১০:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেড়েছে চুরি-নারী নির্যাতন

  • মিরপুরে ৭ মাসে ১৬২০ মামলা
  • শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৫২ মামলা
  • ধর্ষণের ঘটনায় ৪৭ মামলা
  • তিন হাজার ৩২ জনকে গ্রেফতার

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন আমাদের টহল টিম কাজ করে। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা টিম রয়েছে। টহল ডিউটির মাধ্যমে সন্দেহভাজন মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি-মোহাম্মদ গোলাম আযম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মিরপুর মডেল থানা

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় এক হাজার ৬২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট তিন হাজার ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাত মাসে সবচেয়ে বেশি ৫৫০টি মামলা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। ১৫৫টি চুরি, ১০৯টি নারী ও ৫২টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। জখমের ঘটনায় ৮৬টি, হত্যায় ৫৩টি, ধর্ষণে ৪৭টি, দস্যুতায় ৩১টি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ২৩টি এবং অন্যান্য অভিযোগে ৫১৪টি মামলা হয়েছে।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগে সাতটি থানা আছে। এগুলো হলো মিরপুর মডেল থানা, পল্লবী থানা, কাফরুল থানা, শাহ আলী থানা, দারুস সালাম থানা, রূপনগর থানা ও ভাষানটেক থানা। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ডিএমপির মিরপুর বিভাগে মোট এক হাজার ৬২০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ২৩১টি, ফেব্রুয়ারিতে ২০৯টি, মার্চে ২৪২টি, এপ্রিলে ২৪০টি, মে মাসে ২৪০টি, জুনে ২১৭টি ও জুলাইয়ে ২৪১টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মোট তিন হাজার ৩২ জনকে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৪৩০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৩ জন, মার্চে ৫২৫ জন, এপ্রিলে ৪৯৫ জন, মে মাসে ৪২৬ জন, জুন মাসে ৩৩৮ জন ও জুলাই মাসে ৩৮৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। মিরপুর বিভাগের সাত থানায় সাত মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৫৫০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৮৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ৬০টি, মার্চে ৭৯টি, এপ্রিলে ৭৪টি, মে মাসে ৭৭টি, জুনে ৮৭টি ও জুলাইয়ে ৮৭টি মামলা হয়েছে। এছাড়া চোরাচালানের ঘটনায় এপ্রিল ও মে মাসে একটি করে দুটি মামলা হয়েছে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগে চুরির ঘটনায় সাত মাসে ১৫৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সিঁধেল চুরির ঘটনায় জানুয়ারিতে সাতটি, ফেব্রুয়ারিতে আটটি, মার্চে আটটি, এপ্রিলে ছয়টি, মে মাসে দুটি, জুনে ছয়টি ও জুলাইয়ে ১১টিসহ মোট ৪৮টি মামলা হয়েছে। অন্যান্য চুরির ঘটনায় জানুয়ারিতে ১১টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২টি, মার্চে ২১টি, এপ্রিলে ১৯টি, মে মাসে ১৭টি, জুনে ১০টি ও জুলাইয়ে ১৭টিসহ মোট ১০৭টি মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতনের ঘটনায় সাত মাসে ১০৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২টি, মার্চে ১৯টি, এপ্রিলে ২২টি, মে মাসে ১৯টি, জুনে ১২টি ও জুলাইয়ে নয়টি মামলা হয়েছে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগে সাত মাসে জখম সংক্রান্ত ৮৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে আটটি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩টি, মার্চে নয়টি, এপ্রিলে ১৭টি, মে মাসে ১৫টি, জুনে ১০টি ও জুলাইয়ে ১৪টি। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডিএমপির মিরপুর বিভাগে খুনের ঘটনায় ৫৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে চারটি, ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি, মার্চে সাতটি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে ১০টি, জুনে সাত ও জুলাইয়ে ১২টি মামলা হয়েছে। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সিরামিক রোডে একই গ্রুপের অন্তঃকোন্দলের জেরে মো. বাবু ওরফে ব্লেড বাবুকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাবাহ জানান, ব্লেড বাবু নিজেই সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই, হত্যা, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অভিযোগে রয়েছে একাধিক মামলা। তার গ্রুপের মধ্যে ওইদিন অন্তঃকোন্দল দেখা দেয়। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এসআই আবু সাবাহ বলেন, অন্তঃকোন্দলের জেরে ২০ জানুয়ারি বিকেলে পল্লবী থানাধীন ১২ নম্বর সেকশনের সিরামিক রোডের বঙ্গবন্ধু কলেজের পাশে নতুন রাস্তার মুখে চাপাতি, সুইচ চাকু ও ইট দিয়ে থেঁতলে ব্লেড বাবুকে হত্যা করে গ্রুপের অন্যরা। এরপর ১৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহ আলী থানা এলাকার রাসেল পার্কের সামনে মো. স্বপন (৩০) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে ১০ থেকে ১২ জন। পূর্বশত্রুতার জেরে তিনি খুন হয়েছেন বলে ওই সময় প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ। জুনের ১০ তারিখ সকালে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের মিল্লাত ক্যাম্প এলাকা থেকে রকিবুল হাসান ওরফে পেপার সামি (২৫) নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদক বেচাকেনা নিয়ে বিরোধের জেরে রকিবুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে। মাদকের মামলায় জেল খেটে এর আগে তিনি জামিনে বের হয়েছিলেন। এ বছর আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মিরপুরে দোকানে ঢুকে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যা। গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে চারটি, ফেব্রুয়ারিতে সাতটি, মার্চে সাতটি, এপ্রিলে আটটি, মে মাসে আটটি, জুন মাসে নয়টি ও জুলাই মাসে নয়টি মামলা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডিএমপির মিরপুর বিভাগে নারী নির্যাতন মামলার তথ্যে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় জানুয়ারিতে তিনটি, ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি, মার্চে ছয়টি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে নয়টি, জুনে সাতটি ও জুলাই মাসে ১০টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ, সাত মাসে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪৭টি। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দস্যুতার ঘটনায় ৩১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে সাতটি, ফেব্রুয়ারিতে তিনটি, মার্চে পাঁচটি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে চারটি, জুনে চারটি ও জুলাই মাসে একটি মামলা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারজনিত কারণে মামলার তথ্যে বলা হয়, অস্ত্র আইনে জানুয়ারিতে একটি, ফেব্রুয়ারিতে চারটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে দুটি, মে মাসে ১১টি ও জুলাই মাসে চারটিসহ মোট ২৩টি মামলা হয়েছে। এছাড়া বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে জানুয়ারি মাসে দুটি, মার্চে একটি ও এপ্রিলে দুটিসহ মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে একটি, মার্চে দুটি, এপ্রিলে একটি ও জুনে দুটি। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম আযম বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন আমাদের টহল টিম কাজ করে। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা টিম রয়েছে। পেট্রোলিং গাড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন ভোকাল পয়েন্টে আমাদের ফোর্স দায়িত্ব পালন করে। টহল ডিউটির মাধ্যমে সন্দেহভাজন মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। অপরাধ দমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মাদকবিরোধী অভিযান, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। গত সাত মাসে পুরো ঢাকা শহরে যে অপরাধ ঘটেছে সেগুলো আসলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন? প্রশ্ন করলে তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশ কেন পারছে না? এই না পারার জায়গায় আমরা কিছু বিষয় দেখি। প্রথমত এখনো বিভিন্ন জায়গায় আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজেরাই কিন্তু আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। বিভিন্নভাবে তাদের ওপর আক্রমণ করা, মানসিকভাবে হেয় করা, অসম্মানজনক শব্দ করা। এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি যখন পুলিশ নিজেরা হবে তখন তাদের মনোবল হারিয়ে যাচ্ছে। এই সাত মাসে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এটা একটি অন্যতম কারণ।’

