১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রস্তাবিত বাজেটে কমছে না চিকিৎসাব্যয়

➤তামাকের ট্যাক্স দিয়ে উঠবে না চিকিৎসা খরচ
➤এবারের স্বাস্থ্য বাজেট ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা
➤থোক বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা

❖এই বাজেটের কারণে বারে বারে চিকিৎসকদের উপরে দোষ আসবে : ডা. রশীদ-ই-মাহবুব
❖তামাকজাত পণ্যের ট্যাক্স থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ কম : ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী
❖স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা স্বাস্থ্যসেবার সবগুলোদিককে যেন ব্যবহার করে এমন প্রত্যাশা ছিল : ডা. লেনিন চৌধুরী
❖স্বাস্থ্যবাজেটের বড় অংশ গ্রাম পর্যায়ে গেলে জনগণ উপকৃত হবে : ডা. মো. মোজাহেরুল হক

২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যবাজেটে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে; যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক দুই শতাংশ। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণানুযায়ী, ১৫ শতাংশ বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব থাকলেও এবারও এটি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। এই বাজেট গতানুগতিক। এটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার চলমান কাজগুলোকেই চালিয়ে নেবে এ কারণে চিকিৎসকদের উপর দোষও বর্তাবে এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি তারা মনে করছেন, দুর্নীতিমুক্ত রেখে, অর্থের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে, উপজেলা পর্যায়ে এ অর্থ নিয়ে যেতে পারলে জনগণ উপকৃত হবে। অন্যদিকে, তামাকে যে করারোপ করা হচ্ছে এতে করে এ থেকে আক্রান্ত রোগের চিকিৎসা খরচই উঠবে না; যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

 

স্বাস্থ্যবাজেট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, বাজেট ঘিরে আমাদের প্রত্যাশাÑ আমরা ভালো চিকিৎসা পাব। জনগণ তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবে। চিকিৎসায় আমরা এখন দেখি ৭৪ শতাংশ টাকা ব্যক্তির নিজেকে খরচ করতে হয়। এখন যে বাজেট দিয়েছে এবং তার যে ইনফ্লেশার তাতে যে তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছে সেটা তো ইনফ্লেশারেই চলে যাবে। বাজেটের যে মূল উদ্দেশ্য, শুধু অর্থ বরাদ্দ না কিভাবে ভালোভাবে ব্যয় করবে। সরকার বলে আমরা টাকা দিই তারা খরচ করতে পারে না। তার মানে কে পারে না? সরকারই পারে না। বা তার ম্যানেজাররা পারে না। এই ম্যানেজারের দায়িত্ব সরকারের। তারা কেন পারে না এটা কি আজ পর্যন্ত তারা বলেছে। কোথায় সমস্যা? সেটা তো তারা নির্ণয় করেনি। আর যখনই এটা পারে না তখন চিকিৎসকদের উপরে ব্লেমটা আসে তারা অদক্ষ। সুতরাং তারা পয়সা দিচ্ছে, পয়সা ব্যবহার করার যোগ্যতা সরকারের নাই। চিকিৎসকরা চিকিৎসা করতে গেলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পায় না। আউট অব পকেট খরচ হয়। চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, সমস্তটাই চিকিৎসকদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। এই বাজেটে নতুন কিছু প্রত্যাশা আমি মনে করি চিকিৎসক হিসেবে কিছু নাই। তারা একটা গতানুগতিক হিসাব দিয়েছে। এই বাজেটে জনগণের আউট অব পকেট এক্সপেনডিচার কমবে না। চিকিৎসার মানও বাড়বে না। আর বারে বারে দোষ আসবে চিকিৎসকদের উপরে।

