০১:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজ পরিবেশ দিবস

দূষণ হুমকিতে দেশের পরিবেশ

▶সবুজায়ন ও দূষণমুক্ত করার নানা উদ্যোগ
▶বায়ু, পানি ও শব্দদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
▶৮ কোটি ৩৩ লাখ গাছ লাগাবে সরকার
▶লবণ পানিতে তলিয়েছে সুন্দরবনের ৮০ মিঠা পানির পুকুর

মারাত্মক দূষণ হুমকিতে রয়েছে দেশের পরিবেশ। পানি, বায়ু, শব্দ- সবকিছুতে দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই দূষণকে আরও বহুগুণ বাড়াচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এমন অবস্থায় দূষণমুক্ত করার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সবুজায়নের মাধ্যমে দেশের দূষণ পরিস্থিতি বদলাতে এ বছর লাগানো হবে ৮ কোটি ৩৩ লাখ গাছ।

 

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৩’ এ বাংলাদেশের বায়ুদূষণকে মারাত্মক দূষণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সংস্থাটির সূচকে বাংলাদেশ এবং রাজধানী ঢাকা প্রায়ই বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান দখল করেছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির প্রকাশ করা এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে শব্দদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ (ঢাকা)। এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৬ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার ৪৮টি নদীর মধ্যে বাংলাদেশের নদীগুলো সবচেয়ে বেশি দূষিত।

 

 

প্রতি বছরের মতো এবারও ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উদযাপন করা হচ্ছে আজ বুধবার (৫ জুন)। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা ২০২৪। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং বনজ সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের বাস উপযোগী টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করছে। এসব কাজে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পরিবেশ মেলা, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে।

 

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ঘোষণা মোতাবেক ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ প্রতিপাদ্যে এবং ‘জেনারেশন রেসটোরেশন’ স্লোগানে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’।

 

এ প্রসঙ্গে পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আজ ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন ২০২৩ ও ২০২৪, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৩, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২২ ও ২০২৩ প্রদান এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে। এদিন প্রধানমন্ত্রী দুটি চারা রোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। শেরেবাংলা নগরে পরিবেশ মেলা চলবে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা চলবে ৫ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।

 

মন্ত্রী বলেন, এ বছর বর্ষায় ৮ কোটি ৩৩ লাখ গাছের চারা রোপণ করা হবে। দেশের বন, জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদিত মোট ভূমির ২২.৩৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ ১৪.১ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার ও টেকসই বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

 

তিনি বলেন, ২০০৯-২০১০ হতে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মোট দুই লাখ ১৭ হাজার ৪০২ হেক্টর ব্লক এবং ৩০ হাজার ২৫২ সিবলিং কি.মি. স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং ১১ কোটি ২১ লাখ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে সারা দেশে আট কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার চারা রোপণ করা হবে।

 

সচিব বলেন, সারা দেশে বৃক্ষের পরিমাণ ও বন খাতে কার্বনের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য এ বছর জাতীয় বন জরিপ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের উপকূল, বাঁধ এবং পোল্ডারে বনায়নের মাধ্যমে উপকূলজুড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সবুজ বেষ্টনী সৃজন করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮৯ হাজার ৮৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বনায়ন সৃজন করা হয়েছে।

 

২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত এক লাখ ৬০ হাজার ৬৯৯ জন উপকারভোগীর মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে ৩২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ১১৪ টাকা বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জবরদখল হওয়া বনভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার একর বনভূমি জবরদখলমুক্ত করা হয়েছে ও বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে।

 

এদিকে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালে বাংলাদেশ পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন জারি করে। তবে, রাজধানীতে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ আকারে বাড়ছে প্লাস্টিকের বর্জ্য। ঢাকার মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যরে ব্যবহার কমিয়ে আনতে না পারলে অবস্থা আরও অবনতি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা শহরে প্রতিদিন এক কোটি ২০ লাখের বেশি পলিব্যাগ বর্জ্য বিভিন্ন লেক, ঝিল, পুকুর, ডোবা, নালা ও নদীতে গিয়ে জমা হচ্ছে। এতে করে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। একটি প্লাস্টিক বর্জ্য প্রায় ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে জীব ও প্রকৃতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বছরে একজন মানুষ প্রায় পাঁচ কেজি প্লাস্টিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে।

