০৩:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বজনীন পেনশনের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে বাকৃবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

 

সরকারের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশনের প্রজ্ঞাপনের সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে ওই প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষক সমিতি। দাবি আদায় না হলে সামনে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন উপস্থিত শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

 

বুধবার (২৭ মার্চ ) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের সামনের করিডোরে ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাথে একাত্ম ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার পরিষদ এবং কর্মচারি সমিতি।

 

জানা যায়, সম্প্রতি সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থায় আগামী জুলাই থেকে যোগ দেওয়া চাকরিজীবীদের সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা বিদ্যমান পেনশনের বদলে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সভাপতি কীটতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী শাহানারা আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম, গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের অন্য অংশের সভাপতি সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমীন বারি ও সাধারণ সম্পাদক উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আতিকুর রহমান খোকন, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সোনালি দলের সভাপতি কৃষি অর্থসংস্থান ও ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক এ.এস.এম গোলাম হাফিজ কেনেডী ও সাধারণ সম্পাদক পশুবিজ্ঞান  বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, বাকৃবির কোষাধ্যক্ষ ও কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.  মো. সাইদুর রহমান, বাকৃবির সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারি, একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন এবং বাকৃবি অফিসার পরিষদের সভাপতি আরীফ জাহাঙ্গীর ও কর্মচারি সমিতির নের্তৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষকবৃন্দ।

 

মানববন্ধনে ড. আফরিনা মুস্তারি বলেন, শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই। আবার যা ছিলো তাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই অন্যায্য দাবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

অধ্যাপক ড. মো আতিকুর রহমান খোকন বলেন, সর্বজনীন যেই পেনশন স্কিম সরকার চালু করতে যাচ্ছে তা কোনক্রমেই সর্বজনীন নয়। সরকারের একটি মহল সরকারের ভিতর থেকেই দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করার একটা চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়  হচ্ছে আদর্শ  মানুষ তৈরির জায়গা। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই দেশের বড় বড় আমলা, সরকারী কর্মকর্তা  তৈরি হয়। আর এই শিক্ষকদের অধিকার যদি  ক্ষুন্ন হয় তাহলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

 

অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের যখন রাস্তায় নামতে হয় সেটা দেশের জন্য খুবই অসহনী সংকেত। শিক্ষকরা আজ রাস্তায় কেন? বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অগ্রগতিকে  প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এটা একটি ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের পিছনে কারা , আমরা কম বেশি সবাই তা জানি। শিক্ষকদের ওপর এই বৈষম্যের শুরু হয়েছিল বহু আগেই বেতন স্কেলের অবনমনের দ্বারা। শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ নয় এজন্যই বারবার শিক্ষকদের বৈষ্যমের স্বীকার হতে হচ্ছে। আমরা এই বৈষম্য মূলক পেনশন স্কিম পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ড.  মো. সাইদুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের এই বৈষম্য উপলব্ধি করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজার শিক্ষার্থী , যাদের সন্তানাদি বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করছেন তারা এবং ভবিষ্যতে শিক্ষক হবেন তারাও আমাদের আন্দোলনে সামিল হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও  বিশ্ববিদ্যালয়গুলো  জাতিকে শক্তি যোগায়, দেশের অর্থনীতিকে শক্তি যোগায়। স্বায়ত্তশাসিত, প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে সরকারের স্মার্ট ভিশন বাস্তবায়ন হবে না।  সরকার যদি এমনটা ভেবে থাকে, তাহলে সরকার ভুল ভাবছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলনকে সরকার আমলে নিবে এবং পেনশনের যেই ঘোষণাটি  এসেছে তা পুনর্বিবেচনা করবে এই আশা রাখি।

বাকৃবি শিক্ষক সমিতির  সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, নতুন পেনশন স্কিমকে বলা হয়েছে সর্বজনীন। কিন্তু এখানে বিসিএস ক্যাডারদের অন্তর্ভুক্তি নেই  শুধুমাত্র শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্পোরেশনের চাকুরিজীবী প্রভৃতি চাকুরীজীবীদের পেনশনের উপরই এই নীতিমালা প্রযোজ্য হয়েছে। তাই এই পেনশন স্কিম বৈষম্যমূলক। ফলে অচিরেই দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হইতে চাইবে না, শিক্ষার্থীরা পাঠবিমুখ হয়ে পরবে ।  ভবিষ্যতে দেশ ও জাতি গঠনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে এই পেনশন স্কিম।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

