১২:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে ১৭ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি নতুন আবাসিক প্রকল্প

চট্টগ্রামে দিন দিন বাড়ছে জনসংখ্যা। কিন্তু নগরের আবাসন ব্যবস্থা জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে পারছে না। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গত ১৭ বছরে নতুন কোনো আবাসিক প্রকল্প হাতে নিতে পারেনি। নগরের বাসিন্দারা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাসন সংকট ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কারণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ চট্টগ্রামে আসছেন। কিন্তু আবাসন খাতের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এর ফলে জমির উচ্চমূল্য, নতুন প্রকল্পের অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামোসহ নানা সমস্যা প্রকট হচ্ছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৬ বছরে সংস্থাটি গড়ে তুলেছে ১২টি আবাসিক প্রকল্প। এসব প্রকল্পে মোট ৬,০৬৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে দুইটি প্রকল্পে একটিও বাড়ি নির্মাণ হয়নি। আরও কয়েকটি প্রকল্পে অধিকাংশ প্লট মালিকই বাড়ি নির্মাণ করেননি। ফলে বছরের পর বছর প্লট খালি থাকায় সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

প্লট মালিকরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন পরও বরাদ্দকৃত অনেক আবাসিক এলাকায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। শুধুমাত্র প্লট বরাদ্দ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে সিডিএ। অনন্যা আবাসিক প্রকল্প এলাকায় প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। বলা হচ্ছে, নিয়ম না মেনে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিডিএ নগরে ১২টি আবাসিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পগুলো হলো ১৯৬৩ সালে কাতালগঞ্জ, ১৯৬৫ সালে আগ্রাবাদ, ১৯৭৩ সালে চান্দগাঁও, ১৯৭৭ সালে কর্ণেলহাট, ১৯৮৫ সালে সলিমপুর, ১৯৯২ সালে কর্ণফুলী, ২০০০ সালে চন্দ্রিমা, ২০০২ সালে চান্দগাঁও দ্বিতীয় পর্যায়, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে কল্পলোক প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় এবং ২০০৮ সালে অনন্যা আবাসিক এলাকা। ২০০৯ সালে ষোলশহর পুনর্বাসন এলাকায় ৪৮টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের দেওয়া হয়।

সিডিএর ১২টি প্রকল্পের মধ্যে অনেক প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ হয়নি। ১৯৯২ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে নেওয়া মইজ্জারটেক এলাকার কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে ৫১৫ জনকে ৪৮৯টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রায় ৩০ বছর পরও এখানে বাড়ি নির্মাণ হয়নি এবং নাগরিক সুবিধাও গড়ে ওঠেনি। অনন্যা আবাসিক (১-২ পর্যায়), সলিমপুর ও কল্পলোক প্রকল্পেও অনেকে বাড়ি নির্মাণ করেননি।

সলিমপুর প্রকল্পে ১,০২৯টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও অধিকাংশ বাড়ি নির্মাণ হয়নি। কল্পলোক আবাসিক প্রকল্পে ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,৭০০টি প্লট তৈরি করা হলেও সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন হয়নি। অনন্যা আবাসিক প্রকল্পে দুটি ইউনিটে প্রায় ১,৭০০ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনও আবাসন গড়ে ওঠেনি।

অনন্যা আবাসিকের ক্ষেত্রে প্লট বরাদ্দের পরও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, ভবন করতে অতিরিক্ত পাইলিং করতে হয়। পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাব, সড়ক ও চলাচলের অসুবিধা, এবং ব্রিজের টোলসহ নানা সমস্যা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি করছে। কর্ণফুলী বামতীর হাউজিং সোসাইটির প্লট মালিকরা জানিয়েছেন, পানির সংযোগ দেওয়ার জন্য সিডিএ ওয়াসাকে ২.৫ কোটি টাকা হস্তান্তর করেছে। তবে ব্রিজের টোলের কারণে শহরে আসা-যাওয়ায় বাড়তি ব্যয় হচ্ছে।

সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানিয়েছেন, “যেসব প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ হয়নি, সেখানে দ্রুত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য নতুন প্রকল্প নেওয়ার বিষয়েও কাজ চলছে। বাকি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের আবাসন সংকট কেটে যাবে।”

নগরের বাসিন্দারা জানান, দ্রুত নগরায়ণ, জমির উচ্চমূল্য এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামোতে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। সিডিএর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবাসন সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

