◉‘সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০২৪’ প্রণয়ন
◉ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিশ্চিত করা হবে নথি ব্যবস্থাপনা
◉সব অফিসে পর্যায়ক্রমে চালু হবে স্মার্ট পদ্ধতি
◉সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটসমূহ তথ্য প্রাপ্তির স্বীকৃত উৎস হিসাবে বিবেচিত হবে
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সচিবালয়ে চালু করা হবে পেপারলেস অফিস সিস্টেম। সব অফিসে পর্যায়ক্রমে চালু হবে স্মার্ট অফিস পদ্ধতি। এ বিষয়ে নানা দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নতুন সচিবালয় নির্দেশমালায়। দাপ্তরিক কার্যাবলী সুনির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এ ‘সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০২৪’ প্রণয়ন করা হয়েছে। গত ১২ জুন এটি প্রকাশ করা হয়।
এতে নথিপত্র ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বলা হয়েছে-সচিবালয়ের প্রতিটি শাখা/দপ্তরের সম্ভাব্য সকল কার্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নথি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পেপারলেস অফিস সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে। সাধারণভাবে নথি ও পত্রাদি ব্যবস্থাপনার জন্য সকল শাখা/দপ্তরে সামঞ্জস্যপূর্ণ সফটওয়্যার ব্যবহৃত হবে। প্রাপ্ত পত্রাদি ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। পত্রপ্রাপ্তির তারিখ ও সময় হতে শুরু করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অবহিতকরণের স্তর পর্যন্ত প্রতিটি কার্যব্যবস্থার প্রকৃত সময় ও তারিখ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের নাম, পদনাম ইত্যাদি বিষয়ক তথ্যাদি এই সফটওয়্যারে ধারণ করতে হবে। একইভাবে শাখায় বিষয়ভিত্তিক নথিসমূহের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ফাইল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম এবং নথির গতিবিধি নিরূপণের জন্য ফাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে শাখার নথিসমূহের শ্রেণিবিন্যাস, অনিষ্পন্ন বিষয়ের তালিকা প্রণয়ন, তাগিদপত্র প্রদান এবং বৎসর শেষে শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী বিনষ্টযোগ্য নথিসমূহের তালিকা প্রণীত হবে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সময়ে সময়ে ডিজিটাল নথিপত্র ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের উন্নতি সাধন করতে হবে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে যথাযথভাবে জারিকৃত পত্রাদির সঠিকতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।
প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর/পরিদপ্তর এবং সংস্থায় ইন্টারনেট সংযোগ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে একাধিক ব্যবস্থাসহ নিরাপদ অন্তঃ ও আন্ত: কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সংযোগও থাকিবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নথি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নোট, সারসংক্ষেপ, চিঠিপত্রের খসড়া, অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত, প্রতিবেদন ইত্যাদি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অবহিত হবেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে খসড়াদি সংশোধন ও মতামত প্রদান করবেন। নিজ অফিস ও উহার আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার সম্পাদিত কার্যাবলি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নথি ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয়/প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সমন্বিত ড্যাশবোর্ড/স্মার্ট টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করবেন।
সরকারি সকল কার্যে বাংলা টাইপ/মুদ্রণের ক্ষেত্রে ইউনিকোড ফন্ট ব্যবহার করিতে হবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘জাতীয় কি-বোর্ড’ ব্যবহার করিতে হইবে। সব অফিসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নথি ব্যবস্থাপনার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হইবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নোটিং, ফাইলিং ও ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে সকল অফিসে পর্যায়ক্রমে স্মার্ট অফিস পদ্ধতি চালু করতে হবে। দাপ্তরিক কার্যাদি সম্পন্নকরণের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন স্মার্ট টুলস ব্যবহার করা যাইবে।
