🟡স্বাস্থ্যখাতের মানোন্নয়নে দক্ষ নার্সের
🟡চাহিদা নিশ্চিতে জোর বিশেষজ্ঞদের
🟡দেশে চাহিদার তুলনায় নার্স সঙ্কট অনেক
🟡নার্সের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ১.৪১ গুণ বেশি
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত চিকিৎসা। আর এই চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন নার্সরা। অথচ নানা কারণে এখনও অবহেলিত এই নার্স সেক্টর। দেশের চাহিদার তুলনায় যেমন তীব্র নার্স সংকট আছে, তেমনি অভাব আছে দক্ষ নার্সেরও। তাই দেশের চিকিৎসা খাতের উন্নয়নে দক্ষ নার্সের চাহিদা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে আশার দিক হচ্ছে, বর্তমানে নার্সের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে এই পেশায় অনেকের আগ্রহ বাড়ছে। তাই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এই খাতকে এগিয়ে নিতে জোরদার পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সারা বিশে^র মত দেশে আজ পালিত হবে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, দিবসটির এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক শক্তি, নার্সিং সেবার ভিত্তি’। এ উপলক্ষে আজ নানা কর্মসূচি পালিত হবে। এর মাধ্যমে নার্সিং পেশার উজ্জল ভবিষ্যত বিনির্মাণ, তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন ও সম্মান করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনায় আসবে।
স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতের মানোন্নয়নে নার্সদের শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতার বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিগতভাবেও তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা খুবই জরুরি। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিকিৎসা খাতেও প্রযু্িক্তগত পরিবর্তন ঘটছে। সেজন্য নার্সদেরকেও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ একজন রোগীকে সুস্থ্য করতে চিকিৎসকের চেয়েও নার্স কোন অংশে কম ভুমিকা পালন করেন না। নার্সরা ২৪ ঘন্টারই রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকেন।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) মহাপরিচালনক মাকসুরা নূর সম্প্রতি বলেছেন, একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার প্রতি নার্সদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেজন্য নার্সদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। দেশের চাহিদার তুলনায় নার্স সঙ্কটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ডায়েবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, চিকিৎসা খাতে প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধনে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা খুবই দরকার এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের সাথে তাল মিলিয়ে নার্সদের দক্ষ করতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে নার্সদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই জরুরি। কেননা নার্সরা স্বাস্থ্য খাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। সেজন্য সরকার নার্সদের পদবী ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করেছে এবং নার্সিং শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কর্মক্ষেত্রে তাদের মর্যাদাপুর্ণ পরিবেশের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা কালিকুলাম তৈরি করেছে।
জানা গেছে, বিশে^র বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দক্ষ নার্স এর তীব্র সঙ্কট রয়েছে এবং যেখানে নার্সের তূলনায় চিকিৎসকের সংখ্যাই বেশি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী চিকিৎসক ও নার্সের আদর্শ অনুপাত হচ্ছে ১:৪। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য দেশে প্রতিটি চিকিৎসকের বিপরীতে চারজন নার্স থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের রয়েছে মাত্র ০.৭৪ জন নার্সের জন্য ১ জন চিকিৎসক। অর্থাৎ নার্সের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ১.৪১ গুণ বেশি। অন্যদিকে দেশের শহরাঞ্চলে প্রতি ১০,০০০ জনের জন্য ৫.৮ জন নার্স থাকলেও গ্রামাঞ্চলে সেটা রয়েছে মাত্র ০.৮ জন। এ চিত্রই বলে দেয় দেশে নার্সের তীব্র সঙ্কট রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এই সঙ্কটের মূল কারণ হচ্ছে, সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, অনেক সীমাবদ্ধ নীতিমালা, সাংস্কৃতিক বাধা, নার্সদের অনির্ধারিত মর্যাদা, তাদের যথাযথ মূল্যায়নের অভাব, উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার অভাব এবং সর্বোপরি নার্সিং শিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তার অভাব। সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের শিখিয়েছে স্বাস্থ্যসেবায় একটি অপরিহার্য অংশ হচ্ছে নার্স। যদিও নার্সিংকে একটি মহৎ পেশা মনে করা এবং তাদের মহান অবদানের জন্য অখ্যাত হিরোর স্বীকৃতি দেওয়ার খুব কম উদ্যোগই আমাদের সমাজে বিদ্যমান রয়েছে।
জানা গেছে, আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ১২ সে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উদযাপন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করা হবে।
মানবসেবায় তার এই অনন্য অবদানকে স্মরণ করে ১৯৬৫ সাল থেকে তার জন্মদিনে বিশ্বব্যাপী নার্স দিবস পালন করা হয়। তবে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ১৯৭৪ সাল থেকে দেশে দিবসটি উদযাপন করে আসছে।
























