❖প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ
❖ সংঘর্ষের পরও ভোটার উপস্থিতি বেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। সাত ধাপের এই ভোটে প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে। এরপরও প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেই ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ। এদিকে ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে এমন এক ঘটনা ঘটল, যা অতীতে কখনো শোনা যায়নি। লোকসভার প্রথম ধাপের ভোটে পূর্ব নাগাল্যান্ডের ছয় জেলার কেউই ভোট দেননি। পূর্ব নাগাল্যান্ডের যে ছয় জেলায় ভোট বর্জনের এমন অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো হচ্ছে কিপিরে, লংলেং, মোন, নকলাক, শামাটোর ও টুয়েনসাঙ। নাগাল্যান্ডের মোট ১৩ লাখ ২৫ হাজার ভোটারের মধ্যে ৪ লাখ ৬৩২ অর্থাৎ ৩০ শতাংশ ভোটার এই ছয় জেলার বাসিন্দা।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা অবশ্য দাবি করেন, দু-একজন ভোট দিয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু শতাংশের হিসাবে তা শূন্য। সুতরাং বলা যায়, ওই ছয় জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে শূন্য শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন অথবা কেউই ভোট দেননি। এটা ভারতে অতীতে কবে ঘটেছে, তা চট করে বলা সম্ভব নয়। ভোট বর্জনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছয় জেলায় যে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল, বর্জন সফল হওয়ার পরে গতকাল সকালে তা তুলে নেওয়া হয়েছে। যে সংগঠনের ডাকে ভোট বর্জন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল এবং তা সফলভাবে গতকাল শুক্রবার ভোটের দিন পালন করা হয়েছে, সেই সংগঠনের নাম ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও)। ইএনপিওর ডাকা কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছিল ছয় জেলার একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এমন কিছু একটা ঘটতে পারে, এ ধরনের কোনো তথ্য প্রশাসনিক সূত্রে আমাদের আগে জানানো হয়নি। তারা জানালে আমরা বিষয়টি নিয়ে অন্যভাবে ভাবতাম, প্রচার-প্রচারণা চালাতাম বা ব্যবস্থা নিতাম। মাওবাদী-অধ্যুষিত মধ্য ভারতের বস্তার ডিভিশনেও গতকাল প্রথম ধাপের নির্বাচন ছিল। সেখানে ৬৪ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। নাগাল্যান্ডে ভোট পড়েছে ৫৬ শতাংশ।
নাগাল্যান্ডে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মুখ্য কর্মকর্তা আর ভায়াসান গতকালই একটি শোকজ নোটিশ পাঠিয়ে ইএনপিওর কাছে জানতে চেয়েছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির নির্দিষ্ট ধারায় নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য কেন ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এই নোটিসের উত্তরও ইএনপিও নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এক বিবৃতিতে ইএনপিও জানিয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য যে ধর্মঘটের ডাক তারা দিয়েছিল, তা তুলে নেওয়া হলো।
এদিকে দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন গতকাল সন্ধ্যা জানিয়েছে, গতকাল যেসব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোট হয়েছে, সেগুলো হলো আন্দামান-নিকোবর, অরুণাচল, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, জম্মু-কাশ্মীর, লাক্ষা দ্বীপ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, পদুচেরি, রাজস্থান, সিকিম, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, উত্তরাখন্ড, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুসারে, ১৬ কোটির বেশি ভারতীয়র ভোটাধিকার প্রয়োগ করার কথা ছিল গতকাল। প্রস্তুত ছিল ২ লাখ ভোটকেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলা জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে ভোট সম্পন্ন হয়েছে গতকাল। কোচবিহারের দিনহাটা শীতলকুচি ও চাপামারীতে ঘন ঘন উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জানানো হয়েছে জাল ভোট ও তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভেঙে দেওয়ার ঘটনায়। বিজেপির পক্ষে অভিযোগ, তাদের ব্লক সভাপতিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তৃণমূলের দুষ্কৃতকারীরা।
ভোটের দিন সকালে আউটার মণিপুরের মৈরাঙ বিধানসভার থামানপোকপি এলাকায় একটি বুথ লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি চালায় দুষ্কৃতকারীরা। ভোটের লাইনে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, আতঙ্কে তারা পালানোর চেষ্টা করেন। ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় এই এলাকায়। ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। আকস্মিক এই ঘটনা ঘটার পরে বেশ কিছুক্ষণ ভোট প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়, পরে পরিস্থিতি আয়ত্তে এলে ভোটগ্রহণ আবার শুরু হয়। যদিও এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট কমিশন। এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তেমন কোনো আভাস সরকারি রিপোর্টে ছিল না।
অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে এসব আসনে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, বুথ দখল করে ভোট দেওয়া, পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, নেতাদের গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন ঘটনার কথা জানা গেছে। এর পরও কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাজ্যে তিনটি আসনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। শিলিগুড়ির একটি ভোটকেন্দ্রে নারীরা ভোট নিয়ে কারচুপির অভিযোগে প্রতিবাদ জানালে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সেখানে বিজেপির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় আসেন। তাকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটের দিন গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে একাধিক স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এতে কেউ নিহত হননি।
কোচবিহারের একটি ভোটকেন্দ্রে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ গেলে বিক্ষোভ করেন নারী ভোটারেরা। মন্ত্রী পুলিশ পাহারায় কেন্দ্র ছাড়েন। এ ছাড়া ভেটাগুড়িতে বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলে এলাকাবাসী এর পেছনে মন্ত্রী উদয়ন গুহর হাত থাকার অভিযোগ তুলেন। ঘেরাও করা হলে মন্ত্রী পুলিশ প্রহরায় এলাকা ছাড়েন। তুফানগঞ্জে তৃণমূল কর্মীদের হাতে মার খান বিজেপির সমর্থকেরা। শীতলকুচিতে বিনোদ সরকার নামে বিজেপির এক কর্মীর চোখে আঘাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাথাভাঙ্গায় এক পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
শীতলকুচিতে বিজেপির এক কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। রাজাখরার এক কেন্দ্রে তৃণমূলের বুথ অফিস ভেঙ্গে দিয়েছে বিজেপির সমর্থকেরা। ফলিমারির এক কেন্দ্রের কাছেই পাওয়া গেছে একটি তাজা বোমা। কোচবিহারের চান্দামারিতে বিজেপি ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের তুফানগঞ্জের হরিহরহাটেও দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে দুপক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র ও দলীয় নির্বাচনী দপ্তর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে।
























