আজ বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর বেশিরভাগই বাংলাদেশের বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গতকাল শনিবার তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করে তিনি।
অগ্নি নিরাপত্তাসহ যেকোনো দুর্যোগের ঝুঁকি এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা, অগ্নি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সরঞ্জামের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) শুরু হলো ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৪। তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)।
অগ্নিঝুঁকি ও নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখার কারণে ইসাব’কে ধন্যবাদ জানিয়ে জনাব সালমান এফ রহমান বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টসে অগ্নি দুর্ঘটনার পর দেশের শিল্প কারখানাগুলোয় অগ্নিঝুঁকি হ্রাস এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর সরকার বিশেষ জোর দিয়েছে। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে অগ্নি নিরাপত্তা ইস্যুতে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। সরকার এবং বেসরকারি খাত এক সঙ্গে যেসব উদ্যোগ নেয়, সেগুলো সফলতা অর্জন করে। উদাহরণস্বরূপ, আজ বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর বেশিরভাগই বাংলাদেশের।
সারা দেশে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার ব্যাপকভাবে কাজ করছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে সারা দেশের ফায়ার স্টেশনগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যতগুলো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, প্রতিটিতে ফায়ার স্টেশন রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড তৈরির ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এ সময়, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশেই অগ্নি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ওপর জোর দেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের শিল্প ও বিনিয়োগ যত বাড়ছে, কলকারখানার নিরাপত্তার বিষয়টিও তত জরুরি হয়ে উঠছে। টেকসই শিল্প গড়ে তুলতে হলে অগ্নি সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কোনো বিকল্প নেই। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে কোনো ছাড় দিলে চলবে না।
কিছু অসাধু ব্যক্তি নিম্নমানের অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানি করে দেশের বাজারে বিক্রি করছে। যা দেশের সম্পদ ও জানমালকে ঝুঁকিতে ফেলছে। এমন অবস্থায়, গুণগত মানসম্পন্ন সরঞ্জামের পর্যাপ্ততা এবং ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ইসাবের সভাপতি নিয়াজ আলী চিশতি বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার যত বড় হচ্ছে, অগ্নিঝুঁকি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে এনে দেশে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার এখন সময়ের দাবি।
আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সময় মোট ব্যয়ের অন্তত ২ শতাংশ অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ সময় ফায়ার সায়েন্স ল্যাবরেটরি স্থাপনে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ এবং সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান তিনি।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সবুজ শিল্পায়ন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। যার ফলে মোট ২০৭টি গ্রিন সার্টিফাইড পোশাক কারখানা বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে। বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ তৈরি পোশাক কারখানার বেশিরভাগই রয়েছে বাংলাদেশে। অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কারখানা মালিকরা কাজ করছে। পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিজিএমইএ এবং ইসাব একসঙ্গে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
দেশে অগ্নিঝুঁকি হ্রাস ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ইসাবের সেক্রেটারি জেনারেল জাকির উদ্দিন আহমেদ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম শাহজাহান সাজু, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মতিন খান, মোহাম্মদ ফয়সাল মাহমুদ, মো. মনজুর আলম, এম মাহমুদুর রশিদ, পরিচালকবৃন্দ, সদস্যবৃন্দ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৪ -এ বিশ্বের ৩০টি দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। যারা ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির অত্যাধুনিক পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে। প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত প্রদর্শনী সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
প্রদর্শনীর প্রথম দিন গতকাল শনিবার বিকালে স্মার্ট সেফটি ও সিকিউরিটি সলিউশন ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ইসাব। যথাযথ নিয়মনীতি মেনে অগ্নি নির্বাপণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে গুরুত্বপর্ণ অবদান রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বছর ‘ইসাব সেফটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে। সেই সাথে, অগ্নি নির্বাপণ ও দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজে সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য ফায়ার ফাইটারদের পরিবারকেও বিশেষ সম্মাননা প্রদান করবে ইসাব।
স/মিফা























