০৬:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পেশা বদলাতে মরিয়া মোশাররফ করিম!

মোশাররফ করিম শোবিজে কাজের আগে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকতা করেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ভালো করেছেন। এরপর অভিনয় করতে এসে তো বাজিমাত। হয়তো অভিনয় ছেড়ে অন্য কোনো পেশায় গেলে তিনি সেখানেও সেরার পরিচয় দেবেন। আজ (২২ আগস্ট) ভার্সেটাইল এ অভিনেতার জন্মদিন।
‘অভিনয় ছেড়ে দিলে সাংবাদিকতা করবেন মোশাররফ করিম’ সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রচার হয়েছে। মোশাররফ করিম জানিয়েছিলেন, ‘মাঝেমধ্যেই তিনি চিন্তা করেন অনেকটা সময় তো হলো, অভিনয়টা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু কিছুদিন অভিনয় ছেড়ে বাসায় থাকার পর তার আর মন টেকে না। আবারও ফেরেন কাজে। এভাবেই যেন চলছে তার অভিনয় জীবন।’ সংবাদটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেউ কেউ বলেন, ‘আগের চেয়ে কি তার নাটক, সিনেমার কাজ কমে গেছে?’, কেউ বা্ বলেন, ‘মোশাররফ করিম কি তাহলে মনের মতো চরিত্র পাচ্ছেন না।’
তবে সিংহভাগ নেটিজেন বলছেন, ‘মোশাররফ করিম কি তাহলে অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন? তাই তিনি অন্য পেশায় যেতে যাচ্ছেন।’
সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছেন অভিনেতা মোশাররফ করিম। মঞ্চ থেকে টিভি-সিনেমা কিংবা সিরিয়াস ঘরানা থেকে হাস্যারসাত্মক চরিত্র- সবখানেই তিনি অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কোনো নির্দিষ্ট ঘরানায় নিজেকে আটকে রাখেননি তিনি। সব চরিত্রেই অনন্য হয়ে ধরা দিয়েছেন।
মোশাররফ করিম শৈশব থেকেই সব সময় বাবার সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন। তার বাবা যা যা করতেন, তিনিও সেসব করতেন। মোশাররফ করিম মনে করেন, বাবাকে অনুকরণ করতে গিয়েই তার ভেতরে অভিনয়ের সত্তা তৈরি হয়েছে।
মোশাররফ করিম ১৯৮৯ সালে থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘একদিন জানলাম, তারিক আনাম খান নতুন একটি দল করবেন। তখনো দলের নাম ঠিক হয়নি। দলে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাস। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি, রেজাল্ট হয়নি। অডিশনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা নেই। আমি সেটাই ফরমে লিখে ভাইভা দিতে আসি। পরে ১ হাজার ৪০০ জনের মধ্য থেকে বাছাই করে ২৫ জনকে নাট্যকেন্দ্রে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি তাদের একজন।’
মোশাররফ করিম মঞ্চনাটকে অভিনয়ের ১৬ বছর পর ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টিভি পর্দায় নিয়মিত হন। এর মধ্যে তিনি অনেক নাটকেই অভিনয় করেছেন। সেসব নাটকের টাইটেলে তার নাম যেত সংক্ষেপে, কে এম মোশাররফ হোসেন। এভাবে দিনকে দিন তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। ২০০৫ সালের শেষ দিকে হঠাৎ করেই নামের সঙ্গে ‘করিম’ যুক্ত করে নিজের নাম বদলে ফেলেন এ তারকা। হয়ে যান মোশাররফ হোসেন থেকে মোশাররফ করিম। তিনি বলেন, ‘করিম শব্দটি আমার বাবার নাম থেকে নেওয়া। বাবার নাম ছিল খলিফা মোহাম্মাদ আবদুল করিম।’
‘ক্যারাম’ শিরোনামে নাটকটি মোশাররফ করিমের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এটি প্রচারের পর থেকে বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়ায়। বিশেষ করে তরুণদের কাছে তিনি ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে যান। নাটকটি নিয়ে মোশাররফ করিম বলেন, ‘ক্যারাম নাটকে যখন অভিনয়ের প্রস্তাব আসে, তখন অন্য একটি নাটকের শুটিংয়ের জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার কথা। প্রথমবার দেশের বাইরে গিয়ে শুটিং করব, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল। তাই এই নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল না। পরে স্ত্রী জুঁই বলল, তুমি ক্যারাম নাটকটি করো, নাটকটি ভালো হবে। তারপর মত পরিবর্তন করি।’
মোশাররফ করিম ১৯৯৯ সালে এক পর্বের নাটক ‘অতিথি’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় আগমন করেন। নাটকে তার সত্যিকার পথচলা শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে। ২০০৫ সালে তিনি দুটি নাটকে অভিনয় করেন, যা অভিনয় জগতে তাকে এক অধ্যবসায়ী চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মোশাররফ করিম নাটকের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয় করেও প্রশংসিত হয়েছেন। ২০০৪ সালে আমজাদ হোসেন রচিত উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ নির্মিত ‘জয়যাত্রা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। ২০০৬ সালে তিনি আবার তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘রূপকথার গল্প’ সিনমোয় অভিনয় করেন। পরের বছর জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটিও পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ।
২০০৯ সালে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রজাপতি’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত এ সিনেমায় তিনি মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এরপর তিনি অভিনয় করেন আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত ‘জালালের গল্প’ সিনেমায়। চলচ্চিত্রটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১৫ সালে এ সিনেমায় জালালের বড় ভাই চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আভাঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসবের ১৯তম আসরে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।
এসএস/সবা

 

জনপ্রিয় সংবাদ

পেশা বদলাতে মরিয়া মোশাররফ করিম!