 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, তামাকের উপরে কর বৃদ্ধি করা হলে দাম বাড়ে। এতে করে নতুনরা শুরু করে না, পুরনো যারা আছে তারা তামাকটা ছেড়ে দেয়। আমরা এটাও জানি যে, যদি এই কাজটা করতে হয়, তাহলে দামটা বৃদ্ধি করতে হয় যাতে করে ইনসেশনের উপর এডজাস্ট করে এটা করতে হয়। আমরা গতকালকের বাজেটে যেটা দেখেছি যে, তামাকের প্রত্যেকটা স্তরে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু এটা এমনভাবে করা হয় নাই যেটা কিনা আসলে প্রকৃতপক্ষে তামাকের দাম বাড়াবে। বিশেষ করে কমদামি সিগারেটের দাম বাড়াবে। যেটা আমরা চাচ্ছিলাম আরও বেশি করে দাম বাড়ুক। তবে, আমি বলব যে, কর বাড়ানো হয়েছে বিশেষ করে নিম্ন স্তরের সিগারেটের প্যাকেটে পাঁচ টাকা দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেটা হয়ত প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। তামাক ব্যবহারের যে হার রয়েছে সেটা কমাতে এই ট্যাক্সের পরিমাণ খুবই কম হয়ে গেল বলে আমার মনে হয়।

তিনি বলেন, আমাদের তামাকজনিত রোগে যে হারে খরচ করি, সরকার থেকেই হোক বা নিজের পকেট থেকেই হোক সেটার যে একটা হিসাব আর তামাকজনিত যে ট্যাক্স পাওয়া যায় সেখানে অনেক ফারাক রয়েছে। আমরা অনেক বেশি আমাদের স্বাস্থ্যখাতে তামাক বিষয়ক রোগের জন্য খরচ করি। গত ৪-৫ বছর আগের ডেটায় আপনারা জানেন, তখন তামাক থেকে প্রাপ্ত ট্যাক্স ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা আর সরকারের স্বাস্থ্য খাতে খরচ ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা। এটা এখনও রয়ে গেছে। তবে, এখন যে হারে করটা বাড়ানো হয়েছে, যে ট্যাক্সটা এখন আসবে সেটা থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ কম। এখন সার্ভিস চার্জের টাকাটা কিভাবে বাড়ানো যায় সেটা চিন্তা করা যেতে পারে।

‘ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ এর সদস্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, এবারের স্বাস্থ্য বাজেটে সত্যিকার অর্থে নতুন কোন দিকনির্দেশনা নেই। কারণ এর আগে গত ১৫-২০ বছর যাবৎ স্বাস্থ্য বাজেট টোটাল বাজেট বরাদ্দের কমবেশি ৫ শতাংশ বরাদ্দ হতো। এবারও পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই পাঁচ শতাংশকে খরচ করার মতো ক্ষমতা স্বাস্থ্য বিভাগের নেই। পরিকল্পনার দিকেও নেই এবং দক্ষ জনবলও নেই যারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। ফলে, সেই জায়গাটাই পরিবর্তন না করে অর্থ কত বরাদ্দ হলো বা হলো না সেটি তো অর্থহীন। কারণ, যে প্রস্তাব করা আগেই হয়েছিল পাঁচ শতাংশের কম বেশি সেটি কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। দ্বিতীয়ত, পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য কোন প্রস্তাব এই বাজেটে নেই। যেটি রয়েছে, চলমান চিকিৎসা কেন্দ্রের যে ধারা সেটিকে সামনে নেয়ার জন্য। সেজন্য কিছু হাসপাতাল তৈরি, রিপেয়ার, যন্ত্রপাতি কেনা এর বাইরে কিন্তু প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা, প্রশমনমূলক স্বাস্থ্যসেবা, পুনর্বাসনমূলক স্বাস্থ্যসেবা এগুলোর কিন্তু কোন নতুন দিকদর্শন তৈরি হয়নি। সুতরাং এদেশের ১৭ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য আমাদের কতগুলো ডাক্তার দরকার, একজন ডাক্তারের বিপরীতে তিনজন নার্স দরকার, একজন ডাক্তারের বিপরীতে পাঁচজন প্যারামেডিকস দরকার, এগুলো আমরা এই বছর কতগুলো করব? কোন কোন জায়গা থেকে করব। সেখানে আমাদের কত খরচ করতে হবে। এরকম ভিত্তিমূলকে ধরে যে বাজেট নির্মাণ সেটি হয়নি। গতবারের সঙ্গে কিছু জায়গায় যোগ হয়েছে, কিছু জায়গায় বিয়োগ হয়েছে। আর কিছু থোক বরাদ্দ হয়েছে। গত বাজেটেও থোক বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। সেটা ব্যবহৃত হয়নি। সেটা ব্যবহৃত হওয়ার জন্য যে অবকাঠামো করতে হয় সেটি হয়নি। অর্থাৎ লোকবল সবকিছু মিলে যে কাঠামো সেটি হয়নি। অন্যদিকে, থোক বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি তো কোভিডের সময়ও ছিল কিন্তু আমরা চাচ্ছি যে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা যেন শুধু চিকিৎসাসেবায় কেন্দ্রিভূত না হয়। এটা যেন মানুষের পুনর্বাসনমূলক, উপশমমূলক বা স্বাস্থ্যসেবার সবগুলোকে যেন ব্যবহার করে কিন্তু সেটা এবারও হয়নি।

