে এবং জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে টার্মিনালের অপারেশন-বিষয়ক আলোচনা চলছে। উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হলে চুক্তি সই হবে। এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া রোববার বলেন, “আমরা ওই ভবনগুলোর অবৈধ অংশ চিহ্নিত করে অপসারণের জন্য আমাদের এটিএম (এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) পরিচালককে বলেছি। আমরা রাজউককেও বলেছি ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অপসারণ করার জন্য। এ বিষয়ে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এগোচ্ছি। সরেজমিন পরিদর্শনের পর ‘অবৈধভাবে গড়ে’ ওঠা এসব ভবন চিহ্নিত করার তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ভবনগুলো বিমানবন্দরের রানওয়ে-১৪ এপ্রোচ ফানেলের পাশে (উত্তরা সংলগ্ন) অবস্থিত। চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি এসব ভবন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার নজরে আসে। এরপর তিনি ভবনগুলো অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। বেবিচকের পরিচালককে (সিএনএস) পাঠানো ওই চিঠিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করতে নিয়ম বহির্ভূত ভবনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, উত্তরায় প্রিয়াংকা রানওয়ে সিটির ১ নম্বর রোডের প্লট নম্বর ৯, ১৩, ২৬, ৩০ ও ৩৬ এবং ৩ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর প্লটগুলো ওএলএস (অবস্ট্রাকল লিমিটেশন সার্ফেস) এর অনুযায়ী প্রাপ্য উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতায় করা হয়েছে। ওএলএস বলতে প্লেন ওঠানামার আশপাশের স্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনাকে বোঝায়। ভবনগুলোর মধ্যে ১ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর প্লটটি ৩৫ ফুটের (৩ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৮০ ফুট (৭ তলা), ৯ নম্বর প্লট ৩৬ ফুটের (৩ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৮০ ফুট (৭ তলা), ১৩ নম্বর প্লটটি ৪৬ ফুটের (৪ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৯০ ফুট (৮ তলা), ১৩ নম্বর প্লট ৪৪ ফুটের অনুমোদন নিয়ে ৯০ ফুট, প্লট নম্বর ৩৬ মাত্র ৫৬ ফুট (৫ তলা) এর অনুমোদন পেয়ে ৯০ ফুট (৮ তলা) ভবন নির্মাণ করছে। এছাড়া ৩ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর প্লটটি ৭৩ ফুট (৬ তলার) অনুমোদন পেয়ে। ১১০ ফুট (১০ তলা) ভবন নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ৩০ নম্বর প্লটের ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। অনুমোদনের বাইরে এসব ভবনের অবৈধ অংশ নির্মাণের বিষয়ে ভবন মালিক ও প্রিয়াংকা রানওয়ে সিটির মূল প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডপ্যাক লিমিটেডের বক্তব্য জানতে পারেনি ।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

বিমান ওঠানামায় ঝুঁকি

আপডেট সময় : ০৭:১১:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
  • ঝুঁকিতে বিমান চলাচল ফ্লাইট রেস্ট্রিকশন জোনে ৫২৫ উঁচু ভবন
  • চিঠি দিলেও ভাঙেনি রাজউক

ভবন ভাঙার কোনো অনুমতি সিভিল এভিয়েশনের যেহেতু নেই, তাই আমরা এ বিষয়ে বার বার রাজউককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এখন ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের- এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, চেয়ারম্যান, বেবিচক