চট্টগ্রামে ১৭ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি নতুন আবাসিক প্রকল্প

আপডেট সময় : ০৭:১৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামে দিন দিন বাড়ছে জনসংখ্যা। কিন্তু নগরের আবাসন ব্যবস্থা জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে পারছে না। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গত ১৭ বছরে নতুন কোনো আবাসিক প্রকল্প হাতে নিতে পারেনি। নগরের বাসিন্দারা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাসন সংকট ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কারণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ চট্টগ্রামে আসছেন। কিন্তু আবাসন খাতের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এর ফলে জমির উচ্চমূল্য, নতুন প্রকল্পের অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামোসহ নানা সমস্যা প্রকট হচ্ছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৬ বছরে সংস্থাটি গড়ে তুলেছে ১২টি আবাসিক প্রকল্প। এসব প্রকল্পে মোট ৬,০৬৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে দুইটি প্রকল্পে একটিও বাড়ি নির্মাণ হয়নি। আরও কয়েকটি প্রকল্পে অধিকাংশ প্লট মালিকই বাড়ি নির্মাণ করেননি। ফলে বছরের পর বছর প্লট খালি থাকায় সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

প্লট মালিকরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন পরও বরাদ্দকৃত অনেক আবাসিক এলাকায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। শুধুমাত্র প্লট বরাদ্দ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে সিডিএ। অনন্যা আবাসিক প্রকল্প এলাকায় প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। বলা হচ্ছে, নিয়ম না মেনে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিডিএ নগরে ১২টি আবাসিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পগুলো হলো ১৯৬৩ সালে কাতালগঞ্জ, ১৯৬৫ সালে আগ্রাবাদ, ১৯৭৩ সালে চান্দগাঁও, ১৯৭৭ সালে কর্ণেলহাট, ১৯৮৫ সালে সলিমপুর, ১৯৯২ সালে কর্ণফুলী, ২০০০ সালে চন্দ্রিমা, ২০০২ সালে চান্দগাঁও দ্বিতীয় পর্যায়, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে কল্পলোক প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় এবং ২০০৮ সালে অনন্যা আবাসিক এলাকা। ২০০৯ সালে ষোলশহর পুনর্বাসন এলাকায় ৪৮টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের দেওয়া হয়।

সিডিএর ১২টি প্রকল্পের মধ্যে অনেক প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ হয়নি। ১৯৯২ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে নেওয়া মইজ্জারটেক এলাকার কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে ৫১৫ জনকে ৪৮৯টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রায় ৩০ বছর পরও এখানে বাড়ি নির্মাণ হয়নি এবং নাগরিক সুবিধাও গড়ে ওঠেনি। অনন্যা আবাসিক (১-২ পর্যায়), সলিমপুর ও কল্পলোক প্রকল্পেও অনেকে বাড়ি নির্মাণ করেননি।

সলিমপুর প্রকল্পে ১,০২৯টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও অধিকাংশ বাড়ি নির্মাণ হয়নি। কল্পলোক আবাসিক প্রকল্পে ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,৭০০টি প্লট তৈরি করা হলেও সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন হয়নি। অনন্যা আবাসিক প্রকল্পে দুটি ইউনিটে প্রায় ১,৭০০ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনও আবাসন গড়ে ওঠেনি।

অনন্যা আবাসিকের ক্ষেত্রে প্লট বরাদ্দের পরও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, ভবন করতে অতিরিক্ত পাইলিং করতে হয়। পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাব, সড়ক ও চলাচলের অসুবিধা, এবং ব্রিজের টোলসহ নানা সমস্যা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি করছে। কর্ণফুলী বামতীর হাউজিং সোসাইটির প্লট মালিকরা জানিয়েছেন, পানির সংযোগ দেওয়ার জন্য সিডিএ ওয়াসাকে ২.৫ কোটি টাকা হস্তান্তর করেছে। তবে ব্রিজের টোলের কারণে শহরে আসা-যাওয়ায় বাড়তি ব্যয় হচ্ছে।

সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানিয়েছেন, “যেসব প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ হয়নি, সেখানে দ্রুত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য নতুন প্রকল্প নেওয়ার বিষয়েও কাজ চলছে। বাকি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের আবাসন সংকট কেটে যাবে।”

নগরের বাসিন্দারা জানান, দ্রুত নগরায়ণ, জমির উচ্চমূল্য এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামোতে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। সিডিএর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবাসন সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।

এমআর/সবা