 

আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে, এবার তামাক ও তামাকজাত পণ্যের উপরে সরকার হেড ট্যাক্স নির্ধারণ করবে। এই হেড ট্যাক্সটা তামাকজাত পণ্য থেকে যে স্বাস্থ্য ক্ষতি করছে মানুষের। সেই স্বাস্থ্যক্ষতিটাকে ঠিক করার জন্য কাজে ব্যবহৃত হবে এবং যেহেতু ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী টোব্যাকো ফ্রি বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তাহলে তো সেই পথে যেতে হবে। তাহলে তো বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানির সাথে যে শেয়ার আছে সেগুলো থেকে সরে আসতে হবে। সেরকম কোনো ইঙ্গিত আমরা দেখিনি।

 

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ডা. মো. মোজাহেরুল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এটা আগেও ছিল। এবার জনগণ আশা করেছিল যে, স্বাস্থ্যবাজেট বাড়বে কিন্তু সেটা এবার হয়নি। স্বাস্থ্যবাজেট না বাড়ানোর পক্ষে সরকারেরও যুক্তি আছে। এ পর্যন্ত যতবারই স্বাস্থ্যবাজেট যেটাই দেয়া হয়েছে সেটা কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারেনি। তাছাড়াও যেটা লক্ষ্য করা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। তারপরে রয়ে গেছে অপচয় এবং দুর্নীতি। সুতরাং অপচয় এবং দুর্নীতি বন্ধ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা বাড়াতে পারে তাহলে যে বাজেটটা দেয়া হয়েছে সেই বাজেটটা পুরোপুরি ব্যবহার করে জনগণ এবং দেশ উপকৃত হতে পারে। তারপরেও জনগণের একটা আশা স্বাস্থ্য বাজেট বাড়লে জনগণের স্বাস্থ্যের মান উন্নয়ন হবে, সেটা যেমন ঠিক, পাশাপাশি এটাও ঠিক বর্তমানে যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাংলাদেশের এটার একটা বিরাট অংশ ব্যয় করা হয় শহরগুলোতে। বিশ^বিদ্যালয়, স্পেশালাইজড হাসপাতাল এগুলোতে। সুতরাং সরকার যে বাজেটটা দিয়েছে এখন যদি সরকারের লক্ষ্য হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাহলে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আর্থিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং এগুলোকে ফাংশনাল স্ট্রেনদেনিং করতে হবে। বাজেট বেশি যাবে উপজেলা পর্যায়ে। উপজেলা হাসপাতালগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেখানকার জনগণ থেকে শুরু করে সকল সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে যেন স্বাস্থ্যব্যবস্থাটা শক্তিশালী হয়। এটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে যে স্বাস্থ্যবাজেটটা আছে সেটার একটা বড় অংশ যদি গ্রাম পর্যায়ে যায় তাহলে জনগণ উপকৃত হবে।

 

বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যব্যয় পৃথিবীর অন্যান্য যেকোন দেশের তুলনায় বেশি। এখানে প্রতিটি মানুষ যা ব্যয় করে তার বেশিরভাগ স্বাস্থ্যব্যয় মেটাতে ব্যয় হয়। যে কারণে অন্যান্য সাংসারিক ব্যয়, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানো, তাদের পুষ্টিখাদ্য এবং পুষ্টির ব্যবস্থা করা তাদের কাপড়চোপড় এবং আবাস এগুলোর উপরে চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে পুষ্টিহীনতা এদের মধ্যে দেখা দেয়। পুষ্টিহীনতার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি। সুতরাং এটা একটা চক্রবৃদ্ধির মতো, একদিকে এমনিতেই স্বাস্থ্যব্যয়টা বেশি হচ্ছে। তারপরে আবার এই সমস্ত কারণে স্বাস্থ্যব্যয় আরও বেড়ে যেতে পারে এবং পুষ্টিহীনতা থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে আবার রোগ হবে। এই সাইকেলটা অব্যাহত থাকে। সরকারের যেটা করণীয় সেটা হলো, আমাদের যেসব কারণে অসংক্রামক রোগগুলো হচ্ছে, এগুলো থেকে বাঁচাতে হলে তাদের স্বাস্থ্যের মান বাড়াতে হবে। সেই জায়গায় স্বাস্থ্য ব্যয়টা কমাতে হবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতাটা বাড়াতে হবে। কিন্তু এই যে সিগারেটের সহজলভ্যতা এবং সিগারেট, বিড়ির দাম কম হওয়াতে জনগণের মধ্যে এইগুলো গ্রহণের প্রবণতা বাড়বে। তাছাড়া কিশোর-তরুণরাও আগ্রহী হবে। যেটা পরবর্তীতে জাতির জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আসবে। যেহেতু স্বাস্থ্যবাজেট বাড়ানো হয়নি তাই সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে এই বাজেটটা যেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উপজেলা পর্যায়ে যাতে বরাদ্দটা বাড়ে। আর এখনও সুযোগ আছে সরকারের বিড়ি এবং সিগারেটের আরও যেন মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। যেটি জনগণের একটি অনীহা সৃষ্টি করবে এটি ব্যবহার করতে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

প্রস্তাবিত বাজেটে কমছে না চিকিৎসাব্যয়

আপডেট সময় : ০৮:০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

➤তামাকের ট্যাক্স দিয়ে উঠবে না চিকিৎসা খরচ
➤এবারের স্বাস্থ্য বাজেট ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা
➤থোক বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা

❖এই বাজেটের কারণে বারে বারে চিকিৎসকদের উপরে দোষ আসবে : ডা. রশীদ-ই-মাহবুব
❖তামাকজাত পণ্যের ট্যাক্স থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ কম : ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী
❖স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা স্বাস্থ্যসেবার সবগুলোদিককে যেন ব্যবহার করে এমন প্রত্যাশা ছিল : ডা. লেনিন চৌধুরী
❖স্বাস্থ্যবাজেটের বড় অংশ গ্রাম পর্যায়ে গেলে জনগণ উপকৃত হবে : ডা. মো. মোজাহেরুল হক

২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যবাজেটে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে; যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক দুই শতাংশ। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণানুযায়ী, ১৫ শতাংশ বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব থাকলেও এবারও এটি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। এই বাজেট গতানুগতিক। এটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার চলমান কাজগুলোকেই চালিয়ে নেবে এ কারণে চিকিৎসকদের উপর দোষও বর্তাবে এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি তারা মনে করছেন, দুর্নীতিমুক্ত রেখে, অর্থের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে, উপজেলা পর্যায়ে এ অর্থ নিয়ে যেতে পারলে জনগণ উপকৃত হবে। অন্যদিকে, তামাকে যে করারোপ করা হচ্ছে এতে করে এ থেকে আক্রান্ত রোগের চিকিৎসা খরচই উঠবে না; যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

 