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি ছয়টি ‘অধিক উচ্চতার’ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে; অনুমোদনের চেয়েও প্রায় দিগুণ উচ্চতার ভবন নির্মাণ করায় এগুলো ফ্লাইট ওঠানামায় ঝুঁকি তৈরি করছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্মাণাধীন পাঁচটি এবং এরই মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়া একটি ভবনের অবৈধ অংশ অপসারণ বা ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এসব ভবন উত্তরায় প্রিয়াংকা রানওয়ে সিটি নামের আবাসন প্রকল্পের ১ নম্বর রোডে অবস্থিত। বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনুমোদনের চেয়েও প্রায় দিগুণ উচ্চতার এসব ভবন রানওয়ের পাশে হওয়ায় ফ্লাইট ওঠানামায় ঝুঁকি তৈরি করছে।
এদিকে, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের আশপাশে ফ্লাইট রেস্ট্রিকশন জোনে অবৈধভাবে অন্তত ৫২৫টি উঁচু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১০ বছরে গড়ে উঠেছে এসব ভবন। এসব ভবন ভাঙতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) বার বার চিঠি দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক।
তিনি বলেন, ভবন ভাঙার কোনো অনুমতি সিভিল এভিয়েশনের যেহেতু নেই, তাই আমরা এ বিষয়ে বার বার রাজউককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এখন ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের। সংবাদ সম্মেলনে গত ২১ জুলাই উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের প্রসঙ্গ আসে। বিমানবন্দরের আশপাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় কি না, তা বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, মাইলস্টোন স্কুলের আশপাশে কোনো অবৈধ উঁচু ভবন নেই। সেখানে ১৫০ ফুট পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন আছে এবং বাস্তবে সর্বোচ্চ ১৩৫ ফুট উঁচু ভবন রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, উদ্বোধনের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে কাজ পুরোদমে এগোচ্ছে এবং জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে টার্মিনালের অপারেশন-বিষয়ক আলোচনা চলছে। উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হলে চুক্তি সই হবে। এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া রোববার বলেন, “আমরা ওই ভবনগুলোর অবৈধ অংশ চিহ্নিত করে অপসারণের জন্য আমাদের এটিএম (এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) পরিচালককে বলেছি। আমরা রাজউককেও বলেছি ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অপসারণ করার জন্য। এ বিষয়ে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এগোচ্ছি। সরেজমিন পরিদর্শনের পর ‘অবৈধভাবে গড়ে’ ওঠা এসব ভবন চিহ্নিত করার তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ভবনগুলো বিমানবন্দরের রানওয়ে-১৪ এপ্রোচ ফানেলের পাশে (উত্তরা সংলগ্ন) অবস্থিত। চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি এসব ভবন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার নজরে আসে। এরপর তিনি ভবনগুলো অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। বেবিচকের পরিচালককে (সিএনএস) পাঠানো ওই চিঠিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করতে নিয়ম বহির্ভূত ভবনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, উত্তরায় প্রিয়াংকা রানওয়ে সিটির ১ নম্বর রোডের প্লট নম্বর ৯, ১৩, ২৬, ৩০ ও ৩৬ এবং ৩ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর প্লটগুলো ওএলএস (অবস্ট্রাকল লিমিটেশন সার্ফেস) এর অনুযায়ী প্রাপ্য উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতায় করা হয়েছে। ওএলএস বলতে প্লেন ওঠানামার আশপাশের স্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনাকে বোঝায়। ভবনগুলোর মধ্যে ১ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর প্লটটি ৩৫ ফুটের (৩ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৮০ ফুট (৭ তলা), ৯ নম্বর প্লট ৩৬ ফুটের (৩ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৮০ ফুট (৭ তলা), ১৩ নম্বর প্লটটি ৪৬ ফুটের (৪ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৯০ ফুট (৮ তলা), ১৩ নম্বর প্লট ৪৪ ফুটের অনুমোদন নিয়ে ৯০ ফুট, প্লট নম্বর ৩৬ মাত্র ৫৬ ফুট (৫ তলা) এর অনুমোদন পেয়ে ৯০ ফুট (৮ তলা) ভবন নির্মাণ করছে। এছাড়া ৩ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর প্লটটি ৭৩ ফুট (৬ তলার) অনুমোদন পেয়ে। ১১০ ফুট (১০ তলা) ভবন নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ৩০ নম্বর প্লটের ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। অনুমোদনের বাইরে এসব ভবনের অবৈধ অংশ নির্মাণের বিষয়ে ভবন মালিক ও প্রিয়াংকা রানওয়ে সিটির মূল প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডপ্যাক লিমিটেডের বক্তব্য জানতে পারেনি ।