❖ঝিনাইদহে এমপি আনারের আত্মীয় গ্যাস বাবু গ্রেপ্তার
❖নেপালে আটক সিয়াম কলকাতা সিআইডি হেফাজতে
❖রিমান্ড শেষে কসাই জিহাদকে আদালতে প্রেরণ
❖ফরেনসিক প্রতিবেদনের অপেক্ষায় দুই দেশের তদন্ত সংস্থা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজের পর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও এখনো পুরোপুরি সেই রহস্যের জট খোলেনি। এখনো মেলেনি এমপি আনারের ব্যবহৃত রক্তমাখা পোশাক, চশমা, মোবাইল সেট এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও রহস্যময় সেই ট্রলি। এদিকে আলোচিত এ মামলায় সন্দেহভাজন এমপি আনারের নিকটাত্মীয় ও আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির ডিবি পুলিশের একটি দল। অপরদিকে নেপালে আটক সিয়ামকে কলকাতা সিআইডির হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন অপর আসামি কসাই জিহাদকে বারাসাত আদালতে পাঠিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা কলকাতা সিআইডি। এমপি আনার হত্যার রহস্য উদঘাটনে ফরেনসিক প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে দুই দেশের তদন্ত সংস্থা। দেশটির তদন্ত সংস্থা কলকাতা সিআইডি’র বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, এমপি আনারের খণ্ডিত দেহাংশ বহন করা সেই রহস্যময় ট্রলিটি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে কলকাতা সিআইডি।
গতকাল শুক্রবার দুই দেশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের অভিজাত ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন বলে দাবি করেছে কলকাতা সিআইডি ও ঢাকার তদন্ত সংস্থা ডিবি। এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। অপরদিকে কলাকাতা থানায় জিডির সূত্রে হত্যা মামলা দায়ের করে দেশটির তদন্ত সংস্থা সিআইডি। দুই দেশের দুটি মামলায় ঢাকায় গ্রেপ্তার ৩ জন ইতোমধ্যেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় কারাগারে পাঠিয়েছেন পৃথক আদালত। অপরদিকে কলকাতা সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন কসাই জিহাদসহ দু’জন। অপরজন হলেন নেপালে আটক সিয়াম হোসেন। বর্তমানে তিনি কলকাতা সিআইডি হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
গতকাল শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। হাবিবুর রহমান বলেন, আনার হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা আখতারুজ্জামান শাহীনের সহযোগী নেপালে আটক সিয়ামকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি)। অভিযুক্ত সিয়াম নেপালে পালিয়ে ছিলেন। তাকে নেপাল পুলিশ আটক করে। এনিয়ে কলাকাতা’র তদন্ত সংস্থা সিআইডি’র হেফাজতে রয়েছেন কসাই জিহাদ ও সিয়াম। অপরদিকে ঢাকায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ৩ জন শিলাস্তি রহমান, তানভীর ভূঁইয়া ও আমানুল্ল্যাহ সাঈদ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপিপ্রধান বলেন, যেখানে ঘটনা সংঘটিত হয়, সেখানেই তদন্ত হয়। এটি একটি সেট রুল। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের আইনেও বলা আছে-বিদেশি যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, সে ক্ষেত্রে সেই অপরাধীকে আমরা বাংলাদেশে এনে বিচার করতে পারি। আমরাও তদন্ত করছি, তারাও (কলকাতা) তদন্ত করছে।
একপর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে যেকোনো জায়গায় এ বিচারটি হতে পারে। এদিকে এমপি আনার খুনের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির ডিবি পুলিশের একটি দল। তিনি গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়ার নিকাটাত্মীয়। ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্যাস বাবুকে নিয়ে গেছে ডিএমপির ডিবি’র সদস্যরা। তবে কোন মামলায় তাকে নেওয়া হয়েছে তা জানাতে পারেননি ওসি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এমপি আনার হত্যায় তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। অপরদিকে দ্বিতীয় দফায় দুইদিনের রিমান্ড শেষে কসাই জিহাদকে গতকাল শুক্রবার কলকাতার বারাসাত আদালতে হাজির করেন কলকাতা’র সিআইডি। অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)- এই চার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি কর্মকর্তারা বলেছেন, কলকাতায় নিহত এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহের খণ্ডাংশ বোঝাই ট্রলি ব্যাগটি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ দেহাংশ নিখোঁজের ২২ দিন পেরিয়ে গেছে। গত ৬ জুন এ কথা বলেছেন কলকাতা সিআইডি’র এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গতকাল শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে। সিআইডি কর্মকর্তা বলেছেন, ২২ দিন হয়ে গেছে। ট্রলি ব্যাগটি শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কর্মকর্তারা খোঁজ জারি রেখেছে। বাংলাদেশের পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিউ টাউন এলাকার আশপাশে দেহের খণ্ডাংশের অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন। যে ফ্ল্যাটে বাংলাদেশের এমপি খুন হয়েছেন সেখানে পাওয়া ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলিয়ে দেখার পরিকল্পনা করছেন কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যেই সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হওয়া খণ্ডিত মাংস ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছে কলকাতা সিআইডি। এমপি আনার হত্যার রহস্য উদঘাটনে ওই প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন দুই দেশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
