সর্বজনীন পেনশনের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে বাকৃবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

আপডেট সময় : ০৪:৫০:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪

 

সরকারের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশনের প্রজ্ঞাপনের সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে ওই প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষক সমিতি। দাবি আদায় না হলে সামনে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন উপস্থিত শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

 

বুধবার (২৭ মার্চ ) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের সামনের করিডোরে ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাথে একাত্ম ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার পরিষদ এবং কর্মচারি সমিতি।

 

জানা যায়, সম্প্রতি সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থায় আগামী জুলাই থেকে যোগ দেওয়া চাকরিজীবীদের সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা বিদ্যমান পেনশনের বদলে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সভাপতি কীটতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী শাহানারা আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম, গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের অন্য অংশের সভাপতি সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমীন বারি ও সাধারণ সম্পাদক উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আতিকুর রহমান খোকন, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সোনালি দলের সভাপতি কৃষি অর্থসংস্থান ও ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক এ.এস.এম গোলাম হাফিজ কেনেডী ও সাধারণ সম্পাদক পশুবিজ্ঞান  বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, বাকৃবির কোষাধ্যক্ষ ও কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.  মো. সাইদুর রহমান, বাকৃবির সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারি, একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন এবং বাকৃবি অফিসার পরিষদের সভাপতি আরীফ জাহাঙ্গীর ও কর্মচারি সমিতির নের্তৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষকবৃন্দ।

 

মানববন্ধনে ড. আফরিনা মুস্তারি বলেন, শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই। আবার যা ছিলো তাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই অন্যায্য দাবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

অধ্যাপক ড. মো আতিকুর রহমান খোকন বলেন, সর্বজনীন যেই পেনশন স্কিম সরকার চালু করতে যাচ্ছে তা কোনক্রমেই সর্বজনীন নয়। সরকারের একটি মহল সরকারের ভিতর থেকেই দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করার একটা চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়  হচ্ছে আদর্শ  মানুষ তৈরির জায়গা। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই দেশের বড় বড় আমলা, সরকারী কর্মকর্তা  তৈরি হয়। আর এই শিক্ষকদের অধিকার যদি  ক্ষুন্ন হয় তাহলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

 

অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের যখন রাস্তায় নামতে হয় সেটা দেশের জন্য খুবই অসহনী সংকেত। শিক্ষকরা আজ রাস্তায় কেন? বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অগ্রগতিকে  প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এটা একটি ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের পিছনে কারা , আমরা কম বেশি সবাই তা জানি। শিক্ষকদের ওপর এই বৈষম্যের শুরু হয়েছিল বহু আগেই বেতন স্কেলের অবনমনের দ্বারা। শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ নয় এজন্যই বারবার শিক্ষকদের বৈষ্যমের স্বীকার হতে হচ্ছে। আমরা এই বৈষম্য মূলক পেনশন স্কিম পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ড.  মো. সাইদুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের এই বৈষম্য উপলব্ধি করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজার শিক্ষার্থী , যাদের সন্তানাদি বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করছেন তারা এবং ভবিষ্যতে শিক্ষক হবেন তারাও আমাদের আন্দোলনে সামিল হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও  বিশ্ববিদ্যালয়গুলো  জাতিকে শক্তি যোগায়, দেশের অর্থনীতিকে শক্তি যোগায়। স্বায়ত্তশাসিত, প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে সরকারের স্মার্ট ভিশন বাস্তবায়ন হবে না।  সরকার যদি এমনটা ভেবে থাকে, তাহলে সরকার ভুল ভাবছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলনকে সরকার আমলে নিবে এবং পেনশনের যেই ঘোষণাটি  এসেছে তা পুনর্বিবেচনা করবে এই আশা রাখি।

বাকৃবি শিক্ষক সমিতির  সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, নতুন পেনশন স্কিমকে বলা হয়েছে সর্বজনীন। কিন্তু এখানে বিসিএস ক্যাডারদের অন্তর্ভুক্তি নেই  শুধুমাত্র শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্পোরেশনের চাকুরিজীবী প্রভৃতি চাকুরীজীবীদের পেনশনের উপরই এই নীতিমালা প্রযোজ্য হয়েছে। তাই এই পেনশন স্কিম বৈষম্যমূলক। ফলে অচিরেই দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হইতে চাইবে না, শিক্ষার্থীরা পাঠবিমুখ হয়ে পরবে ।  ভবিষ্যতে দেশ ও জাতি গঠনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে এই পেনশন স্কিম।