➤ এখনো মেলেনি অস্ত্র-ট্রলি ও ফরেনসিক রিপোর্ট
➤ আ.লীগ নেতা কামাল সাত দিনের রিমান্ডে
➤ ডিএনএ নমুনা দিতে ভারত যাবে আনার পরিবার : ডিবিপ্রধান
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজের পর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও এখনো পুরোপুরি সেই রহস্যের জট খোলেনি। এখনো মেলেনি এমপি আনারের ব্যবহৃত রক্তমাখা পোশাক, চশমা, মোবাইল সেট এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও রহস্যময় সেই ট্রলি। তবে ১৪ দিনের হেফাজতে থাকা এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন আসামি সিয়ামকে নিয়ে কলকাতার সেই বাগজোলা খালে তল্লাশি চালিয়েছে সিআইডি। সেখান থেকে বেশকিছু হাড়গোড় উদ্ধার করে ফরেনসিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে উদ্ধারকৃত খণ্ডিত দেহাংশের মাংসের টুকরো ও হাড়গুলো এমপি আনারের কিনা তা এখনো নিশ্চিত করে দুই দেশের তদন্ত সংস্থা কিছুই জানাতে পারেনি। এখনো মেলেনি খণ্ডিত দেহাংশের উদ্ধারকৃত মাংসের ফরেনসিক রিপোর্ট। তবে ভারতীয় তদন্ত সংস্থার সাড়া পেলে ডিএনএ নমুনা দিতে এমপি আনার পরিবার শিগগিরই ভারত যাবেন বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। অপরদিকে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ডিবি’র হাতে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার আদালত ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিআইডি। এ অভিযানে বেশকিছু হাড় উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, গতকাল রোববার সকালে সিয়ামকে নিয়ে ভাঙড় এলাকায় গিয়ে বাগজোলা খালে নামেন সিআইডি কর্মকর্তারা। সঙ্গে ছিল পুলিশ ও নৌবাহিনীর ডিএমজি টিম। সেখান থেকেই হাড় উদ্ধার করা হয়। তবে, সেই হাড় এমপি আনারের কি না তা স্পষ্ট নয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় তা জানা যাবে। এজন্য উদ্ধারকৃত হাড়গুলো ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তারা। এর আগে, গত ৮ জুন সিয়ামকে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন কলকাতার বারাসাতের একটি আদালত। এরপর রোববার সকালে তাকে নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নামে কলকাতা পুলিশ।
এদিকে এমপি আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবুর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে এমপি আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গত ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়ার বাসা থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ বাবুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। শিমুল ভূঁইয়া ও বাবুর দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। দুই দেশের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এখন পর্যন্ত উদ্ধারকৃত খণ্ডিত দেহাংশের মাংস ও হাড়গুলো খুন হওয়া এমপি আনারের হতে পারে। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে না পাওয়ায় এখনো কেউ তা নিশ্চিত করতে পারেনি, এগুলো এমপি আনারের মরদেহের কি না।
গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এরই মধ্যে কলকাতা সিআইডির সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের নাম ও মোবাইল নম্বরও নিয়েছেন ভারতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তারা। শিগগিরই ডাক পড়বে। যদি তারা ফোন করে, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এমপি আনার পরিবারকে ডাকবেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।
২২ মে খবর ছড়ায়, কলকাতার পাশের নিউ টাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতরে পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ। এরপর থেকেই দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার শিলাস্তি রহমান, তানভীর ভূঁইয়া ও শিমুল ভূঁইয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় তা রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। অপরদিকে কলকাতায় গ্রেপ্তার সিয়ামকে ১৪ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে পাঠিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। অপর একটি আদালত কসাই জিহাদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।























