⌛ ১৩ আসামি জামিনে ও পলাতক ১২ জন
⌛ ১৪ ফেব্রুয়ারি চার্জ গঠনের দিন ধার্য
রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার নিজ বাসায় দিনে-দুপুরে খুন হন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল করিম খান। মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা বাসায় ঢুকে গুলি করে তাকে হত্যা করে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা সিআইডি। চার্জশিট দাখিলের পরও পেরিয়ে গেছে আরও ৬টি বছর। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ বছরেও এখনও শুরুই হয়নি চাঞ্চল্যকর এই পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম। বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক কাদের বিন কাদেরের আদালতে এ হত্যাকাণ্ডের চার্জ (অভিযোগ) গঠনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলার চার্জ বা অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য রয়েছে। সেদিন হয়তো এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
মামলার নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডের নিজ বাড়ির তৃতীয় তলায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন ফজলুল করিম খান। এ সময় তার স্ত্রী আফরোজা করিম খান (৪৫) মেয়ের জামাতা ব্যারিস্টার চৌধুরী মকিম উদ্দিন খানজাহান আলীর গুলশানের বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গাড়িচালক নাস্তা খেয়ে দরজা খোলা রেখে বাড়ির নিচে যান। সকাল আনুমানিক ৯টা ২০ মিনিটের দিকে মুখোশধারী ৩ সন্ত্রাসী বাসায় ঢুকে আফরোজা করিম খানকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। অস্ত্রধারীরা তাকে পাশের রুমে নিয়ে স্বর্ণালংকার লুট করে। পরে আফরোজাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। কাজের ছেলে আজাদকে পাশের আরেকটি বারান্দায় আটকে রাখা হয়। এ সময় অস্ত্রধারী এক সন্ত্রাসী ফজলুল করিমের কক্ষে ঢুকে কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার পর বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরদিন ৩০ আগস্ট তার মেয়ের জামাতা ব্যারিস্টার চৌধুরী মকিম উদ্দিন খান জাহান আলী বাদী হয়ে রামপুরা থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হন চার বার। প্রথমে রামপুরা থানার তখনকার এসআই মো. জামাল হোসেন মামলাটির তদন্ত করেন। এরপর তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। কিন্তু বাদী ব্যারিস্টার চৌধুরী মকিম উদ্দিন খানজাহান আলী এ অভিযোগপত্রের ওপর নারাজি দেন। পরে আদালত মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে পাঠান। পরে সিআইডির তখনকার সহকারী পুলিশ সুপার রতন কৃষ্ণ নাথ প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে তিনিও ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার রতন কৃষ্ণ নাথ উল্লেখ করেন, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম অত্যন্ত স্বাধীন চেতা, সমাজসেবক ও সচেতন নাগরিক ছিলেন। মাদকসহ সমাজের যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন ফজলুল করিম খান। এতে মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে ফজলুল করিমের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট রামপুরার মক্কি মসজিদ গলিতে আসামি এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর ভাড়া বাসায় বসে পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিমকে হত্যার পরিকল্পনা ও পরদিন হত্যা নিশ্চিত করা হয়। মামলার তদন্ত চলাকালে ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ৮ আসামির জবানবন্দি অনুযায়ী এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ২৮ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট রাজীব অন্য একটি ঘটনায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়। হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পর অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুস সাত্তার দুলাল বলেন, আলোচিত এ মামলায় আসামি অনেক। আসামিরা একেকবার সময় চেয়ে আবেদন করে। কেউ অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকে। বিভিন্ন কারণেই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরুতে বিলম্ব হচ্ছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলার চার্জ বা অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন চার্জ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে বর্তমানে এ মামলার কোনো আসামি কারাগারে নেই। ১৩ আসামি জামিনে ও ১২ জন পলাতক আছে। মামলার বাদী ব্যারিস্টার চৌধুরী মকিম উদ্দিন খানজাহান আলী সবুজ বাংলাকে বলেন, মামলাটি এখন রাষ্ট্র বাদী হয়ে পরিচালনা করছে। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে আমি আশাবাদী। চার্জ গঠন কিংবা বিচার শুরু না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আসামি মো. হেমায়েত হোসেন হিমু ওরফে হিমেল খানের আইনজীবী মো. লুৎফর রহমান জানান, একাধিক আসামি বিভিন্ন সময় অব্যাহতিসহ নানা বিষয়ে আদালতে আবেদন করেন। বাদীপক্ষের তৎপরতা কম থাকায় আসামিরা আদালত থেকে সময় নিয়ে চলে গেছেন।
স/ম
























