০৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশ্যে ছিনতাই-ডাকাতি, এক মাসে গ্রেপ্তার ৪০৯ অপরাধী

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবর

রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকা এখন যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুলিশি তৎপরতা দুর্বল হয়ে পড়ায় এলাকায় কিশোর গ্যাং ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা পর্যন্ত সবই চলছে প্রকাশ্যে।

বেড়িবাঁধ এলাকায় অটোচালক ও যাত্রীবেশে অপরাধীরা সুযোগ বুঝে যাত্রী ও পথচারীর সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশ ও সাংবাদিকও। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে খুন, গোলাগুলি, দখলবাজি ও ছিনতাইয়ের একের পর এক ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের।

পুলিশের তথ্য বনাম বাস্তবতা

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসে বিশেষ অভিযানে ৪০৯ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, সামুরাই, ধারালো অস্ত্র, বিস্ফোরক ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত অপরাধের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি, কারণ অনেক ভুক্তভোগী মামলা করতে রাজি হন না।

 

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মোহাম্মদপুর জোনে ৩টি হত্যা, ৪৫টি ছিনতাই, ২৬টি চুরি এবং একটি অপহরণ মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। গড়ে প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় একটি ছিনতাই মামলা হয়েছে। অথচ স্থানীয়রা বলছেন, বাস্তবে প্রতিদিনই একাধিক ছিনতাই ঘটছে।

চারটি হটস্পটে অপরাধের দৌরাত্ম্য

মোহাম্মদপুরের বসিলা বেড়িবাঁধ, ঢাকা উদ্যান, জেনেভা ক্যাম্প ও টাউন হল বিপরীতে বিহারি ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে অপরাধীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। সন্ধ্যা নামলেই থমথমে হয়ে যায় এলাকার রাস্তা ও আবাসিক ভবনগুলো। চাঁদ উদ্যান, সাত মসজিদ হাউজিং, বসিলা ৪০ ফিটসহ বেশ কিছু এলাকাকে গোয়েন্দা সংস্থা ‘তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

আলোচিত কিছু ঘটনা

সম্প্রতি নেসলে কোম্পানির গাড়ি থেকে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই, নারী শিক্ষার্থীর ব্যাগ ছিনতাই, সাদেক খান আড়তের সামনে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা, নিরাপত্তাকর্মী খুন এবং জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলির মতো ঘটনা এলাকায় চরম আতঙ্ক তৈরি করেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

পুলিশের অবস্থান

ডিএমপির মিডিয়া সেলের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় নিয়মিত অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধ ও আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী মিসাইল পরীক্ষা করল ভারত

প্রকাশ্যে ছিনতাই-ডাকাতি, এক মাসে গ্রেপ্তার ৪০৯ অপরাধী

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবর

আপডেট সময় : ০৫:৩১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকা এখন যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুলিশি তৎপরতা দুর্বল হয়ে পড়ায় এলাকায় কিশোর গ্যাং ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা পর্যন্ত সবই চলছে প্রকাশ্যে।

বেড়িবাঁধ এলাকায় অটোচালক ও যাত্রীবেশে অপরাধীরা সুযোগ বুঝে যাত্রী ও পথচারীর সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশ ও সাংবাদিকও। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে খুন, গোলাগুলি, দখলবাজি ও ছিনতাইয়ের একের পর এক ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের।

পুলিশের তথ্য বনাম বাস্তবতা

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসে বিশেষ অভিযানে ৪০৯ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, সামুরাই, ধারালো অস্ত্র, বিস্ফোরক ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত অপরাধের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি, কারণ অনেক ভুক্তভোগী মামলা করতে রাজি হন না।

 

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মোহাম্মদপুর জোনে ৩টি হত্যা, ৪৫টি ছিনতাই, ২৬টি চুরি এবং একটি অপহরণ মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। গড়ে প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় একটি ছিনতাই মামলা হয়েছে। অথচ স্থানীয়রা বলছেন, বাস্তবে প্রতিদিনই একাধিক ছিনতাই ঘটছে।

চারটি হটস্পটে অপরাধের দৌরাত্ম্য

মোহাম্মদপুরের বসিলা বেড়িবাঁধ, ঢাকা উদ্যান, জেনেভা ক্যাম্প ও টাউন হল বিপরীতে বিহারি ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে অপরাধীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। সন্ধ্যা নামলেই থমথমে হয়ে যায় এলাকার রাস্তা ও আবাসিক ভবনগুলো। চাঁদ উদ্যান, সাত মসজিদ হাউজিং, বসিলা ৪০ ফিটসহ বেশ কিছু এলাকাকে গোয়েন্দা সংস্থা ‘তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

আলোচিত কিছু ঘটনা

সম্প্রতি নেসলে কোম্পানির গাড়ি থেকে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই, নারী শিক্ষার্থীর ব্যাগ ছিনতাই, সাদেক খান আড়তের সামনে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা, নিরাপত্তাকর্মী খুন এবং জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলির মতো ঘটনা এলাকায় চরম আতঙ্ক তৈরি করেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

পুলিশের অবস্থান

ডিএমপির মিডিয়া সেলের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় নিয়মিত অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধ ও আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এমআর/সবা