স্বাস্থ্যবাজেট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, বাজেট ঘিরে আমাদের প্রত্যাশাÑ আমরা ভালো চিকিৎসা পাব। জনগণ তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবে। চিকিৎসায় আমরা এখন দেখি ৭৪ শতাংশ টাকা ব্যক্তির নিজেকে খরচ করতে হয়। এখন যে বাজেট দিয়েছে এবং তার যে ইনফ্লেশার তাতে যে তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছে সেটা তো ইনফ্লেশারেই চলে যাবে। বাজেটের যে মূল উদ্দেশ্য, শুধু অর্থ বরাদ্দ না কিভাবে ভালোভাবে ব্যয় করবে। সরকার বলে আমরা টাকা দিই তারা খরচ করতে পারে না। তার মানে কে পারে না? সরকারই পারে না। বা তার ম্যানেজাররা পারে না। এই ম্যানেজারের দায়িত্ব সরকারের। তারা কেন পারে না এটা কি আজ পর্যন্ত তারা বলেছে। কোথায় সমস্যা? সেটা তো তারা নির্ণয় করেনি। আর যখনই এটা পারে না তখন চিকিৎসকদের উপরে ব্লেমটা আসে তারা অদক্ষ। সুতরাং তারা পয়সা দিচ্ছে, পয়সা ব্যবহার করার যোগ্যতা সরকারের নাই। চিকিৎসকরা চিকিৎসা করতে গেলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পায় না। আউট অব পকেট খরচ হয়। চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, সমস্তটাই চিকিৎসকদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। এই বাজেটে নতুন কিছু প্রত্যাশা আমি মনে করি চিকিৎসক হিসেবে কিছু নাই। তারা একটা গতানুগতিক হিসাব দিয়েছে। এই বাজেটে জনগণের আউট অব পকেট এক্সপেনডিচার কমবে না। চিকিৎসার মানও বাড়বে না। আর বারে বারে দোষ আসবে চিকিৎসকদের উপরে।

 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, তামাকের উপরে কর বৃদ্ধি করা হলে দাম বাড়ে। এতে করে নতুনরা শুরু করে না, পুরনো যারা আছে তারা তামাকটা ছেড়ে দেয়। আমরা এটাও জানি যে, যদি এই কাজটা করতে হয়, তাহলে দামটা বৃদ্ধি করতে হয় যাতে করে ইনসেশনের উপর এডজাস্ট করে এটা করতে হয়। আমরা গতকালকের বাজেটে যেটা দেখেছি যে, তামাকের প্রত্যেকটা স্তরে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু এটা এমনভাবে করা হয় নাই যেটা কিনা আসলে প্রকৃতপক্ষে তামাকের দাম বাড়াবে। বিশেষ করে কমদামি সিগারেটের দাম বাড়াবে। যেটা আমরা চাচ্ছিলাম আরও বেশি করে দাম বাড়ুক। তবে, আমি বলব যে, কর বাড়ানো হয়েছে বিশেষ করে নিম্ন স্তরের সিগারেটের প্যাকেটে পাঁচ টাকা দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেটা হয়ত প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। তামাক ব্যবহারের যে হার রয়েছে সেটা কমাতে এই ট্যাক্সের পরিমাণ খুবই কম হয়ে গেল বলে আমার মনে হয়।

তিনি বলেন, আমাদের তামাকজনিত রোগে যে হারে খরচ করি, সরকার থেকেই হোক বা নিজের পকেট থেকেই হোক সেটার যে একটা হিসাব আর তামাকজনিত যে ট্যাক্স পাওয়া যায় সেখানে অনেক ফারাক রয়েছে। আমরা অনেক বেশি আমাদের স্বাস্থ্যখাতে তামাক বিষয়ক রোগের জন্য খরচ করি। গত ৪-৫ বছর আগের ডেটায় আপনারা জানেন, তখন তামাক থেকে প্রাপ্ত ট্যাক্স ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা আর সরকারের স্বাস্থ্য খাতে খরচ ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা। এটা এখনও রয়ে গেছে। তবে, এখন যে হারে করটা বাড়ানো হয়েছে, যে ট্যাক্সটা এখন আসবে সেটা থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ কম। এখন সার্ভিস চার্জের টাকাটা কিভাবে বাড়ানো যায় সেটা চিন্তা করা যেতে পারে।