আপডেট সময় : ০৬:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

মোশাররফ করিম শোবিজে কাজের আগে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকতা করেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ভালো করেছেন। এরপর অভিনয় করতে এসে তো বাজিমাত। হয়তো অভিনয় ছেড়ে অন্য কোনো পেশায় গেলে তিনি সেখানেও সেরার পরিচয় দেবেন। আজ (২২ আগস্ট) ভার্সেটাইল এ অভিনেতার জন্মদিন।
‘অভিনয় ছেড়ে দিলে সাংবাদিকতা করবেন মোশাররফ করিম’ সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রচার হয়েছে। মোশাররফ করিম জানিয়েছিলেন, ‘মাঝেমধ্যেই তিনি চিন্তা করেন অনেকটা সময় তো হলো, অভিনয়টা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু কিছুদিন অভিনয় ছেড়ে বাসায় থাকার পর তার আর মন টেকে না। আবারও ফেরেন কাজে। এভাবেই যেন চলছে তার অভিনয় জীবন।’ সংবাদটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেউ কেউ বলেন, ‘আগের চেয়ে কি তার নাটক, সিনেমার কাজ কমে গেছে?’, কেউ বা্ বলেন, ‘মোশাররফ করিম কি তাহলে মনের মতো চরিত্র পাচ্ছেন না।’
তবে সিংহভাগ নেটিজেন বলছেন, ‘মোশাররফ করিম কি তাহলে অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন? তাই তিনি অন্য পেশায় যেতে যাচ্ছেন।’
সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছেন অভিনেতা মোশাররফ করিম। মঞ্চ থেকে টিভি-সিনেমা কিংবা সিরিয়াস ঘরানা থেকে হাস্যারসাত্মক চরিত্র- সবখানেই তিনি অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কোনো নির্দিষ্ট ঘরানায় নিজেকে আটকে রাখেননি তিনি। সব চরিত্রেই অনন্য হয়ে ধরা দিয়েছেন।
মোশাররফ করিম শৈশব থেকেই সব সময় বাবার সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন। তার বাবা যা যা করতেন, তিনিও সেসব করতেন। মোশাররফ করিম মনে করেন, বাবাকে অনুকরণ করতে গিয়েই তার ভেতরে অভিনয়ের সত্তা তৈরি হয়েছে।
মোশাররফ করিম ১৯৮৯ সালে থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘একদিন জানলাম, তারিক আনাম খান নতুন একটি দল করবেন। তখনো দলের নাম ঠিক হয়নি। দলে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাস। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি, রেজাল্ট হয়নি। অডিশনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা নেই। আমি সেটাই ফরমে লিখে ভাইভা দিতে আসি। পরে ১ হাজার ৪০০ জনের মধ্য থেকে বাছাই করে ২৫ জনকে নাট্যকেন্দ্রে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি তাদের একজন।’
মোশাররফ করিম মঞ্চনাটকে অভিনয়ের ১৬ বছর পর ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টিভি পর্দায় নিয়মিত হন। এর মধ্যে তিনি অনেক নাটকেই অভিনয় করেছেন। সেসব নাটকের টাইটেলে তার নাম যেত সংক্ষেপে, কে এম মোশাররফ হোসেন। এভাবে দিনকে দিন তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। ২০০৫ সালের শেষ দিকে হঠাৎ করেই নামের সঙ্গে ‘করিম’ যুক্ত করে নিজের নাম বদলে ফেলেন এ তারকা। হয়ে যান মোশাররফ হোসেন থেকে মোশাররফ করিম। তিনি বলেন, ‘করিম শব্দটি আমার বাবার নাম থেকে নেওয়া। বাবার নাম ছিল খলিফা মোহাম্মাদ আবদুল করিম।’
‘ক্যারাম’ শিরোনামে নাটকটি মোশাররফ করিমের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এটি প্রচারের পর থেকে বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়ায়। বিশেষ করে তরুণদের কাছে তিনি ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে যান। নাটকটি নিয়ে মোশাররফ করিম বলেন, ‘ক্যারাম নাটকে যখন অভিনয়ের প্রস্তাব আসে, তখন অন্য একটি নাটকের শুটিংয়ের জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার কথা। প্রথমবার দেশের বাইরে গিয়ে শুটিং করব, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল। তাই এই নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল না। পরে স্ত্রী জুঁই বলল, তুমি ক্যারাম নাটকটি করো, নাটকটি ভালো হবে। তারপর মত পরিবর্তন করি।’
মোশাররফ করিম ১৯৯৯ সালে এক পর্বের নাটক ‘অতিথি’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় আগমন করেন। নাটকে তার সত্যিকার পথচলা শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে। ২০০৫ সালে তিনি দুটি নাটকে অভিনয় করেন, যা অভিনয় জগতে তাকে এক অধ্যবসায়ী চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মোশাররফ করিম নাটকের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয় করেও প্রশংসিত হয়েছেন। ২০০৪ সালে আমজাদ হোসেন রচিত উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ নির্মিত ‘জয়যাত্রা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। ২০০৬ সালে তিনি আবার তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘রূপকথার গল্প’ সিনমোয় অভিনয় করেন। পরের বছর জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটিও পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ।
২০০৯ সালে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রজাপতি’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত এ সিনেমায় তিনি মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এরপর তিনি অভিনয় করেন আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত ‘জালালের গল্প’ সিনেমায়। চলচ্চিত্রটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১৫ সালে এ সিনেমায় জালালের বড় ভাই চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আভাঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসবের ১৯তম আসরে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।
এসএস/সবা