১২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের বীচিকলা

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • 103

মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের বীচিকলা এখন বিলুপ্তির পথে।ফলে শীতের কলার পিঠে বানাতে বীচিকলার বিকল্প খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামীন গৃহীনিরা।

এ দেশে অন্যন্য কলার মতো বাগান করে বীচিকলা চাষের রীতি ছিলো না কখনোই। তবে গ্রামের বাড়ীর আনাচেকানাচে নিতান্ত অনাদরে অবহেলায় বীচি কলা হতো প্রচুর।নির্বিচারে গ্রামীন জঙ্গল নিধনের পাশাপাশি বীচিকলা গাছেরও নিধন ঘটেছে। ফলে নরসিংদী, গাজীপুর,কিশোরগন্জের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় বীচিকলা আজ বিলুপ্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। আগের মতো বীচিকলার আর দেখে মেলে না এখন যত্রতত্র। আগে আমাশয় রোগের পথ্যি হিসেবে গ্রামাঞ্চলে বীচিকলার  প্রচলন ছিলো সর্বজনবিদিত। এ ছাড়া শীতে কলার পিঠে বলতেই বুঝাতো বীচিকলার পিঠে। ভালো পাকা বীচিকলা বাঁশের চালুনিতে চেলে চালের গুড়ো,দুধ,নারকেল,  আখের গুড় ইত্যাদি সহযোগে তৈরি হতো এ পিঠে। রাতে বানিয়ে  শীতে সকালে ঠান্ডা বীচিকলা দিয়ে তৈরি পিঠের স্বাদই ছিলো আলাদা। কাপাসিয়ার বড়হর গ্রামের মৃত ওয়াজ উদ্দীনের স্ত্রী মাজেদা খাতুন (৬৯) এ প্রসঙ্গে জানান, বীচিকলার পিঠের স্বাদ বলার মতো নয় ।অন্যান্য কলার  পিঠের স্বাদ তেমন লাগে না। গ্রামাঞ্চলে শীতে বীচিকলা দিয়ে তৈরি পিঠের আদর এবং কদর ছিলো ব্যাপক। এ বীচিকলা এলাকাভেদে নানান নামে  পরিচিত। এঁটে কলা, আইট্যা কলা, বুইত্তা কলা নামে রয়েছে এর পরিচিতি।অঞ্চলভেদে নামের আরো কিছু ভিন্নতাও পাওয়া যায়। তবে স্বাদে গন্ধে আদরে কদরে ভিন্নতা নেই কোনই। নাগরিক প্রয়োজনে গ্রামাঞ্চলের পতিত জমি কমেছে অনেক। ফলে বীচিকলার গাছও কমেছে। মনোহরদীর গাঙ্কুলকান্দী গ্রামের আব্দুর রশীদ(৬২)জানান,বাজারে

বীচিকলা এখন পাওয়া যায়না বললেই চলে। বীচিকলা এখন কালে ভদ্রে গ্রামীন হাটে বাজারে চোখে পড়লেও কিনতে হয় তা’ বেশ দুর্মূল্যে। মনোহরদীর হাররদীয়া গ্রামের মোস্তফা (৬২) একজন পুরনো কলার বেপারী। বাগান থেকে কলার ছড়া কিনে বাজারে নিয়ে বেচেন আজ ২৫ বছর ধরে।তিনি জানান,বীচিকলা এখন পাওয়া যায় না বললেই চলে। পেলেও অগ্নিমূল্য। ফলে ক্রমেই দিন দিন নাগালের বাইরে ছুটছে বীচিকলা। গ্রামীন মহিলারা তাই বীচিকলার বিকল্প হিসেবে চিনিচম্পা,গেরাসুন্দরী,আসামিয়া, সাগর কলাসহ অন্যান্য কলা  বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সব দিয়ে এ শীতে কলার পিঠে বানাচ্ছেনও তারা ঠিকই। তবে সেই স্বাদ সেই গন্ধ অনুপস্থিত থাকছে তাতে। আর এভাবেই গ্রামীন ঐতিহ্যের বীচিকলার বিলুপ্তি ঘটছে এখন ক্রমান্বয়ে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের বীচিকলা

