০৬:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাঠ্যবই ও কারিকুলাম বিতর্ক থামছেই না এনসিটিবির বিশেষজ্ঞদের মান নিয়ে প্রশ্ন

  • রকীবুল হক
  • আপডেট সময় : ১২:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • 148

👁 প্রয়োজনীয় সংশোধনে

👁 গুরুত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

 

শিক্ষার প্রথম জীবনেই পাঠ্যবইয়ের নানা ভুল-ত্রুটি নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। বিশেষ করে গত বছর থেকে চালু হওয়া নতুন কারিকুলাম নিয়ে এই জটিলতা বেড়েছে। কারিকুলামের নানা অসঙ্গতির পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের বইয়ে তথ্য ও বানান ভুলের পাশাপাশি বিদেশি কনটেন্ট চুরির ঘটনাও ঘটেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কারিকুলাম ও বইয়ের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নানা বিতর্ক। আর এসব ভুলের জন্য সবচেয়ে বেশি বিতর্কের মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রতিষ্ঠানটিতে বিষয়ভিত্তিক বহু গবেষক ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি থাকলেও তাদের যোগ্যতা বা মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। একপর্যায়ে বিভিন্ন ভুলের জন্য প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভুল স্বীকার ও দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়েও তাদের দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকেই নতুন কারিকুলামের বই নিয়ে নানা বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিতর্ক দেখা দিয়েছে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে নতুন কারিকুলামে সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। একই সঙ্গে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য এনসিটিবিকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর আগে নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির ‘শরীফার গল্প’ শিরোনামে গল্প নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে পর্যালোচনায় উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঠ্যবই নিয়ে এ ধরনের হযবরল অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক সবুজ বাংলাকে জানান, আসলে এনসিটিবিতে গবেষকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হয় বলে মনে হয় না। সেখানে অনেকের নিয়োগ হয় তদবিরের ভিত্তিতে। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় যোগ্য কর্মকর্তারও অভাব আছে। এ বিষয়ে সরকারকে আরো নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্রমতে, গত বছর নতুন কারিকুলামের বই নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে এনসিটিবি। একপর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২২টি বইয়ে ৪২১টি ভুল-ভ্রান্তির সত্যতা পায় এনসিটিবি। ভুলগুলো সংশোধন করে শিক্ষাবর্ষের চার মাসের মাথায় এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সংশোধনী দেওয়া হয়।
তার আগে ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি। প্রথমে এ দুটি পাঠ্যবইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধন করার কথা জানানো হলেও পরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি সবকটি বইয়েরই ভুল-অসঙ্গতির সংশোধনী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সেসময় প্রখ্যাত লেখক ও শিক্ষাবিদ মো. জাফর ইকবাল এবং অধ্যাপক হাসিনা খান নিজেদের সম্পাদিত ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে চুরির বিষয়বস্তু পাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। এক বিবৃতিতে বইটির সম্পাদনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লেখকরাও তাদের দায়িত্ব স্বীকার করেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক শিক্ষামূলক সাইট থেকে এই বইটির কিছু অংশ অনুলিপি করার অভিযোগ ওঠে।
চলতি বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয় সরকার। তবে বইয়ে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে, তা ই-মেইলে জানানোর অনুরোধ জানায় এনসিটিবি। পাশাপাশি কেউ চাইলে সশরীরও এনসিটিবি কার্যালয়ে গিয়ে বইয়ের সংশোধনী দিতে পারবেন বলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এদিকে বই দেওয়ার একদিন পরই সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বই ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বইটিতে হিন্দু ধর্মের ছবি ছাপানোর কারণে সেটি সংশোধন করে পরে তা ফের সরবরাহ করা হয়।
পাঠ্যবইয়ে ভুলত্রুটি সম্পর্কে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু জানান, পাঠ্যবই নিয়ে এ ধরনের অবহেলা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষকরে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। তাই পাঠ্যবই ও কারিকুলাম প্রণয়নে দেশের বিশেষজ্ঞদের যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

 

 

 

