- এখনো ছোট দলগুলোর আসন সমঝোতা চলছে
- ‘বিলুপ্তির পথে’ একের পর এক ছোট দল
আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হতে চললেও এখনো বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ছোট দলগুলোর আসন সমঝোতা চলছে। এ নিয়ে বড় ছোট সব দলে অস্থিরতা ও চাপ অব্যাহত আছে। ভোটে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ, আরপিওর কঠোর শর্ত ও প্রতীক সংকটের মুখে পড়ে কেউ কেউ নিজ দল ছেড়ে বড় দলে যোগ দিয়ে নির্বাচন করছেন। কোনো কোনো দলের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক দল থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে এসে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এমন অবস্থায় একের পর এক ছোট দল ‘বিলুপ্তির পথে’। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা জোট রাজনীতিকে শক্তিশালী না করে বরং ছোট দলগুলোর রাজনৈতিক বিকাশ ও আদর্শিক অবস্থানকে আরো দুর্বল করে দিচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটের চেয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে আছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বিএনপি এখন পর্যন্ত ১৫টি আসন ছাড় দিয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি দল বাদে বাকি শরিক দলের নেতারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। ধানের শীষ প্রতীক নিশ্চিত করতে চারটি দলের শীর্ষ নেতারা নিজেদের দল বিলুপ্ত করে নেতাকর্মীসহ বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। দুটি দলের মহাসচিব দল ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত শরিক দলের পাঁচ নেতা ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন। বড় দলের সঙ্গে জোট করতে গিয়ে এমন দল বিলুপ্ত করে দেওয়ার ঘটনা রাজনীতির জন্য সুখকর নয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল আলম বলেন, ‘দল বদলের রাজনীতি নতুন নয়। বরং সংসদ সদস্য হওয়ার আশায় নেতারা দল ও আদর্শ বদল করছেন, যা গণতন্ত্রের দুর্বলতারই ইঙ্গিত বহন করে। এতে ছোট দলগুলোর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং জনগণের পক্ষে কথা বলার শক্তিও কমে যাচ্ছে। সব দলের উচিত নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো।’ লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে গত ৮ ডিসেম্বর নাটকীয় সিদ্ধান্ত নেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। নিজ দল বিলুপ্ত ঘোষণা করে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এর পরপরই তাকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এলডিপির ব্যানারে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন তিনি। তবে দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি তার দলের একাংশ। তারা পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেন, যা দলটির ভাঙনের চিত্র আরো স্পষ্ট করে তোলে। যোগদান শেষে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ছাত্রদল থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। পরিস্থিতির কারণে একসময় বিএনপি থেকে তাকে সরে যেতে হয়েছিল। তবে হৃদয়ে সব সময় বিএনপিকেই ধারণ করেছেন। সেলিমের পথ ধরেই হাঁটেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিলেও দ্বিতীয় দফায় বিএনপি সেখানে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করায় জোটে চাপ বাড়ে। শেষ পর্যন্ত বিএনপির উচ্চপর্যায়ের পরামর্শে জাতীয় দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে নিজের আসন নিশ্চিত করেন এহসানুল হুদা। কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তার প্রার্থী হওয়া এখন প্রায় নিশ্চিত।
জানা গেছে, এহসানুল হুদার বাবা সৈয়দ সিরাজুল হুদা বাংলাদেশ জাতীয় দল নামে রাজনৈতিক দলটির প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৮ সালে সিরাজুল হুদা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে হেরে যান। এহসানুল হুদা ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি তারেক রহমানের রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা ৩১ দফার প্রচারণায় কাজ করেন। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদও একই বাস্তবতার মুখোমুখি। নড়াইল-২ আসনে ধানের শীষে নির্বাচন করতে চাইলেও সেখানে বিএনপির অন্য প্রার্থী ঘোষণা হওয়ায় তিনিও বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, এনপিপি বিলুপ্ত করা হবে না। মোস্তফা জামাল হায়দারকে আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে পিরোজপুর-১ আসনে ছাড় দেয় বিএনপি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি নির্বাচন করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এই আসনে পরে বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। নিবন্ধিত দল এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজও ধানের শীষ পেতে কৌশলগত পথে হাঁটছেন। ইতোমধ্যে তিনি নিজ দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। বিএনপিতে যোগ দিয়ে ঢাকা-১৩ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তবে দল বিলুপ্ত করা হচ্ছে না। তার স্ত্রীকে এনডিএমের চেয়ারম্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে। আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েন বেশ ভালোই জমে উঠে গণঅধিকার পরিষদের। শুরুতে ৩৫টি আসনের দাবি জানালেও পরে তা ২৫-এ নামায় দলটি। সর্বশেষ বৈঠকে তারা ১০টি আসনের দাবি তোলে। নি¤œকক্ষে, উচ্চকক্ষে দুটি ও একটি নারী সংরক্ষিত আসনও দাবি করে দলটি। তবে বিএনপি বিএনপি নি¤œকক্ষে নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী ৩) ও রাশেদ খানের (ঝিনাইদহ-৪) জন্য দুটি আসন ছাড় দিতে সম্মত হয়। আলোচনা আছে, ক্ষমতায় গেলে নুরকে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই দেওয়া হবে। এছাড়া উচ্চকক্ষে ও সংরক্ষিত আসনে ছাড় দেওয়া হবে। জানা গেছে, এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে মাঠে নামলেও নুর ও রাশেদ দুজনই পড়েছেন চ্যালেঞ্জের মুখে। নুরের আসনে বিএনপি নেতা হাসান মামুন স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে রাশেদের আসন ঝিনাইদহে বিএনপি নেতাকর্মীরা কাফনের কাপড় গায়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে গণঅধিকার ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন রাশেদ। বিএনপিতে যোগ নিয়ে রাশেদ খান বলেন, ‘আমি বলতে চাই বিএনপি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করছে। আমি মনে করি নতুন বাংলাদেশ গঠনে তারেক রহমানের নেতৃত্ব দেশ ও জনগণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবেন। আমি আজ বিএনপিতে যোগ দিয়েছি এবং দেশ ও জনগণের জন্য সংগ্রাম করে যাব।’ রাশেদ বিএনপিতে গেলেও নুরুল হক নুর দলীয় ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এদিকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) থেকে পদত্যাগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন দলটির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ। যোগদানের পর বিএনপি তাকে কুমিল্লা-৭ আসনের দলের প্রার্থী ঘোষণা করে।
