‘ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ এর সদস্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, এবারের স্বাস্থ্য বাজেটে সত্যিকার অর্থে নতুন কোন দিকনির্দেশনা নেই। কারণ এর আগে গত ১৫-২০ বছর যাবৎ স্বাস্থ্য বাজেট টোটাল বাজেট বরাদ্দের কমবেশি ৫ শতাংশ বরাদ্দ হতো। এবারও পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই পাঁচ শতাংশকে খরচ করার মতো ক্ষমতা স্বাস্থ্য বিভাগের নেই। পরিকল্পনার দিকেও নেই এবং দক্ষ জনবলও নেই যারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। ফলে, সেই জায়গাটাই পরিবর্তন না করে অর্থ কত বরাদ্দ হলো বা হলো না সেটি তো অর্থহীন। কারণ, যে প্রস্তাব করা আগেই হয়েছিল পাঁচ শতাংশের কম বেশি সেটি কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। দ্বিতীয়ত, পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য কোন প্রস্তাব এই বাজেটে নেই। যেটি রয়েছে, চলমান চিকিৎসা কেন্দ্রের যে ধারা সেটিকে সামনে নেয়ার জন্য। সেজন্য কিছু হাসপাতাল তৈরি, রিপেয়ার, যন্ত্রপাতি কেনা এর বাইরে কিন্তু প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা, প্রশমনমূলক স্বাস্থ্যসেবা, পুনর্বাসনমূলক স্বাস্থ্যসেবা এগুলোর কিন্তু কোন নতুন দিকদর্শন তৈরি হয়নি। সুতরাং এদেশের ১৭ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য আমাদের কতগুলো ডাক্তার দরকার, একজন ডাক্তারের বিপরীতে তিনজন নার্স দরকার, একজন ডাক্তারের বিপরীতে পাঁচজন প্যারামেডিকস দরকার, এগুলো আমরা এই বছর কতগুলো করব? কোন কোন জায়গা থেকে করব। সেখানে আমাদের কত খরচ করতে হবে। এরকম ভিত্তিমূলকে ধরে যে বাজেট নির্মাণ সেটি হয়নি। গতবারের সঙ্গে কিছু জায়গায় যোগ হয়েছে, কিছু জায়গায় বিয়োগ হয়েছে। আর কিছু থোক বরাদ্দ হয়েছে। গত বাজেটেও থোক বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। সেটা ব্যবহৃত হয়নি। সেটা ব্যবহৃত হওয়ার জন্য যে অবকাঠামো করতে হয় সেটি হয়নি। অর্থাৎ লোকবল সবকিছু মিলে যে কাঠামো সেটি হয়নি। অন্যদিকে, থোক বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি তো কোভিডের সময়ও ছিল কিন্তু আমরা চাচ্ছি যে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা যেন শুধু চিকিৎসাসেবায় কেন্দ্রিভূত না হয়। এটা যেন মানুষের পুনর্বাসনমূলক, উপশমমূলক বা স্বাস্থ্যসেবার সবগুলোকে যেন ব্যবহার করে কিন্তু সেটা এবারও হয়নি।

 

আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে, এবার তামাক ও তামাকজাত পণ্যের উপরে সরকার হেড ট্যাক্স নির্ধারণ করবে। এই হেড ট্যাক্সটা তামাকজাত পণ্য থেকে যে স্বাস্থ্য ক্ষতি করছে মানুষের। সেই স্বাস্থ্যক্ষতিটাকে ঠিক করার জন্য কাজে ব্যবহৃত হবে এবং যেহেতু ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী টোব্যাকো ফ্রি বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তাহলে তো সেই পথে যেতে হবে। তাহলে তো বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানির সাথে যে শেয়ার আছে সেগুলো থেকে সরে আসতে হবে। সেরকম কোনো ইঙ্গিত আমরা দেখিনি।

 