স/ম

জনপ্রিয় সংবাদ

নান্দাইলে সড়ক সংস্কার না হওয়ায় জনদুর্ভোগ, বিক্ষোভে শিক্ষার্থী–স্থানীয়রা

পাঠ্যবই ও কারিকুলাম বিতর্ক থামছেই না এনসিটিবির বিশেষজ্ঞদের মান নিয়ে প্রশ্ন

আপডেট সময় : ১২:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪

👁 প্রয়োজনীয় সংশোধনে

👁 গুরুত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

 

শিক্ষার প্রথম জীবনেই পাঠ্যবইয়ের নানা ভুল-ত্রুটি নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। বিশেষ করে গত বছর থেকে চালু হওয়া নতুন কারিকুলাম নিয়ে এই জটিলতা বেড়েছে। কারিকুলামের নানা অসঙ্গতির পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের বইয়ে তথ্য ও বানান ভুলের পাশাপাশি বিদেশি কনটেন্ট চুরির ঘটনাও ঘটেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কারিকুলাম ও বইয়ের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নানা বিতর্ক। আর এসব ভুলের জন্য সবচেয়ে বেশি বিতর্কের মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রতিষ্ঠানটিতে বিষয়ভিত্তিক বহু গবেষক ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি থাকলেও তাদের যোগ্যতা বা মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। একপর্যায়ে বিভিন্ন ভুলের জন্য প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভুল স্বীকার ও দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়েও তাদের দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকেই নতুন কারিকুলামের বই নিয়ে নানা বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিতর্ক দেখা দিয়েছে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে নতুন কারিকুলামে সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। একই সঙ্গে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য এনসিটিবিকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর আগে নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির ‘শরীফার গল্প’ শিরোনামে গল্প নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে পর্যালোচনায় উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঠ্যবই নিয়ে এ ধরনের হযবরল অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক সবুজ বাংলাকে জানান, আসলে এনসিটিবিতে গবেষকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হয় বলে মনে হয় না। সেখানে অনেকের নিয়োগ হয় তদবিরের ভিত্তিতে। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় যোগ্য কর্মকর্তারও অভাব আছে। এ বিষয়ে সরকারকে আরো নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্রমতে, গত বছর নতুন কারিকুলামের বই নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে এনসিটিবি। একপর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২২টি বইয়ে ৪২১টি ভুল-ভ্রান্তির সত্যতা পায় এনসিটিবি। ভুলগুলো সংশোধন করে শিক্ষাবর্ষের চার মাসের মাথায় এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সংশোধনী দেওয়া হয়।
তার আগে ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি। প্রথমে এ দুটি পাঠ্যবইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধন করার কথা জানানো হলেও পরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি সবকটি বইয়েরই ভুল-অসঙ্গতির সংশোধনী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সেসময় প্রখ্যাত লেখক ও শিক্ষাবিদ মো. জাফর ইকবাল এবং অধ্যাপক হাসিনা খান নিজেদের সম্পাদিত ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে চুরির বিষয়বস্তু পাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। এক বিবৃতিতে বইটির সম্পাদনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লেখকরাও তাদের দায়িত্ব স্বীকার করেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক শিক্ষামূলক সাইট থেকে এই বইটির কিছু অংশ অনুলিপি করার অভিযোগ ওঠে।
চলতি বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয় সরকার। তবে বইয়ে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে, তা ই-মেইলে জানানোর অনুরোধ জানায় এনসিটিবি। পাশাপাশি কেউ চাইলে সশরীরও এনসিটিবি কার্যালয়ে গিয়ে বইয়ের সংশোধনী দিতে পারবেন বলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এদিকে বই দেওয়ার একদিন পরই সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বই ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বইটিতে হিন্দু ধর্মের ছবি ছাপানোর কারণে সেটি সংশোধন করে পরে তা ফের সরবরাহ করা হয়।
পাঠ্যবইয়ে ভুলত্রুটি সম্পর্কে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু জানান, পাঠ্যবই নিয়ে এ ধরনের অবহেলা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষকরে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। তাই পাঠ্যবই ও কারিকুলাম প্রণয়নে দেশের বিশেষজ্ঞদের যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

 

 

 

স/ম