১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাফাহতে হামলার করতে এগোচ্ছে ইসরায়েল

◉ ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়ার অভিযোগ
◉ গণকবরের ৮৫ শতাংশ মরদেহই অজ্ঞাত
◉ গণকবরের নিয়ে তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের
◉ ইসরায়েলের কাছে জবাব চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
◉ ইসরাইলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হুমকি ইরানের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। হামলার আগে রাফাহর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে খান ইউনিসে শত শত তাঁবু স্থাপন করেছে তারা। এদিকে আবার কোনো হামলা করলে ইসরাইলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি।

 

 

গতকাল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে তারা হামলা চালাবেন। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মুখপাত্র বলেছেন, রাফাহতে হামলার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে কবে হামলা চালানো হবে সে তারিখটি স্পষ্ট করেননি তিনি।

 

 

নাম গোপন রাখা ওই ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা ৪০ হাজার তাঁবু কিনেছেন। যেগুলোর একেকটিতে ১০ থেকে ১২ জন থাকতে পারবেন। এসব তাঁবুতে রাফাহতে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের নিয়ে আসা হবে। সেনারা রাফাহতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। তবে তারা এখন সরকারের সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছেন।

 

 

কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাফাহ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের খান ইউনিসে সারি সারি তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলোজিসের ছবিতে দেখা গেছে, যেখানে তাঁবুগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেই জায়গাটি কয়েক সপ্তাহ আগেও খালি ছিল। দখলদার ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা কয়েকদিনের মধ্যেই রাফাহর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। রাফাহ থেকে সাধারণ মানুষকে খান ইউনিসে সরিয়ে নিতে এক মাস সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিসরের সীমান্তবর্তী অঞ্চল রাফাহতে বর্তমানে ১৩ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছেন। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে লাখ লাখ মানুষ রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

 

এদিকে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরের গভর্নমেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটি বা জিসিইউ’তে শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের এক সমাবেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি বলেন, সব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইহুদিবাদী সরকার দামেস্কে যে আগ্রাসন চালিয়েছিল তার জন্য তেল আবিবকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ইসরাইল আবারও ইরানের ওপর হামলা করে তাহলে ইসরাইল আর থাকবে না। ইহুদিবাদী সরকার যদি আরেকবার কোনো ভুল করে এবং ইরানি ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালায় তাহলে এবার পরিস্থিতি হবে সম্পূর্ণ আলাদা এবং সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলের কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা বলা মুশকিল। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইরানের সমর্থন অব্যাহত থাকার কথাও জানান তিনি।

 

 

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল এবং গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালের পাশে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। গণকবর থেকে এখন একের পর এক মরদেহ বের করা হচ্ছে। যেগুলোর বেশিরভাগই বিকৃত হয়ে গেছে। যখন এসব গণকবর থেকে বেরিয়ে আসছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মরদেহ। ঠিক তখনই সামনে এলো রোমহর্ষক ঘটনা। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের গণকবর থেকে শিশুদের মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুদের বিকৃত মরদেহের ছবি প্রকাশ করে ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মোহাম্মদ মুঘাইয়ের জানিয়েছেন, এসব গণকবরে পাওয়া মরদেহের অন্তত ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়ার আলামত পেয়েছেন তারা। ১০টি মরদেহের হাত বাঁধা ছিল। অন্যদের শরীরে মেডিক্যাল টিউব সংযুক্ত ছিল। বিষয়টি নির্দেশ করছে তাদের খুব সম্ভবত জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়া হয়েছে। যে ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি তাদের মরদেহ ফরেনসিক পরীক্ষা করতে হবে। গণকবরে কেন শিশুরা? এসব প্রমাণ নির্দেশ করছে ইসরায়েলি সেনারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।

 

 

দুই সপ্তাহ আগে খান ইউনিস থেকে সরে যায় দখলদার ইসরায়েলের সেনারা। এরপর সেখানে ফিরে যান সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। তারা গিয়ে দেখতে পান খান ইউনিসকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদাররা। তাদের বর্বরতা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতালও। সাধারণ মানুষকে হত্যা করে হাসপাতালের পাশেই পুঁতে রেখেছে তারা।