রেকর্ড সংরক্ষণ সম্পর্কে নতুন নির্দেশমালায় বলা হয়েছে- সরকারি রেকর্ড সংরক্ষণের বিদ্যমান কাগজভিত্তিক পদ্ধতির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে স্বয়ংক্রিয় ব্যাক- আপ পদ্ধতি ও অন্যান্য ডিজিটাল ব্যবস্থায় শাখা/দপ্তরসমূহের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণযোগ্য ডিজিটাল রেকর্ড যথা: গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন, তথ্য-উপাত্ত, শ্রেণিবিন্যাসকৃত নথি ইত্যাদি ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের সকল তথ্য/ডাটা রাষ্ট্র মালিকানাধীন ডাটা সেন্টারে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। ডাটার সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিধি-বিধান প্রতিপালন করতে হবে।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা কর্তৃক রেকর্ড সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যার/সফটওয়্যারের যথাযথ গুণগত মান নিশ্চিতকল্পে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা টেস্টিং সম্পন্ন করতে হবে। সফটওয়্যার উন্নয়নের ক্ষেত্রে উক্ত সফটওয়্যার-এর কপিরাইট স্বত্ব এবং সোর্স কোড স্ব স্ব দপ্তর/সংস্থা কর্তৃক সংরক্ষণ করতে হবে। হোস্টিং সার্ভারের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরূপণ করতে হবে এবং তদনুসারে ঝুঁকি নিরসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ডিজিটাল মাধ্যমে দাপ্তরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘সরকারি ই-মেইল নীতিমালা ২০১৮’ অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধিদপ্তর/দপ্তর/সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের অভিন্ন ডোমেইনভুক্ত ই-মেইল একাউন্ট থাকতে হবে। ই-মেইল যোগাযোগের পাশাপাশি প্রয়োজনে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত/স্বীকৃত/ঘোষিত অন্য কোনো ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা যাবে। চিঠিপত্রে (হার্ডকপি) স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা কর্তৃক স্বীয় স্বাক্ষরের নিম্নে নাম, পদবি, ফোন নম্বরের সহিত ই-মেইল ঠিকানাও উল্লেখ করতে হবে। ই-মেইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ই-মেইল প্রেরণকারীর পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি যেমন নাম, পদবি, প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং ফোন/মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে। আগত ই-মেইল নিয়মিত অবলোকন করতে হবে এবং ই-মেইল প্রাপ্তির বিষয়টি শীঘ্রই প্রেরককে অবহিত করতে হবে। কোন সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীর নামে নিবন্ধিত দাপ্তরিক ই-মেইল এড্রেস ব্যক্তিগত কাজে/প্রচারে/যোগাযোগে ব্যবহার করা হতে বিরত থাকতে হবে।
সভা অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় দাপ্তরিক সভাসমূহ ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত স্মার্ট মিটিং ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং উহার আওতাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান/সংস্থা জাতীয় তথ্য-বাতায়নের মাধ্যমে তাদের স্ব স্ব ওয়েবসাইট (বাংলা ও ইংরেজিতে) পরিচালনা কার্যক্রম সম্পাদন করবে। ওয়েবসাইটে প্রতিটি দপ্তরের হাল-নাগাদ তথ্য, কর্মকর্তাদের তথ্য, সরকারি আদেশ, ফর্ম, রিপোর্ট, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, অর্থ বরাদ্দ ও ব্যবহারসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইন-কানুন ইত্যাদি নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করে তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটসমূহ তথ্য প্রাপ্তির স্বীকৃত উৎস হিসাবেও বিবেচিত হবে।
মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং উহার আওতাধীন প্রতিটি দপ্তর/সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত সেবা প্রাপ্তির জন্য অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে/ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলা ও ইংরেজিতে আবেদন করবার সুযোগ থাকবে।
ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনায় ইলেক্ট্রনিক ডকুমেন্ট গ্রহণ, প্রসেস, সরবরাহ, সংরক্ষণ, পরিচালনা, আর্কাইভিং এবং নিরাপত্তা বিধানসহ ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতা রক্ষা ও তথ্য পুনরুদ্ধার-এর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান অনুসরণ করতে হবে এবং মেটাডাটা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন নির্দেশমালা প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি বলেছেন, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এলক্ষ্যে সরকারি সেবাকে সহজীকরণের মাধ্যমে নাগরিক সন্তুষ্টি অর্জনকে প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এজন্য দাপ্তরিক কার্যনিষ্পত্তিতে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যমান সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০১৪ কে সময়োপযোগী ও হালনাগাদকরণ প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০২৪ প্রণয়ন করেছে। সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দপ্তরের দৈনন্দিন কার্যনিষ্পত্তিতে এই নির্দেশমালা যাতে যথাযথ ও কার্যকরভাবে অনুসৃত হয়, তা নিশ্চিত করতে সবাইকে উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ ও রুলস্ অব বিজনেস, ১৯৯৬ অনুযায়ী এই নির্দেশমালা প্রণয়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগ। প্রথমবারের মতো সচিবালয় নির্দেশমালা প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। ওই নির্দেশমালার ভাষা ছিল ইংরেজি। ১৯৭৮ সালে সচিবালয় নির্দেশমালা বাংলায় অনুবাদ করা হয়। এরপর সচিবালয় নির্দেশমালার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। সচিবালয় নির্দেশমালার সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে।




