আপডেট সময় : ০৩:৪৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের বীচিকলা এখন বিলুপ্তির পথে।ফলে শীতের কলার পিঠে বানাতে বীচিকলার বিকল্প খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামীন গৃহীনিরা।

এ দেশে অন্যন্য কলার মতো বাগান করে বীচিকলা চাষের রীতি ছিলো না কখনোই। তবে গ্রামের বাড়ীর আনাচেকানাচে নিতান্ত অনাদরে অবহেলায় বীচি কলা হতো প্রচুর।নির্বিচারে গ্রামীন জঙ্গল নিধনের পাশাপাশি বীচিকলা গাছেরও নিধন ঘটেছে। ফলে নরসিংদী, গাজীপুর,কিশোরগন্জের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় বীচিকলা আজ বিলুপ্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। আগের মতো বীচিকলার আর দেখে মেলে না এখন যত্রতত্র। আগে আমাশয় রোগের পথ্যি হিসেবে গ্রামাঞ্চলে বীচিকলার  প্রচলন ছিলো সর্বজনবিদিত। এ ছাড়া শীতে কলার পিঠে বলতেই বুঝাতো বীচিকলার পিঠে। ভালো পাকা বীচিকলা বাঁশের চালুনিতে চেলে চালের গুড়ো,দুধ,নারকেল,  আখের গুড় ইত্যাদি সহযোগে তৈরি হতো এ পিঠে। রাতে বানিয়ে  শীতে সকালে ঠান্ডা বীচিকলা দিয়ে তৈরি পিঠের স্বাদই ছিলো আলাদা। কাপাসিয়ার বড়হর গ্রামের মৃত ওয়াজ উদ্দীনের স্ত্রী মাজেদা খাতুন (৬৯) এ প্রসঙ্গে জানান, বীচিকলার পিঠের স্বাদ বলার মতো নয় ।অন্যান্য কলার  পিঠের স্বাদ তেমন লাগে না। গ্রামাঞ্চলে শীতে বীচিকলা দিয়ে তৈরি পিঠের আদর এবং কদর ছিলো ব্যাপক। এ বীচিকলা এলাকাভেদে নানান নামে  পরিচিত। এঁটে কলা, আইট্যা কলা, বুইত্তা কলা নামে রয়েছে এর পরিচিতি।অঞ্চলভেদে নামের আরো কিছু ভিন্নতাও পাওয়া যায়। তবে স্বাদে গন্ধে আদরে কদরে ভিন্নতা নেই কোনই। নাগরিক প্রয়োজনে গ্রামাঞ্চলের পতিত জমি কমেছে অনেক। ফলে বীচিকলার গাছও কমেছে। মনোহরদীর গাঙ্কুলকান্দী গ্রামের আব্দুর রশীদ(৬২)জানান,বাজারে

বীচিকলা এখন পাওয়া যায়না বললেই চলে। বীচিকলা এখন কালে ভদ্রে গ্রামীন হাটে বাজারে চোখে পড়লেও কিনতে হয় তা’ বেশ দুর্মূল্যে। মনোহরদীর হাররদীয়া গ্রামের মোস্তফা (৬২) একজন পুরনো কলার বেপারী। বাগান থেকে কলার ছড়া কিনে বাজারে নিয়ে বেচেন আজ ২৫ বছর ধরে।তিনি জানান,বীচিকলা এখন পাওয়া যায় না বললেই চলে। পেলেও অগ্নিমূল্য। ফলে ক্রমেই দিন দিন নাগালের বাইরে ছুটছে বীচিকলা। গ্রামীন মহিলারা তাই বীচিকলার বিকল্প হিসেবে চিনিচম্পা,গেরাসুন্দরী,আসামিয়া, সাগর কলাসহ অন্যান্য কলা  বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সব দিয়ে এ শীতে কলার পিঠে বানাচ্ছেনও তারা ঠিকই। তবে সেই স্বাদ সেই গন্ধ অনুপস্থিত থাকছে তাতে। আর এভাবেই গ্রামীন ঐতিহ্যের বীচিকলার বিলুপ্তি ঘটছে এখন ক্রমান্বয়ে।