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতে বাড়ছে রোগ-বালাই

বেড়েছে চুরি-নারী নির্যাতন

আপডেট সময় : ০৭:১৯:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • মিরপুরে ৭ মাসে ১৬২০ মামলা
  • শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৫২ মামলা
  • ধর্ষণের ঘটনায় ৪৭ মামলা
  • তিন হাজার ৩২ জনকে গ্রেফতার

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন আমাদের টহল টিম কাজ করে। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা টিম রয়েছে। টহল ডিউটির মাধ্যমে সন্দেহভাজন মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি-মোহাম্মদ গোলাম আযম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মিরপুর মডেল থানা

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় এক হাজার ৬২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট তিন হাজার ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাত মাসে সবচেয়ে বেশি ৫৫০টি মামলা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। ১৫৫টি চুরি, ১০৯টি নারী ও ৫২টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। জখমের ঘটনায় ৮৬টি, হত্যায় ৫৩টি, ধর্ষণে ৪৭টি, দস্যুতায় ৩১টি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ২৩টি এবং অন্যান্য অভিযোগে ৫১৪টি মামলা হয়েছে।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগে সাতটি থানা আছে। এগুলো হলো মিরপুর মডেল থানা, পল্লবী থানা, কাফরুল থানা, শাহ আলী থানা, দারুস সালাম থানা, রূপনগর থানা ও ভাষানটেক থানা। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ডিএমপির মিরপুর বিভাগে মোট এক হাজার ৬২০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ২৩১টি, ফেব্রুয়ারিতে ২০৯টি, মার্চে ২৪২টি, এপ্রিলে ২৪০টি, মে মাসে ২৪০টি, জুনে ২১৭টি ও জুলাইয়ে ২৪১টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মোট তিন হাজার ৩২ জনকে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৪৩০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৩ জন, মার্চে ৫২৫ জন, এপ্রিলে ৪৯৫ জন, মে মাসে ৪২৬ জন, জুন মাসে ৩৩৮ জন ও জুলাই মাসে ৩৮৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। মিরপুর বিভাগের সাত থানায় সাত মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৫৫০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৮৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ৬০টি, মার্চে ৭৯টি, এপ্রিলে ৭৪টি, মে মাসে ৭৭টি, জুনে ৮৭টি ও জুলাইয়ে ৮৭টি মামলা হয়েছে। এছাড়া চোরাচালানের ঘটনায় এপ্রিল ও মে মাসে একটি করে দুটি মামলা হয়েছে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগে চুরির ঘটনায় সাত মাসে ১৫৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সিঁধেল চুরির ঘটনায় জানুয়ারিতে সাতটি, ফেব্রুয়ারিতে আটটি, মার্চে আটটি, এপ্রিলে ছয়টি, মে মাসে দুটি, জুনে ছয়টি ও জুলাইয়ে ১১টিসহ মোট ৪৮টি মামলা হয়েছে। অন্যান্য চুরির ঘটনায় জানুয়ারিতে ১১টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২টি, মার্চে ২১টি, এপ্রিলে ১৯টি, মে মাসে ১৭টি, জুনে ১০টি ও জুলাইয়ে ১৭টিসহ মোট ১০৭টি মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতনের ঘটনায় সাত মাসে ১০৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২টি, মার্চে ১৯টি, এপ্রিলে ২২টি, মে মাসে ১৯টি, জুনে ১২টি ও জুলাইয়ে নয়টি মামলা হয়েছে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগে সাত মাসে জখম সংক্রান্ত ৮৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে আটটি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩টি, মার্চে নয়টি, এপ্রিলে ১৭টি, মে মাসে ১৫টি, জুনে ১০টি ও জুলাইয়ে ১৪টি। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডিএমপির মিরপুর বিভাগে খুনের ঘটনায় ৫৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে চারটি, ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি, মার্চে সাতটি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে ১০টি, জুনে সাত ও জুলাইয়ে ১২টি মামলা হয়েছে। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সিরামিক রোডে একই গ্রুপের অন্তঃকোন্দলের জেরে মো. বাবু ওরফে ব্লেড বাবুকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাবাহ জানান, ব্লেড বাবু নিজেই সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই, হত্যা, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অভিযোগে রয়েছে একাধিক মামলা। তার গ্রুপের মধ্যে ওইদিন অন্তঃকোন্দল দেখা দেয়। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এসআই আবু সাবাহ বলেন, অন্তঃকোন্দলের জেরে ২০ জানুয়ারি বিকেলে পল্লবী থানাধীন ১২ নম্বর সেকশনের সিরামিক রোডের বঙ্গবন্ধু কলেজের পাশে নতুন রাস্তার মুখে চাপাতি, সুইচ চাকু ও ইট দিয়ে থেঁতলে ব্লেড বাবুকে হত্যা করে গ্রুপের অন্যরা। এরপর ১৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহ আলী থানা এলাকার রাসেল পার্কের সামনে মো. স্বপন (৩০) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে ১০ থেকে ১২ জন। পূর্বশত্রুতার জেরে তিনি খুন হয়েছেন বলে ওই সময় প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ। জুনের ১০ তারিখ সকালে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের মিল্লাত ক্যাম্প এলাকা থেকে রকিবুল হাসান ওরফে পেপার সামি (২৫) নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদক বেচাকেনা নিয়ে বিরোধের জেরে রকিবুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে। মাদকের মামলায় জেল খেটে এর আগে তিনি জামিনে বের হয়েছিলেন। এ বছর আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মিরপুরে দোকানে ঢুকে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যা। গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে চারটি, ফেব্রুয়ারিতে সাতটি, মার্চে সাতটি, এপ্রিলে আটটি, মে মাসে আটটি, জুন মাসে নয়টি ও জুলাই মাসে নয়টি মামলা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডিএমপির মিরপুর বিভাগে নারী নির্যাতন মামলার তথ্যে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় জানুয়ারিতে তিনটি, ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি, মার্চে ছয়টি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে নয়টি, জুনে সাতটি ও জুলাই মাসে ১০টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ, সাত মাসে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪৭টি। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দস্যুতার ঘটনায় ৩১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে সাতটি, ফেব্রুয়ারিতে তিনটি, মার্চে পাঁচটি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে চারটি, জুনে চারটি ও জুলাই মাসে একটি মামলা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারজনিত কারণে মামলার তথ্যে বলা হয়, অস্ত্র আইনে জানুয়ারিতে একটি, ফেব্রুয়ারিতে চারটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে দুটি, মে মাসে ১১টি ও জুলাই মাসে চারটিসহ মোট ২৩টি মামলা হয়েছে। এছাড়া বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে জানুয়ারি মাসে দুটি, মার্চে একটি ও এপ্রিলে দুটিসহ মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে একটি, মার্চে দুটি, এপ্রিলে একটি ও জুনে দুটি। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম আযম বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন আমাদের টহল টিম কাজ করে। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা টিম রয়েছে। পেট্রোলিং গাড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন ভোকাল পয়েন্টে আমাদের ফোর্স দায়িত্ব পালন করে। টহল ডিউটির মাধ্যমে সন্দেহভাজন মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। অপরাধ দমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মাদকবিরোধী অভিযান, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। গত সাত মাসে পুরো ঢাকা শহরে যে অপরাধ ঘটেছে সেগুলো আসলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন? প্রশ্ন করলে তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশ কেন পারছে না? এই না পারার জায়গায় আমরা কিছু বিষয় দেখি। প্রথমত এখনো বিভিন্ন জায়গায় আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজেরাই কিন্তু আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। বিভিন্নভাবে তাদের ওপর আক্রমণ করা, মানসিকভাবে হেয় করা, অসম্মানজনক শব্দ করা। এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি যখন পুলিশ নিজেরা হবে তখন তাদের মনোবল হারিয়ে যাচ্ছে। এই সাত মাসে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এটা একটি অন্যতম কারণ।’