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ডা. মো. মোজাহেরুল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এটা আগেও ছিল। এবার জনগণ আশা করেছিল যে, স্বাস্থ্যবাজেট বাড়বে কিন্তু সেটা এবার হয়নি। স্বাস্থ্যবাজেট না বাড়ানোর পক্ষে সরকারেরও যুক্তি আছে। এ পর্যন্ত যতবারই স্বাস্থ্যবাজেট যেটাই দেয়া হয়েছে সেটা কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারেনি। তাছাড়াও যেটা লক্ষ্য করা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। তারপরে রয়ে গেছে অপচয় এবং দুর্নীতি। সুতরাং অপচয় এবং দুর্নীতি বন্ধ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা বাড়াতে পারে তাহলে যে বাজেটটা দেয়া হয়েছে সেই বাজেটটা পুরোপুরি ব্যবহার করে জনগণ এবং দেশ উপকৃত হতে পারে। তারপরেও জনগণের একটা আশা স্বাস্থ্য বাজেট বাড়লে জনগণের স্বাস্থ্যের মান উন্নয়ন হবে, সেটা যেমন ঠিক, পাশাপাশি এটাও ঠিক বর্তমানে যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাংলাদেশের এটার একটা বিরাট অংশ ব্যয় করা হয় শহরগুলোতে। বিশ^বিদ্যালয়, স্পেশালাইজড হাসপাতাল এগুলোতে। সুতরাং সরকার যে বাজেটটা দিয়েছে এখন যদি সরকারের লক্ষ্য হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাহলে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আর্থিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং এগুলোকে ফাংশনাল স্ট্রেনদেনিং করতে হবে। বাজেট বেশি যাবে উপজেলা পর্যায়ে। উপজেলা হাসপাতালগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেখানকার জনগণ থেকে শুরু করে সকল সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে যেন স্বাস্থ্যব্যবস্থাটা শক্তিশালী হয়। এটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে যে স্বাস্থ্যবাজেটটা আছে সেটার একটা বড় অংশ যদি গ্রাম পর্যায়ে যায় তাহলে জনগণ উপকৃত হবে।

 

বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যব্যয় পৃথিবীর অন্যান্য যেকোন দেশের তুলনায় বেশি। এখানে প্রতিটি মানুষ যা ব্যয় করে তার বেশিরভাগ স্বাস্থ্যব্যয় মেটাতে ব্যয় হয়। যে কারণে অন্যান্য সাংসারিক ব্যয়, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানো, তাদের পুষ্টিখাদ্য এবং পুষ্টির ব্যবস্থা করা তাদের কাপড়চোপড় এবং আবাস এগুলোর উপরে চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে পুষ্টিহীনতা এদের মধ্যে দেখা দেয়। পুষ্টিহীনতার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি। সুতরাং এটা একটা চক্রবৃদ্ধির মতো, একদিকে এমনিতেই স্বাস্থ্যব্যয়টা বেশি হচ্ছে। তারপরে আবার এই সমস্ত কারণে স্বাস্থ্যব্যয় আরও বেড়ে যেতে পারে এবং পুষ্টিহীনতা থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে আবার রোগ হবে। এই সাইকেলটা অব্যাহত থাকে। সরকারের যেটা করণীয় সেটা হলো, আমাদের যেসব কারণে অসংক্রামক রোগগুলো হচ্ছে, এগুলো থেকে বাঁচাতে হলে তাদের স্বাস্থ্যের মান বাড়াতে হবে। সেই জায়গায় স্বাস্থ্য ব্যয়টা কমাতে হবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতাটা বাড়াতে হবে। কিন্তু এই যে সিগারেটের সহজলভ্যতা এবং সিগারেট, বিড়ির দাম কম হওয়াতে জনগণের মধ্যে এইগুলো গ্রহণের প্রবণতা বাড়বে। তাছাড়া কিশোর-তরুণরাও আগ্রহী হবে। যেটা পরবর্তীতে জাতির জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আসবে। যেহেতু স্বাস্থ্যবাজেট বাড়ানো হয়নি তাই সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে এই বাজেটটা যেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উপজেলা পর্যায়ে যাতে বরাদ্দটা বাড়ে। আর এখনও সুযোগ আছে সরকারের বিড়ি এবং সিগারেটের আরও যেন মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। যেটি জনগণের একটি অনীহা সৃষ্টি করবে এটি ব্যবহার করতে।