 

 

অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গণকবর থেকে উদ্ধার করা মরদেহের ৮৫ শতাংশই অজ্ঞাত। তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন খান ইউনিসের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান ইয়েমেন আবু সোলায়মান। গতকাল আবু সোলায়মান জানিয়েছেন, গাজার গণকবর থেকে ৩৯২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মরদেহে মধ্যে মাত্র ৬৫টির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি মৃতদেহগুলো বিকৃত হওয়ার কারণে পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। কিছু ভুক্তভোগী নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। মানবিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে এই অপরাধ পরীক্ষা করার জন্য গাজায় যেতে দেওয়া হোক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

 

 

এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দুটি প্রধান হাসপাতালে পাওয়া গণকবরের ‘স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের’ আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরায়েলি সেনারা এই হাসপাতাল দুটিতে অভিযান চালিয়েছিলেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বস্ত তদন্তকারীদের অবশ্যই স্থানগুলোয় প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। গাজায় প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের নিরাপদে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েলের অবরোধে ধ্বংস হওয়া গাজার দুটি হাসপাতালে গণকবর আবিষ্কারের পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জবাব চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যকর্মীরা খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যার শিকার এবং গণকবরে প্রায় ৩৪০ জনের মরদেহের সন্ধান পেয়েছেন। গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের চত্বরেও দুটি গণকবরে প্রায় ৩০টি মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। গণকবরগুলো আবিষ্কারের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে পরিস্থিতির স্বাধীন তদন্তে জাতিসংঘের দাবি জোরালো হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জবাব চাই।

 

 

 

আমরা এটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত দেখতে চাই। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর নাদাভ শোশানি বলেছেন, ‘নাসেরের কবরটি কয়েক মাস আগে গাজাবাসীরা খনন করেছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, ফিলিস্তিনিদের দেওয়া কবরের মরদেহগুলো জিম্মিদের সন্ধানকারী সেনারা পরীক্ষা করেছিল। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইসরায়েলের সেনারা ছিল এমন অভিযোগের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

রাফাহতে হামলার করতে এগোচ্ছে ইসরায়েল

আপডেট সময় : ০৭:২৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

◉ ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়ার অভিযোগ
◉ গণকবরের ৮৫ শতাংশ মরদেহই অজ্ঞাত
◉ গণকবরের নিয়ে তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের
◉ ইসরায়েলের কাছে জবাব চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
◉ ইসরাইলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হুমকি ইরানের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। হামলার আগে রাফাহর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে খান ইউনিসে শত শত তাঁবু স্থাপন করেছে তারা। এদিকে আবার কোনো হামলা করলে ইসরাইলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি।

 

 

গতকাল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে তারা হামলা চালাবেন। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মুখপাত্র বলেছেন, রাফাহতে হামলার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে কবে হামলা চালানো হবে সে তারিখটি স্পষ্ট করেননি তিনি।

 

 

নাম গোপন রাখা ওই ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা ৪০ হাজার তাঁবু কিনেছেন। যেগুলোর একেকটিতে ১০ থেকে ১২ জন থাকতে পারবেন। এসব তাঁবুতে রাফাহতে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের নিয়ে আসা হবে। সেনারা রাফাহতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। তবে তারা এখন সরকারের সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছেন।

 

 

কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাফাহ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের খান ইউনিসে সারি সারি তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলোজিসের ছবিতে দেখা গেছে, যেখানে তাঁবুগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেই জায়গাটি কয়েক সপ্তাহ আগেও খালি ছিল। দখলদার ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা কয়েকদিনের মধ্যেই রাফাহর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। রাফাহ থেকে সাধারণ মানুষকে খান ইউনিসে সরিয়ে নিতে এক মাস সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিসরের সীমান্তবর্তী অঞ্চল রাফাহতে বর্তমানে ১৩ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছেন। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে লাখ লাখ মানুষ রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

 