 

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) তথ্যমতে, ঢাকায় দৈনিক ৬৮০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে ৬৮০ টন প্লাস্টিক বর্জ্যরে উপস্থিতি থাকে। ব্যবহারের ৭০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য প্রকৃতিতে কোনো না কোনোভাবে থেকে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বের শীর্ষ দশমে রয়েছে। দেশের শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে মানুষ। এ কারণে দেশে ২৩টি রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

 

পৃথিবীর ১০টি নদী সবচেয়ে বেশি দূষিত জানিয়ে পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এরাই সবচেয়ে বেশি দূষণ বহন করছে। এর মধ্যে দুটো বাংলাদেশের পদ্মা ও যমুনা। এখানে শুধু আমাদের দেশের পলিথিন ও প্লাস্টিক না, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোরও দূষণ আছে। আমাদের যে অবস্থান, তাতে এসব দূষণ নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। যারা প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করবে, তাদের আমরা দূষণের জন্য দায়ী করব।

 

সুন্দরবনে মিঠা পানির সংকট, লবণ পানিতে তলিয়েছে সুন্দরবনের ৮০ মিঠা পানির পুকুর: প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের ভেতরের প্রায় ৮০টি মিঠা পানির পুকুর লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে সুন্দরবনে এখন সবচেয়ে বড় সংকট স্বাভাবিক পানি। কেননা বন্যপ্রাণী, বনজীবী এবং বনে অবস্থান করা বনকর্মীদের মিঠা পানির একমাত্র উৎস ছিল এসব পুকুর। যার সবই এখন নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল-পরবর্তী পরিস্থিতি ও জরুরি করণীয়’ শীর্ষক সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এ সভার আয়োজন করে।

 

সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতায় বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২০১টি বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এটি এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি করেছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে জনপদের পাশাপাশি পায়রা নদীর ড্রেজিং ও উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় ও এর আশপাশের ১৯টি জেলার ১১৯ উপজেলার ৯৩৪ ইউনিয়নের প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানবন্দর থেকে বুলেটপ্রুফ বাসে পূর্বাচলের সংবর্ধনায় যাচ্ছেন তারেক রহমান

আজ পরিবেশ দিবস

দূষণ হুমকিতে দেশের পরিবেশ

আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

▶সবুজায়ন ও দূষণমুক্ত করার নানা উদ্যোগ
▶বায়ু, পানি ও শব্দদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
▶৮ কোটি ৩৩ লাখ গাছ লাগাবে সরকার
▶লবণ পানিতে তলিয়েছে সুন্দরবনের ৮০ মিঠা পানির পুকুর

মারাত্মক দূষণ হুমকিতে রয়েছে দেশের পরিবেশ। পানি, বায়ু, শব্দ- সবকিছুতে দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই দূষণকে আরও বহুগুণ বাড়াচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এমন অবস্থায় দূষণমুক্ত করার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সবুজায়নের মাধ্যমে দেশের দূষণ পরিস্থিতি বদলাতে এ বছর লাগানো হবে ৮ কোটি ৩৩ লাখ গাছ।

 

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৩’ এ বাংলাদেশের বায়ুদূষণকে মারাত্মক দূষণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সংস্থাটির সূচকে বাংলাদেশ এবং রাজধানী ঢাকা প্রায়ই বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান দখল করেছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির প্রকাশ করা এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে শব্দদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ (ঢাকা)। এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৬ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার ৪৮টি নদীর মধ্যে বাংলাদেশের নদীগুলো সবচেয়ে বেশি দূষিত।

 

 

প্রতি বছরের মতো এবারও ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উদযাপন করা হচ্ছে আজ বুধবার (৫ জুন)। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা ২০২৪। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং বনজ সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের বাস উপযোগী টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করছে। এসব কাজে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পরিবেশ মেলা, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে।

 

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ঘোষণা মোতাবেক ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ প্রতিপাদ্যে এবং ‘জেনারেশন রেসটোরেশন’ স্লোগানে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’।

 

এ প্রসঙ্গে পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আজ ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন ২০২৩ ও ২০২৪, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৩, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২২ ও ২০২৩ প্রদান এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে। এদিন প্রধানমন্ত্রী দুটি চারা রোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। শেরেবাংলা নগরে পরিবেশ মেলা চলবে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা চলবে ৫ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।