এদিকে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরের গভর্নমেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটি বা জিসিইউ’তে শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের এক সমাবেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি বলেন, সব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইহুদিবাদী সরকার দামেস্কে যে আগ্রাসন চালিয়েছিল তার জন্য তেল আবিবকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ইসরাইল আবারও ইরানের ওপর হামলা করে তাহলে ইসরাইল আর থাকবে না। ইহুদিবাদী সরকার যদি আরেকবার কোনো ভুল করে এবং ইরানি ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালায় তাহলে এবার পরিস্থিতি হবে সম্পূর্ণ আলাদা এবং সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলের কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা বলা মুশকিল। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইরানের সমর্থন অব্যাহত থাকার কথাও জানান তিনি।

 

 

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল এবং গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালের পাশে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। গণকবর থেকে এখন একের পর এক মরদেহ বের করা হচ্ছে। যেগুলোর বেশিরভাগই বিকৃত হয়ে গেছে। যখন এসব গণকবর থেকে বেরিয়ে আসছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মরদেহ। ঠিক তখনই সামনে এলো রোমহর্ষক ঘটনা। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের গণকবর থেকে শিশুদের মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুদের বিকৃত মরদেহের ছবি প্রকাশ করে ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মোহাম্মদ মুঘাইয়ের জানিয়েছেন, এসব গণকবরে পাওয়া মরদেহের অন্তত ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়ার আলামত পেয়েছেন তারা। ১০টি মরদেহের হাত বাঁধা ছিল। অন্যদের শরীরে মেডিক্যাল টিউব সংযুক্ত ছিল। বিষয়টি নির্দেশ করছে তাদের খুব সম্ভবত জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়া হয়েছে। যে ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি তাদের মরদেহ ফরেনসিক পরীক্ষা করতে হবে। গণকবরে কেন শিশুরা? এসব প্রমাণ নির্দেশ করছে ইসরায়েলি সেনারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।

 

 

দুই সপ্তাহ আগে খান ইউনিস থেকে সরে যায় দখলদার ইসরায়েলের সেনারা। এরপর সেখানে ফিরে যান সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। তারা গিয়ে দেখতে পান খান ইউনিসকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদাররা। তাদের বর্বরতা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতালও। সাধারণ মানুষকে হত্যা করে হাসপাতালের পাশেই পুঁতে রেখেছে তারা।

 

 

অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গণকবর থেকে উদ্ধার করা মরদেহের ৮৫ শতাংশই অজ্ঞাত। তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন খান ইউনিসের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান ইয়েমেন আবু সোলায়মান। গতকাল আবু সোলায়মান জানিয়েছেন, গাজার গণকবর থেকে ৩৯২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মরদেহে মধ্যে মাত্র ৬৫টির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি মৃতদেহগুলো বিকৃত হওয়ার কারণে পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। কিছু ভুক্তভোগী নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। মানবিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে এই অপরাধ পরীক্ষা করার জন্য গাজায় যেতে দেওয়া হোক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

 

 

এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দুটি প্রধান হাসপাতালে পাওয়া গণকবরের ‘স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের’ আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরায়েলি সেনারা এই হাসপাতাল দুটিতে অভিযান চালিয়েছিলেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বস্ত তদন্তকারীদের অবশ্যই স্থানগুলোয় প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। গাজায় প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের নিরাপদে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েলের অবরোধে ধ্বংস হওয়া গাজার দুটি হাসপাতালে গণকবর আবিষ্কারের পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জবাব চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যকর্মীরা খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যার শিকার এবং গণকবরে প্রায় ৩৪০ জনের মরদেহের সন্ধান পেয়েছেন। গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের চত্বরেও দুটি গণকবরে প্রায় ৩০টি মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। গণকবরগুলো আবিষ্কারের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে পরিস্থিতির স্বাধীন তদন্তে জাতিসংঘের দাবি জোরালো হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জবাব চাই।

 

 

 

আমরা এটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত দেখতে চাই। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর নাদাভ শোশানি বলেছেন, ‘নাসেরের কবরটি কয়েক মাস আগে গাজাবাসীরা খনন করেছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, ফিলিস্তিনিদের দেওয়া কবরের মরদেহগুলো জিম্মিদের সন্ধানকারী সেনারা পরীক্ষা করেছিল। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইসরায়েলের সেনারা ছিল এমন অভিযোগের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি তিনি।