 

মন্ত্রী বলেন, এ বছর বর্ষায় ৮ কোটি ৩৩ লাখ গাছের চারা রোপণ করা হবে। দেশের বন, জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদিত মোট ভূমির ২২.৩৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ ১৪.১ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার ও টেকসই বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

 

তিনি বলেন, ২০০৯-২০১০ হতে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মোট দুই লাখ ১৭ হাজার ৪০২ হেক্টর ব্লক এবং ৩০ হাজার ২৫২ সিবলিং কি.মি. স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং ১১ কোটি ২১ লাখ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে সারা দেশে আট কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার চারা রোপণ করা হবে।

 

সচিব বলেন, সারা দেশে বৃক্ষের পরিমাণ ও বন খাতে কার্বনের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য এ বছর জাতীয় বন জরিপ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের উপকূল, বাঁধ এবং পোল্ডারে বনায়নের মাধ্যমে উপকূলজুড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সবুজ বেষ্টনী সৃজন করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮৯ হাজার ৮৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বনায়ন সৃজন করা হয়েছে।

 

২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত এক লাখ ৬০ হাজার ৬৯৯ জন উপকারভোগীর মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে ৩২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ১১৪ টাকা বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জবরদখল হওয়া বনভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার একর বনভূমি জবরদখলমুক্ত করা হয়েছে ও বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে।

 

এদিকে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালে বাংলাদেশ পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন জারি করে। তবে, রাজধানীতে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ আকারে বাড়ছে প্লাস্টিকের বর্জ্য। ঢাকার মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যরে ব্যবহার কমিয়ে আনতে না পারলে অবস্থা আরও অবনতি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা শহরে প্রতিদিন এক কোটি ২০ লাখের বেশি পলিব্যাগ বর্জ্য বিভিন্ন লেক, ঝিল, পুকুর, ডোবা, নালা ও নদীতে গিয়ে জমা হচ্ছে। এতে করে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। একটি প্লাস্টিক বর্জ্য প্রায় ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে জীব ও প্রকৃতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বছরে একজন মানুষ প্রায় পাঁচ কেজি প্লাস্টিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে।

 

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) তথ্যমতে, ঢাকায় দৈনিক ৬৮০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে ৬৮০ টন প্লাস্টিক বর্জ্যরে উপস্থিতি থাকে। ব্যবহারের ৭০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য প্রকৃতিতে কোনো না কোনোভাবে থেকে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বের শীর্ষ দশমে রয়েছে। দেশের শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে মানুষ। এ কারণে দেশে ২৩টি রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

 

পৃথিবীর ১০টি নদী সবচেয়ে বেশি দূষিত জানিয়ে পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এরাই সবচেয়ে বেশি দূষণ বহন করছে। এর মধ্যে দুটো বাংলাদেশের পদ্মা ও যমুনা। এখানে শুধু আমাদের দেশের পলিথিন ও প্লাস্টিক না, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোরও দূষণ আছে। আমাদের যে অবস্থান, তাতে এসব দূষণ নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। যারা প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করবে, তাদের আমরা দূষণের জন্য দায়ী করব।

 

সুন্দরবনে মিঠা পানির সংকট, লবণ পানিতে তলিয়েছে সুন্দরবনের ৮০ মিঠা পানির পুকুর: প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের ভেতরের প্রায় ৮০টি মিঠা পানির পুকুর লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে সুন্দরবনে এখন সবচেয়ে বড় সংকট স্বাভাবিক পানি। কেননা বন্যপ্রাণী, বনজীবী এবং বনে অবস্থান করা বনকর্মীদের মিঠা পানির একমাত্র উৎস ছিল এসব পুকুর। যার সবই এখন নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল-পরবর্তী পরিস্থিতি ও জরুরি করণীয়’ শীর্ষক সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এ সভার আয়োজন করে।

 

সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতায় বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২০১টি বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এটি এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি করেছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে জনপদের পাশাপাশি পায়রা নদীর ড্রেজিং ও উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় ও এর আশপাশের ১৯টি জেলার ১১৯ উপজেলার ৯৩৪ ইউনিয়নের প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।